ভাবিস্ট

ভাবিস্ট

ওই মিস্টার ভাব,এদিকে শোনো। [কিছু না শোনার ভাব করে বসে রইলাম] ওয়ে হ্যালো! বয়রা নাকি! [একি ভাবে বসে রইলাম] তারপর ক্লাসে স্যার চলে আসলেন,মেয়েটা আর কিছু বলার সুযোগ পেলোনা। কিছুদিন যাবৎ খেয়াল করছি,মেয়েটা ক্লাসে আমার দিকে আর চোখে তাকিয়ে থাকে। কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও কিছুই করার নেই,কারণ বাংলার আদালতে শুধুমাত্র মেয়েদেরি অধিকার রয়েছে ছেলেদের বিরুদ্ধে আঙুল তোলার।

আগের যুগের ডাইনেসরকে বিশ্বাস করা যায় তবুও এই যুগের মেয়েদেরকে বিশ্বাস করা যায়না,তাই সেই প্রথম থেকেই মেয়েদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে এই ভার্সিটি লাইফ পর্যন্ত এসেছি। প্রদিন সবগুলো ক্লাস করা,ক্লাস শেষে আড্ডাবাজি না করে সোজা বাড়ি চলে যাওয়া আদর্শ ছেলের লক্ষণ,আমিও তার বিপরীত নই। প্রথম ক্লাসে স্যারের লেকচার যখন মন দিয়ে শুনছি,তখন কে যেন কাগজ ছুরে মারলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে সবাইকেই নরমাল মনে হলো,তাই সামনে তাকিয়ে আবারো লেকচারে মন দিলাম। কিছুক্ষণ বাদে আবার কে যেন কাগজ ছুরে মারলো,ভাগ্যক্রমে সেবারো দেখতে পেলাম না। তবে বোকার মন দ্বিতীয় ভুলটা না করে,তৃতীয় বাড়ের জন্য প্রস্তুত নিলাম। আবার কাজ ছুরে মারতেই খেয়াল করলাম সেই মেয়েটার কাজ। সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে “স্যার ওই মেয়েটা ডিস্টার্ব করছে”।[মেয়েটার দিকে আঙুল দিয়ে ইংগিত করে] কাজের কাজ কিছুই হলোনা,উলটা ক্লাসের সব স্টুডেন্টের চক্রান্তে আমায়ি বাহিরে যেতে হলো।

ক্লাস শেষে স্যার যেতেই,মেয়টা বেড় হয়ে আমায় খুঁজতে লাগলো। পানি পান করে আমি যখন ক্লাসের দিকে যাচ্ছি মেয়েটা তখন আমায় পেয়ে,”সরি,প্লিজ রাগ করোনা,আমি বুঝতে পারিনি,আই এম রিয়েলি সো সরি”। আমার এক্সপ্রিয়েন্স অনুযায়ী এভাবে বিএফ কে বলা হয়,তবে আমায় কেন..why! আমি শুধু,”নো প্রব্লেম” বলে চলে যেতে লাগলাম। মেয়েটা তখনি হাত বাড়িয়ে দিয়ে,”নিধি..আই এম আফরিন নিধি।” একটা হাসি দিয়ে আমি তখন পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। আশেপাশের সবাই কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা…হ্যা নিধি নামে মেয়েটা আরো বেশী অবাক হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর পেছন থেকে বলতে লাগলো,”বড্ড বেশী ভাব তোমার,একদিন এই ভাবের শেষটা দেখে ছাড়বো।” মাথা কোনোভাবে কুল করে সেখান থেকে চলে গেলাম। সেদিন আর কিছুতেই ভার্সিটিতে থাকতে পারলাম না। সবকিছু অদ্ভুত লাগায় বাড়ি ফিরে এলাম।

পরেরদিন ভার্সিটিতে যেতেই গেটে নিধির সাথে দেখা হয়ে গেলো। কাছে এসে নরম শুরে বললো “প্লিজ কিছু কথা ছিলো,কিছুক্ষণ সময় হবে?” মেয়েটাকে না বলার,উপায় না পেয়ে “ওকে” বলে দিলাম। নির্জন কোথাও বসে বলতে পারলে ভালো হতো,বুঝতেই পারছো এখানে কতো সমস্যা[মাটির দিকে তাকিয়ে] মনে মনে সেই লেভেলের ভয় পাইলাম,বালিকা চায়টা কি!তবুও নিজের প্রতি সাহস রেখে “ওকে চলো” বলে বালিকার পিছু হাঁটতে লাগলাম। ভার্সিটির পেছনে পুকুরপাড়ে সুন্দির এক পরিবেশ,এই সময় সচরাচর কেউ সেখানে যায়না। ভাবতে লাগলাম আমি গিয়ে বিপদে পরিনিতো,তখনি নিধি আমায় চমকে দিয়ে কলার ধরে বলতে লাগলো “ওই কুত্তা তোর সমস্যা কিরে!এত্ত ভাবের ওপর থাকিস ক্যান সবসময়!কাল কি অপমানটা করলি সবার সামনে।ওই আমি কি রূপে গুণে খারাপ!এখন যদি জেদের ওপর তোরে এখানে টপকে দেই কাক-পক্ষিতেও তো টের পাবেনা।”ডায়লগ শুনে শুকনো গলায় একটা ঢোক গিলে বললাম,”স..স..সরি”।

নাহ্,এই সরি এখন আর চলবেনা।এখন আমার সাথে প্রেম করলেই তোরে বাঁচায়ে রাখমু। শুনে পরলাম মহা বিপদে,এখন যদি বালিকারে কিছু বলি খামু নির্যাতন কেস (সাথে অপহরণ অস্ত্র মামলা ফ্রি) আর যদি কিছু না বলি তবে পরবো প্রেমের কেসে।এক কেসে ইজ্জত যাইবো,অন্য কেসে জিবনও যাইতে পারে। উপায়হীন হয়ে জিবনের বাজি লাগিয়ে প্রেমের কেসে “ওকে” বলে দিলাম। বালিকা তখন কলার ছেড়ে কিছু রুলস বলে দিলো,”কাল,ভার্সিটির মাঠে সবার সামনে প্রপোজ করতে হবে। তিন কালারের গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করতে হবে। তারপর যখন গোলাপ গুলো নিবে তখন পায়ে পায়েল পরিয়ে দিয়ে সবার সামনে কোলে তুলে নিতে হবে।” আমি শুনে কিছু একটা বলতে যাবো,বালিকা এমন লুক দিলো ভয়ে “হ্যা” যুক্ত মাথা নারালাম। নিধির কথা সত্যি হয়ে,আমার ভাবের জন্য আজ পস্তাতে হচ্ছে। আফসুস কাল বললো আর আজকেই Reaction শুরু।

ভার্সিটির পেছন থেকে হ্যাপি ভাব নিয়ে ক্লাসে গেলাম। পোড়া কপাল আমার,ক্লাসে নিধির পাশেই বসতে হলো। এক এক করে সব কটা ক্লাস করতে লাগলাম,তবে নিধির কথা ছাড়া ক্লাসে আর কিছুই বোঝা অসম্ভব হয়ে পরছিলো। কোনোভাবে ক্লাস শেষ হতেই বাড়ি চলে গেলাম। দিন তো তাও কেটে গেলো,রাতে পড়া শেষ করে পরলাম মহা চিন্তায়।তিন কালার গোলাপ কই পাবো! উপায়হীন হয়ে বেড়িয়ে পরলাম,বাজারে উদ্দেশ্যে। অনেক খুঁজে এক দোকানে সাদা আর লাল তবুও পেয়ে গেলাম,নীল কালার তখনো মিসিং। নিজের হাইড্রিক ব্রেন কাজে লাগিয়ে তখন আরো একটা সাদা গোলাপ নিয়ে নিলাম।

বাড়ি ফিরে দ্বিতীয় সাদা গোলাপটা টয়লেট হারপিক দিয়ে ধৌত করে পুরো নীল বানিয়ে ফেললাম। তারপর যাতে নষ্ট না হয় তাই,গোলাপ গুলো স্বযত্নে ফ্রিজে রেখে দিলাম। নরমালে রাখতে গিয়েও নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভেবে ডিপে রাখলাম। টাইমিং অনুযায়ী সকাল নয়টায় ঘুম ভেঙে গেলো। তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়েই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ফ্রিজ থেকে গোলাপ গুচ্ছ নিতে ভুলিনি। রোমিওদের মতন তিন কালার গোলাপ হাতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। কেন জানি মনে হলো তিন কালার গোলাপের ঘ্রান একটু টেস্ট করে দেখি। যেই ভাবা সেই কাজ,তবে প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মাছের আস্টার গন্ধ আর হারপিকের ঝাঝালো ঘ্রাণ আমার মাথায় চক্কর খাওয়াতে বাধ্য করলো। নিজেকে কোনোভাবে কন্ট্রোল করে আবারো হাঁটা দিলাম। ভার্সিটিতে পৌছে সবার সামনে নিধিকে ডাক দিলাম।

বালিকা এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়াতেই হাঁটু গেরে লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে,”লাল গোলাপ ভালবাসার প্রতিক,তাই শুরুটা ভালবাসা দিয়েই করতে চাই।” সাদা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে,”সাদা শান্তির প্রতিক,ভালবাসাটা শান্তির মধ্য দিয়ে পূর্ণতা দিতে চাই। শেষে নীল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে,”এই দুটি গোপের মাঝে যেমন নীল গোলাপটাও মানিয়ে যায়,আমিও তেমন যেকোনো পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থেকে মানিয়ে নিতে চাই।” নিধি অবাক হয়ে তাকিয়ে এক এক করে গোলাপ গুলো শুধু নিলো। তখন পকেট থেকে সোনার পায়েল বেড় করে নিধিকে আমার হাঁটুর ওপর পা রাখতে বললাম। মেয়েটা আমার হাঁটুর ওপর পা রাখতেই,আলতো করে পায়েলটা নিধির পায়ে পরিয়ে দিলাম। তারপর উঠে দাঁড়াতেই মেয়েটা জড়িয়ে ধরলো।

আমিও আবেগী..হাজার ভাবের মাঝে আমার মাঝেও যে ভালবাসা রয়েছে। তাই নিজেকে আটকাতে না পেয়ে আমিও নিধিকে জড়িয়ে ধরলাম। পুরো ভার্সিটি তখন অবাক হয়ে,সুন্দর একটা মুহূর্ত উপভোগ করলো। আর হাত তালির মধ্য দিয়ে আমাদের সম্মরধনা জানালো। তখন নিধির কানে কানে বললাম “আমার ভাব,আপনার রাগের কাছে হার মেনে,মনটা আপনায় গিফট করে দিয়েছে।” নিধি শুধু বললো,”ভাবিস্ট বয়ফ্রেন্ডটা এত্ত রোমান্টক হবে ভাবতেও পারিনি।”

<সমাপ্ত>

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত