=>এই!
=>ji.
=>ওই!
=>কি?
=>আজ বন্ধের দিন তার মানে এই না যে সারাদিন ঘুমাবা।
=>ও আচ্ছা।
=>ঐ, আচ্ছা মানে কি?
উঠো। কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।আর থাকবেই না কেন? কিছুদিন আগেও যে কিনা টেবিলে বসে কাব্যের সামনে নিচের দিকে থেকে আচ্ছা স্যার,ঠিক আছে স্যার বলতো সে কিনা এখন কোমড়ে শাড়ির আচঁল গুজে হাতে চামচ নিয়ে গলা ঝেড়ে কথা বলছে। কয়েকবছর আগের কথা।শুরু থেকেই কাব্যের ফ্যামিলিতে একটু আধটু টানাফোরন ছিল।কিন্তু ভার্সিটির শেষের দিকে এমন প্রবলেম শুরু হল যে ওকে টিউশনি খুজতে হচ্ছে।
অবশেষে একটা পেয়েও গেল।এক আলালের ঘরের দুলালীকে পড়াতে হবে।শুরুর দিকে সুশীলতা বজিয়ে রাখলেও একমাস যেতে না যেতেই যেন মেয়েটার মাথায় পৃথিবীর সব দুষ্টামি এসে ভর করলো। কোনদিন স্যার আজকে পড়বোনা পা ব্যাথা করছে আবার কোনদিন স্যার আপনি হাসতে জানেন? কাব্য একসময় রেগে গিয়ে ইচ্ছামত বকা দেয়।ঐদিন তিন্নি(মেয়েটা)ই চ্ছামত কাঁদে।কাব্যের খারাপ লাগে কিন্তু তবুও নিজেকে বোঝায় এটুকু কষ্ট দেওয়া জরুরী ছিল। পরেরদিন কাব্য পড়াতে যায়।গিয়ে দেখে মেয়েটার চোখদুটো ফোলাফোলা আর অবস্থা ও অনেক খারাপ।পুরো রাত কেদেঁছে বোধহয়।এবার কাব্য ওকে বোঝায়,সবকিছুর একটা লিমিট আছে।আগে পড়ালেখা আর তারপর অন্যসব ব্যাপার। এরপর আবার সবকিছু নরমাল হয়ে যায়।
=>স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
=>কি?
=>আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে? জেনে কি করবা?
=>কিছুনা।তবে দেখে মনে হয়না আছে।
=>কেন?
=>থাকলে এতদিনে কমপক্ষে একবার হলেও আমার সামনে কথা বলতেন।
=>কে শিখায় এসব আজেবাজে কথা?
=>আমার বান্ধবী বলসে।
=>এসব বান্ধবী থেকে দূরে থাকাই ভালো।
=>এহহ! আমার বান্ধবী অনেক ভালো।
একদিন কাব্য কিছু সবজি কিনে ফিরছিলো।কারন এখন রোজার মাস,ম্যাচের বাকিরা বাসায় চলে গেছে,আর রান্না করে দিয়ে যায় যে মাসী তিনিও এইমাস আসতে পারবেনা বলেছে।আর রোজার মাসে বাইরেও খাবার পাওয়া যায় না।তাই নিজেই কিছু অখাদ্য রান্না করে খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
=>স্যার! কেমন আছেন?
=>ভাল।তুমি?
=>ভাল।স্যার এগুলা নিয়ে কি করবেন?
=>রান্না করব।এমা কেন!
=>যিনি রান্না করেন তিনি কিছুদিন আসবেন না তাই।
=>আপনি রান্না ও করতে পারেন বুঝি?
=>চেষ্টা করি।
=>চলুন আজ আমি রান্না করে খাওয়াবো।
=>আরে না!লাগবেনা।
=>না।না।লাগবে।চলুন।
অতঃপর বাধ্য হয়ে কাব্য তিন্নিকে নিয়ে যায়।ম্যাচে গিয়েই সে কি কান্ড।এদিকে রান্না চাপিয়ে এদিকে এটা গুচাচ্ছে ওদিকে ঐটা করছে।কাব্য বসে বসে দেখছে। অতঃপর রান্না শেষে খেতে বসবে তখনই
=>এই যে! আপনি এত খাটাশ কেন?
=>কি হল?
=>আপনি খাওয়ার আগে হাত ধুলেন না যে?
=>আরে খিদা বেশি লাগছে।কথা পরে।
=>না।আগে হাত ধুবেন তারপর খাওয়া। শেষে বাধ্য হয়ে হাত ধুয়েই খেতে বসলো।
=>এহেম এহেম।
=>আরে!ও হ্যা তুমি!তুমিও বসো একসাথে।
=>না।আপনিই খান।
=>আচ্ছা।
=>এহেম!
=>আবার কি?
=>আমাকে কেমন লাগছে? কাব্য তাকিয়ে দেখে তিন্নি একটু সেজেছে।
=>ভালই।
=>শুধু ভাল?
=>আর কি?
=>আমাকে বউ বউ লাগছেনা?
=>কিজানি।
=>বিয়ে করবেন আমাকে?
=>এই মেয়ে মাথা ঠিক আছে তোমার?দাড়াও।তোমার বাবাকে বলছি।
=>হুহ যখন বলার তখন আমিই বলবো।
এটা বলে কাব্যকে আর বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় তিন্নি। এর কিছুদিন পরে কাব্য চাকরিতে জয়েন করে।নিজেদের বাসা নিয়ে বাবা মাকে ও নিয়ে আসে বাসায়। ভালই চলছিল দিনকাল।কিন্তু একদিন হঠাৎ কোন এক কারনে কাব্য অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে।
=>তুমি!
=>কেন কি হয়েছে?
=>তুমি এখানে কেন?
=>কেন আমি কি আমার হবু শ্বশুরবাড়ি আসতে পারিনা?
=>মমমানে?
=>দেখো আন্টিও আমাকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিয়েছে।
=>এই মেয়ে এদিকে আসো! কাব্য ওকে টেনে বাইরে নিয়ে যায়।
=>মাথায় প্রবলেম আছে তোমার?
=>না।তোমার মাথায় আছে।ভালোবাসো কিন্তু বলতে পারোনা।
=>দেখো একেবারে পরিষ্কার করে বলছি,আমি তোমাকে ভালোবাসিনা।আমারপিছু ছেড়ে দাও।
কাব্য দেখে তিন্নির চোখে জল।এখুনি বর্ষন শুরু হবে। তিন্নি দৌড়ে চলে যায়। কাব্য রুমে ঢুকে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে থাকে। কাব্য।
=>হ্যা মা বলো।
=>মেয়েটা বেশ ভালো রে।যখন তুই অফিসে থাকতি তখন আসতো।তবে আমাকে বারন করতো যাতে তোকে ওর কথা না বলি।তোকে বেশ ভয় পায় তবে তার চেয়েও বেশি ভালোবাসে। এটা বলে কাব্যর মা চলে যায়।কাব্য ভাবতে থাকে।শুধু তিন্নির কান্না করা চেহারাটার কথা মনে পড়ছে। রাত প্রায় সাড়ে এগারটা।হঠাৎ একটা কল এলো।
=>হ্যালো।
=>হ্যালো।কাব্য বলছেন?
=>হ্যা বলছি।
=>আমি তিন্নির বাবা বলছি।
=>ওহ আংকেল কেমন আছেন?
=>একটু হসপিটালে আসতে পারবে? তিন্নি সুসাইড করতে চেয়েছিলো।
=>কিইই!
কাব্য সাথে সাথে উঠে দৌড়ে যায়। হসপিটালের করিডোরে তিন্নির বাবা মা দুজনেই আছেন।কাব্য ভেতরে গেল।কাব্যকে দেখে তিন্নি ওপাশে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
=>আমি দেখতে হ্যান্ডসাম কিংবা স্মার্ট নই।নিজের ফ্ল্যাট,গাড়ি কোনটাই নেই।একটা চাকরি করি,মাসে ১৬ হাজার টাকা বেতন পাই।তাতে টেনেটূনে সংসার চলে।বিয়ে করবে আমাকে? ব্যস।এরপরে কি হলো বুঝে ওঠার আগে ফুলশয্যার ঘরে আবিষ্কার করে কাব্য নিজেকে।আর এরপর থেকেই ননস্টপ চলছে কাব্যের উপর তিন্নির এই বসগিরি।