হ্যাডমাষ্টারের মেয়ে

হ্যাডমাষ্টারের মেয়ে

যেদিন স্কুলে প্রথম ভর্তি হইতে গেছিলাম সেদিনই হ্যাডমাষ্টারের মেয়েরে দেইখা ক্রাশ খাইছিলাম। মেয়ে নাকি পরী। এত কালো চুল কালো চোখ। সেদিন নীল থ্রী-পিচ জামা পরে স্কুলে আসছিল।

নীল আমার ফেভারিট কালার। আমি জানতাম না হ্যাডমাষ্টারের মেয়ে। কিছুদিন অতিক্রম করার পর জানছিলাম। শুরু হয়ে গেল প্রেমের কাহিনী। প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। ভালবাসার মানুষকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার স্বাদটাই অন্যরকম। প্রতিদিন স্যারের বাইকে কইরা স্কুলে আসত। আমি স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতাম একবার দেখার জন্য। একদিন সুযোগ হইয়া গেল কথা কওয়ার। আমি কিন্তু আগে কথা বলিনি। গরমের দিন কলে (টিউবওয়েল ) গেছিলাম পানি খাইতে। গিয়া দেখি ঐখানে আমার স্বপ্নের বালিকা পানি খাইতাছে। দেখতে এত সুন্দর লাগতাছিল বলে বুঝাইতে পারবনা। কলের মুখে চুমুক দিয়া। আমি ব্যাক্কেলের মতন হাঁ কইরা দাঁড়াইয়া থাইকা দেখতেছিলাম। হঠাৎ বালিকা কইল ‘ এই ছেলে তোমার নাম কি? প্রতিদিন আমাকে আড়ি পেতে দেখ ক্যান? আমি তো খুশীতে নাচতাছি মনে মনে। আমি হাসি দিয়া কইলাম ‘ কি গো নাম তোমার? এত সুন্দর মহিলা পৃথিবীতে আছে আমি আগে জানতাম না।

বালিকা ঝাড়ি দিয়া কইল ‘ মহিলা! আমাকে তোমার মহিলা মনে হয়? ‘ আমি ভাব নিয়া কইলাম ‘ মহিলাটাই কানে বাঁজলো? সুন্দর কইলাম তা কানে বাঁজেনাই? ‘ বালিকা খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়া কইল ‘ জান আমি কে? স্কুলের হ্যাডমাষ্টারের মেয়ে আমি ‘ আমি ভেংচি দিয়া কইলাম ‘ এজন্যেই তুমি এত সুন্দর। আচ্ছা তুমি কি খাও গো? তোমার চুল এত সুন্দর কেন? ‘ আমি কিছু বুঝবার আগেই হাতে ক্লাস ছিল বালিকার তা আমার হাতে ধরাইয়া দিয়া কইল ‘ গ্লাস ধরেন পানি খাইয়া চইলা যান। বেশী কথা বললে আব্বুর কাছে বিচার দিব। আমি গ্লাস হাতে লইয়া কইলাম ‘ কি সুন্দর হাত। আল্লাহ কত যতন কইরা হাতটা বানাইছে। হাতের যত্ন নিবা কিন্তু সবসময় ‘ বালিকা আবারো রাগী আর মিষ্টি হাসি একলগে দিয়া কইল ‘ পাগল ছেলে। সেঁজুতি আমার নাম। তোমার নামটা কিন্তু বললানা ‘ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। বালিকা প্রথম দিনেই লাইনে আইসা পরছে। আমি হাসি দিয়া কইলাম ‘ বিপ্লব ‘ বালিকা চোখ ঘুরাইয়া কইল ‘ বিপ্লব মানে জান? বিপ্লব মানে সংগ্রাম ‘ বইলাই চইলা গেছিল।

আমাদের যে কথা হইছিল কোন বান্দরে জানি এইটা হ্যাডমাষ্টাররে বইলা দিছে। মেজাজটা কেমন লাগে গরীবের সুখ কারো ভাল লাগেনা। পরেরদিন স্কুলে যাইবার পরেই হ্যাডমাষ্টারের রুমে ডাক পইরা গেল। যাইয়া দেখি সেঁজুতিও আছে। আমি তখন মনে সাহস পাইয়া যাই। স্যারের চোখে আগুন স্যার কইল ‘ তোর নাম কি রে? ‘ আমি ভ্যাটকি দিয়া কইলা ‘ রোজা স্যার ‘ স্যার ঝাড়ি দিয়া কইল ‘ মেয়েদের নাম ছাড়া আর কোন নাম খুঁইজা পায়ানাই তোর মা বাপে? ‘ আমি হাসি দিয়া কইলাম ‘ না স্যার। রোজা মানে সিয়াম। সিয়াম মানে রোজা। ‘ স্যার গালে থাপ্পড় দিয়া কইল ‘ সোজা কইরা কইতে পারস না? ‘ আমারে যখন থাপ্পড় দিছিল ঐসময় সেঁজুতির মুখটা লাল হয়ে গেছিল। আহা দেখতে কি যে ভাল লাগছিল। আমি তবুও হাসি দিয়া কইলাম ‘ স্যার আপনার পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিৎ আপনার শরীরে একদম জোর নাই।

এইযে আমারে থাপ্পড় দিলেন আমার একটুও ব্যাথা লাগেনাই। ‘ তখনই সেঁজুতি বইলা উঠল ‘ তুমি না আমারে বলছিলা তোমার নাম বিপ্লব? তাহলে কি মিথ্যা বলছিলা? ‘ আমি সেঁজুতির দিকে তাকাইয়া কইলাম ‘ হ্যাঁ মিথ্যা বলছিলাম তো। আমি তো সারাদিন মিথ্যা কথা বলি। আমার মনে হয় দুনিয়ার সবাইকেই মিথ্যা কথা বলা উচিৎ বেশী বেশী। কিন্তু আমার নানাম বিপ্লব এইটা সত্য। তাই না স্যার? ‘ সেঁজুতি আমার সাহস দেইখা হাসতেছিল। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আমার সামনে পরী দাঁড়াইয়া হাসতাছে। স্যারের পাশে ব্যাত ( মিহি ছোট লাঠি ) ছিলো। তা লইয়া আমারে পিটাইতে আরম্ভ করল। এমন পিটানি আমি জন্মের পর খাইনাই।

পিটায়া কইল ‘ আর কোনদিন আমার মাইয়ার নাম মুখে আনবি তো স্কুল থেকে বের করে দিব ‘ আমি তবুও জোর করে হাসি দিয়া কইলাম ‘ স্যার আপনার মেয়েটা না অনেক ভাল। দেখতে যেমন সুন্দর তারচেয়ে সুন্দর ওর মন। দেখেন দেখেন আমাকে মারছেন দেইখা কি কষ্ট পাইতাছে। এমন মেয়েকে তো জীবনেও ছাড়া যাবেনা। আর স্যার আপনি আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিতে পারবেন কিন্তু আপনার মেয়ের মন থেকে বের করতে পারবেন না। আর ভাবছেন আমি এত সাহস কই পাইছি? আপনার মেয়েকে তো ভীতু ছেলের সাথে বিয়ে বা ভীতু ছেলের হাতে তুলে দিবেন না। ‘ স্যার আমার কথা শুইনা হাঁ কইরা তাকাইয়া আছে। কইল ‘ সেঁজু সিয়ামের কথা কি ঠিক? ‘ সেঁজুতি মাথা নীচু কইরা কইল ‘ হুম আব্বু ‘ স্যার তখনই মাথা ঘুরাইয়া পইরা যায়। আমি স্যারের রুম থাইকা বাইর হইয়া যাই। সেঁজুতি বাইর হওয়ার সময় কইছিল ‘ খুব কষ্ট পাইছ না? তুমি যে আমাকে ভালবাস এটা আগে বলনাই কেন? তাহলে কি আর আব্বু জানতে পারত? পাগল ছেলে।

আমিও তোমাকে ভালবাসি ‘ সুন্দরী মেয়ের মুখে এমন কথা শুনলে আরকি বুকে কষ্ট থাকে। পরেরদিন থেকে শুরু হল স্যারের অত্যাচার। প্রতিদিন আমারে পিটাইত। আর নিজের তো আদরের মেয়ে ছিল তাই শুধু বকত ওরে মারতনা। কিন্তু পুরুষ মানুষ আমি কত মারবে। সেঁজুতির একবার দেখলেই সব কষ্ট আকাশে উইড়া যায়। কোনভাবেই স্যার আমাদের প্রেম ধ্বংস করতে পারতেছিলনা। স্যার চিন্তা করল একটা ফাঁদে ফেলতে। স্যার একদিন ডাইকা কইল ‘ ক্লাস টেনে যদি তোর রুল এক করতে পারিস তাহলে তোদের আর কিছু বলবনা ‘ আমি মাইনা নিছিলাম। শুধু আমারেই এই শর্ত দেয়নি সেঁজুতিকেও দিছিল। সেঁজুতির রুল ছিল চার। নিঃসন্দেহে রুল এক করতে পারবে আর আমার রুল ছিল একচল্লিশ আমার কাছে তো অসম্ভব।

সেঁজুতিরে কইলাম ‘ আমি তো পারবনা জানু এখন কি করব? ‘ সেঁজুতি কইল ‘ না তোমার পারতেই হবে। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবনা। ‘ সেদিনের পর থাইকা দিলাম লেখা পড়ায় মন। কিন্তু বছর শেষে রুল হল আমার সাঁইত্রিশ। স্যার এইবার কইল ‘ সেঁজু পারছে তুই পারিস নাই ছেলে হয়েও। তুই আমার মেয়ের যোগ্য না। আজ থেকে আর আমার মেয়ের সাথে কথা বলবিনা। ‘ দুঃখের কথা হার মাইনা চইলা আসছিলাম। এর পরে আর স্কুলে যাইনি আমি। স্কুল থেকে টিসি নিয়া নিছিলাম। সেঁজুতির সাথে আর কথা হয়নি। অন্য এক স্কুলে ভরতি হইছিলাম। সেঁজুতি শেষবারের মত কইছিল ‘ আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করব। তুমি প্লীজ আমার কাছে চলে এস ‘ বারো বছর পরের কথা। বারো বছর আগে কিশোরগঞ্জ থেকে চলে আসছিলাম। আজ চাইলে হাজারটা সুন্দরী বিয়ে করতে পারি।

কিন্তু আমি তো সেঁজুতিকেই ভালবাসি। জানিনা সেঁজুতি আমাকে ভালবাসে কি না। নাকি বিয়ে হয়ে গেছে। ঈদের জন্য গ্রামে আসছি। সব চেঞ্জ হয়ে গেছে কিছুই আগের মত নাই। পরেরদিন খবর শুনলাম সেঁজুতির নাকি বিয়ে। দুঃখে আমি মরে যাই যাই। বিয়ের দিন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বিয়েতে গেলাম। স্যারের সামনে একবার পরছিলাম কিন্তু স্যার আমাকে চিনেনাই। দূর থেকে আমার কলিজটাকে দেখছিলাম। পিচ্চি মেয়েটা কত্ত বড় হয়ে গেছে। চোখ দিয়া টলমল করে পানি পরছে। কিন্তু একি কবুল বলার আগে সেঁজুতি দৌড়াইয়া আইসা আমারে জড়ায় ধরল। সবাই আমার দিকে তাকাইয়া রইছে। সেঁজুতি কইল ‘ কত স্বার্থপর তুমি। ধনী হইয়া আমাকে ভুলে গেলা। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে মরি। ‘ আমি কাঁদতে কাঁদতে কইলাম ‘ আমাকে ভালবাস এখনো? ‘ সেঁজুতি মাথা নাড়াইয়া কইল ‘ হুম্ম ‘ আমি সেঁজুতির চোখের পানি মুছে সেঁজুতির হাত ধরে সবার সামনে দিয়া ওরে নিয়া আসছি কেউ আমাকে আটকানোর সাহস পাইলনা।

বিয়ের পরের কথা। কাজের চাপে গেমস খেলার সময় হয় খুব কম আমার। কালকে শুক্রবার তাই আরাম করে গেমস খেলছি কম্পিউটারে। সেঁজুতি আইসা কইল ‘ সারাদিন খালি গেমস আর গেমস বাচ্চা পোলাপানের মত। ‘ আমি কথা কানে নিলাম না। কথা কানে নিলে আর গেমস খেলা হবেনা। সেঁজুতি কম্পিউটারের সুইচ অফ কইরা কইল ‘ দেখ তো আমার চুলগুলো কত্ত বড় হইয়া গেছে ভাবছি একটু কেটে দিব ‘ মেজাজটা কেমন লাগে আমি কইলাম ‘ আধ- ইঞ্চিও যদি চুল কাট তাহলে বাপের বাড়ি পাঠাইয়া দিব ‘ কথাটা বলার পরেই সেঁজুতি বাচ্চা মেয়েদের মত কান্না আরম্ভ করে দিল আর বলতে লাগল ‘ তুমি আমাকে একদম ভালবাসনা উঁউঁউঁ। কথায় কথায় শুধু আব্বুর বাড়ি পাঠাই দিবা বল।

এখন তো তোমার অনেক টাকা পয়সা হইছে না আমাকে পাঠাইতে পারলেই ঘরে নতুন সুন্দরী আনতে পার। বুঝি তো ‘ দুঃখ কই রাখি। এইটুকু কথাতে কত কথা শুনাইয়া দিল। আমি পাশের রুম থাইকা কেঁচি আনলাম। সেঁজুতি কাঁদতেই আছে খাটে বসে বাচ্চাদের মত। চোখ মুছছে বারবার কিন্তু চোখে পানিই নাই। আমি কইলাম ‘ এই দেখ কেঁচি ‘ সেঁজুতি কইল ‘ কেঁচি কেন? ‘ আমি ঝাড়ি দিয়া কইলাম ‘ চুল না কাটার জন্য কইলাম যে তারপর আপনে আমারে কত্ত কথা শুনাইলেন।

এখন নিজের হাতে আপনের চুল কাইটা দিয়া আপনার কান্না থামাব। সেঁজুতি উঠে আমার হাত থেকে কেঁচি নিয়া কইল ‘ না চুল কাটবনা ‘ কেমন লাগে বলুন তো যেটার জন্য কান্নাকাটি করল সেটাই এখন করবেনা। আমি রাগ দেখাইয়া কইলাম ‘ কেন? ‘ সেঁজুতি নরম স্বরে কইল ‘ চুল কাটলে তুমি কষ্ট পাবা। আর তুমি কষ্ট পাইলে আমার কোন কিছুই ভাল লাগেনা ||

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত