জানি তোমাকেই পাব

জানি তোমাকেই পাব

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে কলেজের দিকে রওনা দিলাম। কলেজে পৌছে বন্ধুদেরসাথে আড্ডায় মেতে উঠাই হচ্ছে প্রতিদিনের কাজ।
আজকে কলেজে এসে দেখি হারামি গুলো কেউ এখনো আসেনি। কি আর করা একা একা বসে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে লাগলাম।

হাঠাৎ কাম্পাসের বাগানের দিকে চোখ গেলো। একটি মেয়ে একা বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে।সবুজ ঘাসের উপর বসা, কোমর পর্যন্ত লম্বা কালো চুল। যেন মনকাড়া এক দৃশ্য। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে সে মন খারাপ করেরে আছে।
তাই একপা দুপা করে হাটতে হাটতে তার পিছনে গিয়ে দাড়ালাম।
,,যদি একাকি দেখো এই সবুজ প্রকৃতি
তবে ভেবে নাওকেউ হতে চায়
তোমার একাকিত্তের সাথি।

মেয়েটা যেন ভুত দেখার মত পিছনে ফিরে চমকে গেলো।তার দুচোখের কোনে জমে আছে হাজারো অভিমানের দাগ। দুফোটা জল কনা যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। তবুও চলছে তাকে আটকে রাখার আপ্রান চেষ্টা।
আমি: হাই আমি আবির।
চুপ থাকতে দেখে আবারো বললাম,
কথা না বলতে চাইলে থাক। আসলে ভাবলাম আপনার মন খারাপ তাই একটু কথা বলতে আসলাম। যদি খারাপ কিছু বলে থাকি তাহলে মাপ করবেন।
যখনি চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম ঠিক তখনি,

মেয়েটা: আমি অধরা।

আমি:আপনাকে কেউ ধরতে পারবেনা কেনো?

অধরা: আরে তা না। আমার নাম অধরা
= ও তাই বলেন। আমিত ভাবলাম আপনি হয়ত সবার ধরা ছোয়ার বাইরে।
আমার কথায় মেয়টা একটু একটু হাসছে।
আমি: হাসছেন কেনো?
=আপনার কথা শুনে।
=যাক তাহলে কাউকে হাসাতে পারলাম।
=কি?
=কিছুনা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?
= হ্যা।

এভাবেই শুরু হয় আমার আর অধরার বন্ধুত্ব। প্রতিদিন কলেজে গিয়ে ভিবিন্ন কথা বলে ওকে হাসানোর চেষ্টা করা। কখন যে আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছি বুঝতে পারিনি। ও হ্যা আমরা দুজনই এবার অনার্স প্রথম বর্ষে।
আজকে কলেজে পৌছে দেখি অধরা আবার মন খারাপ করে বসে আছে। দেখে খুব খারাপ লাগে। ওর এরকম মন খারাপ করে বসে থাকা সবার আড়ালে লুকিয়ে কান্না করা আমাকে খুব ভাবায়। কেন জানিনা খুব জানতে ইচ্ছা করে কি এমন কষ্ট ওর।
আস্তে আস্তে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।

অধরা: আরে তুমি কখন এলে?

আমি: এসেছি অনেক সময় হলো। তোমারতো অন্যদিকে খেয়াল নেই । কি জানি কার ভাবনায় মেতে আছো।
= আরে না তেমন কিছুনা।

= আসলে আমি এমনই কাউকে আপন করতে পারিনা। সবসময় মজা করেই সবকিছু উড়িয়ে দেই।
= আরে না এভাবে বলছো কেনো?
= তা কিভাবে বলব।তুমি সবাসময় মন খারাপ করে বসে থাকো বসে থাকো। আমাকে কখনো কিছু বলোনা। অবশ্য বলবে কেনো? আমিতো তোমার কেউ না!
= আরে না তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু।
= তাহলে বলো কি এমন হয়েছিলো তোমার সাথে। যারজন্য সারাক্ষন মন খারাপ করে বসে থাকো।
= আজ না পরে বলব।
=আচ্ছা তোমাকে এখন বলার জন্য জোর করব না। তোমার যখন ইচ্ছা হয় তখন বলবে। এখন চলো ফুসকা খাব। (আগে ওর মন খারাপ ভালো হোক তারপর সব কিছু শুনব)
=আমার ভালো লাগছে না খেতে।তুমি যাও।

এক প্ররকার জোর করে নিয়ে গেলাম। আসলে ওর মন খারাপ থাকলে আমার কিছু ভালোলাগেনা। মনে হয় যেন আমারি মন খারাপ। কেউ যেন আমার বুকে কেউ সজোরে আঘাত করছে। আমি হয়ত ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। না হলে এমন কেনো হবে? ওর কষ্টে আমার কান্না পায়,ওর হাসিতে যেন আমার পুরো দুনিয়া সুখে ভরে যায়।
আবার একাকিতধরেছে তোমায় ঘিরে,
কেনো ফুটা ফুলের মত অল্পতেই যাচ্ছো ঝরে?
আশেপাশে ছড়িয়ে আছে হাজার ভালোলাগা
তাদের ধরে আমাদের চলতে থাকা।
তবে কেন ঝরাও চোখের জল,?

অধরা: আরে তুমি কখন এলে?

আমি: এসেছি অনেক সময় হলো। তোমারতো অন্যদিকে খেয়াল নেই । কি জানি কার ভাবনায় মেতে আছো।
= আরে না তেমন কিছুনা।
= আসলে আমি এমনই কাউকে আপন করতে পারিনা। সবসময় মজা করেই সবকিছু উড়িয়ে দেই।
= আরে না এভাবে বলছো কেনো?
= তা কিভাবে বলব।তুমি সবাসময় মন খারাপ করে বসে থাকো বসে থাকো। আমাকে কখনো কিছু বলোনা। অবশ্য বলবে কেনো? আমিতো তোমার কেউ না!
= আরে না তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু।

= তাহলে বলো কি এমন হয়েছিলো তোমার সাথে। যারজন্য সারাক্ষন মন খারাপ করে বসে থাকো।
= আজ না পরে বলব।
=আচ্ছা তোমাকে এখন বলার জন্য জোর করব না। তোমার যখন ইচ্ছা হয় তখন বলবে। এখন চলো ফুসকা খাব। (আগে ওর মন খারাপ ভালো হোক তারপর সব কিছু শুনব)
=আমার ভালো লাগছে না খেতে।তুমি যাও।
এক প্ররকার জোর করে নিয়ে গেলাম। আসলে ওর মন খারাপ থাকলে আমার কিছু ভালোলাগেনা। মনে হয় যেন আমারি মন খারাপ। কেউ যেন আমার বুকে কেউ সজোরে আঘাত করছে। আমি হয়ত ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। না হলে এমন কেনো হবে? ওর কষ্টে আমার কান্না পায়,ওর হাসিতে যেন আমার পুরো দুনিয়া সুখে ভরে যায়।
ফুসকার প্লেট হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি। কিছুতেই খাবেনা।

আমি : অধরা

অধরা: হুম বলো
=হা করো
=কেন?
=করোনা
=ওকে
ওর মুখে ফুসকা ভরে দিলাম।
আর কিছু বলতে পারছেনা।

শুনেছি মেয়েরা ছেলেদের খাইয়ে দেয়, আর আমার ক্ষেত্রে উল্টো আমি ছেলে হয়ে ওকে খাইয়ে দিচ্ছি।
ও আর কোনো কথা বলছে চুপচাপ খেয়ে নিলো।
ফুসকা খাওয়া শেষ করেরে ওকে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।
মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। কি হয়েছে অধরার, কি আছে ওর অতিত, যার জন্য সব সময় মন খারাপ করে বসে থাকে? আমাকে জানতেই হবে কাল কলেজে গিয়ে।
সারারাত ঘুমোতে পারিনি। সকাল হতেই কলেজে চলে এসেছি। এসে দেখি কলেজে এখনো কেই আসেনি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৮ টা বাজে। বুঝতে পারলাম টেনশনে সময়ও দেখিনি।
কি আর করা ক্যামপাসে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন অধরা আসবে।

অপেক্ষা করতে করতে অধরা আসলো ৯ টার দিকে। আজ বুঝলাম কারো জন্য অপেক্ষা করাটা কতটা কষ্টের।

অধরা: আরে আবির কখন এলে?

আমি: এইত কিছুক্ষন আগে।চলো ওদিকটায় গিয়ে বসি।
=হুম চলো।
=আচ্ছা অধরা আমাকে একটা কথা বলবে?
=হুম বলো কি জানতে চাও?যা জানতে চাও তাই বলব।
=বেশি কিছুনা শুধু তোমার মন খারাপের কারনটা বললেই হবে।
=আচ্ছা আবির বলোতো কাউকে মন থেকে ভালোবাসাকা কি অপরাধ?
ওর কথাটা শুনে আমার ভিতর যেন কেমন একটা করেরে উঠল। তারপরও নিজেকে সংযত রেখে বললাম
=দেখো পৃথিবীতে যদি পবিত্র কিছু থেকে থাকে তাহলে সেটা হলো ভালোবাসা। এর থেকে দুর্লব কোনো কিছু নেই। এর কোনো পরিধি নেই নেই কোনো স্বার্থ। এটা কাউকে বলে বোঝানো যায়না। হয়ত কেউ বোঝেও না। আচ্ছা তুমি কি কাউকে ভালোবেসেছিলে?
=হুম

আমি যেন মুহুর্তেই থমকে গেছি। মুখ থেকে কথা বেরোচ্ছে না। বুকটা ভারি হয়ে গেছে। আচ্ছা এটাই কি তাহলে ভালোবাসা? কিন্তু ও তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। তাহলে ওর জন্য কেনো আমার এরকম হচ্ছে?
=আচ্ছা আমাকে বলবে কি হয়েছে তোমাদের মাঝে যার জন্য আজ তুমমি এতটা কষ্টে আছো?
=আমি তখন সবো sscদিয়ে কলেজে ভর্তি হই। কিছুদিন খুব ভালোই চলছিল আমার কলেজ জীবন। প্রায় ২ মাস যাওয়ার পর প্রতিদিন লক্ষ করতাম ১টা ছেলে আমার পিছন পিছন আসে। কলেজে গেলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ছেলেটা দেখতে ছিলো খুব সুন্দর। তাকে আমার মনে ধরেছিলো। আমারও তার এই তাকিয়ে থাকা, কলেজে ছুটির পর পিছু নেওয়া খুব ভালো লাগতো। তবে আমরা কেউ কারো সাথে কথা বলতাম না। আমারও খুব ইচ্ছে হতো ওর সাথে পাশাপাশি হাত ধরে বসতে। কলেজ ছুটির পর দুজন পাশাপাশি হাটতে। কিন্তু ও সাহস করে কখনো আমার সাথে কথা বলেনি।
এভাবেই চলে যায় ৩ টি মাস। হঠাৎ একদিন ওর আমার সামনে এসে দাড়ায়। আমি যেন ভুত দেখারর মত চমকে যাই।

ছেলেটা: হাই আমি অনিক
=তো আমাকে কেন বলছেন?(একটু ভাব নিয়ে)

অনিক:আপনিতো অধরা তাইনা?
=হুম
=আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো?
=বলেন?
=তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই শুধু তোমাকেই সারাক্ষন দুচোখে খুজে পাই। প্রতিদিন কলেজে এসে তোমায় দেখি আর ভাবি যদি দুজন পাশশাপাশি বসে কিছুটা সময় কথা বলতে পারতাম?প্রতিদিন কলেজ ছুটির পর যখন তোমার পিছন পিছন যাই তখন খুব ইচ্ছে তোমার পাশাপাশি হাটতে। এই অনুভুতির নাম কি আমি জানিনা। তবে এর নাম যদি ভালোবাসা হয় তাহলে আমি তোমাকে ভালোবাসি।

জানো আবির ওর কথাগুলো শুনে কি বলব বুঝতে পারিনি। তখন কিছু না বলেই চলে আসি।
পরে ঠিকই ওকে হ্যা বলে দি। এরপর থেকেই শুরু হয় আমাদের ভালোবাসার গল্পটা। প্রতিদিন দুজন কলেজে একসাথে বসে থাকা। বাড়ি ফেরার সময় পাশাপাশি দুজন হাত ধরে হেটে চলা।
আমি যেন আস্তে আস্তে ওর স্বপ্নের দুনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি অন্ধ হয়ে গেছিলাম ওর ভালোবাসায়।
এভাবেই কেটে যায় ১ টা বছর। এরপর থেকে অনিক যেন কেমন বদলে যেতে থাকে। আগের মত আর কথা বলেনা। কলেজ ছুটির পর পাশপাশি হাটে না।কেমন যেন আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।
আমি ওর হাবভাব কিছুই বুঝে উঠে পারছিলাম না।

এরপর অধরা চুপ হয়ে গেলো।আজ নিজেকে খুব খুশি লাগছে। জানিনা এই ভালোলাগার নাম কি। হয়ত অধরাকে নিয়ে আমি নতুন স্বপ্ন দেখছি। আচ্ছা সত্যিকি ভালোবাসায় অনেক কষ্ট থাকে?আমারত মনে হয় না। তাহলে অধরা সবসময় ওই ছেলেটার জন্য কান্না কেনো করে? আচ্ছা আমি এসব কেনো ভাবছি? তাহলে কি অধরাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবনা.?কিন্তু ওতোতো অন্য কাউকে ভালোবাসে। আর আমি ওকে ভালোবাসি। ও কি আমার ভালোবাসা গ্রহন করবে? না কি আমাকেও দুরে ঠেলে দেবে?
সে যা হয় হবে এসব ভেবে আমার কোনো কাজ নেই। পরো অধরার কাছ থেকে সবকিছু জেনে নেওয়া যাবে।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং

আমি : হ্যালো কে?

অধরা: ওই তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো?
=তো এত সকালে কি ফুটবল খেলব আমি?
=ওই ৮টা বাজে। এখন ওঠো আর ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি কলেজে চলে আসো।
= কেনো?
=কোনো কেনো নেই তুমি এক ঘন্টার মধ্যে কলেজে আসবে?
=ওকে আসছি।
=হুম তাড়াতাড়ি আসো।

কি আর করা সাধের ঘুমটার ১২ টা বাজিয়ে দিলো। ওঠে ফ্রেস হয়ে কলেজের দিকে পা বাড়ালাম।
কলেজে পৌছে দেখি অধরা বসে আছে বাগানে। আমিও আস্তে আস্তে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
যদি একা থাকো বসে
হঠাৎ কেউ এসে বসে যায় পাশে,
তবে কি ভাববে তুমি!
সেওযে তোমায় ভালোবাসে

অধরা: এখন সময় হলো তোমার আসার?

আমি:সরি একটু দেরি হয়ে গেলো।
=হুম এত ঘুমালে দেরিতো হবেই
=আচ্ছা কাল থেকে ঠিক সময়ে চলে আসব ওকে।
=ওকে এবার চলো ফুসকা খাব
=কি???? আজকে হটাৎ কিহলো তোমার?এতদিনতো আমি তোমাকে জের করে নিয়ে যাই।
=আচ্ছা যাও খাবনা?(অভিমান করে)
=ওই না চলো।
দুজনে গেলাম ফুসকা খেতে। ও হাতে ফুসকার প্লেট নিয়ে গফ গফ করে খেয়ে চলেছে
আর আমি অপলক তাকিয়ে দেখছি।
যদি ওর ফুসকা খাওয়া ভাবে সারাজীবন দেখতে পারি তাহলে কেমন হত।

অধরা:ওই হা করে কি দেখছো?

আমি: কই কিছুনাতো?(ওর কথায় ভাবনায় ছেদ পড়ল)
=তাহল খাও?
=খেতে ইচ্ছে করছেনা।
বলতে দেরি হলেও ওর খাইয়ে দিতে দেরি হলোনা।

অধরা: হা করো?
আমি চুপচাপ হা করে আছি আর ও আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।
আমি যেন আবার কোথায় হারিয়ে গেলাম। আমি অধরার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। আর ও আমার মাথায়য় বিলি কেটে দিচ্ছে। আর আমি ওর মুখের দিকে অপলক চেয়ে আছি।

অধরা:আহ, হু হু

আমি: এই কি হলো কি হলো?
ওর চিল্লানিতে আবারও ভাবনায় ছেদ পড়ে গেলো।
=কামর দিকে কেনো?
=সরি সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি। সরি
=(চুপ। শুধু আঙুল ঝাকাচ্ছে)
=সত্যি আমি ইচ্ছা করে করিনি। ভুল করেরে হয়ে গেছে।
=হুম আর কখনো আমি তোমাকে খাইয়ে দেবনা।
=সরি তো বললাম। সত্যি আমি ইচ্ছা করেরে করিনি।
=হুম আচ্ছা এখন চলো বাড়ি যাব।
=হুম চলো।

এভাবেই চলছিলো আমাদের দুষ্টুমিষ্টি বন্ধুত্ত। আমি এখনো আমার ভালোবাসার কথা ওকে বলিনি। কি দরকার আবার ভালোবাসি বলে ওকে পুরুনো কথা গুলো মনে করিয়ে দেওয়ার। আর আমাদের বন্ধুত্তটাই ভালোবাসার থেকে কম কিসে। তবুও মাঝে মাঝে আমার ভয় হয় অধরা যদি আবার হারিয়ে যায়। তবে আমার বিশ্বাস অধরা আমারই থাকবে। কারন অধরা শুধুই আমার। আর আমি জানি জীবন সঙ্গী হিসেবে আমি ওকেই পাব। এটা আমার বিশ্বাস।
একদিন কলেজে গিয়ে দেখলাম একটা ছেলে বার বার অধরার হাত ধরছে। আর অধরা বিরক্তিতে সেটা বার বার ছাড়িয়ে নিচ্ছে।
আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। সোজা গিয়ে ছেলেটার দুই গালে দুটো চড় বসিয়ে দিলাম।
হঠাৎ ঠাসসসসসসসশ করে একটা শব্দ হলো।
অধরা আমার গালে চড় মেরেছে।
আমি কিছুই বলতে পারলাম না চুপ করে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম।
অধরা বলতে শুরু করলো অধরা:একে মারার সাহস কে দিয়েছে তোমাকে?

আমি:এ তোমার হাত ধরেছিলো
তাই ভাবলাম হয়ত তোমাকে ডিস্টার্ব করছে এজন্য মেরেছি।(মাথা নিচু করে)

অধরা:তুমি জানো এ কে?

আমি: কে?

অধরা: এই হলো অনিক
নামটা শুনেই যেন আমার পুরো পৃথিবী থমকে দাড়ালো।আমার হাজারো সজানো সপ্ন যেন এক নিমেশেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।তবুও কাউকে কিছু বুঝতে দিলাম না। এবার অনিককে উদ্দেশ্য করে বললাম

আমি:সরি আমি আসলে না চিনে আপনার গায়ে হাত তুলে ফেলেছি মাপ করবেন।
তারপর অধরাকে বললাম আমি ওই দিকটায় আছি তোমরা কথা বলো।
আমি ওদের থেকে একটু দুরে সরে এসে বসলাম। কেনো জানি অধরাকে ছাড়া আমার কিছুই ভালো লাগছে না। বুকের মাঝ ব্যাথা অনুভব করলাম। তাহলেকি অধরাকে আমি হারাতে চলেছি। না এটা কখনোই হতে পারেনা কারন অধরা শুধু আমার। আর আমার বিশ্বাস ও আমারই থাকবে।
প্রায় ৩০ মিনিট পর অধরা আসল। ওকে খুব খুশি খুশি লাগছে। অনিক হয়ত ক্ষমা চেয়েছে তাই আজ ও এত খুশি। আর আমি এত বার হাসাতে চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছি। হয়ত এমনই হয় ভালোবাসার মানুষের একটু অবহেলায় পুরো পৃথিবী থেমে যায়, আবার তার একটি কথায় পুরো পৃথিবী সপ্নে ভরে যায়।

আমি:তুমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছো?

অধরা: না এখনো কিছু বলিনি।
=ওহ
=আচ্ছা বলোতো কি করব?
=দেখো এটা তোমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার । এ বিষয়ে আমার কিছু বলা ঠিক হবেনা। (যাকে নিয়ে এত সপ্ব সেই যদি এসে বলে অন্যকারো কথা। তাহলে আর কিইবা বলার থাকে)
=দেখো আবির তুমিই হচ্ছো আমার সবথেকে ভালো বন্ধু। আমার মন খারাপের সময় তুমিই ছিলে আমার পাশে। তাই তুমি যেটা বলবে সেটাই ঠিক হবে।
(বুঝতে পারছি সামনে আমার জন্য ভয়ংকর কষ্ট অপেক্ষা করছে।তবুও আমাকে সবকিছু মেনে নিতে হবে। কারন আমিযে না জেনেই ভালোবেসে ফেলেছি ওকে।)

অধরা:ওই কি ভাবছো?

আমি:দেখো তোমার যদি মনে হয় সে ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তাহলে ওকে ক্ষমা করে দাও।আর যদি মনে হয় ও আবার তোমাকে ধোকা দেবে তাহলে ওর থেকে দুরে থাকো।

অধরা:আচ্ছা।
অধরা চলে যাচ্ছে। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম। অন্যদিন হলে হয়ত আটকাতাম তবে আজ কেনো যেন মনে হচ্ছে তাকে আর আটকানো ঠিক হবেনা।
পরেদিন সকালে আবারো ফোনেট শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ২ বার রিং হয়ে ফোনটা কেটে গেলো। ৩য় বার আর না ধরে পারলাম না

আমি:হ্যালো কে?

অধরা:ওই তুমি ঘুমাচ্ছো এখনো?
=ওহ তুমি। না এমনি শুয়ে আছি
=তোমার গলা এরকম শোনাচ্ছে কেনো?
=আরে ও কিছুনা। বলোলো কি হয়েছে?(আসলে সারারাত না ঘুমানোর জন্য গলাটা একটু ভারি হয়ে গেছে)
=ওকে। তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো আমরা ঘুরতে যাব।
=ওকে আসছি।
কিছুটা অবাক না হয়ে পারলাম না। যাকে প্রতিদিন জোর করে ঘুরতে নিয়ে যাই। সেই আজকে নিজে থেকে বলছে ঘুরতে যাবে।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে চলে গেলাম।

গিয়েতো আমি আরও অবাক হলাম। অধরা আর অনিক দাড়িয়ে আছে একসাথে। বুকটা যেন হঠাৎ করেই ভারি হয়ে গেলো। তবুও কাউকে কিছু বুঝতে দিলাম না। আমাকে দেখে অনিকের মুখটা কালো হয়ে গেলো। ওভেবেছিলো আমি হয়ত আসব না।
সারাদিন ঘুরাঘুরির পর ক্লান্ত শরীরটা যখন বিছানায় এলিয়ে দিলাম তখন সারাদিনের স্মৃতি গুলো দুচোখে ভেসে উঠলো।
অধরা অনিককে ক্ষমা করে দিয়েছে। পুরোনো সব কথা ভুলে আবার নতুন করে জীবন শুরু করছে তারা। আমিই এখন এদের মাঝে বাধা হয়ে দাড়িয়েছি।
এভাবে প্রতিদিন ওদের সাথে ঘুরতে যেতে হয়। ইচ্ছা হয়না যেতে তবুও অধরার কথা ফেলতে পাররিনা।
একদিন অনিক আমাকে বললো

অনির:আবির ভাইয়া একটা কথা বলব?

আমি:হুম বলো।
=আপনি কখনো প্রেম করেছেন?
=না কেন?

=আচ্ছা আমি আর অধরা যখন ঘুরতে যাই তখন আপনার জরুরি আমাদের সাথে যাওয়া?আমরা যখন আমরা কোনো রোমান্টিক কথা বলি আপনি কান পেতে শোনেন। আপনার জন্য আমরা ভালো করে কথাও বলতে পারিনা।
সেদিন আমি অনিকের কথা কোনো উত্তর দিতে পারিনি। চুপ করে সেখান থেকে মাথা নিচু করে চলে আসি। তারপরও অধরাকে একা কখনো যেতে দিইনি অনিকের সাথে।
একদিন কলেজ শেষ করে ফিরছি। হঠাৎ কিছু লোক আমাকে ঘিরে ধরলো। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকগুলো আমাকে মারতে শুরু করলো।
হঠাৎ মাথায় কেউ যেন জোরে একটা বাড়ি দিলো। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। যখন আমার জ্ঞান ফিরল তখন আমি হাসপাতালের বেডে শুয়া। আমার একপাসে বসে আছে আমার রুমমেট হৃদয়, আর অন্যপাশে অধরা।বুঝতে পারলাম মাথায় খুব জোরে আঘাত পেয়েছি। মাথাটা নারাতে পারছিনা। সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো মাথা।আমাকে চোখ খুলতে দেখে

অধরা:কি হয়েছিলো কালকে?

আমি:আরে তেমন কিছুনা। কালকে কলেজ থেকে ফেরার পথে গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।(অধরাকে সত্যিটা বলা যাবেনা)

অধরা:একটু দেখে পথ চলতে পারোনা?

আমি:আরে বাদদাও ওসব। এবার বলো তোমাকে কে বলেছে আমি হাসপতালে?

অধরা:তোমার ফোন থেকে কেউ কলে করেরে বলছিলো তুমি রক্তাত্ব অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছো । তাই তাড়াতাড়ি সেখানে পৌছে তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম।

আমি:ওহ।

অধরা: আচ্ছা আজকে তাহলে আসি। পরে আবার আসব।

আমি:আচ্ছা।
এবার আমার রুমমেটের দিকে তাকালাম। ও দেখি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি:কিরে হৃদয় আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?(আমার রুমমেটের নাম হচ্ছে হৃদয়। ও শুধু আমার রুমমেট না, আমার সবথেকে ভালো বন্ধু)

হৃদয়:কি হয়েছে সত্যি করে বল?

আমি:আরে বললামত এক্সিডেন্ট হয়েগেছে।
=দেখ আমাকে একদম মিথ্যা বলবিনা? ডাক্তার বলছে তোর শরীরে দাগ দাগ হয়ে গেছে। তারা অনুমান করছে কয়েকজন মিলে তোকে খুব মেরেছে।
অগত্যা হৃদয়ের কাছে আর কিছু লুকোতে পারলাম না।সবকিছু বলতেই হলো।
বিকালে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ কেউ যপন হাত ধরে টানছে। চোখখুলে দেখি অধরা।

আমি:কি ব্যাপার এভাবে হাত ধরে টানছো কেনো?

অধরা:এতক্ষন চিল্লাচ্ছি শুনতে পাওনি তাই।
=ও। তা এখন হঠাৎ তুমি আসলে?
=তেমার জন্য খাবার নিয়ে আসলাম। সারাদিনতো বাইরের পাউরুটি আর কলা খেয়েই আছো।এবার হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি। খেয়ে লক্ষী ছেলের মত ওষুধ খেয়ে নেবে।
অধরা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর আমি চুপচাপ বসে খেয়ে চলেছি। প্রিয় মানুষটার হাতে খেতে পারা সবার ভাগ্যে থাকেনা। আমি হয়ত ভাগ্য তাই আজ পারছি।

অধরা:নাও এবার ওষুধগুলো খেয়ে নাও।

আমি:হুম খাচ্ছি। আচ্ছা তোমার চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে কেনো? রাতে ঘুমাওনা মনে হচ্ছে।
=আরে না তেমন কিছুনা। তুমি এখন একটু ঘুমাও আমি কালকে সকালে আবার আসব । এখন আসি বাই।
আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অধরা বেরিয়ে গেলো । কিন্তু ওর চোখের নিচের কালো দাগ আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। নিশ্চই অনিকের সাথে হয়ত কোনো ঝামেলা হয়েছে। নাহ আর ভাবতে পারছিনা। মাথাটাটা ভারি হয়ে আসছে। এখন একটু ঘুমাতে হবে।

হৃদয়: কিরে ঘুমাচ্ছিস না কি?
বন্ধু হমদয়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।

আমি:হ্যারে একটু ঘুমাচ্ছিলাম। তুই আবার এখন আসতে গেলি কেনো?পড়বিনা?
=আরে পরে পড়ব। একদিন না পড়লে কিছু হবেনা। তোকে একটা কথা বলার ছিলো।
=বল
=তোকে যারা মেরেছে তারা কেউ তোকে চেনেনা।অনিক নামের কেউ তাদের টাকা দিয়েছিলো তোকে মারার জন্য।
=ওহ
=হুম। এবার বল কে এই অনিক?
=আরে বাদ দেতো এসব। তুই জেনে কি করবি?
=তুই বলবি কি না?(চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
=অধরা অনিককে ভালোবাসে।
আমার কথা গুলো শুনে হৃদয় চুপ হয়ে গেলো। কারন আমি ওকে বলেছিলাম আমি অধরাকে ভালোবাসি। কিন্তুওকে এটা বলিনি যে অধরা অন্য কাউকে ভালোবাসে। হৃদয়ে চুপ থাকতে দেখে আমি বললাম

আমি:প্লিজ হৃদয় তুই অধরাকে এসব বিষয়ে কিছু বলিসনা?

হৃদয়:কিন্তু কেনো?
=ও জানলে খুব কষ্ট পাবে। আর আমি ওর কষ্ট সহ্য করতে পারবনা।
=কিন্তু একদিনত জানবে?
=যেদিন জানবে সেদিন হয়ত ওর কাছে আমি থাকবনা।
=আচ্ছা তুই যা চাস তাই হবে।আমি কাউকে কিছু বলবনা। তুই এখন একটু ঘুমা কালকে সকালে হাসপাতাল থেকে আমরা বাড়ি চলে যাব।
=হুম।
সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে মেসে চলে আসলাম। অধরাকে ফোন করে বলেদিয়েছি আমরা হাসপাতালে নেই।
রুমে শুয়ে ছিলাম হঠাৎ কেউ ডাকাডাকি করছে। চোখ খুলে দেখি অধরা দাড়িয়ে আছে আমার সামনে।

অমি:তুমি এখানে?

অধরা :কেনো আসা বারন না কি?
=না তা না।
=এবার উঠে উঠে খেয়েনাও।
=আবার খাবার আনতে গেলে কেনো?
=তাতে তোমার কি । তুমি চুপচাপ খেয়ে নাও।
খাওয়া শেষে ওষুধ খেয়ে নিলাম। অধরার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখ অন্ধকার করে আছে। কি হয়েছে ওর অনিকের সাথে আমাকে জানতেই হবে।

আমি:আচ্ছা অধরা অনিক কোথায়? ও তো দেখতে আসলনা আমাকে?

অধরা:জানিনা আমি।
=কিছু হয়েছে অনিকের সাথে তোমার?
=আরে না বাদ দাও ওসব।
=বলো কি হয়েছে?

=আসলে তুমি যখন এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পরেছিলে তখন কেউ একজন আমাকে ফোন করে তোমার কথা বলে। অনিক আর আমি তখন ঘুরতে বেরিয়েছিলাম । তোমার কথা অনিককে বললে ও বলল,, তুমি মরে গেলে আমার কি, আমাকে আসতে দিতে চাচ্ছিলো না। আমি জোর করে চলে আসছি। তারপর থেকে আর আমার সাথে কথা বলেনি।
কথাগুলো বলতে গিয়ে কেদে ফেলল অধরা।ওর কান্না আমি কখনই সহ্য করতে পারিনা। আজ আমার জন্যই ওদের মাঝে ফাটল ধরল। আমাকেই আবার ওদেরকে এক করতে হবে।

আমি:আচ্ছা অধরা তুমি এখন যাও। আমি একটু ঘুমাব।
=আচ্ছা ওষুধ খেয়ে নিও।
=ওকে।

অধরা চলে গেলো। আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। ওদেরকে মিলিয়ে দিয়ে ওদের থেকে দুরে চলে যেতে হবে।কিন্তু আমার মনতো শুধু বলছে অধরা আমারই হবে। এখন মনের কথা শুনতে গেলে হবেনা। আমাকে অধরার খুশির জন্য ওর থেকে দুরে চলে যেতে হবে। ভালোকরে সুস্থ হতে ১০দিন লেগে গেলো। এখন আর মাথায় ব্যান্ডেজ নেই। হাতে পায়েও তেমন একটা ব্যাথা নেই। এখন হাটা চলা করতে পারি। একয়দিন অধরা আমার অনেক সেবাযত্ন করেছে। আসলে অধরা না থাকলে আমি এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারতাম না। কিন্তু ওর আবার সেই মন খারাপ করে থাকা আমাকে বার বার কষ্ট দিচ্ছে। অনিক আর অধরার মাঝে আমি এখন দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছি। যেটা অধরাকে সবথেকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে।অধরা না পারছে আমাকে ছাড়তে, আবার আমার জন্য অনিক ওকে দুরে ঠেলে দিচ্ছে।যেটা ও কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। এখন আমাকেই ওদেরর থেকে দুরে যেতে হবে। আমি ওদের দুজনের মাঝে থাকলেই অধরা আরো কষ্ট পাবে। যা আমি কখনোই মেনেনিতে পারবনা।

আমি:হেলো অধরা?

অধরা:হুম বলো
=কালকে একটু ক্যাম্পাসে দেখা করতে পারবে?
=আচ্ছা ৯টার দিকে চলে আসব।
=আচ্ছা মনে থাকে যেন?
=ওকে
=আচ্ছা এখন রাখি
=ওকে

এবার দিলাম অনিককে কল। কলটা রিছিব হতেই,
কাল কলেজে এসে দেখিস অধরাকে আমি প্রপোজ করব। পারলে ঠেকাস,,,, এই বলেই কলটা কেটে দিলাম।
জানি এবার অনিক অধরাকে বলবে আমি কালকে ওকে প্রপোজ করব। অধরা অনিকের কথা বিশ্বাস করবেনা তাই অনিককেও আসতে বলবে কলেজে। কিন্তু আমাকেতো অধরার কাছে খারাপ হতেই হবে। ওদের থেকে দুরে যেতে হবে। না হলে অধরার কষ্ট আরো বাড়বে।
পরেরদিন কলেজে গিয়ে দেখি অধরা বসে আছে। অনিক অধরার থেকে একটু দুরে বসে আছে। হয়ত অধরা আবার রাগ করেছে কালকের কথায়। কিন্তু আমার ওদিকে খেয়াল করতে গেলে হবে না।
সোজা অধরার সামনে গিয়ে দাড়ালাম

আমি:অধরা I love you. প্রথম যেদিন তোমায় দেখেছি সেদিন থেকে তোমাকে ভালো লেগে যায়। আর সেই ভালোলাগা কখন যে ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে বুঝতে পারিনি।

অধরা:ঠাসসসসসসস… ছিঃ আবির আমি ভাবতেও পারিনি তুমি এমন একটা কাজ করবে। তুমি অনিককেও বলেছো তুমি আমাকে আজকে প্রপোজ করবে। আমি বিশ্বাস করিনি। ভেবেছিলাম অনিক মিথ্যা বলছে। কিন্তু না আমিই ভুল ছিলাম। তোমাকে ভালোবন্ধু ভেবে বিশ্বাস করেছিলাম যেটা আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল।

আমি:(নিশ্চুপ) নিচের দিকে তাকিয়ে অপরাধির মত দাড়িয়ে আছি। এবার অনিক

অনিক:তোমাকেতো আমি প্রথমেই বলেছিলাম একে বিশ্বাস করোনা। কিন্তু তুমি এই থার্ডক্লাস ছেলেটার জন্য আমাকে অবহেলা করলে।

অধরা:অনিক বাদ দাও এসব। এখানে আর থাকা যাবেনা। চলো এখান থেকে চলে যাই।
অধরা অনিককে টানতে টানতে ওখান থেকে নিয়ে গেলো।আমার দুচোখের কোনে আজ জলকনা জমা হয়েছে। হয়ত এটাই ভালোবাসা।

অধরা চলেযাচ্ছে আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি। অনেক স্মৃতি জমা হয়ে গেলো আজ। হয়ত আর দেখা হবেনা অধরার সাথে।এ শহর ছেড়ে চলে যাব। এখানে থাকলে হয়ত অধরাকে অনিকের সাথে দেখতে পারবনা। আর আমি এখন চলে গেলেও কোনো সমস্যা নেই। অধরারর কাছে আমি এখন বিশ্বাসঘাতক।
এটাই চেয়েছিলাম আমি। অধরা আমাকে ঘৃনা করুক। আজ তাই হলো। আমি পেরেছি অধরাকে তার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে।

চলেযাব অনেক দুরে,
ইট পাথরের এই শহর ছেড়ে।
জানি আবার হবে দেখা
থাকলো শুধু সেদিনের অপেক্ষা।
তুমি আসবে,কোনো এক গোধুলি বিকেলে
আমি সেদিনও থাকব দাড়িয়ে হৃদয় দুয়ার খুলে।
বিকাল হয়ে গেছে। এখন মেসে ফিরতে হবে। হৃদয় বার বার ফোন করছে। ক্যাম্পাস থেকে উঠে মেসের দিকে পা বাড়ালাম। আজ সবকিছুই যেন অসহ্য লাগছে। আজব ব্যাপার কালও এই শহরটা কত ভালো লাগছিলো আর আজ মনে হচ্ছে কখন এই শহর ছেড়ে দুরে চলে যাব।
মেসে ফিরতে ফিরতে সন্ধা হয়ে গেলো। ফেরার সাথেই হৃদয়ের প্রশ্ন সারাদিন কোথায় ছিলি,কি করছিলি? আমি চুপ হয়ে আছি। তারপর বললাম,

আমি:জানিস আজকে অধরাকে প্রপোজ করেছি।

হৃদয়:কি বলেছে অধরা?
=থাপ্পর মেরেছে একটা। দেখখ এখনো হয়ত গালে দাগ আছে। জানিস আজ আমি অনেক খুশি। অধরা আমার জন্য অনিকের সাথে ঝগরা করেছিলো। আজ আমি ওকে প্রপোজ করেছি বলে আমাকে চড় মেরে অনিকের হাত ধরে চলে গেছে।

=মানে কি?কি বলছিস তুই এসব?আর কোনো ওকে প্রপোজ করলি?
=যাতে করেরে অধরা আমাকে ঘৃনা করে। আসলে কদিন থেকে দেখছি ও সবসময় মন মরারা হয়ে থাকে। রাতে ঘুমায়না, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে তাই এই কাজটা করলাম।
=কি রে কাপড় গুছাচ্ছিস কেনো? (ওর সাথে কথা বলতে বলতে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছি)
=রাতে গ্রামে যাব তাই।
=কেনো?
=এমনি বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে তাই।
=জানি অধরার থেকে দুরে থাকার জন্য তুই চলে যাচ্ছিস।
=হ্যা রে। আচ্ছা শোন অধরা যদি কখনো আসে তাহলে এই চিঠিটা ওকে দিয়েদিস। (একটা চিঠি দিয়ে)
আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদেদিলো পাগলটা।

=এই কাদছিস কেনো। শোন নিজের খেয়াল রাখবি, আর ভালো করে লেখাপড়া করবি। আরর এই নাম্বারটা বন্ধ করে দেব। নতুন সিম নিয়ে তোকে কল করব। ভালো থাকিস।
হৃদয়কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসলাম মেস থেকে।
এখন চলেছি আজানা গন্তব্যে যেখানে আমি একজন অপরিচিত আবির শহর ছেড়ে চলে গেছে ১ মাস হয়ে গেলো।হৃদয় বার বার ট্রাই করছে ফোনে। কিন্তু আবিরের নাম্বারও বন্ধ।
অধরা আর অনিক বসে আছে পার্কে। অধরা আবিরকে এতটাই ঘৃনা করা শুরু করেছে যে, আবির নামের কেউ তার জীবনে ছিলো,, এটা সে ভুলেই গেছে।
অনিক অধরার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে পার্কের বেঞ্চিতে। হঠাৎ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে ওদের সামনে দাড়ালো। অনিক মেয়েটাকে দেখেই শুয়া থেকে উঠে বসলো। ঠিক যেমন অধরাকে দেখে একদিন অন্য একটি মেয়ের কোল থেকে উঠেছিলো।

মেয়েটা:এই তুমি এটা কার কোলে শুয়ে আছো? কে এই মেয়েটা?(অনিককে উদ্দেশ্য করে বলল)

অনিক:না মানে এ হচ্ছে আমার স্কুল জীবনের বান্ধবী। অনেকদিন পর দেখা হলোতো তাই একটু কথা বলছিলাম। (আমতা আমতা করে বলল)
অধরা যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
মেয়েটা আবার বলল

মেয়েটা:দুদিন পর তোমার সাথে আমার বিয়ে।আর আজ তুমি পার্কে অন্য একটা মেয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছো!

অনিক:আরে বললামত এ আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। আজ অনেকদিন পর দেখা হলোতো তাই কথা বলছিলাম একটু।

মেয়েটা:তো স্কুলের বন্ধু বলে কি তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে হবে পার্কে।
অনিক আর কোনো কথা বলতে পারলনা
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। অধরা উঠে দাড়িয়ে অনিককে ঠাসসস করে একটা চড় মারল। তারপর কাদতে কাদতে বাড়িতে চলে আসলো।

১ সপ্তাহ আর বাড়ি থেকে বেরোলো না। সবসময় ঘরের ভিতর থাকে। আজ কেন যেন কলেজে আসলো অধরা। কিন্তু কলেজে আসতেই ওর আবিরের কথা মনে পড়ে গেলো। এ কয়দিনে আবিরকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো। আজ যেন আবিরকে তার খুব মনে পড়ছে। আবিরের সেই পাগলামি গুলোকে খুব মনে পড়ছে।
অধরা মন খারাপ করে একা বসে থাকলে বিভিন্ন কথা বলে ওকে হাসাতো।ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতো, ফুসকা খাওয়াতো। আজ যেন অনেক অনেক মিস করছে আবিরের সাথে কাটানো সেই দিনগুলোকে।
১ মাস ধরে প্রতিদিন কলেজে যায় অধরা সে ভাবে হয়ত আবির আসবে। কিন্তু না আবির আসেনা। আবিরের নাম্বারে ট্রাই করে দেখে বন্ধ। এভাবে চলে যায় আরোও একটি সপ্তাহ। অধরা আবিরের কোনো খবর না পেয়ে সোজা মেসে চলেযায়।

রুমের সামনে দাড়িয়ে ২-৩ বার দরজা ধাক্কা দেওয়ার পরেই হৃদয় দরজা খুলে দেয়।
হৃদয়:ওহ তুমি!আসো ভিতরে আসো।(অধরা অবাক হলো হৃদয়ের কথায়। তার মনে হলো হৃদয় যেন আগে থেকেই জানত সে এখানে আসবে।)
তা এতদিন পর এখানে হঠাৎ?
অধরা:আবির কোথায় ভাইয়া?
হৃদয় কিছু বললনা শুধু আবিরের দেওয়া চিঠিটা অধরার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাইরে চলে গেলো।
অধরা চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলো।

প্রিয়
অধরা,
কেমন আছো? নিশ্চই ভালো আছো। আর ভালো থাকারই কথা। তা এতদিন পর মনে পড়ল আমাকে?জানো আমি প্রতিটা দিন ভাবতাম তুমি আসবে আমাকে খুজতে। দেখো আজ এসেই পড়েছো। তবে আমাকে না পেয়ে আমার এই চিঠিটাই পেলে।

তোমাকে যেদিন প্রথম কলেজে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখি। সেদিনই তোমাকে আমার খুব ভালোলেগে যায়। বার বার তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হতো। কিন্তু তোমার মন খারাপ করে থাকা আমার একটুও ভালো লাগতো না। তাইত বার বার তোমাকে হাসাতে চেষ্টা করতাম। তোমার সাথে থাকতে থাকতে কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতে পারিনি। তুমি যখন আমাকে অনিকের কথা বলেছিলে তখন থেকে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোমার মুখে সবসময় হাসি ফুটিয়ে রাখব। তোমাকে কখনো কষ্ট দেবনা। কিন্তু যখন শুনলাম তুমি আমার জন্য অনিকের সাথে আবার ঝগড়া করেছো।তখন খুব খারাপ লেগেছিলো।
সত্যি আমি চাইনি এভাবে তোমার মুখের হাসি কেড়ে নিতে। তুমি আমাকে যখন দেখতে আসতে তখন তোমার মুখ দেখে বুঝতে পারতাম তুমি কতটা কষ্টে আছো?
বার বার নিজেকে অপরাধি মনে হত। তোমার মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে তোমাকে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেলব কখনো ভাবতে পারিনি।

আমি জানতাম তুমি আমাকে খুব ভালো বন্ধু ভাবো। এজন্য তুমি আমাকে দুরে ঠেলে দিতে পারছিলে না। তাই আমি নিজেই তোমাকে প্রপোজ করার প্লানটা করলাম। যাতে তুমি আমাকে ঘৃনা করো। দেখো ঠিক তাই হলো তুমি আমাকে একটা চড় মারলে। আর অনিকের হাত ধরে চলে গেলে। জানো সেদিন অনেক খুশি হয়েছিলাম। তোমাকে আবার তোমার খুশি ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলাম। তোমাদের মাঝে আর কষ্ট হয়ে থাকতে চাইনি তাই নিজেই দুরে চলে আসলাম।
ভালো থেকো নিজের খেয়াল রেখো,আর সবসময় হাসি মুখে থাকবে। তোমাকে গোমড়া মুখে একদমই ভালোলাগেনা।
ইতি
বুঝতেই পারছ কে?
চিঠিটা পড়ে অধরা আবার অঝরে কাদতে লাগলো। সে তার আসল ভালোবাসাকে চিনতে পারিনি। ভুল ভালবাসায় নিজেকে বন্দি করেরে রেখেছিলো। আজ বুঝতে পারছে সে কতবড় ভুল করেছে।

হৃদয়:আরে তুমি কাদছো কেনো? তোমারত এখন আনন্দের দিন (অধরাকে কাদতে দেখেই কথাগুলো বলল)

অধরা:প্লিজ ভাইয়া বলনা আবির কোথায়? ওর কাছে যে আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে?(কাদতে কাদতে)

হৃদয়:আচ্ছা তুমি শান্ত হও কান্না বন্ধ করো। আমি সত্যিই জানিনা ও কোথায় গেছে?যাওয়ার সময় আমাকে কিছু বলেও যায়নি ।(অধরার কান্না দেখেখে আর কিছু বলতে পারলোনা)

অধরা:ভাইয়া তুমি ওর গ্রামের বাড়ি কোথায় জানো?

হৃদয়:জানি কিন্তু যায়নি কখনো।

অধরা:আমার মন বলছে ও বাড়িতেই গেছে।প্লিজ আমাকে একটু নিয়ে চলেন ওদের বাড়ি!

হৃদয়:দেখো এখন রাত হয়েগেছে। এখন আর যাওয়া যাবেনা। তুমি এখন কান্না বন্ধ করো আর বাড়িতে যাও। কালকে সকালে তোমাকে নিয়ে যাব।
অনেক বুঝিয়ে তারপর অধরাকে বাড়িতে পাঠালো।
পরেরদিন হৃদয় ঘুমিয়ে আছে রুমে। হঠাৎ শুনতে পেল কেউ দরজা ধাক্কা দিচ্ছে জোরে জোরে।হৃদয় ভাবছে এখন বাজে মাত্র ৭টা এত সকালে কে আসল?
খানিকটা অবাক হয়ে দরজা খুললো হৃদয়।খুলেই একটা ধাক্কা খেলো।

হৃদয়:অধরা তুমি এত সকালে কেনো?

অধরা:ভাইয়া তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো? তাড়াতাড়ি চলো আবিরের গ্রামের বাড়ি যেতে হবে।
=হুম যাবোতো। কিন্তু এত সকালে?আর তোমাকে এত টেনশনে দেখাচ্ছে কেনো?কিছু হয়েছে?
=কালকে তোমার এখান থেকে বাড়ি গিয়ে দেখি ছেলে পক্ষ আমাকে দেখতে এসেছে(কান্না করে দিলো)
=তো তুমি কি বলেছো?
=আমি সরারাসরি তাদের বলে দিয়েছি আমি বিয়ে করব না।
=এতেতো তোমার বাবা-মা কষ্ট পাবে?
=না ওনারা আমার অমতেই বিরুদ্ধে কখনই যাবেনা।
=হুম। কিন্তু ওই পাগলটার জন্য এত ভালোবাসা কোথা থেকে এলো?
=আমি কিছু জানিনা ভাইয়া। শুধু জানি ওই পাগলটাকে ছাড়া আমার ১ মিনিটও চলবে না।
=তা অনিকের সাথে আবার কি হলো তোমার?
=ও একটা চিটার। আমাকে মিথ্যে বলেছিলো। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তাও আমাকে বলেনি। আগের দিন যখন পার্কে বসেছিলাম তখন ওর হবু বউ এসেছিলো। সেখানেই জানতে পারলাম।
ভাইয়া তুমি তাড়াতাড়ি যাও রেডি হয়ে আসো।
=আচ্ছা তুমি ২ মিনিট বসো আমি আসছি।

এই মুহুর্তে বাসের ভেতর বসে আছে হৃদয় আর অধরা। দুজনই চুপচাপ। কোন কথা বলছেনা। অধরার দুচোখ দিয়েয়ে অঝরে জল পড়ছে। আজ সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। তবে তার মনে হাজার প্রশ্ন আবির কি তাকে ক্ষমা করবে? সে কি মেনে নেবে অধরার ভালোবাসা?আবার করবে কি সেই পাগলামি গুলো? এমনও হাজার প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আর দুচোখ থেকে বেয়ে পড়ছে অনিকের মিথ্যা ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।
অধরাকে কাদতে দেখে হৃদয় বললো,

হৃদয়:তুমি আবার কাদছো?

অধরা:ভাইয়া বলোনা পাগলটাকি আমাকে ক্ষমা করবে?
=কেনো করবেনা তুমিত তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো।
=আমিযে ওকে সবার সামনে চড় মেরেছি, আজেবাজে কথা বলেছি
=আরে ও এসব মনে রাখেনা। আচ্ছা অধরা তুমি কি জানো আবির কিভাবে এক্সিডেন্ট করেছিলো?
=হ্যা ওতো বলেছিলো গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছে।কেনো অন্য কিছু হয়েছিলো না কি?
=হুম আবির সেদিন যখন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলো তখন কিছু লোক ওকে মারে। পরে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম একজন টাকা দিয়েছিলো লোকগুলোকে আবিরকে মারার জন্য।
=কে সে?আর এসব কথা আমাকে আগে বলোনি কেনো?
=সে আর কেউ না অনিক। আর আবির তোমাকে কিছু বলতে বারন করেছিলো তাই বলিনি।
=আমার সুখের জন্য ও এতটা কষ্ট সহ্য করলো। আমাকে একবার জানতেও দিলোনা। ও এমন কেনন ভাইয়া বলতে পারো?

=ও সবসময় এমনই। নিজের কষ্টগুলো কাউকে বলতে চায়না। সেগুলো নিজের মাঝে চেপে রেখেই সবার সাথে হাসিমুখে সবার সাথে মিশে।
অধরা আর কিছু বলতে পারলনা।এখন একটা কথা ভাবছে যে করেই হোক এই পাগলটাকে সারাজীবন তার চাই।পাগলটাকে ছাড়া তার চলবে না।
সকাল পেরিয়ে দুপুর। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে এলো। বাস থেমেছে গন্তব্যে। হৃদয় আর অধরা নামলো বাস থেকে। এখন একটা সি এন জি নিয়ে চলেছে আবিরের গ্রামের উদ্দেশ্যে।
আবিরদের গ্রামে পৌছে সি এন জি থেকে নামলো। কিন্তু এবার কোথায় যাবে তারা?হৃদয় আগে কখনো যায়নি আবিরদের বাড়ি তাই ও চেনেনা।শুধু আবিরের মুখে ওদের গ্রামের নাম শুনেছিলো।
কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা হৃদয়।কোনো উপায় না পেয়ে অগত্যা একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করল

হৃদয়:ভাইয়া একটু শুনবেন?(হৃদয়ের ডাক শুনে ছেলেটি পিছু ফিরে তাকালো)

ছেলেটা:জী বলুন।

হদয়:এই ছেলেটার বাড়ি কোনটা বলতে পারবেন.?(হৃদয়ের ফোনে আবিরের ছবি দেখালো ছেলেটাকে)

ছেলেটা:আচ্ছা আবিরদের বাড়ি যাবেন!চলেন আমি নিয়ে যাচ্ছি।

হৃদয়:ওকে চলো।
কিছুদুর যাওয়ার পর ছেলেটা হাত দিয়ে দেখালো।

ছেলেটা:ওই যে ওই টিনেট ঘরটাই আবিরদের।

হমদয়:জ্বী অসংখ্য ধন্যবাদ।
হৃদয় আর অধরা এখন এই মুহুর্তে আবিরদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। অধরার চোখ দুটো বার বার আবিরকে খুজে চলেছে। কিন্তু আবিরকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
তারা দুজন বাড়ির ভিতর প্রবেশ করল।

আবিরের মা:কারা তোমরা? তোমাদেরত চিনলামনা।

হৃদয়:আমরা আবিরের বন্ধু

আবিরের মা:ও বাবা। আচ্ছা আসো ভিতরে এসে বসো।
দুজনই বসে আছে চুপচাপ। কিন্তু অধরা বার বার এদিক ওদিক দেখছে। তার অবাধ্য চোখদুটো শুধু আবিরকেই খুজে চলেছে। আজ ৩ মাস হলো না আবিরকে দেখেছে না আবিরের সাথে কথা বলতে পেরেছে। তাই আবিরের মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করলো
অধরা:আচ্ছা মা আবির কোথায়?
অধরার মুখে মা ডাক শুনে উনি যেন থমকে গেলেন। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বললেন
আবিরের মা:দেখো ওই ঘরে ঘুমিয়ে আছে?(হাতের ইশারায় একটা ঘর দেখিয়ে)
অধরা দৌড়ে চলে গেলো আবিরের ঘরে। এদিকেআবিরের মা নির্বাক হয়ে চেয়ে দেখলেন।
তার পর তিনি হৃদয়ের কাছ থেকে সব কিছু শুনলেন।

অধরা আবিরের ঘরের দরজায় এসেই দাড়িয়ে গেলো। দেখলো আবির ঘুমিয়ে আছে। অধরার এখন খুব ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে আবিরকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তি পারছেনা কারন সে চায়না এই মুহুর্তে আবিরের ঘুম ভেঙে যাক। তাই আস্তে আস্তে গিয়ে কোলবালিশটা শরিয়ে আবিরের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। কোন কথা বলছেনা অধরা শুধু আবার তার দুচোখ দিয়ে অঝর শ্রাবন শুরু হয়েছে।
আবির ঘুমের মধ্যে কখনযে অধরাকে জড়িয়ে ধরেছে বুঝতে পারিনি।
ঘুম ভাঙতেই আবিরতো ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।যখনই চেচাতে যাবে অধরা মুখ চেপে ধরল

অধরা:ওই চুপ একদম চেচাবে না?

আবির:আরে তুমি এখানে কেনো? আর এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছো কেনো?

অধরা:যাকে এতটা ভালোবাসলে তাকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে একা দুরে চলে যেতে চাইছিলে তাইনা?

আবির:মানে?

অধরা:তুমি জানতে অনিক অনেক খারাপ ছেলে। তাররপরও একবারও আমাকে বলোনি। নিজে কষ্ট পেয়ে আমাকে সুখি করতে চাইছিলে তাইনা।

আবির:আমি আমার ভালোবাসার কথা বলে তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমিতো সবসময় তোমার হাসিমুখ দেখতে চেয়েছি।

অধরা:জানো অনিকের আগে থেকে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। ও আমার কাছথেকে লুকিয়েছিলো। (বলেই আবার শব্দ করে কাদতে লাগলো অধরা)

আবির:এই একদম কাদবে না। তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারিনা জানোনা।(বলেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো)

অধরা:তাহলে ছেড়ে চলে আসলে কেনো?

আবির:আমার বিশ্বাস ছিলো আমি তোমাকেই পাব। তাইত তোমার জন্য চিঠিটা রেখে আসা।

অধরা:তাই না।(বলেই মারতে শুরু করলো আবিরকে)
আবির কিছু না বলে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অধরাকে। এটা অনিকের মত অভিনয় না এটা আগামির স্বপ্ন দেখার বিশ্বাস। দুটি হাত আহীবন ধরে রাখার আস্বাস।হয়ত এটাই ভালোবাসা।

হৃদয়:এবারতো ছাড়ো? বিয়ের পর যত খুশি জড়িয়ে ধরো।

আবির:বিয়ে মানে?

হৃদয়:আমি তোর বাবা মাকে সবকিছু খুলে বলেছি আর তারা বলেছে খুব তাড়াতাড়িই তোদের বিয়েটা দিয়ে দেবে।

(সমাপ্ত)

 

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত