আজকে ভার্সিটির প্রথম দিন।অনেক কষ্টে চান্স পেয়েছি।ক্লাসে ঢোকার পারমিশন নিলাম স্যারের কাছ থেকে।
আমিঃস্যার আসতে পারি?
স্যারঃকেনো কি চাই?[আসলে আমার জামাকাপড় গুলা দেখলে মনে হবে রাস্তার ছেলে]
আমিঃক্লাস করবো।
স্যারঃতুমি কি ভার্সিটির স্টুডেন্ট?
আমিঃজ্বি স্যার
স্যারঃহুম ভিতরে আসো।
আমিঃধন্যবাদ স্যার।
ভিতরে গিয়ে শেষ বেধ্ঞে একা বসলাম।কারন আমি সবার সাথে একসাথে বসলে কেউ হয় ক্লাসে থাকতে চাইবেনা।যখন ক্লাসে ঢুকছিলাম তখন সবাই হা করে তাকিয়ে ছিলো।তাকানোর যথার্থ কারন আছে।ওরা হয়ত ভাবছিলো এমন একটা ক্ষাত কি ভাবে ভার্সিটিতে পড়ে? আমি পরিচয়টা দিলেই সব বুঝতে পারবেন।আমি চয়ন।নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।তিনকুলে কেউ নাই।ছিলো মা তিনিও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে বছর খানেক আগে।নিজেই কাজ করে যা পাই তা দিয়ে পড়াশোনা খাওয়া দাওয়া ভালোভাবেই চলে যায়। একটা ক্লাস করে ক্যাম্পাসে বসে আছি।পরবর্তি ক্লাসের অনেক দেরি।একাই বসে আছি।হঠাৎ এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা।ইনিই আমাকে একটা কাজ জোগাড় করে দিয়েছেন।
আমিঃআদাব ভাই?কেমন আছেন?
ভাইঃহুম ভালো তোমার খবর কি?এখানে কি করছো?
আমিঃভালো ভাই।এখানে চান্স পেয়েছি।
ভাইঃওহ খুব ভালো।দরকার হলে বলো কেমন?
আমিঃজ্বি ভাই।
ক্লাস করে বাড়িতে ফিরলাম।এখন ঘুমাতে হবে।কারন আমার কাজটা হচ্ছে একটা কোম্পানিতে নাইটগার্ড।রাতে কাজ করি আর সকালে পড়াশোনা।এইভাবেইচলে আমার দিনকাল। একমাস পর আজকে বসে আছি ক্যাম্পাসে আমি আর এক বন্ধু।একটা বন্ধু জুটেছে এই একমাসে।আমার মতই অভাগা।দুজনে বসে গল্প করছি।এমন সময় একটা আমাদের ডিপারমেন্টের একটা মেয়ে আসলো।নামটা হচ্ছে রিধি।অনেক বড়লোকের মেয়ে।আসে গাড়িতে সামনে এবং পেছনে দুইটা দেহরক্ষিদের গাড়ি।কিন্তু আজ হঠাৎ এদিকে কেনো। ভার্সিটিতেআমাদের দুই বন্ধুর পাশে বললে ভুল হবে আশেপাশেও কেউ আসেনা।রিধি আমার সামনে এসে দাড়ালো।
রিধিঃচয়ন তোমার সাথে আমার কথা আছে একটু এদিকে আসবা?
আমিঃআমার সাথে?এখানেই বলেন কি বলবেন?
রিধিঃআলাদাভাবে বললে ভালো হতো।। বুঝলাম রিহানের সামনে বলতে চাচ্ছেনা।রিহান আমার ফ্রেন্ড।তাই ওকে পাঠিয়ে দিলাম।
আমিঃএবার বলেন কি বলতে চান?
রিধিঃজানি তুমি বিশ্বাস করবেনা।তবুও বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমিঃদেখেন এটা সম্ভব না।
রিধিঃআপনি আপনি করছো কেনো তুমি বলো।আর সম্ভব না কেনো?
আমিঃকারন তুমি কোথায় আর আমি কোথায়?আমি গরীব অনাথ একটা ছেলে আর তুমি বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে।
রিধিঃতো তাতে কি হইছে?
আমিঃধনী আর গরীবের সম্পর্ক কেউ মানবেনা।আর এতে সব দোষ আমার ঘাড়েই পড়বে।
রিধিঃতুমি আর আমি মানলেই চলবে।আর কারও না মানলেও চলবে।
আমিঃদেখ এটা তুমি আবেগের বশে বলছো।যখন আবেগ থাকবেনা তখন সব বুঝতে পারবে।
রিধিঃতোমার নীতি জ্ঞান রাখো আর কাল সকাল 9টায় পার্কে চলে আসবা।
আমিঃবুঝতে চেষ্টা করো।জোর করে সবকিছু হয়না।
রিধিঃসেটা পরে দেখা যাবে।কালকে পার্কে চলে আসবা নাহলে এদের[দেহরক্ষিদের দেখিয়ে]দেখছো এদের দিয়ে শায়েস্তা করবো।
আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই চলে গেল।আমি ভাবছি এত ছেলে থুয়ে আমাকেই কেনো পছন্দ হলো?এইসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরছিলাম এমন সময় ভার্সিটির কয়েকটা বড় ভাই এসে উত্তম মধ্যম দিয়ে চলে গেলো।কোন রকমে বাড়ি পর্যন্ত এলাম।এসেই ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুম থেকে উঠে অনুভব করলাম গা হাত পা প্রচন্ড ব্যাথা।তবুও কিছু করার নেই কাজে যেতে হবে।অনেক কষ্টে কাজে গেলাম।
কাজ শেষ করে সকালে বাড়িতে ফিরলাম।গা,হাত,পা প্রচন্ড ব্যাথা।তাই আবার ঘুমালাম। দরজার ঠকঠক শব্দে ঘুম ভাঙল।বাইরে দেখি দুইটা গাড়ি আর কয়েকটা বিশালদেহী মানুষ।দরজা খোলা মাত্রই আমাকে ধরে নিয়ে গাড়িতে তুললো।তারপর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করালো।তারপর সোজা ভার্সিটিতে নিয়ে গেলো। ভার্সিটিতে দেখি আরেক ব্যাপার।আমাকে নিয়ে যাওয়া মাত্রই রিধি আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।কাম্পাসের ভিতরে সবাই দাড়িয়ে আছে মাঝখানে আমি আর রিধি।হচ্ছেটা কি কিছুই বুঝতেছিনা।হঠাৎ করেই রিধি সবার উদ্দেশ্যে বলো চয়নকে কারা মেরেছে?বড়লোকের মেয়ে তারপর স্থানীয় একটা পাওয়ারতো আছেই। সেই ভয়ে যারা আমাকে মেরেছিলো তার সামনে আসলো।কিন্তু রিধি জানলো কি করে আমাকে কেউ বা কারা মেরেছে।রিধি তার দেহরক্ষীদের ডেকে বললো।
রিধিঃএই গুলোকে ধরে কায়দা মতন দিন[যারা আমাকে মেরেছিলো তাদের দেখিয়ে]
আমিঃআরে এসব করছো কেনো?
রিধিঃওরা তোমাকে মেরেছে তাই।
আমিঃআমাকে মেরেছে তাতে তোমার কি?
রিধিঃকারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর আমার ভালোবাসার মানুষকে কেউ আঘাত করলে আমি তা কখনোই সহ্য করবো না।
আমিঃদেখো আমি তোমাকে অনেকবার বলেছি এটা সম্ভব না।এটা তোমার আবেগ।
রিধিঃআমি তোমাকে ভালোবাসি চয়ন।প্লিজ আমাকে বোঝার চেষ্টা করো।[চেচিয়ে সবার সামনে] কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা।এখন আমার কি করা উচিত?মেয়েটা কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে?কেন ভালোবাসে আমাকে?
রিধিঃএখনো মনে হচ্ছে এটা আমার আবেগ?তাহলে চলো আজকেই বিয়ে করবো আমরা।[হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে]
আমিঃআরে ছাড়ো।এমন পাগলামি করছো কেনো?
রিধিঃকেনো আবেগ না সত্যি সেটা তোমাকে দেখাতে হবেনা।
আমিঃতাই বলে বিয়ে করেই প্রমান করতে হবে?
রিধিঃহ্যা।তাছাড়া কি জীবন দিয়ে প্রমান দিতে হবে?ওকে চলো আমি তাতেও রাজি।
আমিঃআরে না আমি এসব কখন বললম?
রিধিঃতাহলে চলো বিয়ে করতে
আমিঃঅন্যকিছু কি করা যায়না?
রিধিঃনা যায়না।এখন বলো যাবা কিনা?
আমিঃযদি বলি না?
রিধিঃতাহলে জোর করে তুলে নিয়ে যাবো
আমিঃতাহলে অনুমতি চাইছো কেনো?চলো।
রিধিঃএইতো গুড বয়
আমিঃহুম ব্যাড গার্ল
রিধিঃকি বললা?
আমিঃনা কিছুনা।চলো
রিধিঃহুম
জানিনা এই ভালোবাসা কতদিন থাকবে।চাই সারাজীবন স্থায়ী হোক তাদের ভালোবাসা।