মেজাজটা গরম করে ফেলছে। এতবার
ফোন
কেটে দেবার পরেও কেউ ফোন
দেয়
সকালের আয়েশী ঘুমটা ভেঙে
দিলো
প্রচন্ড রাগে ফোনটা তুলেই
-কে রে ?
–তোর যম। (মেয়েলি কন্ঠ)
-কে বলছেন।
–আমি যাই হই আপনি আজ সন্ধ্যাবেলায় ভার্সিটির
পাশের রেস্টুরেন্ট টায় আসবেন।
বলেই
ফোনটা কেটে দিলো। কে রে এইটা।
অচেনা নম্বর।
নাহ ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলে
আমার মেজাজ
প্রচন্ড খারাপ হয়। তারচেয়ে ভালো
ফ্রেশ
হয়ে বাইরে যেয়ে ঘুরে আসি।
আম্মু নাস্তা দাও। আমি ফ্রেশ হয়ে
আসছি।
-হুম আয়।
-আজ কি করেছ।
–বসলেই দেখতে পাবি।
-কি ব্যপার আজ তোমাকে খুশি খুশি
লাগছে। ব্যপার
কি?
-তোর জন্য তোর বাবা মেয়ে ঠিক
করেছে।
তোর বাবার বন্ধুর মেয়ে।
-খাবারটাও মুখে তুলতে দিলে না।
-কেন কি হইছে ? আর বিয়েতো একসময়
করবিই। আর আমি বাসায় একা একা
থাকতে পারছি না।
আমার এমনিতে কোনো মেয়ে নাই।
-ওহ তা মেয়ে আনার জন্য আমাকে
বলিদান করে
দিচ্ছো।
-চুপ। মেয়েটাকে দেখলে এমনিতেই
বলবি মা
আমি বিয়ে করবো।
-ও বাবা তাইলে দেখা যাক।
মা মুচকি হেসে বললো হুম দেখিস।
বিকেলবেলা মেয়েটা একটা
মেসেজ দিয়ে
সন্ধ্যায় দেখা করার কথা স্মরণ করে
দিলো। বাহ
মেয়েটা দেখি দারুণ।
কিন্তু কে এই মেয়ে, মেয়ে কোনো
ভুল
করছে নাতো। আমাকে ভুলে ফোন
দিলো
নাকি কে জানে।
যাই হোক সন্ধ্যাবেলা যথাসময়ে
উপস্হিত হয়ে
ফোন দিলাম।
মেয়ে ফোন কেটে দিলো।
-এইযে শুনছেন ?
এইযে আপনার সামনে ডান দিকে.
-ওহ আবছা আলোতে মেয়েটাকে
দেখা
যাচ্ছে। কাছে যেতেই সারাজীবনে
যতবার শক
খেয়েছি তার সবগুলো থেকে আজ
দ্বিগুণ
পরিমাণে শক খেলাম। কারণ এ যে
আমার
চাঁদপরীটা। যা কে আমার লাইফ
পার্টনার বানাবার
জন্যে খুব করে চেয়েছি। যাকে
এতোটাদিন দূর
থেকে ফলো করে এসেছি।
আজ সেই ঘুমন্তপরীর ঘুম ভেঙে আমার
সামনে সে।
-বসুন
-তার কথায় চমক ভাঙলো।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার সামনের
চেয়ারটায়
বসলাম।
কেমন আছেন
-হুম ভালো । আপনার সাথে কিছু কথা
বলার জন্য
ডেকেছি।
-আপনি আমাকে চেনেন ?
-চিনবো না কেন ? যার সাথে আমার
বিয়ে ঠিক
হয়েছে তাকে চিনবো না কেন?
-মানে আপনার সাথে আমার বিয়ে
ঠিক হয়েছে?
মারাত্মক ভাবে টাস্কি খাইছি
আমি।
-কেন আপনি জানেন না ?
-না মানে আজ সকালেই আম্মুর মুখে
শুনলাম।
-ওহ তা আমার কিছু কথা ছিলো।
-বলো বলো চাঁদপরী । তোমার সাথে
কথা
বলার কতো ছুতো খুঁজেছি আর আজ
সামনাসামনি
বিয়ের কথা ওফ আব্বু আম্মু আমাকে
এত্তো বড়
সারপ্রাইজ দিবে ভাবতেই পারিনী।
ইস এখন আব্বু কাছে থাকলে আব্বুর
কোলে
উঠতাম এহহ না না আব্বুকে কোলে
নিতাম।
ধুর ছাই কি ভাবছি। আনন্দে যে
লাফাতে মন
চাচ্ছে।
ইস হবু বউয়ের সামনে লাফাইলে
প্রেস্টিজের বারোটা বেজে
তেরোতে
পৌঁছুবে।
ইস আবছা আলোতে আমার চাঁদপরীটার
মুখ
আমাকে পুরো মাতাল করে দিচ্ছে।
গালে তিল,
মুখে একচিলতে হাসি দিয়ে এই
মেয়েটা আমাকে
প্রতিদিন সকালে ডাকবে
ভাবতেই গা আমার অতি আনন্দে
কেঁপে উঠছে।
-বলেন কি বলবেন ?
–আমি আপনাকে বিয়ে করতে
পারবো না।
-আমার বক্ষপিন্জরের স্টার্ণামে কেউ
যেন হাতুড়ি
দিয়ে বাড়ি দিয়েছে। আমার
প্রশ্বাস
গ্রহণ করতে
সমস্যা হচ্ছে।
-কেন পারবেন না?
অন্য কাউকে ভালোবাসেন ?
–না। আমি বিয়ে করবনা মানে এই না
যে আমার বিএফ
আছে।
-তাহলে ?
–আপনাকে আমার পছন্দ না।
-চরম ব্যাথা অনুভব করছি বুকে।
তাহলে কি আমার এতদিনের ঘুমন্তপরী
এভাবেই হারিয়ে যাবে?
নাহ ওকে হারাতে দিবো না আমি।
পছন্দ না হলেও
বিয়ে করতে হবে যেহেতু আপনার মা
আর
আমার বাবা ঠিক করেছেন।
–আহা মগের মুল্লুক পাইছেন নাকি ?
বাসায় গিয়ে
বলবেন যে আপনি আমাকে বিয়ে
করবেন না।
-পারবো না। উল্টো আমি বলবো মা যত
তাড়াতাড়ি
পারো এই মেয়েকে আমার বউ করে
ঘরে
তোলো।
–এই শুনেন ভালো করছেন না কিন্তু
আপনি।
এভাবে জোর করে বিয়ে করলে কি
আপনি আমার
মন পাবেন ?
-পাই আর না পাই আপনাকে আমার চাই
ব্যস।
–মেয়েটা রাগে গজগজ করতে করতে
চলে
গেলো।
কিছুক্ষণ হেসে বাসারপথ ধরলাম।
আগের
দিনগুলোর কথাভাবছি।
জব করার আগ পর্যন্ত ওকে প্রতিদিন
ফলো
করতাম।
ওর বাসা পর্যন্ত চলে যেতাম।
ওর ডিপার্টমেন্টের সামনে দিয়ে
অযথাই হাঁটতাম
শুধু ওকে একবার দেখার জন্য। ওর
হাসিমাখা মুখটা না
দেখলে যে আমার দিনটাই মাটি।
ওর তিলটার জন্যই আমি ওর হাসির
প্রেমে পড়েছি।
দুনিয়াতে এতো বড়ো বড়ো ব্যক্তি
কারো
তো একজনের উচিত ছিলো গালে
তিল থাকা
মেয়েদের পৃথিবীর সপ্তাশর্যের মধ্যে
স্থান
দেওয়া। এমনটা হলে আমার
চাঁদপরীটাই সবচাইতে
বেশি অগ্রাধীকার পেত।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়লাম।
মার ডাকে সাড়া না দিয়ে ভাবছি
আমাকে পছন্দ না করার
কারণ কি ?
আমি কি দেখতে খারাপ ?
নাকি আমি ব্ল্যাকম্যানদের পর্যায়ে
নাকি আমার যথেষ্ট টাকাপয়সা নেই
ওকে
খাওয়ানোর….
নাহ প্রত্যেকটা জিনিস ঠিকই আছে।
অন্তত
টাকাপয়সার অভাব নেই বললেই চলে।
ও
যখন যা
চাইবে তাই দেবার সামর্থ এখন আমার
আছে।
তবে কি জন্যে আমাকে ওর অপছন্দ ?
মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল। যাকে
মন প্রাণ
সপেঁ দিয়েছি যার সাথে বিয়েও
ঠিক হলো আজ কি
না তাকে কাছে পেয়েও হারাবো
….
নাহ
সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করবো ওকে
পাবার জন্যে।
নাহ কিছু তো একটা করা দরকার।
রিয়া
কে ফোন
দেয়া দরকার। ওহ রিয়া হলো আমার
বেস্ট
ফ্রেন্ড।
সবধরণের কথাই আমি শেয়ার করি এই
বদরাগী
মাইয়াটার কাছে।
-স্যার এতক্ষণে আপনার ফোন দেবার
সময়
হলো ? কুত্তা বিকেল থেকে তোকে
ফোন দিচ্ছি।
-আসলে দোস্ত ….সবকথা ওকে
বিস্তারিত
বললাম।
–হুম বুঝলাম।
-দোস্ত আমি এখন কি করব বুদ্ধি দে।
–আমি কি আর বলব। মেয়ে যে কোনো
ক্লু
রাখেনাই। আচ্ছা শোন মেয়েটার
যেহেতু
বিএফ নাই তুই মেয়েটার সবসময় খোঁজ
নিবি।
এইযেমন সকালে, রাতে শোবার সময়,
দিনের অন্যান্য সময় ফোন করে
বিভিন্ন
বিষয় নিয়ে কথা বলবি। মেয়েটার
পছন্দের
জিনিসগুলা জানবার চেষ্টা করবি।
কাজে দিবে গ্যারান্টি।
-থ্যাংকু দোস্ত।
তোকে আমার
হাতের
নুডলস রান্না করে খাওয়াবো যা।
–তোর পায়ে পড়ি। তোর হাতের
এতো
ভালো রান্না খেয়ে আমার অবস্থা
খারাপ
হয়ে গেছিলো। আর খাইতে চাইনা।
-দিলি তো প্রেস্টিজ পাংচার
কইরা।
ধুর
ফোন রাখলাম বাই।
নাহ দোস্ত আমার ভুল কিছু বলেনাই।
মিশনএখনি
শুরু।
দিলাম ফোন।
-হ্যালো
-এই তুমি বাসায় ভালোভাবে পৌঁছে
গেছ ?
-OMG ! আপনি ?
-চমকে যাবার কি আছে। হবু বর তাই
বিয়ের আগে
থেকেই খোঁজ রাখছি।
-উফ চুপ করুন। আপনাকে কে বিয়ে করবে
ফোন রাখুন।
-ওহ অনেক তো রাত হলো।
সোনা তুমি এখন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
গুড
নাইট টুনটুনি।
-আপনাকে আমি….
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
যাই হোক কথা তো শুরু করছি। এভাবে
চললো
3/4 দিন।
জব পাবার পর থেকে ভার্সিটি আর
যাইনা।
কাল একবার ঘুরে আসবো।
সকালে ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটি
গেলাম।
পুরনো আড্ডাবাজগুলার সাথে দেখা।
কুশল বিনিময় শেষে কাজ সেরে
বাইরে বের
হতেই দেখলাম আমার
চাঁদপরী চন্দ্রীমা।
আহা হালকা মেকআপ সাথে আকাশী
রংয়ের সেলোয়ার উফ হাতে
হাতঘড়ি
মেয়েটা কি আমার জন্যি আসছে
নাকি।
-এই তুমি এখানে আসবা আমাকে আগে
বললা না
কেন ? একসাথে আসতাম।
–আপনি আবার?
-তো আমি না থাকলে কে থাকবে ?
শোন
বিয়ের আগে আর একা একা বের হবা
না।
কোনো কিছু লাগলে আমাকে বলবা।
–আপনি তো মহাপাজি।
আচ্ছা পারলে একটা রিক্সা ঠিক করে
দিন তো।
-ওয়েট । এই রিক্সা….
পড়ে যাবা তো। আমার হাত ধরে
উঠো।
–এই আপনি কেন? আপনি নামুন। আমি
একা যাবো।
-কি বল এসব লোকজন কিভাব্বে
বলো
তো।
–এইআপনি নামুন বলছি।
অবশেষে নামতেই হলো। আচ্ছা ঢং
মেয়েটার। দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।
ভার্সিটির ভিতরে গিয়ে বেলাল
কে
পেলাম। ওর মটরবাইক নিয়েই অন্য
রাস্তা দিয়ে
সোজা হবু শ্বশুরবাড়ি। ভার্সিটি
থাকতে অনেকবার
ফলো করতে করতে বাসায় আসছি।
বাসাই ঢুকেই হবু শ্বাশুড়ি কে লম্বা এক
সালাম দিলাম। আন্টি সালামের
উত্তর
নিয়েই
-আমার হবু জামাই দেখি বিয়ের
আগেই
শ্বশুরবাড়িতে পদার্পণ করেছে। আসো
বাবা
আসো।
–আমি তো স্ট্যাচু। আমার শ্বাশুড়ি
আমার চেয়ে
কয়েকগুণ এগিয়ে আছে। যাক কাজটা
সহজ হলো।
জি আন্টি বসছি।
-এই আন্টি কি হ্যা। অভ্যাস করতে পরে
সংকোচ
হবে। আম্মু বলেই এখন থেকে ডাকো।
–এমন শ্বাশুড়ি কয়জনের ই বা হয়। মনটা
তো
আনন্দে লুঙ্গি ড্যান্স দিচ্ছে। যাই
হোক
আন্টির
সাথে স্যরি আম্মুর সাথে গল্প শুরু
করলাম।
কিছুক্ষণ পর আমার চন্দ্রীমা চলে
আসলো।
ঘরে ঢুকেই আমাকে দেখেই পুরোদমে
অবাক।
-এই আপনি এখানে কেন ? আমাদের
বাসায় কেন ?
লজ্জা বলতে কিছু নাই ?
–কি যে বলো। আগে থেকে অভ্যাস
করে
নিচ্ছি। কি তাই না আম্মু ?
– হ্যা বাবা। তুমি ওর কথায় কান দিও
নাতো।আজ
দুপুরের খাবার এখান থেকেই খেয়ে
যাবে।
— মা তুমিও ?
এই বদ ছেলেটাকে প্রশ্রয় দিও না।
-এই তুই চুপ কর। আমার জামাইটাকে
ভালো করে
দ্যাখ। এমন লক্ষী ছেলেটাকে তুই
কিনা
-আমি তো এদিকে মিষ্টির রসে
ভাসতে শুরু
করেছি।
শ্বাশুড়িআম্মু আমার এত্তো ভালো
কেন ? হবু বউটা আমার রাগে ওর রুমে
চলে
গেলো।
আম্মু রান্নাঘরে গেল। আমি গেলাম
আমার ইয়ের
রুমে। এতোবার বউ বলা যায় নাকি।
লজ্জা করেনা বুঝি
আমার।
আহ বউটা আমার বেলকনিতে
দাঁড়িয়ে
বাইরে তাকিয়ে আছে। বাতাস ওর
চুলগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ওর
চুল
গুলো হাতদিয়ে ওর কানে গুজে
দিলাম।
ওর অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে
আছে। একটু
রাগ করে থাকলো। ভাবলাম আমাকে
হয়তো
পছন্দ করে না আর আমি ওকে সবসময়
জ্বালাই।
নিজে থেকেই চলে আসলাম।
ও আমার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে
আছে।
দুপুরের খাবার খেয়ে আন্টির সাথে
গল্প
করলাম। ওর ব্যপারে বললাম।
আন্টি বললো ও রাগী হলেও মনটা
ভালো।
এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। যাবার সময়
ওর সাথে
দেখা করলাম। শুধু বলল হুম যান যান।
বাইরে বেড় হয়ে রিক্সা করে বাসার
রাস্তা ধরলাম।
বাসায় যেয়েই আম্মু জিজ্ঞাস করতেই
বললাম কই খেয়েছি।
আম্মু তো খুশিতে আটখান। কারণ তার
লজ্জাপাওয়া
ছেলেটার লজ্জা একটু হলেও
ভেঙেছে।
এরপর আরো প্রায় 13/14 দিন ওর
প্রতিদিন
খোঁজ
খবর নিলাম।ওর বাসায় গেলাম। কিন্তু
কোনো
পরিবর্তন না দেখে ভাবলাম আমাকে
সত্যিই ও
পছন্দ করে না আর আমি অযথাই ওকে
জ্বালাই।
তাই সিমটা ভেঙে ফেলে নিজেকে
সান্ত্বনা দিলাম এই ভেবে যে কথা
বলার
সুযোগ যার ছিলনা সেই আমি এতোদূর
গেলাম। সেটাই তো আমার ভাগ্য।
আর ওকে ঘুমাতে যাবার সময়
Good Night আর সকালে Good Morning
বলবো
না।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আম্মুকে
বললাম
সবকিছু।
আম্মুর মনটা খারাপ মনে হলো।
রিয়াকে ফোনে সব জানালাম।
ও তেমন কিছুই বললো না।
আজ দুইদিন পর বাসা থেকে বের হলাম।
রিয়ার
সাথে হসপিটালে যেতে হবে। ওর
রিলেটিভ না
কাকে যেনো রক্ত দিতে হবে।
রিক্সা করে
গেলাম।
ও সান্ত্বনা দিতে লাগলো।
বাসায় ফিরেই আম্মু বললো তুই একবার
তাড়াতাড়ি
চন্দ্রীমাদের বাসায় যা। কোনো
কিছু
না বলেই
আমাকে পাঠালো।
যেতেই আন্টি বললো শাকিল একটু
দেখোনা
বাবা মেয়েটা আধঘন্টা আগে
বাসায় এসে রুমের
দরজা লাগিয়ে সব ভাঙচুর করছে।
–এই চন্দ্রী দরজা খোলো।
-তুই কেন আসছিস? তুই যা।
জীবনেও যেন তোর মুখ না দেখি।
-অনেক বুঝানোর পরেও যখন আর খুললো
না
তখন বললাম শুধু পাঁচ মিনিট। দরজা
খুলতেই
দেখলাম সারাঘর কাঁচের জিনিসপত্র
ভেঙে
ফেলেছে।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আমি
জিজ্ঞাস
করলাম এইসব কেন করলে ?
জবাবে আমার দুই গাল লাল করে
দিলো। কি আর
করার। মাথা নিচু করে আছি।
-বিয়ে ঠিক হবার পরেও অন্য মেয়ের
সাথে
এতো ঘোরার শখ কেন ?
লজ্জা করেনা? আমাকে এইকয়দিন
একবারো
দেখতে আসছিস? একটা ম্যাসেজ
অথবা
ফোন
দিয়েছিস ?
-ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো।
ওর সাথে হসপিটালে গেছিলাম রক্ত
দিতে।
সবখুলে বলার পরেও আমার দিকে
সন্দেহের
চোখে তাকালো।
তখন বললাম আমাকে তো পছন্দ না
তাহলে এসব
করলে কেন ?
–এই কথা বলতেই আরো এক চড়। আমাকে
ভার্সিটির শুরু থেকে ফলো করে
আমার
বাসা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা
জায়গায় নিজের
উপস্থিতি জানান দিয়েছো।
আমার পরীক্ষার নোটস গুলাও আমার
রুমমেটের হাতে পাঠিয়ে দিতে।
শরৎকালে কাশফুল, বসন্তের
কৃষ্ণচূড়া,বৈশাখের
শাড়ি, বর্ষায় কদম ফুল, আমার প্রিয়
আইসক্রিম সবকিছুই
আমাকে পাঠিয়ে দিতে চালাকি
করে।
যে ছেলে আমাকে এতো ভালবাসে,
যে ভুল
করে হলেও কখনো আমার সাথে কথা
বলতে
চেয়েও পারেনি তাকে আমিও ঠিকই
ভালোবেসেছি।
তোমার সাথে আমার বিয়ের কথা
ঠিক
হবার পর তোমার থেকেও বেশি খুশি
হয়েছি আমি। কারণ সেই গাধাটার
সাথেই আজ আমার
বিয়ে ঠিক হয়েছে।
আর এতোদিন শুধু গাধাটাকে আমার
সাথে কথা বলার
জন্য এমন নাটক করেছি।
আর আজ যখন তোমাকে তোমার বেস্ট
ফ্রেন্ড এর সাথে দেখলাম তখন
অন্যকিছু
ভেবেছি।
–এতোগুলো কথা এক নিঃশ্বাসে
বলে থামল ও।
আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে
সবকিছু মাথায়
ঢুকানোর চেষ্টায় আছি।
তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে
আমার চাঁদপরীটা
আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ধরিনাই তাই বুক থেকে মুখ তুলে
আমার দিকে কপট রাগে তাকিয়ে
আছে। আমি এবার
সত্যি ভয় পেয়ে ওকে বললাম কি ?
ও বললো অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ কর।
আমিও আমার বাহুডোরে ওকে বেঁধে
ফেললাম। ওকে পরম ভালোবাসায়
বুকে জড়িয়ে
নিলাম।
-এহেম এহেম বিয়েটা হয়ে যাক
তারপর না হয় এসব
হবে ( শ্বাশুড়িআম্মু )
– আমাকে ছেড়ে দিয়ে মা তুমি
এখন
যাও
তো।
এই গাধাটাকে একটু সাইজ করি
আমাকে কষ্ট দেবার
জন্য।
আমিও সেই মধুর কষ্ট টা নেবার
অপেক্ষায় আছি।
আমার চাঁদপরী টা আমাকে
সারাজীবন শাষণ করার
দায়িত্ব নিবে এইটাই তো আমি
চেয়েছিলাম।
আমার ঘুমন্তপরী আজ ঘুম ভেঙে
আমাকে
তার
বাহুডোরে আবারো শক্ত করে ধরলো।
এবার প্রচন্ড শিহরণে আমিও ওকে
ধরলাম।
আমার চাঁদপরীটা এখন আমার বুকে
স্বপ্ন
বোনায়
ব্যস্ত আছে।