সত্যি কারের ভালবাসা

সত্যি কারের ভালবাসা

মেয়েটা কখনোই ভালবাসেনি ছেলেটাকে। অবশ্য না বাসাটাই ঠিক, কি যোগ্যতা আছে। বছরের পর বছর ধরে ছেলেটা একলাই ভালবেসে গেছে মেয়েটাকে। নাহ্ পাওয়ার জন্য না। মেয়েটাকে ভালবাসতেই কেন যেন ভাল লাগে ছেলেটার…
.
মেয়েটার চারপাশেই বিচরণ ছিল ছেলেটার কিন্তু কথনোই মেয়েটা জানতে পারেনি। একটা ভালবাসার কাঙ্গাল অবিরত ভালবেসে গেছে তাকে…
.
আগামীকাল মেয়েটার বিয়ে, ছেলেটা জানে তার বিশ্বাসটা আজ ভাঙ্গতে চলেছে। ৯ টা বছর ধরে একলা ভালবেসে যাওয়া মেয়েটা আজকের পর আর কখনোই তার হবে না। না দুনিয়াতে আর না পরকালে…
.
ফুপিয়ে কাঁদছে ছেলেটা, নিজের ভালবাসাকে কখনোই প্রমান করতে না পারার কষ্টটা আজ সবচেয়ে বেশি পুড়াচ্ছে তাকে…
.
ঝাপসা চোখে আজ স্মৃতি গুলো ভেসে ভেসে উঠছে ছেলেটার সামনে। প্রথম যেদিন মেয়েটাকে ভালবাসার কথা বলেছিল , মেয়েটা অঝোরে কান্না করেছিল। তারপর যতবার মেয়েটার সামনে গিয়েছে ততবারই অযোগ্যতার দোহাই দিয়েছে…
.
খুব ইচ্ছে করছে ছেলেটার মরণ ঘুম ঘুমাতে। একাকিত্বের কষ্টটা আর সহ্য হচ্ছে না। কেউ নেই পৃথিবীতে তার, খুব কষ্ট।
.
নাহ্ ছেলেটা কিচ্ছু করেনি। ভালবাসলে পেতে হবে এমন তো কথা নেই। ভালবাসাতো তাই যা রক্তপাতহীন, নির্লোভ, ত্যাগের মহিমায় উজ্বল।
…..
বছর খানেক পর হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল ছেলেটা। আননৌন নাম্বার! পরিচিতদের বাইরে কেউই তো জানেনা নাম্বারটা। অনেকটা অবাক হয়ে রিসিভ করল ছেলেটা।
– হ্যালো, আসসালামুআলাইকুম।
– হ্যালো..
– কে বলছেন?
– নীরা…
ছেলেটার কন্ঠটা রুদ্ধ হয়ে গেছে, ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে শুধু এই প্রশ্নটা নীরাকে করল..
– ভাল আছো তো, কোন সমস্যা নেই তো?
– আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।
– কোন সমস্যা?
– না, দেখা করব এখন।
.
ছেলেটা কোন আশা নিয়ে যায়নি মেয়েটার কাছে কিন্তু মেয়েটা আজ অনেক আশা নিয়ে এসেছে, ছেলেটাকে সারা জীবনের জন্য আপন করে পাবে বলে…
– জানেন অনেক কষ্ট করে আপনার নাম্বারটা যোগার করেছি…
– অহ্
– আপনি ফেসবুকে আসেননা কেন?
– না, এমনি
– আপনি কি আমার সাথে ভাল করে কথা বলবেন না?
– তোমার সংসার কেমন চলছে?
– জানিনা, তবে এখন সংসারটা ঠিক গুছিয়ে নেব।
– মানে??
– লাস্ট মেসেজটা দেয়ার পর আর আসেননি ফেসবুকে, জানেন কত খুজেছি আপনাকে। দেখেন কত মেসেজ দিয়েছি আপনাকে। একটাও সিন করেননি…
– কেন? তোমার বিয়ে হয়ে গেল, কি হতো বলো?
– আমার বিয়ে হয়নি…
– মানে?
– মানে নাই, ছেলেটার কিছু চরিত্রগত সমস্যা ছিল তাই? আব্বু বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছে। আর তার আগেই আপনার মেসেজটা দেখেছি। তারপর আইডিতে ঢুকে প্রতিটা স্ট্যটাস দেখেছি। বুঝতে বাকী রইল না এই পাগলটা আপনি ছাড়া আর কেউ না। কার খেয়ে দেয়ে কাজ পড়ছে শুধু আমাকে নিয়েই স্ট্যটাস দিবে। বুঝতে পারলাম আপনি ছাড়া এতটা ভাল কেউ কখনোই বাসবেনা আমাকে। কখনোই নামাজ পড়তাম না, ঐ রাতে সারারাত কান্না করেছি,, নামাজ পড়েছি আর আল্লাহকে বলেছি আপনাকে যেন পাই। এখন আমি সব সময় নামাজ পড়ি, আর এখন থেকে আল্লাহর কাছে চাইব যেন একটা জান্নাতে আমি আর আপনি থাকতে পারি।
.
কথা বলেই যাচ্ছে মেয়েটা। আজ ছেলেটার থেকেও বেশি ভালবাসে মেয়েটা।
.
অনেক বছর হাসেনা ছেলেটা, আজ মুচকি একটা হাসি হাসল। তারপর বোকার মত বলল ” আমি যোগ্যতার মাপে অনেক বেশি অযোগ্য”।
মেয়েটা ছেলেটার হাতটাকে শক্ত করে ধরে বলল ” আমি যোগ্য মানুষ চাইনা, যোগ্য ভালবাসা চাই। যা শুধু তুমিই দিতে পার।”
.
ছেলেটা উঠে গিয়ে মেয়েটার পাশে বসল আর মেয়েটা সত্যিকারের ভালবাসা পাওয়ার সুখে ছেলেটার বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে কাঁদছে।
ছেলেটার চোখেও নোনা জল চিকচিক করছে। শক্ত করে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে ছেলেটা ভাবছে আল্লাহ অবশ্যই ধৈর্যশীল দের সাথে থাকে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত