ছুয়ে দিলে মন

ছুয়ে দিলে মন

ঠাস, ঠাস করে দুটি শব্দ হলো, কিছুক্ষণের জন্য আমি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছিলাম। বুঝতে পারলাম এই দুটি আড়াই কেজি ওজনের চড় খেয়ে আমার এই অবস্থা হয়ছিল। উফফফ বজ্জাত মেয়ে। চড় খেয়ে আমি ওখানে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। আর কিছু বললাম না কারণ আমি জানি এখানে আমার কথা বলে কোনো লাভ নাই।।

আমি আকাশ। গ্রাম থেকে শহরে এসেছি পড়াশোনা করার জন্য। ছাত্র ভালো হওয়ার জন্য, গরীব ঘরের ছেলে হয়েও শহরে এই নামিদামী কলেজে চান্স পাই। কিন্তু কলেজে এসে প্রথম দিনই আমার সাথে এরকম হবে আগে জানতাম না। কলেজ গেট দিয়ে ঢুকছি, গেট পারি দিয়ে আসতেই দেখি কয়েক টা সুন্দরী মেয়ে একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তখন তাদের মধ্যে একজন মেয়ে আমাকে ডাক দিয়ে আমার হাতে একটা কাগজ দিল। আমি জানি না ওই কাগজে কি লেখা ছিলো। তারপর তাদের মধ্যে কেউ একজন বলল, এই রাস্তা দিয়ে প্রথমে যে মেয়ে যাবে তাকে দিতে। আমি বুঝতে পারলাম আমি যার্গিং এর শিকার হইছি। আর আমি জানি এখানে আমার কোনো কথা খাটবে না, কারণ আমার এখানে এত টাকার জোর নাই আমি ছাড়া আর যারা এখানে আছে প্রায় তারা সবাই কোটিপতি বাবার সন্তান।

আর তাই আমি তাদের কথা মতো কাগজ টা একটা মেয়ের হাতে দিলাম আর তার উপহার স্বরুপ সেই মেয়ে আমারে এক থাপ্পড় গিফট দিল আর যে মেয়ে গুলো আমারে কাগজটা দিছিল তারা দূর থেকে মজা নিচ্ছে আর জোরে জোরে হাসছে। তারপর আমি মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে আসি। যে মেয়ে গুলো আকাশ কে যার্গ করছিল তাদের মধ্যে, সৃতি হলো সবচেয়ে বড়লোক বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে, ওই মেয়েটাই সব থেকে বেশি ফাজিল। বাবার অনেক টাকা আছে বলে যখন যা ইচ্ছা তখন তাই করে কেউ কিছু বলতে পারে না। এরই মাঝে অনেক ছেলে সৃতিকে প্রোপোজ করছে কিন্তু সবগুলো ছেলেকে নানান ভাবে অপমান করে দিয়েছে।

সেদিন একটা মেয়ের হাতে চড় খাইছি ভাগ্য ভালো বেশী কেউ দেখে নাই নইলে পেজটিজ এর ১৫ টা বেজে যেত। মেস থেকে পড়াশোনা করি তাই বুঝতেই পারছেন কতটা কষ্টে আছি। সেদিন কলেজে থেকে ফিরে বই নিয়ে পরে ছিলাম সারাদিন। কারণ আমি সবসময়ই পড়া নিয়ে থাকি। অন্য কোনো কিছুতে বাজে সময় নষ্ট করি না বরং পড়া নিয়ে সারাদিন থাকি। মা বাবার সপ্ন পূরণ করতে হবে তো। তারপরের দিন কলেজে গেছি। কলেজ গিয়ে বুঝতে পারলাম আমি একটু আগেই এসে পড়ছি, তাই আমি বই নিয়ে মাঠের ধারে গেলাম গাছের ছায়ায়। বই মনযোগ দিয়ে পড়ছি। তখন কাদের যেন হাসির শব্দ পেলাম। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি আমার পেছনে একটু দূরে কালকের সেই বদ মেয়ে গুলো হাসাহাসি করছে। আমি আর সে দিকে খেয়াল না দিয়ে বইয়ে মন দিলাম। একটু পর “হাই ” এই কথা শুনে মাথা উচুঁ করলাম, দেখি বজ্জাত মেয়ে গুলো আমারে ঘিরে ধরেছে।

আমি : কিছু বলবেন?

সৃতি : তুমি কি এই কলেজে নতুন?

আমি : হ্যাঁ।

সৃতি : তোমার বাড়ি কই?

আমি : আমি গ্রাম থেকে এসেছি।

সৃতি : তারমানে তুমি গেঁয়ো, ( এই বলে সবগুলো মেয়ে হো হো করে হেসে উঠলো, ভাব দেখলেই গা জালা করে)

সৃতি : বাই দা ওয়ে, তোমার নাম কি?

আমি : আকাশ।

সৃতি : আকাশ আকাশের মতই নীল আর হ্যান্ডসাম কিন্তু গেঁয়ো ( এই বলে আবার সবাই হাসতে লাগল, বেয়াদব মেয়ে কোথাকার)

আমি : ( চুপ করে আছি)

সৃতি : কি হলো মাটির মানুষ কথা বলছো না কেন?

আমি : কি বলবো?

সৃতি : ওলে লে আমার কচি খোকা কিছু বুঝে না, (এই বলে আবার সবাই হাসতে লাগল,) আর আমি চুপ করে আছি আমি জানি আমার মত ছেলেরা এখানে কিছু বললে কোনো লাভ হবে না ” তাই ওদের কে মজা নিতে দিচ্ছি, নেক কত মজা নিতে পারে আমার কিছু যায় আসে না, এরপর সেখান থেকে চলে আসলাম। আমি গ্রামের ছেলে বলে আমাকে নিয়ে ওরা প্রতিদিন মজা করতো আর অপমান করতো আর আমি সব নীরবে সয্য করতাম। এখন আর এই কলেজে থাকতে ইচ্ছে করে না। আমার নিজের বাড়ি চলে যেতে ইচ্ছে করে আমার সেই গ্রামই ভালো। সেখানে থাকলে এভাবে অপমানিত হতে হয় না আর এখানে প্রতি পদে পদে গেঁয়ো বলে অপমানিত হতে হয়।

চলে যেতে চাইলেও চলে যেতে পারতাম না চলে যাওয়ার কথা ভাবলেই বাবা মার মুখটা চোখের সামনে ভাসতো, তারা আমাকে অনেক সপ্ন নিয়ে কষ্ট করে এই কলেজে ভর্তি করে দিছেন আর এখন যদি আমি চলে যাই তাহলে তাদের সব সপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ে। আমাকে এখন প্রতিদিনই ওদের অপমান সয্য করতে হয়, প্রতিদিনই কলেজে ওরা আমাকে নিয়ে মজা করে। এখন এটি একটি প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে তাই আমিও এখন ওদের কাছে অপমানিত হওয়ায় অব্যস্ত। এভাবে কেটে গেল তিনটি মাস। এখনও ওরা আমাকে নিয়ে সে রকম হাসি তামশা করে, কিন্তু কোনো দিন আমি একটুও প্রতিবাদ করি নি। আর সেই সৃতি নামের মেয়েটা এত কিউট ছিলো যে কেও প্রেমে পরবে। কিন্তু ওর আচরণ দেখে সবাই ওর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। একদিন কলেজে গেছি, তো তারা আমার সাথে মজা নেওয়ার জন্য দল বেধে চলে এলো সেদিন অপমান টা একটু বেশীই হয়ে ছিলো তাই সেদিন কেঁদেই দিয়েছিলাম।

সেদিন ওরা যা করেছিল সেটা হলো : আমার চারপাশে ওরা গোল হয়ে বসে ছিলো কিন্তু সবাই একদম চুপচাপ ছিলো। আমি বুঝতে পারলাম না কি হতে চলেছে, তারপর দেখি ওদের মধ্যে একজন উঠে গিয়ে আমাদের কলেজের এক স্যার কে ডেকে আনলো,

ইরা : দেখেন স্যার এই ছেলেটা সৃতিকে একটা বাজে অফার করেছিল।

আমি : (এ ঘটনা দেখে আর চুপ থাকতে পারলাম না) আমি বাজে অফার করছি মানে আপনারা কি সব বলছেন এগুলো? তখন সবাই বলেছিল আমি নাকি সৃতিকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম আর চিঠিতে আমি নাকি অনেক খারাপ কিছু লিখেছি আর তখন স্যার আমাকে অনেক মেরেছিল। মেরেছে এজন্য আমার কোনো দুঃখ নেই কিন্তু ওরা যে আমাকে নিয়ে মজা করার জন্য এতবড় নাটক সাজাবে আমি কল্পনাও করতে পারি নাই। সেদিন রাতে প্রিন্সিপালকে ফোন করে টানা ১ মাসের ছুটি নিয়েছিলাম। স্যার প্রথমে দিতে চান নি, পরে অনেক রিকুয়েস্ট করার পর দিছে। তারপর এক মাসের জন্য কাউকে না জানিয়ে আমার গ্রামের বাড়ি চলে এসেছি। আমি যে আমার বাড়ি এসেছি এটা শুধু প্রিন্সিপাল জানে আর কেউ জানে না। বাড়িতে এসে সবার সামনে নরমাল ভাবে থাকলাম কেউ বুঝতে পারল না আমি সেখানে কিভাবে আছি। আমার সে অবস্থার কথা বললে মা বাবা নিশ্চিত কষ্ট পাবে আমাকে আর তারা পড়াতে চাইবে না তাই আর আমি তাদের কিছু বললাম না। তারপরের দিন, সৃতি আর ওর বান্ধবীরা কলেজে গেছে। তারপর সৃতি বলে ”

সৃতি : এই চল আকাশ নাকি ওই গেঁয়ো টার সাথে আবার একটু ফাজলামো করে আসি, দু তিন মাস ধরে ওর পেছনে লেগে আছি কিন্তু ও কোনো দিন স্যারের কাছে অভিযোগ করল না, আস্ত বলদ একটা।

রিশা : একদম ঠিক বলছিস, চল এবার যাই বলদ টার কাছে। এই বলে আবার সবাই হাসতে হাসতে চলল আকাশের কাছে। কিন্তু না সারা কলেজ খুজেঁ ও আজ ওরা আর পেলনা আকাশকে।

রিশা : সৃতি রে, কাল বোধ হয় একটু বেশীই হয়ে গেছিল। স্যারের কাছে মার খাওয়ানোটা বোধ হয় ঠিক হয় নি। ও যদি আর কলেজে না আসে তখন কি হবে।

সৃতি : আরে না আকাশ আসবেই তুই দেখিস। (মুখে একথা বললেও ওর মনে এক অজানা ভয় কাজ করছে এখন যদি আকাশ ওদের জন্য কলেজ ছেড়ে দেয় তখন কি হবে, একথা ভাবতে সৃতির মুখটা কালো হয়ে গেল, সৃতির মনের ভেতর কে যেন, গরম তেল ঢেলে দিল, কিন্তু একটা ছেলের জন্য ওর মন আজকে এতো কাঁদছে কেন? বুঝতে পারল না সৃতি) আর আকাশ এখন ওর নিজের গ্রামে ফিরে গিয়ে একটু শান্তি অনুভব করছে। এখানে তাকে নিয়ে মজা করা বা অপমান করার কেউ নেই, কিন্তু তবুও আকাশের চোখের সামনে সেই সৃতির দুষ্টামি ভরা মায়ায় ঘেরা চোখটা ভাসছে। কিন্তু আকাশ নিজেকে শক্ত করল, এরকম মেয়ের ভালবাসায় নিজেকে জরালে চলবে না সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

২য় দিন, সৃতি কলেজ গেছে, কিন্তু আজও সে আকাশকে পেল না, এখন কেন যেন সৃতির মনে হচ্ছে কি যেন একটা নেই, মনের ভেতর টা কেন যেন খালি খালি লাগছে। তার মজা করার মানুষ টা আজ নেই। সৃতি আর এখন অন্য কারও সাথে ফাজলামো করতে পারছে না। সৃতির মন শুধু আকাশকে চাইছে। কিন্তু সৃতি জানে না আকাশ ১ মাসের জন্য এই ঢাকা নামের শহর টা ছেড়ে চলে গেছে। তারপরের দিন তারপরের দিন করতে করতে চলে গেল ৮ দিন। এখন আর সৃতি অন্য কিছু ভাবতে পারছে না তার ভাবনার সবটা জোরে আকাশ নামের গেঁয়ো হ্যান্ডসাম ছেলেটি বিরাজ করছে। তবে কি সৃতি আকাশকে ভালবেসে ফেলেছে। হ্যাঁ, সৃতি আকাশকে ভালবেসে ফেলেছে। আর সৃতি এখন বুঝতে পারছে, ভালবাসা কি। ভালবাসার মানুষ দূরে গেলে এই ভালবাসা কতটা কষ্ট দেয় এখন সৃতি সেটা হারে হারে টের পাচ্ছে।

এখন আর সৃতি সেই আগের সৃতি নেই, আগে যে সৃতি সবসময় সবাইকে মাতিয়ে রাখতো ফাজলামি করতে এখন সেই সৃতি নীরবে কারো জন্য কাদে। কাউকে না পাওয়ার ব্যথা, এতটা কাঁদায় সৃতি এখন বুঝতে পারছে। কিন্তু আগে কেন বুঝল না সৃতি এর পরিনাম কি হতে পারে। যে ছেলেটাকে অপমান করবে বলে সৃতি সবসময় তার পেছনে ছুটতো আজ সেই ছেলেটিকে পাওয়ার জন্য সৃতি একা একা বসে কাদে আর ওর ফেরার পথের দিকে চেয়ে থাকে। কিন্তু সৃতি আর আকাশের দেখা পায় না। এখন থেকে সৃতির শুরু হলো ভালবেসে কষ্ট পাওয়ার দিন। এভাবে কেটে গেল ২১ দিন সৃতি আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গেছে, খেয়ে না খেয়ে শুধু একজনের কথা ভাবে রাতে কান্না করে বালিশ ভেজায়।

সৃতির মা বাবা সৃতির এরকম অবস্থায় অনেক ভেঙে পড়ছে। তারা শত চেষ্টা করেও সৃতির মুখে হাসি আনতে পারি নি। সবসময় সৃতি মনমরা হয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে থাকে। সৃতির সেই বদমাশ বান্ধবী গুলো এখন সৃতিকে কি বলে সান্তনা দেবে ভেবে পায় না। এভাবে কেটে গেল ২৬ দিন, এখন সৃতি একেবারেই ভেঙে পড়ছে। একলা এক ঘরে নিজেকে বন্ধী করে নিয়েছে। সৃতির বাবা মা বান্ধবী সবাই আকাশকে কলেজের চারপাশের এলাকায় অনেক খুজেঁছে কিন্তু পায় নি হতাশ হয়ে ফিরে এসেছে। তবে কি আকাশ সৃতি কে রেখে অনেক দূরে চলে গেছে। সৃতি আর ভাবতে পারে না, জোরে জোরে কেদে দেয়। সৃতির এ অবস্থার কথা প্রিন্সিপাল জানার পর সৃতির বাড়ি যায়। তখন তিনি সৃতির বাবার কাছ থেকে সব ঘটনা জেনে সৃতির কাছে যায়।

প্রিন্সিপাল : সৃতি আমি তোমার সব ঘটনাই তোমার বাবার কাছ থেকে শুনলাম। আর তার চেয়ে বড় কথা হলো তোমরা সবাই আকাশের সাথে যা করছো একদম ঠিক করো নি। আকাশ বাড়ি যাওয়ার আগে আমাকে সব.বলে গেছে তোমরা ওর সাথে কি কি করছো। আর এখন ওর জন্যই কষ্ট পাচ্ছো।

সৃতি : ওর বাড়ি কই স্যার বলুন না প্লিজ স্যার। আমি যাব ওর কাছে। (এই বলেই আবার কাদতেঁ লাগল)

প্রিন্সিপাল : আরে আবার কাঁদছো কেন? আর কষ্ট পেয় না, আর তিন চারদিন পরই আসবে ও আমার কাছ থেকে ১ মাসের ছুটি নিয়েছিল। আমি ওকে এতদিন ছুটি দিতাম না। কিন্তু তোমরা ওর সাথে যা করছো একথা শুনার পর আর না করি নাই যেতে দিছি। আর কয়েক দিন পর আসার কথা শুনে সৃতি যেন ওর দেহে প্রাণ ফিরে পেল। এর পর পূর্ণ হলো ১ মাস। আজকে আকাশের কলেজে আসার দিন আর তাই আজ সৃতি অনেক সেজেগুজে কলেজে গেছে।

অতঃপর অনেক পরে সৃতি দেখতে পেল তার ভালবাসার মানুষ টি আসছে। খুশিতে সৃতির মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে আর ভাবে আজই ওর ভালবাসার কথা আকাশকে জানিয়ে দিবে। আমি ধীর পায়ে কলেজের ভেতর অগ্রসর হচ্ছি আর তখনই দেখি সৃতি আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর তাই আমি ওর থেকে দূরে চলে গেলাম কিন্তু আজ ওই বদ মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছে চোখ ফেরানোই যায় না একদম পরীর মতো কিন্তু আমি ওকে এড়িয়ে চলে গেলাম। আর সৃতি বোধ হয় এটা বুঝতে পারছে আমি ওকে এড়িয়ে গেছি তাই ও দৌড়ে আমার কাছে আসলো আর ও আমার কাছে আসতেই আমি চলে যেতে লাগলাম কিন্তু তখনই ও আমার হাত ধরল,

সৃতি : কোথায় যাচ্ছো আকাশ?

আমি : (হাত ছাড়িয়ে) আমার যেখানে খুশি।

সৃতি : কিন্তু আমি আজ তোমাকে কোথাও যেতে দেব না!

আমি : কেন? আজকে আবার নতুন করে অপমান করার ফন্দি বের করছো নাকি?

সৃতি : এমন ভাবে বলছো কেন?

আমি : (দেখি সৃতির চোখের কোনে জল চিকচিক করছে) তাহলে কিভাবে বলব, প্রতিদিন তো তোমরা তাই করো।

সৃতি : আগে যা হয়েছে সব ভুলে যাও এখন আর আমরা তোমার সাথে এরকম করব না, প্লিজ বিলিভ মি।

আমি : আচ্ছা, বিশ্বাস করলাম, আমি এখন তোমার জন্য কি করতে পারি?

সৃতি : আমি নতুন করে শুরু করতে চাই।

আমি : তুমি কি নতুন করে শুরু করতে চাও?

সৃতি : আমি তোমাকে ভালবাসি,একটু ভালবাসবে আমায়?

আমি : কিইইই, আবার নতুন করে ফন্দি আটছো তাই না, দেখ এতদিন আমাকে নিয়ে মজা করছো কিছু বলি নাই কিন্তু দয়া করে আমার মন নিয়ে মজা করো না ভালবাসা এতো সস্তা নয়, আর এটা তোমাদের মুখে মানায় না।

(এই বলে চলে এলাম এখান থেকে) সৃতি এখন কাঁদছে আর সে বুঝতে পারছে কারও মনে আগে থেকে ঘৃণা ধরিয়ে দিলে সেই মনে ভালবাসা পাওয়া অনেক কঠিন। এইসব ভেবে কাদতেঁ কাদতেঁ সৃতি সেখানেই বসে পড়ল সে। আর কত কাঁদবে, এই এক মাস আকাশ কে না পেয়ে পাগলের মত হয়ে গেছিল সবসময় ওর জন্য কান্না করছে আর আজ ওকে আকাশ অবহেলা করে ওর ভালবাসা ফিরিয়ে দিল। বুক ফেটে কান্না আসছে সৃতির। কলেজ থেকে বাড়ি গিয়ে অনেক কান্না করে সৃতি। সৃতির এই অবস্থা দেখে সৃতির বাবা মা কেও আর থাকতে পারে না চলে যায় আকাশের কাছে আকাশকে বুঝিয়ে আনার জন্য। কিন্তু আকাশ ওনাদের কে ফিরিয়ে দেয়। শূন্য হাতে ফিরে আসে তারা সৃতির কাছে। সৃতি কিছু বলতে পারে না শুধু কান্না করে। তারপরের দিন সৃতি কলেজে গেছে দেখে আকাশ গাছতলায় বসে আছে, সৃতি আবার তার ভালবাসার দাবি নিয়ে আকাশের কাছে যায় আর আকাশ উঠে চলে যেতে চায়। কিন্তু সৃতি আকাশের পথ আগলে দাড়ায়।

সৃতি : এমন করছো কেন তুমি আমার সাথে, প্লিজ এমন করো না, আর কত সয্য করব। এতদিন বেচে থেকেও মরে ছিলাম কিন্তু এখন তোমাকে ছাড়া আর বাচতে ইচ্ছে করছে না, মরে যাব আমি তুমি আমার সাথে এমন করলে, প্লিজ এমন করো না ” (কাদতেঁ কাদতেঁ বলল) সৃতির এই কান্না মুখে দেখে খুব মায়া হচ্ছে সৃতিকে ভালবাসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কেন যেন কিসের এক বাধা পাচ্ছিলাম তাই ওকে কিছু না বলেই ওখান থেকে চলে আসলাম।

শুধু একবার পেছনে চেয়ে দেখি খুব কান্না করছে। এভাবে সৃতিকে একা রেখে সেদিন চলে আসলাম। রাতে বিছানায় শুয়ে আছি কিন্তু কেন যেন ঘুম আসছে না শুধু সৃতির ওই কান্না ঘেরা মুখটা চোখের সামনে আসছে কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছি না। আমার মনেও ওর জন্য ভালবাসা জেগে ওঠলো। মুহূর্তেই ভুলে গেলাম আগের সেই দিন গুলোর কথা। আর সেই অপমানের কথা মনে করে লাভ কি তাই সবকিছু ভুলে গেলাম। কালকে ওকে আর ফিরিয়ে দেব না, ওকেও বলব ভালবাসি। কিন্তু তারপরের দিন কলেজে গিয়ে সৃতিকে অনেক খুজলাম কিন্তু পেলাম। তাই থাকতে না পেরে ওর এক বান্ধবীর কাছ থেকে নাম্বার নিলাম। কল দিতেই,

আমি : হ্যালো, সৃতি কই তুমি?

সৃতির মা : আমি সৃতির মা বলছি তুমি কে বাবা? (কান্না জড়িত কন্ঠে)

আমি : আমি আকাশ। সৃতি কই গেছে?

সৃতির মা : ও এখন হাসপাতালে!

আমি : (নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলাম না) কেন কি হইছে ওর?

সৃতির মা : তোমাকে না পাওয়ার জন্য সুসাইড করতে গেছিল। তাড়াতাড়ি হাসপাতালের নাম টা জেনে দিলাম দৌড় হাসপাতালের দিকে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি সৃতির মা বাবা ভেতর আছে আমি যাওয়া মাএই তারা বাইরে চলে এলো। তখন দেখি সৃতি কিছুটা সুস্থ তাই আমি ওর সাথে কথা বলতে গেলাম।

আমি : এমন কেন করলে তুমি?

সৃতি : আমি মরলেই তাতে কার কি?

আমি : আমার অনেক কিছু!

সৃতি : তোমার কি অনেক কিছু?

আমি : জানি না, আমি তোমাকে ভালবাসি।

সৃতি : আমি তোমাকে ভালবাসি না আর তুমি আমাকে ভালবাসলে আমাকে এতো কষ্ট দিতে পারতে না।

আমি : বেশ করছি কষ্ট দিছি, তুমি আমাকে নিয়ে মজা করছো কেন?

সৃতি : ওহ্, তাহলে প্রতিশোধ নিলা!

আমি : এই না না ওরকম ভেব না।

সৃতি : তাহলে এত কষ্ট দিছ কেন?

আমি : আমার মনে তোমাকে জায়গা দিতে একটু সময় হইছে তো তাই তুমি হয়তো সেই সময়ে কষ্ট পাইছো!

সৃতি :(চুপ করে আছে)

আমি : কি হলো কিছু বলো না কেন?

সৃতি : কি বলব?

আমি : এক বার ভালবাসি বল না প্লিজ!

সৃতি : আমি তোমাকে ভালবাসি না।

আমি : (মন খারাপের মোড নিয়ে) ওহ্ আমি তাইলে বেশি দেরী করে ফেলেছি তোমাকে ভালবাসতে। ভালো থেকো আসি, (এই বলে চলে আসছিলাম)

সৃতি : (কান্না সুরে) ওই হারামি কুওা তুই আমার কাছ থেকে দূরে যাবি তো আমার পাশের বেডে মেরে শুইয়ে দেব।

এই বলে দৌড়ে এসে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ল। ইসসস ,দরজা টা খোলাই ছিলো সৃতির মা এগুলো দেখে বাইরে থেকে শুধু মিটিমিটি, হাসছে, উফফফ লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেললাম। আহারে আমার একটা গান মনে পড়ল: এই ফাগুনি পূর্ণিমা রাতে চল পলায়ে যাই। দূর দেশে যাব রে বাসা বানাবো রে থাকবো আমরা দুজনায়, চল পলায়ে যাই। এই ফাগুনি পূর্ণিমা রাতে চল পলায়ে যাই।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত