আমি তোমায় ভালোবাসি

আমি তোমায় ভালোবাসি

–এই অভি ভাইয়া তুমি আমাকে না পড়িয়ে আপুর দিকে তাকাচ্ছো কেনো?
–কি যা তা বলছিস।।
—ঠিকই বলছি আমার দিকে তো ঐভাবে তাকাও না কখনো।
—তোকে দেখার কী আছে?
—কেনো আমি কী দেখতে খারাপ নাকি হু,,?
–মোটেও না তুই তো অনেক সুন্দর।
—আমি তো আপুর থেকেও সুন্দর তাহলে আমার দিকে ঐভাবে কেনো তাকাও না।।?
–ঐ চুপ করে পড়তে বস।
–তাহলে আপুকেও ঐভাবে দেখবে না।

–ঐ এতো বেশী বুঝিস কেন।।
—আমি জানি তুমি আপুকে ভালবাসো।
—ঐ চুপ চুপ..
—চুপ করিয়ে লাভ নেই, আমাকেও ভালবাসতে হবে না হলে কিন্তু আমি আম্মুকে বলে দিবো।
—ঐ তুই এতটুকু পিচ্ছি ভালবাসার কি বুঝিস।
—শুনো অভি ভাইয়া আমি মোটেও পিচ্ছি না।
—ক্লাস ফাইবে পড়িস আবার পিচ্ছি নাতো কি বলবো।
—তুমি জানো আমার সব বান্ধবীর বি.এফ আছে, শুধু আমার নেই।
>পিচ্চি টা বলে কী, আমারে তুইলা নাও কেউ। আবেগে তো আমার কান্দন আইতাছে। এতটুকু পিচ্ছির কথার কী স্টাইল

—তা তোর বি.এফ নেই কেনো?
—কারন আমার মনটা আমি একজন কে দিয়ে দিছি।
—কাকে দিছিস?
—আছে এক বেইমান।
–বেইমান?
—হুম বেইমান।
—বেইমান মানে?
—সেই বেইমান এখন আমার সামনে বসে আছে,সে আমাকে নয় আমার বড় আপু কে ভালবাসে।

>বুঝতে আর বাকি রইলো না তিতলি কার কথা বলছে। একটুকু মেয়ে তো অল্প বয়সেই পেকে গেছে। কথা গুলো মনে মনে ভাবছি আর মনের মধ্যে হাতুড়ি পিটাচ্ছি কাল থেকে আর টিউশনি করতে আসবো না নাকি।

–এই অভি……ভাইয়া। (তিতলি)
–এই কে,কে.. (আমি)
–আমি তিতলি কী ভাবছো এতো?
>আমি তো লাফিয়ে উঠছি ভয়ে, পিচ্ছিটার গলায় সেই রকমের জোর।
–কিছু ভাবছি না। আর শোন তিতলি তুমি মাথা থেকে এসব চিন্তা বাদ দাও। আর মন দিয়ে পড়াশোনা করো।

–ঠিক আছে অভি ভাইয়া, তোমার সব কথা শুনবো, তাহলে আমাকে আগামিকাল ঘুরতে নিয়ে যাবে বলো?
–আচ্ছা নিয়ে যাবো। কিন্তু তোমার আম্মুর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নিবে।
–আচ্ছা। আর আমাকে চকলেট আর আইসক্রিম খাওয়াবে কিন্তু।
–আচ্ছা খাওয়াবো, তবে আমার কিছু কথা আছে সেগুলো তোমাকে শুনতে হবে।
–আচ্ছা শুনবো।
–আজ আমি উঠি তাহলে।
>আমি অভি, ইন্জিনিয়ারে পড়াশোনা করি রংপুর সরকারি পলিটেকনিকে। আর আমার জানু মানে তিতলির বড় বোন অনন্যা, মহিলা কলেজে পড়াশোনা করে।

> তিতলি কে পড়াতে আসার কারনে অনন্যার সাথে আমার প্রেম টা হয়েছে। আসলে আমি খুব সাধারন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে কখনো প্রেম করার ইচ্ছেটাও হয়নি।

> কিন্তু অনন্যার ভালবাসার কাছে নিজে হেরে গেছি। একটা মেয়ে এতোটা ভালবাসতে পারে সেটা অনন্যাকে না দেখলে জানতাম না। এতোটা পাগলী একটা মেয়ে।

>কিন্তু অনন্যা আজ তিন দিন আমার সাথে কোন কথা বলছে না। তার কারনটা হলো অনন্যা বলেছিলো আমার সাথে একটু ঘুড়ে বেড়াবে পড়ন্ত বিকেলে,ফুচকা খাবে আমার সাথে কোন এক রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে। আমার ব্যস্ততার কারনে সেটা করতে পারিনি। তাই তো এতো অভিমান।কত ফোন আর ম্যাসেজ করছি কোন সাড়া পাইনি। তবে এবার মনে হয় কিছু একটা করতে পারবো পরেরদিন….

–অভি ভাইয়া তুমি এসে গেছো।
–হুমম,,চলো।।
–একটু দাড়ান অভি ভাইয়া,আমি চোখে একটু কাজল দিয়ে আসি।

> বাব্বাহ এতটুকু মেয়ের কী সাজ গোজ। এটা কে যে বিয়ে করবে তাকে তো সারাদিন মেকাপ বক্স নিয়ে পিছু পিছু ঘুরতে হবে। যাক বাবা আমি তো বেচে গেছি।এর থেকে আমার অনন্যা অনেক সাধারন। কোন সাজুগুজু নয়, কোন মেকাপ নয়, একদম খাটি মায়াবী চেহারা নিয়ে আমার সামনে আসে।কিন্তু অনন্যা কই, যার জন্য এত কিছু করা তাকে তো দেখছি না। যাক গে সময় হলেই চলে আসবে।

—অভি ভাইয়া চলো আমার হয়ে গেছে।
–ও হ্যা চলো।
–কেমন লাগছে আমাকে?
–খুবই ময়দা সুন্দরী লাগছে।
–তাই বুঝি, আমি এত্ত কিউট।
>কি পিচ্চিরে বাবা, প্রশংসা নাকি অন্য কিছু করলাম সেটাই তো বুঝলো না।
– অভি ভাইয়া মুখটা নিচু করো।
–হুমম কী?
–উম্মাহ…
>কি যে আছে আজ কপালে কে জানে। এতো চুমু রাখবো কই। আবেগে তো আমার নাচতে মন চায়।
–এসব কি হচ্ছে তিতলি?
>কাম সারছে,,অনন্যা হঠাৎ কোথা থেকে এলো। রাগে তো মুখটা লাল বর্ণ ধারন করেছে দেখছি। দেখো আমার দিকে কিভাবে তাকাচ্ছে,মনে হচ্ছে আমাকে চোখ দিয়ে খেয়ে ফেলবে। অনন্যা হিংসে করছে নাকি রাগ করছে বুঝতেছি না। চোখে তো পানি টলমল করছে।

–কিছু না আপু। (তিতলি ভয়ে ভয়ে বলল)
–না পড়ে কোথায় যাচ্ছিস? (অনন্যা )
–অভি ভাইয়ের সাথে ঘুরতে যাচ্ছি।
–না পড়ে কিসের ঘুড়ে বেড়ানো?
–আমি আম্মুকে বলেছি। তাছাড়া অভি ভাই আজ তার gf এর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিবে। (gf এর কথাটা মিথ্যা, ঐটা তিতলি কে আমি শিখিয়ে দিয়েছি, যাতে অনন্যা বাসা থেকে বের হয়, আর আমাদের রাগারাগি টা মিটিয়ে নিতে পারি।)

>অনন্যা আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো, চোখের টলমল পানি হয় তো এখনি টুপ করে গড়িয়ে পড়বে। কিন্তু এতে যে আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে, অনন্যা রাগ ভাঙানোর জন্য না হয় এতটুকু কষ্ট অজান্তেই দিয়ে দিলাম।

>আমি আর তিতলি এখন রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছি। উদ্দেশ্য কোন এক পার্কে ঢুকবো। তিতলি এখন আমার কেনি আঙুল টা ধরে রেখেছে, পিচ্চিরা তো তাই করে। ভেবেই হাসি পাচ্ছে পিচ্চি টা এখন নিজে হাটা শিখেনি আবার প্রেম করবে।

>জানতাম অনন্যা ঠিকই আমাদের পিছু নিবে। হ্যা অনন্যা এখন আমাকে আর তিতলি কে ফলো করছে। বাহ কি ভালবাসার টান, এতই যখন টান তাহলে রাগ করে থাকারই বা কী দরকার।। বুঝি না বাপু মেয়েদের এতো রাগ কোথা থেকে আসে, আবার একটুখানি কষ্ট দিলেই চোখ দিয়ে ঝর্না বইতে শুরু করবে। এতো পানি যে কোথা থেকে আসে কে জানে। ঝর্নার পানিও যে এতো কোথা থেকে আসে কেউ যেমন জানে না মেয়েদের চোখের পানিও এতো কোথা থেকে আসে সেটা জানাও অসম্ভব।

>এখন আমরা শিশু পার্কে ঢুকলাম। আসলে সাথে করে শিশু নিয়ে আসছি শিশু পার্কে না ঢুকলে হয়। কথা মতো তিতলি কে চকলেট আর আইসক্রিম কিনে দিলাম,না কিনে দিয়ে কী আর উপায় আছে। কিন্তু অনন্যা কই,ওকে তো দেখছি না,বাসায় চলে গেলো নাকি আবার,তাহলে তো আমার সব জলে যাবে।

>অনন্যার আসার অপেহ্মায় এখন। অনন্যা আসলে বাকি কাজটা শুরু করব। আরে ঐ তো অনন্যা আসছে, হুম এদিক ঐদিক তাকাচ্ছে মানে আমাদেরকেই খুজছে। আমি আর তিতলি এখন পার্কের এক ঝোপের আড়ালে দাড়িয়ে আছি।

–অভি ভাইয়া তোমার ডায়ালগ মারা শুরু করো। (তিতলি)
–আরে তোর আপু দেখবে তো আমাদের। (আমি)
>আসলে ঝোপের সামনে দাড়িয়ে আছি,ঝোপের আড়ালে কেউ আছে কি নেই সেটা বোঝার উপায় নেই দূর থেকে। অনন্যা আমাদের দেখলেই ডায়ালগ শুরু করবো।

–অভি ভাইয়া আপু দেখেছে আমাদের, এবার তোমার ডায়ালগ শুরু করো।
–আরে আরেকটু কাছে আসুক।
—তুমি শুরু করতে থাকো, আপু চলে আসবে ততহ্মনে।
>আমি আমার কাজ শুরু করে দিলাম।
>তুমি জানো অদ্রিশা তোমাকে একদিন না দেখলে আমার রাতে ঘুম আসে না।
—>চালিয়ে যাও অভি ভাইয়া হচ্ছে।
—ওরে কি বলব আর কিছুই তো মনে আসছে না।

–>মনে করার চেষ্টা করো।
>তুমি জানো অদ্রিশা তুমি আমার আধার রাতের চান্দের আলো। তুমি তো অনেক ঘেমে যাচ্ছো জান। তুমি বসো একটু জান কষ্ট করে তোমার জন্য আমি আইসক্রিম নিয়ে আসছি।
—ওমা অনন্যা তুমি এখানে?
—অদ্রিশার গরম লাগছে বলে আইসক্রিম আনতে যাচ্ছো।
–না মানে আসলে।
—আমি তিনদিন কথা বলেনি তার মধ্যে আরেকজন কে জান বানিয়ে নিছো। ছি, অভি তুমি এতো নিচ, আগে জানলে কখনো তোমাকে আমার মনে জায়গা দিতাম না। আসবো না আর তোমার জীবনে থাকো তুমি তোমার অদ্রিশাকে নিয়ে। (কান্না কান্না ভাব)

–আরে অনন্যা তো চলে যাচ্ছে। কী করি এখন। এই তিতলি কী করব।
–কী করবে মানে আপুকে আটকাও। আটকাতে না পারলে কিন্তু আর আপু কে পাবে না। তখন কিন্তু আমি তোমার পিছু নিবো হু।
>আমি মরছি আমার জ্বালায়, পিচ্চি টা আবার কী শুরু করছে। ঐ তুই চুপ করে আইসক্রিম খেতে থাক। কী আর করব অনন্যার পিছন থেকে হাত ধরলাম।
–ছাড়ো আমাকে। (অনন্যা)
–(আমি কোন কথা বলছি না।হাতটা ধরেই  ঝোপের কাছে আনার চেষ্টা করছি)।
—ঠাসস…
—মনে হয় অনন্যা আমাকে মারল। তাতেও সম্যসা না, একহাত দিয়ে অনন্যার হাত ধরে রাখছি, আরেক হাত দিয়ে অনন্যা যে গালে থাপ্পর মারছে সেই পাশটা ধরে রাখছি। শেষমেষ ঝোপের সামনে আনতে সহ্মম হলাম।

>অনন্যা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তার কারন ঝোপের আড়ালে কেউ নেই। তিতলির দিকে তাকাতেই তিতলি মিটিমিটি হাসছে। আর আমিও এখনো মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি।

–তিতলি কি হচ্ছে এসব? (অনন্যা )
–তুমি নাকি অভি ভাইয়ার সাথে তিন দিন কথা বলো না তাই তো তোমার রাগ ভাঙানোর জন্য এমনটা করেছে।
–তিতলী তুই একটু দূরে যা তো।
–কেনো আপু?
–যেতে বলেছি যা।
–আচ্ছা।
—আরেকটু যা..
–গেছি তো।
>অনন্যা আমার হাতটা মুখ থেকে সরিয়ে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে বলল সরি আমি বুঝতে পারিনি।

—>এই গালে আরেকটা থাপ্পর দাও।
—অনন্যা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল- মানে?
—না মানে তাহলে আরেকটা ইয়ে পাওয়া যেতো। তাছাড়া একগালে মারলে নাকি বিয়ে হয় না।
—>হবে বিয়ে আমার সাথে।
>কথাটা বলতে বলতে অনন্যা শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
–এইসব কি হচ্ছে পার্কের মধ্যে হু, আমি আম্মু কে বলে দিবো। (তিতলি)
>কথাটা শুনেই অনন্যা আমাকে ছেড়ে দিলো।
—কী বলবা? (আমি)
—যা যা করছো সব। আর আমিও ভাবছি আমার bf হলে এমন থাপ্পর মেরে আদর করব।

>তিতলির কথা শুনে আমি আর অনন্যা হেসে উঠলাম। আজকে অনন্যাকে নিয়ে ঘুরবো। অনন্যার সেই ইচ্ছাগুলো আজ পূরন করবো। মাঝে মাঝে ভালবাসা মানুষের ইচ্ছা পূরন করার মধ্যেও এক অনুভূতি কাজ করে। যেটা কেবল মাত্র তারায় বুঝে যারা পূরন করেছে। আমি তোমায় ভালোবাসি অনন্যা , অনেক অনেক ভালোবাসি

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত