ইচ্ছে করছে মেয়েটার নাকে গিয়ে একটা দুম করে ঘুষি মারতে। ঘুষি খেয়ে মেয়ের নাক ফেটে রক্ত বের হবে। আর আমি মেয়েটাকে খপ করে কোলে নিয়ে হাসপাতালের পথে দৌড়াতে থাকব! মেয়েটাকে আমি লক্ষ্য করে যখন এতসব ভাবছি মেয়েটা তখন চুপিচুপি আমাকে দেখছে, ওর সাথে থাকা একজন মেয়েকে আমাকে দেখাতে চাইছে আমি তা বেশ বুঝতে পারছি। আমাকে চুপিচুপি এমনভাবে দেখা, আমি যাতে টের না পাই সে চেষ্টাতেও মেয়েটা চেষ্টারহিত।
কিন্তু আমি ত টের পেয়েই গেলাম। চোখ পড়ল ঠিক চোখে! মেয়েটা আর যায় কোথায়! এমনভাবে লজ্জা পেয়ে ঘুরে দৌড় দিল ওর সাথে থাকা মেয়েটা ত আর ওর নাগাল বোধহয় পেলই না, আর ওই হয়ত মুহুর্তে এই এলাকা ছাড়া হয়ে গেছে! ও এখানে নতুন। তবে নতুন দিনের প্রথম দিন থেকেই ওরে আমি কিভাবে যেন খুব চিনে ফেলেছি। অবশ্য না চেনার কোন কারণ ছিল না। প্রথম দিন এসেই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এমনভাবে তাকিয়ে রইল দোকানের দিকে মনে হল কত দিনের চেনা আমি! না আমাকে ও দেখছিল না অবশ্য! দোকানের তাকে তাকে বইয়ের সারি গুলো দেখছিল।
প্রথমদিনেই বেশ ক’টা বই কিনে নিয়ে গেল দুম করে। বই যে কেনার প্রিপারেশন নিয়ে এসেছিল তা না। অন্য কাজে কার সাথে যেন মার্কেটে এসেছিল। কিন্তু দোকানে বই দেখে নিয়ে নিল। মেয়ের ভাবখানা এমন যেন, পছন্দ হয়েছে তাই তুলে নিয়ে নিয়েছি! তবে এমন ভাব মেয়েদের ড্রেস কেনার ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রায়শই! কিন্তু বই কেনার বেলায় এটা খুব কম দোকানে হয়! কয়েকদিন পর খেয়াল করলাম মেয়েটা আবার আমাদের স্টলের সামনে এসে বই কালেকশন করছে! আমার স্টলে পুরাতন একাডেমিক বই, ভারতীয় নানা ডিকশেনারি, ইংলিশ লিটারেচার, বাংলা লিটারেচার এসবের সমাহার। খেয়াল করতাম মেয়েটার লিটেচারের দিকে বেশি আগ্রহ। আবার নতুন বইয়ের হেভি কস্ট হওয়াতে সে একাডেমিক বইগুলাও কিনে নিয়ে যায় পুরাতন লাইব্রেরি থেকে।
কিন্তু বই কেনার ফাঁকে ফাঁকে যে সে আমায় তার নজরে আটকে ফেলেছে এটা আমি ভাবতেও পারিনি! এখন মনে হচ্ছে ও আমাকে বই কেনার ছলে আসলে আমাকেই দ্যাখে। আমি সুন্দর, সুদর্শন জানি। আমি যদি বইয়ের দোকানে না বসে থেকে কলেজের ক্লাসে বসে থাকতাম জানি আমার লুকের পিছনে মেয়েদের লাইন লেগেই থাকত। এখনো খেয়াল করি মেয়েরা দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটু না একটু তাকাবেই আমার দিকে!! বুঝতে পারতাম ভাল লাগার থেকেও সোশ্যাল স্ট্যাটাস টা মেইন। তাই মেয়েরা ভাল লাগলেও কিছু বলতে বা করতে পারত না আমার সাথে!
কিন্তু এই মেয়েটা একেবারেই আলাদা। খুব আলাদা বই প্রেমিক যে সেটা প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম। বই পড়তে পড়তে আমি হঠাৎই তার নজরে পড়ে গেছি এই আর কি! একদিন দুইদিন পরপর ত আর দোকানে আসতে পারেনা। হয়ত তার মনেও ভাবনা, এত ঘনঘন গেলে কি ভেবে বসবে একই দোকানে! কিন্তু আমি যে তার মনে ধরেছি আমাকে না দেখে সে থাকতেও পারেনা!! তাই হয়ত অমন চুপিচুপি দেখা। আমি আনমনেই হেসে উঠলাম। মেয়েটা যে আমাকে না দেখে থাকতে পারেনা সেটা পরেরদিন বইয়ের মার্কেটে ওকে ঘুরতে দেখে শিওর হয়ে গেলাম! ওর ভাবখানা এমন, ও আসলেই বই খুজতে এসেছে। তাই বিভিন্ন স্টলে ঘুরছে। আর উঁকি দিয়ে আমার স্টলের দিকে তাকাচ্ছে!!
একটা টাইমে দেখলাম ওই আমার দোকানের সামনে হাজির! আমি প্রথমে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলে বসলাম- “রোজ রোজ কিসের এত বই কিনতে আসো?” মেয়েটা বোধহয় একটু হলেও আমার কথা শুনে হকচকিয়ে গেল। মিনমিনে গলায় বলল বই ভাল্লাগে ত পড়তে। একদিনে ত তিন চারটা নাও। দুদিন যেতেই পড়া বুঝি শেষ হয়ে যায়? উফ না। একচুয়ালি হইছে কি, আমার বই কালেকশন করতে ভাল্লাগে। আমি ত বই দিয়েই ঘর ডেকোরেট করি!
আমার রুমে গিয়ে দেখেন, হাত বাড়ালেই বই পাবেন। বই ছাড়া আর কোন আসবাবপত্র নাই। আমি আমার চারপাশে বই রেখে ঘুমাই। বই আমার সব। আর আমি? মানে কি? আমি তোমার কি? আপনার নাম কি? নাম পরে হবে। আগে আমার কথার জবাব দাও। বুঝে ফেলছেন! ত আবার জিগান কেন? আজব ত। কি বুঝব? ঢং! মেয়েটা ঢং বলে ঢ্যাংঢ্যাং করে করে চলে গেল সেদিনের মত। কিন্তু যে বইটা নিয়ে গেল ওখানে আমি একটা ছোট চিরকুট মেয়েটাকে দিয়েছিলাম।
আসলে প্রথম প্রেম ছিল মেয়েটা আমার। আমার যে ওকে ভাল লাগত না তা না। তবে এটা সত্য, ওর আমার প্রতি ভাললাগা দেখে ওর প্রতি আমার ভাললাগা সৃষ্টি! জানিনা এভাবে চলবে কতদিন আর কতভাবে! তবে লাইফটা যে সুন্দর কিছু কিছু মুহুর্তের জন্য তা খুব ভালভাবেই ফিল করতে পারি। তাইত বেঁচে থাকা আমার কেটে যাক ভালবাসায় বাকি দিন গুলো।