কিরে তোকে কেমন মনমরা মনমরা দেখছি!আজ কি তবে নামের স্বার্থকতা পাওয়া গেলো!
-মানে!
-এই যে তোর নাম শান্ত হওয়া সত্ত্বেও আগে কতটা অশান্ত ছিলি!কতটা দুষ্টামিতে মেতে ছিলি!কিন্তু আজ কি হলো তোর?তোর দুষ্টামিগুলো ছাড়া তো আমাদের জমে নারে দোস্ত!
-জমতে হবে না!
-প্লিজ বলনা তোর কি হয়েছে?
-কিছুনা।
-প্লিজ বল আমরা স্লভ করার ট্রাই করবো!
-কিছু করতে হবে না!ছাড়তো!
-ছাড়বো মানে!তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।না বললে এই চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো!হারামি আমারে সময় দিবিনা না?তোর দাত সবগুলা ভেঙ্গে ফেলবো এভাবে চুপ করে থাকলে!
-এই চুল ছাড় লাগছে তো।
-লাগুগ যতক্ষণ আমারে না জ্বালাবি ততক্ষন তোরে জ্বালামু হারামি!
-আচ্ছা শুন!
-হুম বল।
-আমি তোদের এখন একটু সময় কম দেই কারণ এবার ফাস্ট ইয়ারে একটা মেয়েকে দেখেছি।
-আর বলতে হবে না!বুঝছি মেয়েটা অনেক সুন্দরি বলে তুই ক্রাশ খেয়ে ওর প্রেমে পড়ে গেছিস!সময় অসময় ওকে দেখলেই ওর পিছু পিছু যাস!ওর সাথে কথা বলার ইচ্ছা যাগে!ওকে সবসময় ফলো করিস তাই আমাদের সময় কম দিস!
-কিভাবে বুঝলি!
-আরে বন্ধুত্ত্বের দূরুত্ব বাড়তে মাঝখানে একটা মেয়ে আসলেই যথেষ্ট আর কিছু লাগে না!
-কিন্তু বিশ্বাস কর আমাদের দূরুত্ব কখনোই বাড়বে না!আকাশ যেমন সত্য,জমিন যেমন সত্য,পৃথীবি যেমন সত্য,বিশ্বজগৎ যেমন সত্য ঠিক তেমন ভাবেই সত্য আমাদের বন্ধুত্ব চিরন্তন!আমাদের বন্ধুত্ব অমর!তুইতো আমার হারামি বেস্ট ফ্রেন্ডরে!
-হারামি!তুই সত্যি বলছিস তো আমাদের বন্ধুত্ব কখনো হারাবে না?
-না।কথা দিলাম!
-হুম এবার চল!
-কোথায়?
-আরেব্বাস মেয়েটাকে দেখাবি না?
-হুম দেখবি তো কিন্তু আজ যে ও আসেনি!
-ও সেই জন্যই বলি,আমার এই হারামি বন্ধুটা এতো মনমরা মনমরা কেনো!
-ধ্যাত!
-আচ্ছা এবার বল।
-কি?
-প্রথম দেখা কিভাবে?
-এক্সিডেন্ট!
-সেকি যে মাইয়া এক্সিডেন্ট দিয়ে তোর জীবনে আসবে সেতো তোর জীবনটাই তেজপাতা কইরা দিবো!
-নারে দোস্ত!মেয়েটা অনেক ভালো!
-কিভাবে বুঝলি?
-আসলে আমি যখন সাইকেল চালিয়ে আসছিলাম তখন ভুলটা আমারই ছিলো!সেদিন ও যে রিক্সায় করে আসতেছিল আমিই আচমকা ওই রিক্সার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছিলাম আর ও দ্রুত সিট হতে নেমে এসে আমাকে এই সামনের এক কম্পাউন্ডারের কাছে নিয়ে গেলো আর কিছু ফাস্ট এইড দিলো!আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম একটা অচেনা ছেলে ব্যথা পাওয়াতে ওর চোখেও অশ্রু গড়িয়েছে!এমনকি আমি না চাওয়াতেও মেডিসিন বিলগুলা ওই দিয়ে দিছে!
-তাহলে দোস্ত তুই রিয়েলি লাকি!আজকাল তো এমন মেয়ে তো পাওয়াই যায় না!যাই হোক তুই ওই মেয়েটার প্রেমে পড়ে ভুল করিস নি।আমিও কথা দিলাম মেয়েটা তোর হওয়ার জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।তুই শুধু মেয়েটাকে দেখিয়ে দিস!আচ্ছা এবার বল কতদিন আগে ওই ঘটনা ঘটেছিল?
-এই প্রায় পনেরোদিন আগে!
-সেদিন থেকেই পিছু নিয়েছিস?
-হুম।
-তাহলে তো এতদিনে তোর প্রতি একটু হলেও দূর্বলতা তৈরি হবে!
-তা জানিনা!
-দেখে কি মনে হয়?
-মনেতো হয় সামথিং সামথিং!
-তাহলে হয়ে যাবে!আমি আছি তো!
-হুম।আচ্ছা চল ও যখন আসেনি আর দাঁড়িয়ে থেকে কি লাভ?বাসায় যাই।
-হুম চল।
একসাথেই সাইকেলে সাইকেল রেস করতে করতে বাসায় চলে আসলাম!কিন্তু রেসের সময় আমি ওকে জেতানোর জন্য বাসার সামনে আসলে গতি কমিয়ে চালাই আর ও আমাকে জেতানোর জন্য গতি কমিয়ে পিঠের মধ্যে ধুম ধুম করে কয়েকটা কিল লাগিয়ে বলে চালা হারামি,থামলি ক্যান চালা!এভাবেই হাসিব আমাকে জিতিয়ে দিয়ে নিজে শুধু মনে হাসে!
বাই দ্যা ওয়ে পরিচয় পর্বটা হয়ে যাক!
আমি শান্ত।এবার অনার্স থার্ড।আর এতোক্ষন কথা বলছিলাম আমার বন্ধু হাসিবের সাথে!একই ব্যাচে।ও বোধ হয় নিজেকেও এতোটা ভালোবাসে না যতটা আমাকে ভালোবাসে আর আমিও নিজের চাইতে ওকে বেশি বিশ্বাস করি।আমাদের বাসা থেকে কিছুটা পথ এগিয়ে গেলেই হাসিবদের বাসা।
-হ্যালো।
[পরের দিন]
-হুম হাসিব বল।
-আজ তারাতারি আয় মেয়েটাকে দেখাবি তো!
-হুম দেখাবো।
-মনে থাকে যেনো!দেখিস আবার প্রতিদিনের মতো আজকেও লেট করিস না!
-আচ্ছা।
-হুম তারাতারি তৈরি হয়ে যা আমি আসছি একসাথেই যাবো।
-এমন কোনোদিন কি আছে যেদিন একসাথে যাই নি?
-তা অবশ্য নাই।
-তাহলে?
-আচ্ছা তুই তারাতারি তৈরি হয়ে যা।
-আচ্ছা।রাখছি।
[কলেজে আসার পর]
-কিরে কোথায় মেয়েটা?
-খুঁজতেছি তো।
-তারাতারি দেখা!ভাবীরে দেখার জন্য তো আর তর সহে না!
-আরে হারামি খুঁজতেছি তো!
-তুই এভাবে খুঁজলে সারাদিনেও পাবি না!এর চেয়ে ভালো ওর ডিপার্টমেন্টে যাই!
-না!
-কেনো?
-আমার ভয় করে!
-তাহলে তোর প্রেম করতে হবে না।ওকে ভুলে যা!
-না!
-তাহলে চল আমার সাথে!আরে হারামি আমি আছি তো।তুই টেনশন নিস কেনো?
-আচ্ছা চল!
-হুম চল।
-এখানে আছে?
-হুম।
-কোন মেয়েটা।
-ওইতো হোয়াইট থ্রিপিসে ব্লু কালারের পাইড় দেয়া!
-হিয়া!
-তুই চিনিস ওকে?
-হুম।
-কিভাবে?
-ওর কাছেই চল।
-আচ্ছা।
-আরে হাসিব ভাইয়া!হঠাৎ আমাদের ডিপার্টমেন্টে!
-হুম হাবলি-কাবলি!
-ধ্যাত!তুম আর এই নামটা ধরে ডাকা বন্ধ করলেন না!অন্তত কলেজে এই নামটা কল করো না!আরে আপনি সে লোক না?সেদিন এক্সিডেন্টের পর প্রতিটা দিন আমার পিছু নিয়েছিলেন?এমনকি প্রায় সময় আমাকে ফলো করেন?
-হুম।ও আমার বন্ধু শুধু বন্ধু না বেস্ট ফ্রেন্ড!আমার কলিজার অর্ধেক!
-বুঝলাম কিন্তু হঠাৎ এখানে কেনো?
-আসলে ও এখন দিওয়ানা।কিন্তু যাকে ভালোবাসে তাকে পনেরো দিন ধরে শুধু ফলোই করছে!
-তাহলে ফেইস টু ফেইস বলে দিচ্ছে না কেনো?
-আসলে হারামিটা অনেক ভীতু!ওর মুখোমুখি হতেই ভয় পায় আবার ফেইস টু ফেইস কিছু বলতে গেলে আমি সিওর হার্ট এটাক করবেই!
-আচ্ছা মেয়েটা কি আমাদের ডিপার্টমেন্টেই?
-হুম।
-কে?নাম কি?
-হোয়াইটেনব্লু (হোয়াইট এন্ড ব্লু) এঞ্জেল হিয়া!
-ধ্যাত ভাইয়া!স্টপ দিস ফান!
-হিয়া আই এম সিরিয়াস।প্লিজ তুই ভীতুর ডিমটাকে সামলে নে!
-এ বাবা!আমি পারবো না!আগে সাহসী হতে বলো তারপর রেস্পন্স পাবে!
-আচ্ছা তাহলে এখন আসি।
-হুম!
-শুনেছিস কি বললো?
-হুম।সাহসী হতে!
-আরে বুদ্ধু তোকে এটা দ্বারা সরাসরি গিয়ে প্রপোজ করতে বুঝিয়েছে!
-ওরে বাবা!আমি পারবো না!
-হারামি পারবি না মানে?ভালোবাসিস আর বলতে পারবি না?তাহলে অন্যকারো হয়ে গেলে ভালো লাগবে?
-না!অন্যকারো হবে কেনো?
-তাহলে তুই বলবি না কেনো?
-বলবো!কিন্তু তুই ওকে চিনিস কিভাবে?
-মামাতো বোন!
-কার?
-কার আবার আমার!আরে তোর লাইন মারতে সুবিধা হবে!
-মানে?
-মানে কলেজের সুবিধার্থে মামা ওকে আমাদের বাসায় পাঠিয়েছেন!
-কই আমিতো আগে দেখি নি!
-ধুর হারামি।তুই গিয়েছিলি সেই দুমাস আগে আর ও এসেছে মাসখানেক হবে!
-ও আচ্ছা।
-হাবলি-কাবলি ব্যাপারটা বুঝলাম না!
-ওটা ওকে ছোট বেলা থেকেই বলে রাগাতাম!
-এই আমার বউকে তুই আর রাগাবি না!
-আরেব্বাস প্রপোজ না করতেই বউ!আচ্ছা যাই হোক বউ যখন একবার বলেছিস তাহলে তোদের বিয়ে আমি দিয়েই ছাড়বো!
-কিভাবে?
-তুই আগে প্রপোজ কর তারপর বাবাকে দিয়ে মামা-মামিকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার!
-থ্যাংকু কলিজার টুকরা!
-হুম!দেখলি সেদিন আমাকে বলাতে তোর কতো হেল্প হলো!
-হুম।তুই হেল্প না করলে কি অন্য কেউ করবে নাকি?জানে জিগার দোস্ত আমার!
-হুম তু মেরা পেয়ারা দোস্ত হ্যায় না!
-আবে বাঙ্গালি হারামি হিন্দি বাদ দে!
-আচ্ছা আচ্ছা!
ক্লাস শেষে হাসিবদের বাসায় গেলাম।উদ্দেশ্য ছিলো হিয়াকে দেখাটাই।
-হাসিব ভাইয়া তুমি ভীতুর ডিমটাকে নিয়ে আসছো!
-দেখতেই তো পাচ্ছিস!
-এই যে আমি মোটেও ভীতু নই!
-হুহ!আসছে!যে কিনা এতোদিনে সাধারন তিনটে কথা বলতে ভয় পায় সে কিসের সাহসী!
-তিনটা কেনো সময় হলে চারটা কথাই বলবো!
-চারটা মানে!সবাই তো তিনটাই এক্সেপ্ট বা রিজেক্ট করে!
-আমি চারটাই বলবো!
-সে তিনটে বলেন আর চারটে কিন্তু সেদিন কবে আসবে যেদিন সাহসী হতে শিখবেন?
-যেকোনো একদিন!
-সেদিন হয়তো আসবেও না!
-আসবে আর তা খুব শীঘ্রই!
-কথা হয়েছে?এবার চল!
-হুম চল।
-তো দোস্ত প্রপোজ করছিস কবে?
-কাল।
-কালই?
-হুম।দোস্ত ওর সবচাইতে ফেভারিট একটা কিছুর নাম বল!
-ফুসকা!
-ধুর হারামি!গিফট দেয়ার মতো!
-সেরকম কিছু জানিনা তবে ও ঝর্ণা খুব পছন্দ করে।
-কিভাবে জানলি?
-জানবো না?সেই ছোট বেলায় সবাই মিলে যখন সীতাকুণ্ড ঝর্ণা দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন সবচাইতে বেশি খুশি লাগছিলো রিক্তাকে!
-আচ্ছা তাহলে তুই আজ যে করেই হোক হিয়াকে রাজি করা আমরা কালই সিতাকুন্ড যাবো!
-সে না হয় তোর জন্য করবো। এটা কি একটা ব্যাপার হলো?
-আচ্ছা দোস্ত তুই আমাকে এতো হেল্প করছিস তুই কখনো লাভ করিস নি?
-ছাড়তো!
-প্লিজ প্লিজ। বলনা কাউকে ভালোবেসেছিলি?
-বেসেছিলাম।
-কোথায় তোর জিএফ?
-বিয়ে হয়ে গেছে!
-ধুর হালা!বলিস নাই ওকে?
-না।আর এই জন্যই হারানোর বেদনা আমি বুঝি।আমি আমার ভালোবাসাকে হারিয়েছি।তোকে হারাতে দিবো না।তোকে বুঝতে দিবোনা হারানোর বেদনা কি!
-হাসিবকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছি।দোস্ত তোর মতো বেস্ট ফ্রেন্ড আর হয় নারে।তোর মতো ফ্রেন্ড যাতে সব্বাইর থাকে সব্বাইর!
-ধুর পাগল!
পরেরদিন।
-দোস্ত আমাদের বাড়ী চলে আয় হিয়াকে রাজি করাইছি!
-উম্মম্মম্মম্মা দোস্ত আমি জানতাম তুই পারবি।
-হইছে তুই তারাতারি চলে আয়।
হাসিবদের বাসায় আসার পর!ও ওদের প্রাইভেট কারটা নিলো আমি ওর সাথেই বসেছি।
-ধুর হারামি!
-কি হয়েছে!
-আরে বেটা আজও কি আমার পাশে বসতে হবে?যা পিছনে ওর সাথে বস!আমি ড্রাইভ করছি।
-মানে…
-আজ কোনো মানে বা কিন্তু নেই যা ওর পাশে বস।
-যাচ্ছি।
জীবনে এতো এক্সাইটেড কখনো হইনি!হিয়ার পাশে বসেই সীতাকুন্ড আসলাম।
-রিক্তাকে সত্যিই আজ ভীষণ হ্যাপি লাগছে!
-আমি একটা পাথরের উপর দাঁড়িয়ে দুহাত প্রসারিত করে চিৎকার করে বললাম উইল ইউ ম্যারি মি হিয়া!
চারিদিকের পাহাড় থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ঝর্ণার কলকল ধ্বনির সাথে একটিই আওয়াজ হচ্ছে উইল ইউ ম্যারি মি হিয়া!
-পিছন থেকে হিয়া আমার কাঁধে হাত রেখে বললো ইয়েস আই ইউল!
-বাহ!দারুন প্রপোজ করলি!
-ধুর তুই না থাকলে এরকম প্লেসে এসে প্রপোজ করা হতো!ক্রেডিটটা তো তোরই!
-আমার না হলে কার হবে!বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা!কথা দিয়েছিলাম তো রিক্তা তোর হবেই?
-হুম।দোস্ত।তুইতো আমার জানের দোস্ত!
-উল্টা বলিস কেনো? তুই আমার জানের দোস্ত সেদিন তুই না থাকলে জানটাই যে থাকতো না!
-তোকে না বলেছি ওসব কথা আর বলবি না!
-হুম।ঠিকাছে!
-চল।
-কোথায়?
-ফুসকা খেতে!
-ওহ চল।
অতঃপর আবার কিছুসময় ঝর্ণাধারার নিকটে অতিবাহিত করে ফিরে এলাম আপন ঠিকানায়।হারিয়ে গিয়েছিলাম বোধ হয় ঝর্ণাধারা হতে পাথরে পড়ে ছিটিয়ে যাওয়া রৌদ্র ঝিলিক দেয়া জলের প্রতিটি বিন্দুতে!
বাসার নিকটে আসার পর!
-দোস্ত তুই হিয়াকে নিয়ে যা আমি নেমে যাচ্ছি।
-হুম।ঠিকাছে।যাইয়া আবার বিয়ের জন্য ঘটকালি করা লাগবো।
-কার বিয়ে?
-কার আবার তোদের বিয়ে!
-মানবে সবাই?
-আমি বললে অবশ্যই মানবে আর তুই তো কোনোদিক থেকে রিক্তার অযোগ্য নয়!
-আচ্ছা বাই।
-আচ্ছা ঠিকাছে বাই।আমি হাসিব ভাইয়ার থেকে নাম্বার নিয়ে রাতে ফোন করবো।
-ওকে।
রাত্রিবেলা!
-হ্যালো কে?
-প্রপোজ কইরাই ভুইলা গেলা?
-না মানে আগে তো ফোনে কথা বলি নাই!তাই কন্ঠ বুঝতে পারিনি!
-কি করো?
-এইতো শুয়ে।তুমি?
-আমিও!
-ডিনার হয়েছে?
-হুম।তোমার?
-হুম।হাসিবকে ফোনটা দাও তো।
-দিচ্ছি।
-হ্যালো,শান্ত বল!
-হিয়ার বাবাকে রাজি করালি?
-আরে সবে আমার বাবাকে বলেছি উনি হিয়ার বাবাকে বলবে।
-উম্মম্মম্মম্মা দোস্ত!
-আর একটা কথা আমার বাবা যদি কখনো জিজ্ঞাস করে তুই কিন্তু বলবি না প্রপোজ করেই আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
-তাহলে কি বিয়ে করবো না!
-ধুর হারামি তা হবে কেনো?বলবি আমাদের দু মাস ধরে রিলেশন আছে আমাদের প্রেমের সব স্টেপ শেষ এবার শুধু ছাদনাতলা!
-ও বুঝেছি!কি দিলি দোস্ত হেব্বি আইডিয়া!
-হুম জানের দোস্ত না?
-হুম তাইতো!
পনেরো দিন পর!
আজ ছাদনাতলায় এসেছি কিন্তু ক্রেডিটটা হাসিবেরই।
-তুই কোন পক্ষ?
-আমি কোনো পক্ষই না দোস্ত আমি শুধু তোর পক্ষ!
-হাহাহা!
-হুম।
-আজ তোর জন্যই যাকে ভালোবাসলাম তাকে পেলাম!
-ধুর এটা কিছু হলো!আমিই তো তোকে কথা দিয়েছিলাম!আর তুই আমার জিগরি/জানের দোস্ত না?
-হুম!
-হ্যাপি গট ম্যারেইড!
-থ্যাংকু!
-ওয়েলকাম!আর হ্যা বিয়ের পর তোর বউকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যাইতে ভুলে যাস না!সময় করে একদিন ওকে নিয়ে….
-হুম যাবো।
-ভুলে যাস না ও কিন্তু আমাদের বাসাতেই ছিলো!
-হুম!তাছাড়া ক্রেডিটটাও তো তোরই!
-ধুর বোকা বন্ধুর জন্য করেছি এতে ক্রেডিট নেয়ার কি আছে!
-হুম।
তিনদিন পর!
-দোস্ত আমি আজ তোদের বাসায় যাবো হিয়া সহ।বাসার সবার সাথে দেখা করতে!
-আচ্ছা দোস্ত!আমি মা-বাবাকে বলে রাখছি!
-হুম!
হাসিবদের বাসায় গেলাম।
-তোরা বস আমি আসছি!
-কোথায় যাস?
-তোদের জন্য হালকা কিছু তৈরি করবো!
-মানে!আন্টি থাকতে…
-ধুর মা তো লান্স মেন্যু করেছেই!এখন আমি তোদের জন্য নিজ হাতে কিছু করে আনি!বন্ধুতো!
-তা তুই কি করতে পারিস?
-চা আর নুডলস পারি!আপাদত নুডলস করে আনছি আমরা সবাই মিলে খাবো!
-বাহ যা পারিস ওতেই জমে যাবে!কিন্তু আমিও যাবো!
-কোথায়?
-তোর সাথে কিচেনে!
-ধুর বোকা ওটা আমিই অ্যারেইঞ্জড করতে পারবো!তুই নতুন বিয়ে করেছিস বউয়ের পাশে থাক বেটা নতুন নতুনই তো ভালো লাগবেরে ময়না কয়েকদিন পরে লাইফ তেজপাতা হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাক!
-হিহিহি!
হাসিবের রুমে বসে আছি হিয়া সহ।ধুর হারামি কতক্ষণ হইছে কিচেনে গেছে এখনো আসছে না কেনো!একটা কথা ভেবে কেমন জানি লাগছে যে আমি বিয়ে করে ফেললাম আর বেটা হাসিব্বা নাকি প্রেমই করে না!আচ্ছা টেবিলে ওর ডায়েরিটা দেখিতো ওর অতীত বলতে কিছু আছে কি না যার জন্য কোনো রিলেশন করে না!
টেবিল থেকে ওর ডায়েরিটা নিলাম।
বাহ চমৎকার শুরু!বিশ তম জন্মদিনে বাবার দেয়া এই ডায়েরিটাও আমার শ্রেষ্ঠ উপহার যেখানে আমি ফ্রেমবন্দি করে রাখতে পারবো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম মূহুর্ত ও স্মৃতিগুলো!
যতই ভেতরে যাচ্ছি মনে হচ্ছে হারিয়ে যাচ্ছি ডায়েরিতে লেখা প্রতিটি শব্দের ভিতরে!ডায়েরিটা পড়তে যেয়ে বুঝলাম ও হয়তো প্রাইমারি লেভেল ওর মামার বাড়িতে থেকে শেষকরেছিলো!
বাহ আমার কথাও আছে!
আজ হেডফোনে গান শুনতেছিলাম আর সাইকেল চালাচ্ছিলাম যেই হঠাৎ একটা পাবলিক বাসের সাথে ধাক্কা খেতে যাচ্ছিলাম ঠিক সেই মূহুর্তে সৃষ্টিকর্তার দৌলতে কোথা থেকে এসে আমাকে বাঁচিয়ে দিলো আমার ডিপার্টমেন্টের এক বন্ধু সেদিন থেকেই ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার জীবনের চাইতেও দামী!আজ বুঝলাম যে কখনো কখনো দূর্ঘটনা
থেকেও দারুণ কিছু হতে পারে!
তারপর দেখলাম ও আমার লাভ স্টোরিও লিখে রাখছে!
টু ডে মাই ফ্রেন্ড ইন লাভ!ওর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছি তার চাইতেও বেশি খুশি হয়েছি আমার বন্ধু ভালোবেসেছে বলে!
পরের পেইজটা দেখার পর আমার মুখের হাসি মলিন হয়ে গেলো!
আজ এই প্রথমবার বাবা আমাকে চড় দিলেন!
-তুই কেমন ছেলে যে নিজের ভালোবাসাকে অন্যের স্ত্রী করার জন্য আমাকে শলাতে এসেছিস?
-বাবা আমি কেমন ছেলে জানিনা তবে আমি পৃথিবীর সেরা বন্ধু হতে পারি!বাবা আসলে ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে তাই আমি পারবো না ওদের কষ্ট দিতে।তাছাড়া আমি তো একতরফাই ভালোবেসেছিলাম ও তো বাসেনি।
-তুই বললে তো বাসতো।তুই কি আদৌ বলেছিস?
-আচ্ছা ওসব ভেবে লাভ নাই।ছাড়তো বাবা ওসব।
-জানিনা তোকে কি বলবো!তুই বেস্ট সন্তান নারে শুধু তুই পৃথিবীর ভালো বেস্ট ফ্রেন্ড!
-বাবা!
সেদিন বাবাকে বুকে জড়িয়ে খুব কেঁদেছিলাম আর কখনো এতো কান্না করি নি!
আরেক পেইজে!
-আজ আমার বন্ধুর বিয়ে।বুকে পাথর চাপা কষ্ট রেখেও হাসিমুখে ওদের বিয়ে দেখলাম।তবুও আমি খুশি আমার প্রিয়মানুষটি আমার আরো প্রিয় কারো কাছে সুখেই থাকবে আমার চাইতেও বেশি সুখে রাখবে!
ডায়েরিটা নিয়ে এবার থ’ হয়ে আছি!
-কি হয়েছে তোমার?তোমার চোখদুটো এমন অশ্রুসিক্ত হয়ে গেলো কেনো?
-দেখো!
-হিয়াও ডায়েরিটা পড়ে চুপ করে বসে আছে!
-এসে গেছি এসি গেছি!হাসিব স্পেশাল ম্যানু….
-তোর বাহিরের এই কৃত্ত্বিম হাসিটা সত্যি নাকি এই ডায়েরিটা!
-তুই এই ডায়েরিটা ধরলি কেনো!
-তোর কিছু ধরতে আমাকে অনুমতি নিতে হবে?
-না।কিন্তু…
-আজ কোনো কিন্তু না,তুই বল কোনটা সত্যি!
-দুটাই সত্যি!আমি ওকে ভালোবাসতাম ঠিক কিন্তু তোকে আরো বেশি দোস্ত!
-তাই বলে এতো বড় বিসর্জন!
-ধুর বেটা এটা কিছু হলো!জানের দোস্ত না!যেখানে জানটাও দিতে প্রস্তুত সেখানে এটা ব্যাপার হলো!
-তুই সব সময় আমাকে জিতিয়ে দিস!কিন্তু আমি আজ আমার ভালোবাসা জিতেও জীবন যুদ্ধে তোর বন্ধুত্বের কাছে হেরে গেছি!আমি হেরে গেছিরে!হেরে গেছি!
-ধুর বোকা তোর হার আমারও পরাজয় তোর জয় আমারও বিজয়!জীবনে হারলে একসাথে জিতলেও একসাথে।আর তুইতো বলতি আমাদের বন্ধুত্ব অমর!তাহলে কেমন করে হারাতে দেই এই বন্ধুত্ব শুধু মাত্র একটা মেয়ের ভালোবাসার জন্য!
বুকে জড়িয়ে ধরলাম হাসিবকে অঝোর ধারায় কাঁদতে ইচ্ছে করছে।হিয়ার নয়ন থেকেও দুই ফোটা জল টুপ করে গড়িয়ে পড়েছে মাটির বুকে!হয়তো ওটা কাউকে পেতে আর হারাতে দেখে নয়,এতো বিশাল বন্ধুত্বের বন্ধন দেখে!পৃথিবী হয়তো ভাবছে এমনও কি হয়!হয়তোবা সিনেমায় হয়!কিন্তু বিশ্বাস কর বিশ্বাস আর মনের জোর থাকলে সব সম্ভব।সব!মজবুত হোক সবার বন্ধুত্ব।কোনো ধাক্কাই যেনো কখনো ফাটল ধরাতে না পারে এমন বন্ধুত্বের মাঝে!জয় হোক পৃথিবীর সকল বন্ধুত্বের জয় হোক বন্ধুমহলের!দৃঢ় হোক বন্ধুত্ত্বের হাত শক্ত এবং প্রত্যায়িত হোক পৃথিবীখ্যাত এই সম্পর্কের বন্ধন।আজো পৃথিবী বন্ধুত্বের ব্যাখ্যা করতে পারলো না!আজো বন্ধুত্বের শক্তির কাছে জয়ী হয়েও পরাজিত সকল ভালোবাসা।আজো হেরে গেলো ভালোবাসা।এভাবেই যেনো বন্ধুত্বের জয়ের ধারা অব্যাহত থাকে।