শুধুই বন্ধুত্ব

শুধুই বন্ধুত্ব

রাত ১১ টা! প্রত্যেক দিনের মতোই আজ ইমরান সময় মতো ঘরে চলে গেলো! বাবা-মাও শুয়ে গেলো। সব কিছুই স্বাভাবিক! কিন্তু সত্যি কি তাই? রাত ১১ টা বেজে ৩০ মিনিট বরাবরের মতো ইমরান ডায়রিতে কিছু লিখলো, কিন্তু আজ নীচে লিখলো, আমাকে ক্ষমা করে দিও সবাই! তার কিছুক্ষন পর সব শেষ। আজ অনন্যার গায়ে হলুদ! অনেক রাত হয়ে গেলো, এমনিতেই অনন্যা এই বিয়েতে রাজী ছিল না কারণ সে পড়া শেষ না করে বিয়ে করতে চাই না, কিন্তু বাবা হটাৎ করেই বিয়ে ঠিক করে ফেলে, শত চেষ্টা করেও অনন্যা বিয়ে আটকাতে পারে না।

অনন্যা- ভাবী! ইমরান আসে নি?

ভাবী- না রে, আর আমি ফোন ও করেছিলাম তো কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ।

অনন্যা- ফেসবুকে তাকে পাও নি? এমন কোন দিন নাই যে সে রাতে ফেসবুকে থাকে না।

ভাবী- না রে। আমি সন্ধ্যা থেকে ওকে ১০-১২ বার ম্যাসেজ দিয়েছি? তোর সাথে কি আবার ঝগড়া হয়েছে নাকি?

অনন্যা- সে কি নতুন কথা? কাল আমার বিয়ের কথা শুনার পর আমার ওপর রেগে বলল, কই তুই যে বললি পড়া শেষ না করে বিয়ে করবি না, আসলে সব মেয়েই এক টাকা পেলেই সব ভুলে যায়, আচ্ছা ভাবী আপনি বলেন, এখানে আমার কি দোষ? আমি কি বিয়ে করতে রাজী ছিলাম?

ভাবী- আচ্ছা তুই মন খারাপ করিস না, ও একটা পাগল। আমি কালকে কথা বলে ওর ব্যাবস্থা করছি।

অনন্যা- আচ্ছা ভাবী,তবে আমি ওকে কান না ধরিয়ে ছাড়বো না।

ভাবী- আচ্ছা দেখা যাবে।

সকালে অনন্যা অনেক চেষ্টা করেও তার খোঁজ নিতে পারলো না। কিন্তু ওর ভাবীর কাছে ওর আম্মুর নাম্বার ছিল।
৫ বার কল দেবার পর, কেউ একজন ফোন ধরলো।

ভাবী-আসসালামুআলাইকুম, আপনি কি ইমরান এর আম্মু?

আপু- না আমি ওর আপু। কেন কি হয়েছে?

ভাবী- আসলে আমি ওর এক ভাবী, আমার নাম ফারিয়া। কাল থেকে ওকে ফোন করছি সে ধরছে না।

আপু- সে আর বেঁচে নাই।

ভাবী- মানে? কি হয়েছে তার?

আপু- সে কাল আত্মহত্যা করেছে।

ভাবী- কি বলেন?

আপু- হ্যাঁ! ডায়রিতে একটা মেয়ের নাম দেখলাম, অনন্যা! কাল নাকি তার বিয়ে? আমার ভাই তাকে নাকি অনেক ভালোবাসতো, আর এই বিয়ে সে মেনে নিতে পারেনি। ছেলেটা জানেন সব কথা আমাকে বলতো, আর এতো বড় কাজ করার আগে একবার ও আমাকে বলল না। অনন্যার ভাবী আর কিছু বলল না, চুপ কর ফোন রেখে দিলো।

অনন্যা- ভাবী! ভাবী! এই ভাবী, ডাকছি শুনতে পাও না। ইমরানের সাথে তোমার কথা হয়েছে?

ভাবী- না, মানে?

অনন্যা- কি মানে মানে করছো?

ভাবী- বাদ দে! আজ বাড়ীতে অনেক মেহমান, তুই সে দিকে নজর দে।

অনন্যা- তুমি কিছু লুকাচ্ছো! বলো আমাকে কি হয়েছে।ভাবী- ইমরান আর নাই।

অনন্যা- মানে? কি বলো এসব?

ভাবী- কাল রাতে সে আত্মহত্যা করছে।

অনন্যা- কিন্তু কেন?

ভাবী- কারণ তুই! তোকে ইমরান ভালোবাসত তুই জানতিস?

অনন্যা- না তো, সে আমাকে কখনও কিছু বলে নি, হ্যাঁ তবে সে ইয়ার্কি করতো, যে কোন মেয়ে না পেলে আমি তোকে বিয়ে করবো। আমার জন্য অপেক্ষা করিস। তো আমি কি জানতাম যে সে আমাকে এসব সত্যি বলছে?

ভাবী- সে তার ডায়রিতে তোর নাম লিখে গেছে!

অনন্যা- আমি ওদের বাড়ী যাবো।

ভাবী- পাগল নাকি? কাল তোর বিয়ে! মানুষে কি বলবে?

অনন্যা- ভাবী আমি বোঝা নিয়ে জীবনে সুখী হতে পারবো না, আমি যাবো।

আর কিছু শুনলও না! অনন্যা গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেলো। অনন্যা গাড়ী চালাতে চালাতে ৪ বছর আগে ফিরে গেলো! অনন্যার সাথে ইমরানের বন্ধুত্ব আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে ফেসবুকে! ইমরান অনন্যার পরিবারের আগে থেকেই সবার সাথে বন্ধুত্ব ছিল পরে অনন্যার বন্ধু হয়, যদিও তারা দুই জন প্রথম দিন থেকেই ঝগড়া করে। এভাবেই মাস পার হয়, পার হয় বছর! সরাসরি দেখা না হলেও একে ওপরের সাহায্য ঠিক তারা করে, এভাবেই সময় পার হতে থাকে।।

একদিন হুট করেই তাদের দেখা হয়! সেখানেও অনন্যা রাগ করে ইমরানের ওপর, কারণ ইমরানের সাথে ওর বন্ধু ছিল তাই। কিন্তু এখানে ইমরানের ও কোন দোষ ছিল না, সে তো বন্ধু নিয়েই ঘুরছিল, পরে অনন্যা জানতে পারে, ইমরান এই মার্কেটেই আছে তখন বলে দেখা কর। যায়হোক, অনন্যা পরে ইমরানের কথা শুনে! এখানেও উকিলের দায়িত্ব পালন করে অনন্যার ভাবী। এভাবে প্রতি সপ্তাহেই অনন্যা আর ইমরান ঝগড়া করে আর ভাবী মীমাংসা করে। মাঝে মাঝে ভাবী তো রাগ করে বলে, তোদের কথা বলার-ই কি দরকার? তুই ইমরানকে ব্লক দিয়ে দে, তোদের প্রতিদিনের ঝগড়া আর আমার ভালো লাগে না।

স্বামী-স্ত্রী ও এতো ঝগড়া করে না এর আগেই ডিভোর্স নিয়ে নিবে।

অনন্যা ঘণ্টা খানিকের মধ্যেই ওদের এলাকা চলে আসে। এলাকাই এসে ওর নাম বলতেই একজন বলে ঐ যে কাল রাতে যে ছেলে মারা গেছে ওদের বাড়ী? অনন্যা কেমন জানি একটা ধাক্কা খায়! বাড়ী গিয়ে দেখলো! কিছু মানুষ আছে, কিন্তু কাউকে সে চিনে না। একজন আসলো,

অনন্যা- ইমরানের ঘর কোনটা?

একজন- সামনের টা! আপনি কে? অনন্যা কিছু না বলেই চুপ করে সামনে এগুতে থাকলো! ঘরে গেলো সে!পাসের ঘর থেকে কান্নার শব্দ আসছে! পিছন থেকে একজন বলল, আপনি কে?

অনন্যা- আমি অনন্যা! ইমরানের বোন কিছু না বলে ডায়রিটা দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

অনন্যা ডায়রি টার প্রথম পাতা বের করলো!  “জীবনে কখনও আমি অপমান হয় নি, আজ হলাম। আজ একজন বলল, আমার কথায় নাকি সে কষ্ট পায়, কিন্তু আমি তো তাকে কষ্ট দিতে চাই নি, তবে কেন? কেন সে কষ্ট পাবে?” অনন্যা আবার কিছু পাতা পাল্টে দিলো,“ আজ সে আমার বন্ধু হয়েছে, আমার জীবনে প্রথম মেয়ে বন্ধু, যদিও একটা ফেসবুক, তারপর ও সে আমার জীবনের একটা অংশ। আর আমি সেটা মেনেই চলবো, কখনও তাকে কষ্ট দিবো না” মেয়েটাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি, হয়তো সে আমার জীবনের প্রথম মেয়ে এজন্য আর আমি চাই যে সে আমার জীবনের শেষ মেয়ে হোক কিন্তু তার সাথে সম্পর্ক করা ঠিক হবে না, সে যদি আমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়?” “যাক শুনে ভালো লাগলো, মেয়েটা নাকি পড়া শেষ না করে বিয়ে করবে না, তার মানে আমার কাছে আরও ২ বছর সময় আছে, আমি পড়া শেষ করে সময় পাবো ৮ মাস, সমস্যা নাই সরকারী না হলে কোম্পানিতে একটা ভালো চাকুরী করবো”।

“অনন্যার ভাবী বলল, ওর নাকি অনেক বড়লোক বাড়ী থেকে প্রস্তাব আসছে কিন্তু সে ফিরিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু কেন? সে কি কাউকে পছন্দ করে? কিন্তু সে আমার বন্ধু সে কাউকে পছন্দ করলে আমাকে বলবে” আজ মনটা অনেক খারাপ! জীবনের প্রথম আজ সিগারেট খেলাম, হাতও পুড়িয়ে দিয়েছি, আগুনে, যদিও সেটা ইচ্ছা করে করিনি, আসলে অনন্যা বলল, ঢাকার অনেক বড় ব্যাবসায়ী ছেলের সাথে নাকি ওর বিয়ে হচ্ছে, ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে দূরে চলে যেতে কীভাবে দিতে পারি? সে আমাকে ভালো না বাসুক, কিন্তু প্রতিদিন তো ঝগড়া করে, কাল থেকে কে আমার সাথে ঝগড়া করবে? কে আমাকে গালি দিবে? কে বলবে তোর কপালে কালো পেত্নী বউ জুটবে। তুই একটা কথা ভুল বলেছিস, আমার ভাগ্যে কালো পেত্নী বউ জুটবে না রে, কারণ আমার কপালে কোন মেয়েই নাই।

রাত ১১ টা ২২! আজ শেষ লিখা লিখি! জানি তুই অনেক খুশী আছিস। মাফ করবি তোর হলুদের অনুষ্ঠানে আসতে পারলাম না। এই ভার্চুয়াল বন্ধুটা আর ভার্চুয়াল নাই রে, নিজেকে তোর অনেক কাছে নিয়ে চলে গেছে! তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না রে! তুই সুখে থাকিস। তুই প্রথমদিন একটা কথা বলেছিলি মনে আছে? “বন্ধুত্ব মানে শুধুই বন্ধুত্ব” আমি বলেছিলাম, আচ্ছা! আমি কথা রেখেছি! আমি ভালোবাসার কাছে বন্ধুত্বের হার হতে দেয় নি। নিজের জীবন দিয়েও বন্ধুত্ব অটুট রাখলাম! ভালো থাকিস! মা! আমাকে ক্ষমা করে দিও!ইচ্ছা থাকলেও তোমাদের ভালো ছেলে হতে পারলাম না। বোন আমার ক্ষমা করে দিস! অনন্যা ডায়রি পড়তে পড়তে বিছানা জড়িয়ে অঝর নয়নে কাঁদতে শুরু করলো!

অনন্যা- একবার বলে, দেখতি তোর বন্ধু রাগ করতো না! একটি বার সুযোগ দিতি।

ভাবী ফোন করলো।

ভাবী- কই তুই?

অনন্যা- বিয়েটা ভেঙ্গে দেন ভাবী।

ভাবী- কি বলিস?

অনন্যা- যা বলছি সেটা শুনেন! এই নিয়ে আর কোন কথা না! না হলে আমাকেও খুঁজে পাবে না।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত