গোমতী, কোন সম্বোধন ছাড়াই লিখছি। প্রিয়, প্রাণপ্রিয় কিংবা ভালোবাসার গোমতী লেখার কোন অধিকার আজ নেই(!) বলেই শুধু গোমতী লিখছি। তোমার নতুন ঠিকানা আমার অজানা (তুমি চাওনা বলেই অজানা), তাই খোলা চিঠি। তা কেমন আছো? নিশ্চয় ভালো আছো! ঠিক কতটা ভালো আছো(?) খুব জানতে ইচ্ছে করছে…!
গোমতী তোমার মনে আছে(?) গতবছর আমায় একখানা ম্যাগাজিন দেখিয়ে বলেছিলে- ‘দেখ এরা ভালোবাসা দিবসে ‘ভালোবাসা’ সংখ্যা বের করবে। তুমি তো গল্প-কবিতা লেখো, আমায় নিয়ে একটা গল্প লেখ-না, ভালোবাসার গল্প।’ সেদিন আমি হাজার চেষ্টা করেও পারিনি! জানো গোমতী, তুমি চলে যাওয়ার পর সহস্র পাতা তোমার নামে লিখে ভাসিয়েছি খরস্রোতা গোমতীর বুকে!
তোমার গোমতী নামটা কখন কিভাবে দিয়েছিলাম মনে আছে? শরতের এক শেষ বিকেল। আমরা গোমতীর তীর ধরে হাঁটছি। দুই তীরে সারি সারি কাশফুল। হঠাৎ তুমি আমার হাতে হাত রেখে বললে- দেখেছ, নদীটা কুমিল্লার বুকের মাঝ দিয়ে কেমন বয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে আমি একরাশ কাশফুল এনে শুভ্র-সাদা চিকচিক বালিতে হাটু রেখে তোমার সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলাম- তুমিও আমার ধমনিতে, হৃদয়ের মাঝ দিয়ে বহমান। আজ থেকে তুমি আমার গোমতী। তুমি তখন হেসে কুটিকুটি! এসব হয়তো এখন তোমার কাছে চাকচিক্য আর অভিজাত্যের তলায় চাপা পড়া জরাজীর্ণ অতীত।
আমাদের প্রথম পরিচয়ের কথা মনে আছে? আমরা তখন প্রথম বর্ষে। ভর্তি হয়েছি অল্প কিছু দিন। সবাই সবাইকে চিনিও না। এরই মাঝে সালেহীন স্যার (স্যার খুব ফর্সা ছিলেন বলে তুমি মিষ্টার হোয়াইট ডাকতে) একটি অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন। সবাই অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিলাম। স্যার নম্বর দিয়ে যার যার খাতা নিয়ে যেতে বললেন। আমি ভুল করে তোমার খাতা নিয়ে গিয়েছিলাম। তুমি খাতা না পেয়ে অস্থির। শেষে আমার খাতাটি অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখে আবিষ্কার করলে তোমার খাতাটি আমি নিয়েছি। কোথা থেকে আমার ফোন নম্বর জোগাড় করে আমায় ফোন দিলে। এই প্রথম আমার ফোনে কোন অপরিচিতার কন্ঠ! সূর্যের তাপ বেড়ে গেল! আমার কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। তুমি একনাগাড়ে কি বলে গেলে আমি কিছুই বুঝি নি। ছোটে এলাম খাতা দিতে। তখনও তোমার মুখে আগুনের ফুলঝুরি। ‘অন্ধ…! খাতা দেখে নিতে পার না। আর এসব কি লিখেছ, শূন্য পেয়েছ গাধা কোথাকার।’ একসময় এ গাধাটাকেই টেনে পাশে বসিয়েছ। অন্ধের হাতের ছড়ি হয়ে পথ দেখিয়েছ।
আচ্ছা গোমতী, এখনো তুমি বড় করে টিপ পড়? বৈশাখ-ফাল্গুনের দিনগুলোতে হাত ভর্তি চুড়ি আর পা দুটোকে আলতায় রক্তরাঙা করে সাজাও? আচ্ছা- তোমার চুলের সিঁথি এখনো একপাশে, না মাঝ বরাবর নিয়ে এসেছ? পছন্দের তালিকায় আমার দেয়া নীল তাঁতের শাড়িটা আছেতো? নাকি জামদানি আর কাতানের ভিড়ে খুঁজে পাওনা! তোমার স্বামী কখনো তোমায় বলেছে- হাসলে যে তোমার গালে টোল পড়ে তা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য্য?
এই মাত্র দু-ফোটা অশ্রু খসে পড়ল খাতাটায়। আচ্ছা- কয় ফোটা রক্ত দিয়ে এক ফোটা চোঁখের জল হয় বলতে পারবে গোমতী…? গোমতী তোমার প্রতি আমার রাগ-ক্ষোভ-অভিমান কিছুই নেই! শুধু ছোট্ট জিজ্ঞাসা। ছুড়ে যদি ফেলেই দিবে তবে সেদিন কাছে টানলে কেন? মাঝরাস্তায় যদি ছেড়ে যাবে তবে অন্ধের ছড়ি হয়ে হাত বাড়ালে কেন? কেন গোমতি? কেন…?
-খোলা চিঠি, মুহম্মদ ইয়াছিন নূর।। ০১৮১৪৮৩৫২০৪