আমার জীবনের গল্প কাউকে বলার মতো না, আমি পারিনা। এটা বলতে পারার মতো সমাজ আমাকে কোনো সুযোগ করে দেই নাই কিংবা বলে সমাজে টিকে থাকার মতো অবস্থাটাও আমার থাকবে না হয়তো। আমি ছোটখাটো চেষ্টাও করেছি কেউ আমাকে আমল দেয়নি, কেউ বলতে আমার পরিবারই, তাদের মান সম্মান সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে ভেবে।
মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয় এটা ভেবে যে আমি একটা মেয়ে। আমি ভাবি এটা হয়তো অভিশাপ। একটা ছেলে হলে এই জীবনটা এতো ছোট পরিসরে আবদ্ধ থাকতো না। আমার নাম সুমি। পরিবারের যথেষ্ট হাঁকডাক আছে এলাকাতে। আমার মা বাবা দুজনেই সরকারি এমপ্লয়ি। ছোটবেলা থেকেই আমি আমার মত বড় হয়েছি, আর এই বড় হওয়ার পথেই আমার অব্যক্ত গল্প।
একদিন মা বাবার ছুটিতে মায়ের এক মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার মায়ের মামা যিনি উনি স্বাভাবিক ভাবেই আমার নানা হন সম্পর্কে। তখন আমি ক্লাস থ্রি তে পড়ি। সেদিন আমার মায়ের মামা আমাকে আদর করে কোলে করে উনার রুমে নিয়ে যায়। কোলে বসিয়ে অদ্ভুতভাবে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত বুলাচ্ছিলেন। শক্ত খসখসে হাতের স্পর্শে আমার অনেক ব্যাথা হচ্ছিল। ছোট মানুষ এতো কিছু বুঝতাম না। শান্ত ভাবেই এই অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল। আমি এখন বুঝি উনার সেদিনের উদ্দেশ্য কি ছিলো। আমার এখনো মনে হলে মরে যেতে ইচ্ছে করে।
একবার ক্লাস সিক্সে তখন পড়ি। গ্রীষ্মের ছুটিতে আমার ফুফু আমাকে উনার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান। তখন মোটামুটি বুঝি। আমি একা ঘুমিয়ে অভ্যস্ত। তাদের বাড়িতেও একা শুয়েছিলাম। সেদিন রাতে হঠাৎ কারো স্পর্শ অনুভব করতে লাগলাম। কিছুই বুঝতে পারছি না। হঠাৎ কারো মুখ থেকে সিগারেটের নোংরা গন্ধ আর ঘাড়ে মুছের ঘষাতে চিৎকার দিতে যাবো ঠিক ঐ সময়ই আমার মুখ চেপে ধরে আমার ফুফা। আমি উনাকে চিনতে পারি যখন উনি কানে কানে বলতেছিলেন খবরদার কাউকে কিছু বলবা না বলে উঠে চলে গেলেন রুম থেকে। সারারাত কেঁদেছিলাম। সকালে ভোর হতেই আমি কান্নাকাটি করে বাড়ি চলে আসি। একবার ভেবেছিলাম মরে যাই কিন্তু সাহসে কুলায় নাই।
আমার পৃথিবীর সব বিশ্বাস উঠে যায় এক কাজিনের বিয়েতে গিয়ে যেদিন আমার সম্পর্কে এক মামা আমাকে প্রায় ধর্ষণ করেছিলো উনাকে আপন মামার মতোই জানতাম। প্রায় বলছি এই অর্থে যে, খুব কষ্টে সেদিন উনার অণ্ডকোষে একটা লাথি মেরে ছাড় পেয়েছিলাম। সমস্ত ভক্তি শ্রদ্ধা আমার মন থেকে মুছে যায়। আমি মাকে এসব ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বুঝাতে চেয়েছি আমার মা ইজ্জতের দোহাই দিয়ে ভুলে যেতে বললেন। ভুলে গেলাম। আমার বাবা, চাচা, ভাইকেও আজ আমি ভয় পাই। আল্লাহ মাফ করুক তারা আমার অবশিষ্ট পৃথিবী তাও আমি এসব ভাবি। আমার পরিস্থিতি কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে বুঝে নেন।
আমি এখন ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। দুদিন আগে কেমিস্ট্রি প্রাইভেট পড়তে ভোরে স্যারের বাসায় যাই। স্যার আজকে পড়াবেনা জানতাম না। ফোনটা বন্ধ থাকায় ফ্রেন্ডসরা জানাতে পারে নাই আমায়। সেদিন চলে আসবো ঠিক তখন স্যার আমাকে ডাক দিলেন। বললেন আজকে তোমার ম্যাডাম বাসায় নাই। একটু চা বানিয়ে দিতে পারবে সুমি? বাবার বয়সী লোক, আর উনাকে অনেকদিন থেকেই আমি জানি। অনেক ভালো মানুষ। এই ভালো মানুষটারও যে আরেকটা রুপ ছিলো গুনাক্ষরেও মনে আনি নাই। কিচেনেই জরিয়ে ধরেছিলেন। আমার শরীর এখনো কাপছে ব্যাপারটা ভেবে। গরম পানি উনার গায়ে ঢেলে দৌড়ে আসছিলাম। আমারও হাত পুড়ে গিয়েছিলো।
আমি জানিনা আমার সাথে ক্যান এমন হয়ে আসছে। আমার দূর্বলতা হয়তো আমি খুব হাসিখুশি আর মিশুক, নয়তো কি জানিনা। নিয়তি আমাকে হারে হারে নারীত্বের স্বাদ বুঝিয়েছে। আর বেছে থাকার শক্তি পাচ্ছি না। কোন উপায়ে বাঁচবো বলেন? আমার জন্য সেফ জোন এপারে আর না। আমি সবার মন রক্ষা করেছি। কারো সমাজ কলঙ্ক করি নাই। কাউকে অভিযোগ করি নাই। নীরবে নিভৃতে সব হজম করেছি। নিজেকে কারো কাছে সপে দেয়ার মতো স্বপ্নগুলোও আজ নিশ্চিহ্ন। হয়তো একদিন টুপ করে ডুবে যাবো এই নোংরা সমাজ থেকে। আত্মহত্যার কোন কারন কেউ খুজে পাবে না। কি লাভ?