কুয়াশা পরী

কুয়াশা পরী

মা: এই আবির এই উঠ? আবির এই আবির

আমি:কি হয়েছে মা এত সকলে চিল্লাচ্ছো কেনো? উঠে একটু বাজারে যা। আর ঘুমাতে হবেনা। কয়টা বাজে এখন? ৫.৩০ কি??? এত সকালে কোথায় যাব মা? একটু বাজারে যা বাবা কি??এই শীতের মধ্যে তুমি আমাকে বাজারে পাঠাচ্ছো। তাড়াতাড়ি বাজার করে নিয়ে আয়। আসলে রান্না করব। কি আর করা এতসুন্দর ঘুমটা বিসর্জন দিতেই হলো।

আমি আবির।গ্রামের বখাটে নাম্বার ১। একসময় ছিলাম। এখন একটা চাকরি করি কম্পানিতে।সেজন্য শহরে থাকতে হয়।২ দিন হলো ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছি।আসলে গ্রামে ভোরেই বাজারে যেতে হয়।তাইত মা সকাল সকাল পাঠিয়ে দিলো বাজারে। বাইরে বেরিয়ে দেখি কুয়াশার জন্য কিছুই দেখাযাচ্ছেনা।চেনা পথ বলে ঠিক ভাবে হাঠতে পারছি।অচেনা কাউকে এই কুয়াশার ভিতর একা ছেড়ে দিলে সে রাস্তা খুজে পাবেনা নিশ্চিত। ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে যাচ্ছি মনে হচ্ছে।তাই পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে টানতে টানতে শুরু করলাম।আসলে সিগারেট খাওয়াটা আমার নেশা না।এই মাঝে মাঝে একটু আধটু খাই।

কিছুদুর যাওয়ার পর কানে নুপুরের শব্দ শুনতে পেলাম।একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে খালি পায়ে ভেজা ঘাসের উপর হাটছে।আর তার পা থেকেই নুপুরের ছন্দটা আসছে।আমাকে যেন মাতাল করছে তার নুপুরের ছন্দ।
কে তুমি প্রিয়সি, তোমায় দেখে কেনো হৃদয়ে বাজলো বাশি? নুপুরের ছন্দে করেছো মাতাল, তবে কি এটা সেই প্রেমেরই মায়াজাল? এই যে মিস্টার এভাবে তাকিয়ে কি দেখেন? এইরে আর একটুর জন্য কবি হতে পারলাম না।যেইনা দুলাইন মনে পড়েছে অমনি মেয়েটা বাম হাত দিয়ে দিলো ভাবনার জগতে। মেয়েটা আমার দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

আমি:আপনি কি পেত্নী না শাকচুন্নি? খাইছেরে এবারত মনে হয় চোখদুটো বেরিয়ে আসবে। এই যে কে আপনি হ্যা?আর আমাকপ পেত্নী বলার সাহস কোথা থেকে পেলেন? যেভাবে তাকাচ্ছেন তা কি বলব? আমারর কথায় মেয়েটা মনেহয় কিছুটা লজ্জা পেয়েছে।চোখটা এবার একটু নামিয়ে নিল।চোখদুটো এবার দেখে ছোট একটা ধাক্কা খেলাম।মনে হচ্ছে চোখখদুটোর সাথে আমি আগেও পরিচিত।কিন্তু মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছেনা। মুখ উড়না দিয়ে ঢাকা।মনের ভিতর খানিকটা সাহস নিয়ে বললাম

আমি:আপনার নাম কি?  সেটা আপনাকে কেন বলব? না মানে জানতে চাচ্ছিলাম আর কি? নামম জেনে কাজ নেই। যেখানে যাচ্ছিলেন সেখানে যান। বলেই মেয়েটা হন হন করে হাটতে হাটতে চলে গেলো।আর আমি শুধু তার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটা সাথে সাথেই কুয়াশার ভিতর মিলিয়ে গেল। আমি বাজার করে বাড়ি এসে ফ্রেস হয়ে শুয়ে শুয়ে মেয়েটার কথা ভাবতে লাগলাম। আমি কখনো প্রেম করিনি। তবে যখন স্কুলে পড়তাম তখন একটা মেয়েকে খুব ভালো লাগতো।মেয়েটার নামছিলো অধরা। আমরা একসাথেই পড়তাম। একই গ্রামে বাড়ি বলে কখনো তাকে ভালোবাসার কথা বলতে পারিনি। বাবাকে খুব ভয় পেতাম তাই অধরাকে মনের কথা বলার সাহস হয়নি। ভাবতাম কিছু বললে যদি বাবাকে বলে দেয়।

মা:এই আবির এই ওঠ। আবার ঘুমিয়ে পড়েছিস কেনো?এতবেলা করে কেউ ঘুমায় ওঠ বলছি। অধরার কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল।

আমি:কি হয়েছে ডাকছো কেন?

মা:উঠে হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়।

আমি:আচ্ছা যাও আসছি। ফ্রেস হয়ে খেতে গেলাম।গিয়ে দেখি বাবা বসে আছে। কোন কথা না বলে চুপচাপ খেতে লাগলাম।একটু পর বাবা খেয়ে রুমে চলে গেলো।তারপর মা বলতে শুরু করল

মা:আবির

আমি:হুম বলো, আমার বাড়িতে একা একা ভালো লাগেনা? তাহলে চলো আমার কাছে থাকবে  আরে না আমি তা বলিনি তাহলে কি বলেছো? তুই এখন চাকরি করছিস।এবার একটা বিয়ে কর? আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করবনা মা। মাকে আর কিছু বলারর সুযোগ না দিয়ে আমি চলে আসলাম ওখান থেকে। পরেরদিন সকালে আবার গেলাম ওই জায়গায়।যেখানে ওই কুয়াশাপরীকে দেখেছিলাম আজকেও দেখি সে খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপর হাটছে।আমি কুয়াশার ভিতর দাড়িয়ে তাকে দেখছি আর মনে মনে ভাবছি যদি সঙ্গী হতাম তোমার এই কুয়াশা ঢাকা সকালের, ধরে হাতটাম তোমার হাতদুটো কোন এক গোধুলী বিকেলের। তুমি কি কোন মানুষ, না কি কোন এক মায়াবী পরী? যাকে দেখলে থমকে যায় আমার দুচোখ, যেন হয়ে ওঠে কোন গভীর সমুদ্রের দিশাহীন ডুবুরী।

আরে গেল কোথায় মেয়েটা?এখনিত এখানে ছিলো।নাহ আজকেও তার মুখটা দেখা হলো না। আজও কুয়াশার মাঝে হারিয়ে ফেললাম তাকে। কিছুক্ষন হতাশ হয়ে দাড়িয়ে থেকে বাড়িতে ফিরে আসলাম। প্রতিদিন সকালে কুয়াশার মাঝে গিয়ে কুয়াশাপরীকে দেখা যেন একটা রুটিক হয়ে গিয়েছে।তবে তার মুখটা এখনো দেখতে পাইনি।আর নামটাও জানা হলোনা।ছুটিও শেষ হয়ে আসছে।কি করব কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা। আজও দাড়িয়ে আছি সেই কুয়াশা পরীর সামনে। হাজার কথা মনের ভিতর উকি দিয়ে যাচ্ছে তবুও মুখ দিয়ে কিছু বেরোচ্ছে না। এই যে মিস্টার প্রতিদিন কি করেন এখানে? আজকে আর চুপ করেরে থাকলে হবেনা কিছু বলতেই হবে তাকে

আমি:আপনাকে দেখতে আসি মানে কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? সেই প্রথম যেদিন আপনাকে এখানে খালি পায়ে ভেজা ঘাসের উপর হাটতে দেখি, সেদিন থেকেই মনের ভিতর আপনার জন্য কেমন একটা অনুভুতি খুজে পাই। আমি কখনো ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠিনি। তবে সেদিন থেকে প্রতিদিন ভোরে আমর ঘুম ভেঙে যায় আর মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে এখানে আসার জন্য।আপনার সাথে বার বার কথা বলতে ইচ্ছে হয় কিন্তু পারিনা। আপনারর সামনে আসলে সবকিছুই গুলিয়ে যায়।

থাক থাক আর বলতে হবেনা। আজকে আসি আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।আর আপনার নামটা আমার খুব ভালো লাগে।আজকে আসি আবির বাই এই দাড়ান আপনি আমাকে চেনেন না কি?আমার নাম জানলেন কি করে? আর কোন কথা না বলেই মেয়েটা কুয়াশার মাঝে হারিয়ে গেলো।আমি আবুল হয়ে দাড়িয়ে রইলাম সেখানে।কে এই মেয়ে?আমাকেই বা কিভাবে চেনে? নাহ সবকিছুই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।তবে হ্যা এটা বুঝতে পারলাম মেয়েটা আমাকে মনেহয় পছন্দই করে। কারন প্রতিদিন আমার এভাবে এখানে এসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকায় ও একদম বিরক্ত হয় না। আর ২ দিন আছে ছুটি।পরশুদিন চলে যেতে হবে। কুয়াশাপরীকে যদি মনের কথাটা না বলতে পারি তাহলে আর বলা হবেনা।আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম।আগেই সেখানে পৌছে গেলাম। একটু পরে মেয়েটা আসলো।আজকে আমাকে আগে আসতে দেখেই আবাক হয়ে গেছে। কি ব্যাপার আজকে আগে চলে আসলেন?

আমি:পরশু চলে যাব। ছুটি শেষ হয়েয়ে গেছে তাই। ও (মন খারাপ করে)

আমি:আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো? বলেন নেবে কি সঙ্গী করে তোমার সাথে এই কুয়াশা ঢাকা সকালের,? দেবে কি শুনতে তোমার নুপুরের ওই রিমঝিম শব্দ প্রতিটা সকালে? হবে কি সঙ্গী আমার প্রতিটি মুহুর্তের পাশে থাকার? আমি কথা দিচ্ছি দ্বায়িত্ব নেব সবসময় তোমাকে আগলে রাখার। কথাগুলো বলেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ পেলাম আমার মুখে। মাথাটা উপরে তাকিয়েতো আমি আরো অবাক

আমি:তু তু তু তুমি অধরা না? না আমি তোমার কুয়াশা পরী। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি অধরা হবে এটা।ওর দুচোখের কোনে জল। বুঝতে পারছিনা এই মুহুর্তে আমার কি করা উচিত। তবুও কিছুটা সাহস নিয়ে ওর মুখটা উচু করে দুচোখের জল মুছে দিলাম।আর কিছু বলার আগেই মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

অধরা:জানো তুমি চলে যাওয়ার পর তোমাকে কত খুজেছি। সবসময় তোমাকে মিস করতাম। এতদিন পর যখন তুমি এলে তখন প্রথমদিন তোমাকে দেখেই মনটা খুশিতে ভরে গেছিলো।তুমি প্রতিদিন যখন এখানে আসতে আমার খুব ভালো লাগত। কিন্তু আজকে যখন বললে পরশু চলে যাবে। কথাটা শুনেই কান্না চলে আসল।

আমি:আর কষ্ট পেতে হবেনা। আমিমি কদিন পরে এসেই তোমাকে নিয়ে যাব। কিন্তু তোমার বাবা কি মেনেনেবে? মাকে বলব। মা ঠিক বাবাকে মেনেজ করে নেবে। বাড়ি ফিরে মাকে অধরার কথা বলতেই মা বলল তাড়াতাড়ি কিছুদিনের ছুটি নিয়ে আসিস।তারপর তোদের বিয়েটা দিয়ে দেব।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত