রাতের বেলা একটা ফ্লপ বাংলা ছবি দেখে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। মাঝরাতে যখন ঘুম ভাঙে তখন টিভির সাউন্ডটা ছিল খুব উঁচুতে। ব্যাপার কী? টিভির পর্দায় দেখি নায়ক-নায়িকাকে বৃষ্টির মধ্যে জাপ্টে ধরেছে। না না, এ দৃশ্য নিয়ে ছবির ডিরেক্টরের মাথাব্যথা থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই। বরং আমি ভাবছি টিভির ভলিউম এত জোরে কীভাবে হল। আর হাতের কাছে যে রিমোটটা ছিল সেটাই বা কোথায়? এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ভূতের চিন্তা মাথায় উদয় হল টের পাইনি। বাড়িতে আমি একা, প্রিয়ন্তি গেছে তার বাবার বাড়ি। শখ করে যায়নি আমি যেতে বাধ্য করেছি। ঝগড়ার একটা সামান্য ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে আজ তুলকালাম ঘটিয়ে ফেলেছি ওর সাথে। সেকারণেই অভিমান করে সে চলে গেছে।
আমি ফ্রিজ খুলে এক বোতল পানি বের করতে গিয়ে লক্ষ্য করি আমার হাত কাঁপছে। ভূতের ভয়টা এখনও ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলছে। এরইমধ্যে শুনি খিলখিল করে কেউ হাসলো। মেয়েলী কন্ঠের হাসি। ভয়ে এবার জড়সড় হয়ে গেলাম। তখনই ঘাড় ঘুরাতেই প্রিয়ন্তিকে দেখলাম।
“তুমি!”
“হুম। চলে এলাম। তোমার সাথে আরও একদফা ঝগড়া করব বলে।”
“তোমার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি ছিল?”
“হুম।”
“এটা আগে বলোনি কেন?”
“বললে কী হতো?”
“ভূতের ভয়টা আর পেতাম না।”
“বেশ হয়েছে ভয় পেয়েছো। এটা হচ্ছে গাঁজাখুরি বাংলা ছবি দেখার শাস্তি।”
“সব চ্যানেল ভর্তিই তো গাঁজাখুরি প্রোগ্রাম।”
“ওওও, বাবুটার তো তাহলে খুব কষ্ট হয়েছে একা থাকতে।”
“এসব নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না। কাল অফিস আছে, ঘুমাবো।”
এই বলে এক পা বাড়াতেই সে হাতটা ধরলো। তারপর নরম কন্ঠে বলল, “আমি ঘুম পাড়িয়ে দিই?”
“সত্যি?”
“হুম, কতদিন তোমার মাথায় হাত রেখে চুলে বিলি কাটিনি।”
আমি আঁতকে উঠে বলি, “বিলি কাটতে হবে না।”
সে হেসে দেয়। হাসির কারণ অজানা নয়, বিলি কাটতে গিয়ে সে হঠাৎ হঠাৎ চুল ধরে টান দেয়। ঘুমে যখন চোখ লেগে আসে তখনই সে এই কাজটা করে। এমন ব্যথা লাগে! আমি প্রিয়ন্তির কাছে গিয়ে বলি, “আমাকে ছেড়ে ভাল ছিলে তো?”
“এই কথা আরেকবার জিজ্ঞেস করলে চড় খাবে। তোমায় ছাড়া ভাল থাকি আমি?”
“ভালবাসো?”
“হুম।”
“কতটুকু?”
“এক ইঞ্চি।”
“এত কম?”
“আধইঞ্চি বললে খুশি হতে?”
হেসে দিই দুজনেই।
সেরাতে ঘুম হয় না আমার। প্রিয়ন্তি চুলে বিলি কাটতে কাটতে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ে। দক্ষিণের খোলা জানালা গলে আসা চাঁদের আলোয় ফুটে ওঠা ওর কোমল মুখের দিকে চেয়ে থাকি আমি। আর হারিয়ে যাই অতীতের পাতায়। সত্যি বলছি, আমি আজ যেরকম সেরকমটি কখনোই ছিলাম না। ভালবাসাকে কখনও প্রায়োরিটি দিতে জানতাম না। আমার কাছে টাইম পাসই ছিল ভালবাসা। যখন আমি বাইশ-তেইশ বছরে পা রাখি তখন থেকেই টাইম পাসের খেলা শুরু করে দিই। এখনও চোখে ভাসে সে সময়…
(পাঁচ বছর পূর্বে…)
“মাফি প্রোফাইল পিকচারটা ভালো হয়নি… ওটা বদলাও।”
“গ্যালারীতে নিজের আর কোনো ফটো নাই।”
“তাহলে রণবীরের ফটো প্রোফাইল পিকচারে বসাও.. তবুও এটা চেঞ্জ করো।”
“তুমি আমায় ভালবাসো না রণবীরকে?”
“এত কথা হচ্ছে কেন? যা বলছি সেটা করো।”
“হুম।”
“কী হুম? এখনও ম্যাসেঞ্জারে পিকটা শো করছে কেন?”
অতঃপর আমি ফোনের গ্যালারীতে ফিরে এলাম। প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করে হিমিকে বললাম, “এবার খুশি?”
“এটা তো তোমারই পিক।”
“কেন, ভাল লাগছে না?”
“একদমই না। চেঞ্জ ইট।”
(নো রিপ্লাই)
হিমি লিখলো, “কী হল?”
“আমি ব্যস্ত.. পরে কথা হবে।”
এই বলে আমি অফলাইনে চলে এলাম। তারপর নক করলাম ইমাকে, “শুভসন্ধ্যা।”
ইমা সামাজিকতার ধার দিয়ে গেল না, সরাসরি বলল, “আপনি যখন অনলাইনে থাকেন তখন আমায় নক করেন না.. অফলাইনে এলে নক করেন কেন?”
“কারণ আছে নিশ্চয়।”
“গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেন, তাই না?”
“ইয়েস।”
“ওহ, খুব ভাল।”
“কতটা ভাল?”
“আপনার প্রোফাইল পিকচারের মত ভাল।”
“তাই?”
“আপনি এত সুন্দর ফটো দেন কেন?”
“ঠিক আছে, আর দেব না।”
“আমি নজর দিলাম, সেকারণে?”
“না, গার্লফ্রেন্ড নিষেধ করেছে… সেকারণে।”
“কেন নিষেধ করলো?”
“অন্য কেউ যাতে আমার প্রেমে না পড়ে সেজন্য।”
“আপনাকে বলেছে?”
“বলেনি, তবে আমি জানি। সব কথা বলে দিতে হয় না।”
“ওওও।”
আমি মিথ্যা করে বললাম, “তবে এখন আর প্রবলেম নেই, আমাদের ব্রেক-আপ হয়ে গেছে।”
“রিয়েলী? সো স্যাড।”
আমি আরও ভণিতা করে বলি, “এখন আমায় সান্ত্বনা দেবার মানুষও নেই।”
“কেন, আপনার বন্ধু-বান্ধব?”
“ওরা শুনলে ব্রেক-আপ পার্টি করতে চাইবে, তাই জানায়নি।”
“আপনার জন্য আমার মায়া হচ্ছে।”
“ও আচ্ছা।”
“সত্যিই মায়া হচ্ছে।”
“হুম।”
“আপনি বিশ্বাস করছেন না কেন?”
“কারণ আপনাকে আমি সামনাসামনি দেখতে পাচ্ছি না। তাই আপনার এক্সপ্রেশন বুঝতে পারছি না।”
“তাহলে কাল আমরা দেখা করি?”
আমি এক ঝলক হেসে নিলাম, এই তো টার্নিং পয়েন্টে এসে মেয়েটা আমার ফাঁদে পা দিয়েছে। আমি বলি, “হুম।”
“ওকে, বিকাল পাঁচটা… রমনা পার্ক।”
“ওকে ডান।”
কিন্তু রমনা পার্কে ঠিক বিকাল পাঁচটায় হিমির সাথেও আমার দেখা করার কথা ছিল, সেটা বেমালুম ভুলেই গেলাম। যার ফলাফল ভাল ছিল না।
পরদিন বিকেলে ইমার সাথে রমনা পার্কে দাঁড়িয়ে একসময় সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে যাই। কয়েকটা সেলফি ক্লিকের পর ইমা বলে, “এই দেখুন, আমাদের পেছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।”
“কে?”
“ফোনের ক্যামেরায় তাকান, দেখতে পাবেন।”
আমি ক্যামেরার দিকে তাকালাম, একটু দূরেই একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যামেরাটা জুম করতেই হিমির মুখ স্পষ্ট হল। ইমা বলে, “দেখেছেন?”
আমি অন্যমনস্ক হয়ে বলি, “হুম? চলুন, আমরা কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।”
“চলুন।”
পার্ক থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা করে শাহবাগ রেস্টুরেন্টে এলাম। ভেতরে ঢুকে দুজন মুখোমুখি বসলাম। কোল্ড কফির অর্ডার দিয়ে চুপচাপ বসে আছি তখন ইমা বলে, “দেখুন, পার্কের মেয়েটি এখানেও চলে এসেছে।”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, “ও হচ্ছে হিমি।”
“হিমি কে?”
“যার সাথে আমার ব্রেক-আপ হয়েছে।”
“হোয়াট?”
ঠিক এসময় হিমি তার আসন ছেড়ে আমার কাছে এলো, বলল, “এটা কে? তোমার গার্লফ্রেন্ড?”
ইমা বলে, “এক্সকিউজ মী।”
“শাট আপ! আমি ওর লাইফের প্রথম গার্লফ্রেন্ড।”
“ছিলেন, এখন তো ব্রেক-আপ হয়ে গেছে।”
“ব্রেক-আপ!”
হিমি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না। আর আমিও বিশ্রী ঝামেলার সূত্রপাত খুঁজে পেলাম এখানেই। ইমা বলে, “মাফি আমাকে তাই বলেছে।”
“মিথ্যা বলেছে।”
“হোয়াট!”
এরমধ্যে কফি চলে এলো। হিমি পুরো এক কাপ কফি আমার মুখে ছুড়ে দিয়ে চলে গেল। ইমা বলল, “আমাকে কেউ মিথ্যা বললে আমি তাকে সহ্য করতে পারি না, ঘৃণা করি তাকে।”
এই বলে সেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালো, তার কাপের পুরো কফিটুকু আমার মুখে ছুড়ে মারলো।
বলা বাহুল্য, এ ঘটনার পর ইমা, হিমি দুজনকেই হারালাম আমি। একেই যেন বলে অতি চালাকের গলায় দড়ি। সেই দড়ি গলায় পরে ক’দিন খুব অস্বস্তিতে দিন কাটালাম। তারপর একসময় সব ভুলে গিয়ে আবার আগের লাইফে ফিরে গেলাম। নতুন একজন জীবনসঙ্গিনী খুঁজতে লাগলাম এবং পেয়েও গেলাম দ্রুত।
একদিন খোশমেজাজে একটি চেইন গ্রোসারি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম। তখন আচমকা হিমিকে দেখতে পেলাম। আমি দ্রুত সিগারেট পেছনে লুকালাম, হিমি সিগারেট খাওয়া পছন্দ করে না। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল আমাদের ব্রেক-আপ হয়ে গেছে। হিমি আমার এরূপ কান্ড দেখে বলে, “অভ্যাসটা যায়নি এখনও?”
আমিও পাল্টা প্রশ্ন করি, “কীসের জন্য এসেছো?”
“আমার বিয়ের কার্ড দিতে।”
“ওহ।”
“এই নাও।”
আমি কার্ড হাতে নিলাম। হিমি বলল, “আসবে কিন্তু।”
এই বলে সে দ্রুত চলে গেল। তার হয়তো আরও কিছু বলার ছিল, কিন্তু বলতে পারলো না কারণ চোখে ততক্ষণে অশ্রু চলে এসেছিল। সে তার অশ্রু আমাকে দেখাতে চাইনি। সেদিনের সেই কার্ড হাতে নিয়ে আমিও কষ্টে ভূগেছি, বুঝেছি ভালবাসা কী। ভালবাসার যন্ত্রণা কতখানি।
কিন্তু বাস্তবতা ভালবাসার উর্ধ্বে। তাই আমি নিরুপায় হয়ে গেলাম। হিমির বিয়েতে আমি গিয়েছিলাম। এমনকি ওর সাথে আমার কথাও হয়েছিল। খুব সহজভাবেই আমরা কথা বলেছি, যেন মাঝখানে আমাদের কিছুই হয়নি। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ফিরতে গিয়ে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগলো। সরি বলতে যাব তখন মেয়েটি হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “সরি বলতে হবে না, ইটস ওকে।”
আমি বললাম, “বিয়ে তো প্রায় শেষের দিকে… এখন এলেন যে?”
“কী করব বলুন? ট্র্যাফিক জ্যামে পড়ে গিয়েছিলাম।”
“ও আচ্ছা।”
“আমার খুবই খারাপ লাগছে হিমির জন্য, গতকাল ওর হাতে মেহেদী পরিয়ে দেবার কথা ছিল আমার। সেটা তো অফিসের কাজের চাপে হলোই না উল্টো আজও আসতে লেট হলো।”
“আপনি চাকরি করেন? দেখে বোঝা যায় না।”
আবারও একগাল হেসে তিনি বলেন, “সবাই অবশ্য তাই বলে, কেউই আমার আসল বয়সটা আন্দাজ করতে পারে না।”
“ওওওও। তাহলে তো আমি আপনার জুনিয়র। আমাকে ‘তুমি’ করে বলতে পারেন।”
“সিওর। ডোন্ট মাইন্ড… আমাকে এখন এগুনো উচিত।”
“ওহ রাইট। ঠিক আছে আপু, ভাল লাগলো কথা বলে। আমার নাম মাফি। আর আপনার নাম?”
“প্রিয়ন্তি।”
তখন থেকে শুরু হল প্রিয়ন্তিকে জুড়ে ভাবনা। কিন্তু সে ছিল কেবল কল্পনারই অধিকারী। বাস্তবে আর তাকে খুঁজে পাইনি। এভাবেই দিন চলতে লাগলো এবং একদিন ঘটলো একটা ঘটনা। সেদিন ফেসবুকে একটা গল্প পড়ে খুব ভাল লাগে। গল্পের লেখক ছিল একটি মেয়ে। আইডির নাম ছিল ‘বনলতা সেন’। ছদ্মনাম। তার প্রোফাইল পিকচার দেখে একইসাথে চেনা ও অচেনা মনে হল। কিছুতেই মনে করতে পারলাম না কে সে। তবে তার গল্পের মূগ্ধ পাঠক হয়ে আমি তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই। সেইসাথে ম্যাসেজ দিই, “আমি আপনার বন্ধু হতে চাই।”
ম্যাসেজটা সীন হয় কিন্তু রিপ্লাই আসে না। সেদিন সন্ধ্যায় অন্য এক আইডি থেকে আমাকে ম্যাসেজ দেয়া হয়, “আপনি কে ভাই?”
আমি বলি, “এটা তো আমার জিজ্ঞেস করা উচিত। আপনি কে? আমার প্রোফাইলে কী চাই?”
“আপনার সম্পর্কে জানতে চাই।”
“কারণ?”
“আপনি আমার বোনকে একটা বাজে ম্যাসেজ দিয়েছেন।”
“না, আমি কাউকে বাজে ম্যাসেজ দিইনি।”
“আর ইউ সিওর?”
“জ্বী।”
“ওকে, ওয়েট ফর অ্যা সেকেন্ড।”
.
একটু পরই তিনি ইনবক্সে একটা স্ক্রিনশট পাঠালেন। যেখানে বনলতা সেনকে পাঠানো ম্যাসেজটি শো করছে। ভাল করে লক্ষ্য করতেই আঁতকে উঠলাম, আমি ম্যাসেজে লিখেছি, “আমি আপনার হতে চাই।” নিজের এমন ভুলে হাসব না কাঁদব সেটা বুঝে ওঠার আগেই বনলতা সেন নামক মেয়েটির বড়ভাইকে ব্লকলিস্টে পাঠালাম। তারপর বনলতা সেনের ইনবক্সে গিয়ে ম্যাসেজ দিলাম, “সরি।”
“আপনি কে? এমন উদ্ভট ম্যাসেজ কেন দিলেন?”
“আসলে ওটা একটা মিসটেক। আমি বলতে চেয়েছিলাম, আমি আপনার বন্ধু হতে চাই।”
“ও আচ্ছা।”
“আপনার নামটা জানতে পারি?”
“সিওর। আমি প্রিয়ন্তি।”
এবারে আমার মনে পড়ে গেল ইনিই সেই হিমির বিয়েতে দেখা প্রিয়ন্তি আপু। আমি বললাম, “ওওও, আমি মাফি। চিনতে পারছেন? ঐ যে সেদিন বিয়েবাড়িতে দেখা হয়েছিল।”
“ঠিক চিনছি না।”
“আপনার সাথে ধাক্কা লাগলো।”
“হতে পারে।”
জবাব শুনে হতাশ হয়ে গেলাম। তবে চ্যাটিং চলতে লাগলো। আমাদের সম্পর্ক এম্নি করেই বেশ গড়িয়ে যাচ্ছিল। একদিন বললাম, “আমি কি আপনার মোবাইল নাম্বার পেতে পারি?”
“নাম্বার দিয়ে কী হবে?”
“কথা বলতাম একটু।”
“তো এখন কী করছেন?”
“আপনি কি বিরক্ত হলেন?”
(নো রিপ্লাই)
সেদিন আর কথা হল না। নিজের কাছে তখন নিজেকে ছোট মনে হতে লাগলো। শুধু শুধু ফোন নাম্বার চাইতে গেলাম কেন? এই ভেবে আবার যখন ফেসবুকে বসেছি তখন দেখি তিনি ঠিকই তার নাম্বারটা ইনবক্সে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এরপর সম্পর্কটা আরও একধাপ এগোলো।
একদিন বিকালে ক্রিকেটের মাঠে ক্রিকেট খেলছিলাম। বাউন্ডারির প্রায় কাছে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করছি, ওদিকে বোলার একটা ইয়োরকার বল ছুড়ে দিলো ব্যাটসম্যানের দিকে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটসম্যান ব্যাট ঘুরিয়ে মারতেই বলটা শূন্যে ভেসে ঠিক আমার দিকেই আসতে লাগলো। বলটাকে ধরব বলে এক পা এক পা করে পেছাচ্ছি, তখন একজনের সাথে ধাক্কা লাগলো। হুমড়ি খেয়ে আমি পড়ে গেলাম তার ওপর। চেয়ে দেখি প্রিয়ন্তি। আমি দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বলি, “সরি।”
প্রিয়ন্তি কিছু না বলেই দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে যায়। হতবুদ্ধিতে পড়ে যাই আমি। এদিকে প্রিয়ন্তির সাথে ক’দিন যোগাযোগও বন্ধ থাকে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে। আমি ফোন দিলেও সে ধরে না। এভাবে কিছুদিন যাবার পর একদিন ফোনে ম্যাসেজ আসে, প্রিয়ন্তির লেখা, “কাল একটু দেখা করতে পারবে?”
আমি যেন এমন এক রেসপন্সের অপেক্ষাতেই ছিলাম। সুতরাং পরদিন একটা পার্কে দুজনে দেখা করি। চুপচাপ বেঞ্চে বসে পাশাপাশি দুজন। হঠাৎ প্রিয়ন্তি জিজ্ঞেস করে, “তুমি কখনও কাউকে ভালবেসেছো?”
“আপু—”
আমাকে থামিয়ে দিয়ে প্রিয়ন্তি বলে, “আপু নয়, নাম ধরে ডাকো। এখন থেকে আমরা বন্ধু।”
আমি কিছু বলি না, একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। কিছুদিন পরের কথা… ফোন বাজার শব্দে সকালে ঘুম ভেঙে যাই। চেয়ে দেখি, আননোন নাম্বার। তবুও রিসিভ করি।
“হ্যালো।”
“তুমি আজ অফিসে যাবার আগে আমাকে বলে যাওনি কেন?”
আমি কন্ঠ শুনে হতবিহ্বল হয়ে যাই। হিমির কন্ঠস্বর। আমি বলি, “এক্সকিউজ মী। কাকে ফোন করেছো চেক করো।”
ক্ষণিকের ব্যবধানেই হিমি বলে, “সরি।”
“হুম, এখনও আমার ফোন নাম্বার সেভ করে রেখেছো দেখছি।”
“হোয়াই নট? আমরা তো বন্ধু, তাই না?”
“হুম, তা কেমন আছো?”
“ভাল। তুমি?”
ঠিক এসময় দেখি প্রিয়ন্তি আমার সামনে দাঁড়িয়ে। ইদানীং সে প্রায়ই আমার এখানে আসে। আর আমার ফ্ল্যাটের দরজা সুবেহসাদেকের পর থেকে খোলাই থাকে। আমি বলি, “হিমি, আমিও ভাল আছি। তবে একটু ব্যস্ত আছি.. পরে কথা বলি?”
“ওকে।”
ফোন রাখতেই প্রিয়ন্তির ঝাঁঝালো কন্ঠ উদয় হয়, “কে ফোন দিয়েছিল?”
“হিমি।”
“কেন?”
“তুমি এত রিঅ্যাক্ট করছো কেন?”
“জানতে চাও?”
আমি কিছু বললাম না। প্রিয়ন্তি তখন ছুটে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বলে, “আই লভ ইউ।”
“সত্যি?”
“হুম।”
“কতখানি?”
“এক ইঞ্চি।”
“এত কম?”
“আধইঞ্চি বললে খুশি হতে?”
আমি ওর মুখটা দু’হাতে চেপে ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে বলি, “আমি আমার জীবনে তোমার মত বনলতা সেনকে পেয়েছি, এ জীবনে আর কিছুই চাওয়ার নেই।”
অতীত থেকে ভ্রমণ করে বেরিয়ে আসতে আসতে রাত কেটে যায়। ততক্ষণে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছি। ঠিক তখনই প্রিয়ন্তি ঘুম থেকে উঠে বলে, “এই… আযান দিচ্ছে তো। ওঠো, নামায পড়তে হবে।”
আমি তখন ঘুমে নাস্তানাবুদ। তবুও উঠলাম। প্রিয়ন্তি আমার জীবনে আসবার পর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও জীবনের অংশবিশেষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রিয়ন্তির মত এটাকেও আমি হাতছাড়া করতে চাই না।