রুমা:- আপনি এসেছেন? অবশ্য জানতাম আপনি আসবেন..
আবির:-(মুচকি হাসি দিল) এখানে কথা না বলে চলো একটু হাঁটি আর গল্প করি। হ্যাঁ চলুন আচ্ছা তোমার পড়ালেখা কেমনহচ্ছে?? হ্যাঁ ভালো তোমার ডাক্তারি পড়া শেষ হবে কবে?? এই তো আর এক থেকে দেড় বছর হ্যাঁ, ভালো ভাবে পড়, তোমাকে একদিন খুব বড় ডাক্তার হতে হবে, মানুষের সেবা করবে। হ্যাঁ, ভালো ভাবে পড়ছি, আর আমি ডাক্তার হয়ে আপনার মত পাগলদের চিকিৎসা আগে করব। তাই?? শুনো তুমি যদি ডাক্তার হোও, আমি হব তোমার রোগী। কেমন রোগী হবেন?? পার্মানেন্ট ওয়াও, কি খুঁশী হলে?? খুঁশি হব না?? ডাক্তার হবার পড়েও তো অনেকে পার্মানেন্ট রোগী পায় না, আর আমার কি সৌভাগ্য দেখেন, ডাক্তার হবার আগেই একটা পার্মানেন্ট রোগী পাচ্ছি। তাওআবার সে আমার পাশেই।
এখনি হেঁসে নাও, একদিন দেখবে,আমি কঠিন রোগে আক্রান্ত আর অপারেশনটা তোমাকেই করতে হবে, সেদিন দেখো এই হৃদয়ে শুধু তোমারই নামটি লিখা। হা হা আপনি তো খুব রশিকতা করতেপারেন, আচ্ছা আজ আছি? হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির কাছাকাছি চলে এলাম দেখছেন?? ও হ্যাঁ তাই তো, আচ্ছা ভালো থেকো বাই পরদিন আপনি আজও এসেছেন?? হ্যাঁ, দেখতেই তো পাচ্ছো এভাবে প্রতিদিন পথ চেয়ে থাকতে কেমন লাগে?? শুধু তোমাকে ভালবাসি, তাই তোমার পথ চেয়ে থাকতে একটুও খারাপ লাগে না। শুনেন আপনি শুধু আমার বন্ধু এরচেয়ে বেশি কিছু ভাবি না, ভাবতে পারবওনা, আপনি ভালো করে জানেন আমিমা-বাবার একমাত্র মেয়ে, তাই তাদের মতের বাহিরে আমি কিছুকরতে পারব না। আমি তোমার বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব। তাতে কোনো লাভ হবে না, আচ্ছা, আজকের মত আসি বাই। এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়
রুমা:- আপনি আজও?? এভাবে আর কতদিন?? যতদিন রাজি না হবে দেখেন যেটা হবে না, সেটা নিয়ে কেনো এভাবে পড়ে আছেন?? আচ্ছা, আমি তো তোমার অচেনা কেউ নয়, জানা-শোনা, আমাকে তো ভালভাবেই চিনো কোনো দিক দিয়ে আমাকে খারাপ মনে হয়???
না একদমই না, আপনার চেয়ে ভালো আমি ২য় কাউকে দেখি নি। তাহলে কেনো বারবার আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো?? কারণ আমি মা-বাবাকে কষ্ট দিতে পারব না, , আমি যখন ssc পাস করি তখনি তারা আমাকে ডাক্তারি পড়াবে বলে দেয়, আর বিয়েও কোনো ডাক্তারের সাথে দিবে জানিয়ে দেয়, এটাও বলে দেয় যোনো ক্লাসমেট হোক বা যাই হোক কোনো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না,আমার বিয়ে ডাক্তার ছেলেরসাথেই হবে, এটাই তাদের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত, এটা আপনাকে আগেও বলছি এখনো বলছি, প্লিজ আমার পেছনে এভাবে সময় নষ্ট করবেন না। ডাক্তার মেয়ের ডাক্তার ছেলের সাথেই বিয়ে হতে হবে এটা কোন আইনে আছে?? তোমার পছন্দের কোনো দাম নেই? এটা হয়তো কোনো আইনে নেই, এটা আমার মা-বাবার স্বপ্ন, আর মেয়ে হয়েতাদের স্বপ্নটা পূরণ করা আমার কর্তব্য। এটাই তোমার শেষ কথা???
হ্যাঁ, আর শুনেন আপনি জানেন আমারকোনো ছেলে বন্ধু নেই, আপনারসাথে কথা বলতে ভালো লাগে তাইএকটু কথা বলি,, সামনে আমার পরীক্ষা,আমাকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে,দোয়া করবেন যেনো মা-বাবার স্বপ্নটা সত্যি করতে পারি, আর একটা কথা পরীক্ষার মধ্য আমার সাথে দেখা না করলে খুঁশী হব, পরীক্ষা শেষে আমি আপনাকে ডেকে নিব, আজকের মত আসি ভালো থাকবেন বাই রুমা চলে যেতে লাগল, আবির চেয়ে দেখছে, ((ও আবির সম্পর্কে তো কিছু বলা হয়নি,,পড়ালেখায় খুব মেধাবী, অনার্স পাস করে ভালো রেজাল্ট পায়। এরপরই ভালো একটা জব পায় + মাস্টার্সেপড়তে থাকে। আবিরের বাড়ি যশোর পড়ালেখা জন্য ঢাকাতে পাড়ি জমায়, এরপর সে একটা বাসা নিয়ে থাকে, তার বেশ কিছু দূরে রুমার বাসা, একদিন আবির রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছিল তখন রুমাকে দেখে,
কিছু হত-দরিদ্র বাচ্চাদের খাবার কিনে দিচ্ছে, সেটা দেখেই রুমাকে তার ভাল লাগতে শুরু করে, এরপর থেকে আবিরও রুমার মত হত-দরিদ্র বাচ্চাদের খাবার কিনে দিত খেলা করত, এভাবে একদিন রুমা বাচ্চাদের খাবার কিনে দেয়, তখন একটা বাচ্চা ছেলে বলল আপু আপনার মত আমাদেরও একটা ভাইয়া খাবারকিনে দেয়, এরপরই ওদের পরিচয় হয়, যদিও রুমা আবিররের থেকে বেশ ছোট তবুও বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে উঠে তাদের মধ্য আর বন্ধুত্বের কিছুদিন পরই আবির তার ভালো লাগার কথা জানিয়ে দেয়, রুমা রাজি হয় নি, পড়ে সব খুলে বলে আবিরকে, কিন্তু আবির এটা মানতে পারছে না তাই আজও রুমার পথ চেয়ে বসে থাকা)) রুমার পরীক্ষা শেষ হবার ৩-৪ দিন পর,সে আবিরের সাথে দেখা করল, কেমন আছেন? যদি বলি ভালো আছি বিশ্বাস করবে?? এভাবে কেনো বলছেন?? তুমি বলছিলে বলে তোমার সাথে দেখা করি নি, জানো কত কষ্ট হয়েছে?? আপনি এখনো এটা নিয়ে পড়ে আছেন?? দেখেন আমি শুধু আপনাকে বন্ধু হিসেবেই জানি, আর চাই আপনিও আমাকে বন্ধু হিসেবে মেনে নেন। এই শুনো, চাইলে বন্ধুকে ভালবাসার স্থানে বসানো যায়, কিন্তু ভালবাসার মানুষকে বন্ধুত্বের জায়গায় বসানো যায় না।
আপনি এমন করলে হয়তো কখনই আরদেখা করব না, আর হ্যাঁ, শুনেন আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে একটা ডাক্তার ছেলের সাথেই, সে আমেরিকা থেকে ডাক্তারি পড়েছে আমেরিকাতেই থাকে, আমার রেজাল্ট দিয়ার পর পরই আমাদের বিয়ে আর বিয়ের পর হয়ত আমাকেও সেখানে নিয়ে যাবে। শেষমেশ ডাক্তার ছেলেকেই বিয়ে করছো? আজ আর আমি তোমাকে জোর করব না জাস্ট সত্যি করে একবার বলো,আমাকে কি একটু ভালবাসো না??? একটা বারও কি আমার সাথে থাকতে ইচ্ছে করে না?? না আপনাকে ভালবাসি না, জানি আমি আপনার হতে পারব না তাই ভালবেসে কি হবে?? আবির কথাটা শুনে তাকিয়ে থাকল রুমার মুখের দিকে রুমা, শুনেন আমি এখন বিদায় নিব, জানি না কখনো আর দেখা হবে কি না, ভালো থাকবেন, নিজের খেয়াল রাখবেন, আসি তাহলে বাই, এই বলে রুমা হাঁটা শুরু করল।
আবির তখন পেছন থেকে বলল, আমি জানি একসময় তুমি ফিরে আসবে, আমার ভালবাসার জয় হবেই, আমি যতদিন বেঁচে থাকব তোমার জন্য অপেক্ষা করব। রুমা কিছু বলে নি, বাড়ি ফিরে একা একা কিছুখন কান্না করল। দীর্ঘ ৬ বছর পর রুমা এখন বড় একটা হাসপাতালের চিকিৎসক। একদিন প্রত্যক বেডে গিয়ে রোগীকে দেখতে ছিল, হঠাৎ একটা বেডের দিকে চোখটা পড়তেই, খুব চমমে উঠল। এমনটা সে কখনই ভাবে নি, যা আজ তাকে দেখতে হলো। সে আর কেউ নয়, বেডে শুয়ে ছিল আবির,, এমন একটা দিন সে কখনই চাই নি,, অনেক খুঁজেছে মানুষটাকে কিন্তু কোথাও পায় নি, আজ ৬ বছর পর দেখল তাও এভাবে,, রুমা এরপর এক নার্সকে বলল কে এসেছে এর সাথে, নার্স বলল তার এক ফ্রেন্ড, আচ্ছা তার ফ্রেন্ড আসলে আমার সাথে দেখা করতে বলবা,
নার্স:- আচ্ছা ম্যাডাম কিছুখন পর ভেতরে আসতে পারি?
রুমা:- হ্যাঁ, আসুন আমি, ওমুক রোগীর সাথে এসেছি। ও আচ্ছা, আপনি তার কি হোন?? আমার ফ্রেন্ড তার পরিবারের কেউ আসে নি?? না, আসলে ওর পরিবার বলতে তো শুধু ও আর আন্টি ছিল,, বাট ৫ বছর আগে ওর মা মারা যায়। কথাটা শুনে অনেকটা আঘাত পেল রুমা, আচ্ছা আপনার বন্ধুর চিকিৎসার জন্য কোনো পরীক্ষা করা হয়েছে?? হ্যাঁ, ওর দুটো কিডনিতেই পাথর পড়েছে। ও, আচ্ছা আপনি এখন আসতে পারেন। জি আচ্ছা এর কিছুখন পর হাসপাতাল অধিদপ্তর থেকে রুমাকে জানানো হল, আবিরের অপারেশনটা তাকেই করতে হবে, কারণ তার মত সুদক্ষ ডাক্তার হসপিতালে নেই।
রুমা হ্যাঁ বলে চলে আসল। তার রুমে এসে বসলো, আর পুরোন কথাগুলো স্মরণকরল, তুমি যদি ডাক্তার হোও রোগী হব আমি। দেখো, একদিন কঠিন রোগে আক্রান্ত হব আর তোমাকেই অপারেশনটা করতে হবে। কথাগুলো ভাবতে না ভাবতেই কয়েক ফোটা চোখের পানি বের হলো, কি করবে এখন সে?? পারবে কি প্রিয় মানুষটির অপারেশনটা করতে?? আর দু দিন পর অপারেশন, নার্সের কাজটাও রুমা নিজে করছে, আবিরের বন্ধু কিছুটা অবাক হলো বাট কিছু জিজ্ঞেস করে নি। আজ অপারেশন, ২ঘন্টা পরঅপারেশন সাকসেস হল, আর তিন দিন পর আবিরকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে, ১০ ঘন্টা পর আবিরের জ্ঞ্যান ফিরল সামনে চোখ রাখতেই দেখল রুমা বসে তারই সামনে, রুমা কিছু না বলে চলে গেলো, আবির তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করল অপারেশনটা কে করছে??
সে বলল যে ম্যাম এখানে থেকে মাত্রই গেলো সে, আর জানিস সে গত তিন দিন ধরে তোর যা সেবা করছে বলে বুঝানোর মত না। ও দোস্ত তুই থাক আমার অফিসে কাজ আসে, নার্সকে বলে দিচ্ছি তোর কিছু লাগলে বলিস আর সমস্যা হোলে কল দিস, আচ্ছা যা চিন্তা করিস না। আবির মনে মনে বলল রুমা এখানে থাকতো আমার কোনো সমস্যা হতেই পারে না। কিছুখন পর রুমা এল, ওষুধ খাওয়াতে, ওষুধ খাওয়ানোর পর বলল, এতদিন পর এভাবে আপনাকে দেখব তা ভাবি নি, কি হাল করেছেন নিজের?? আয়নায় মুখটা দেখছেন?? নিজের প্রতি একটু যত্নবান না আপনি আবির কিছু না বলে চুপ করে রইল। রুমা চলে গেলো, আবির পাশে থাকা নার্সকে জিজ্ঞেস করল রুমা এখানে কতদিন ধরে?? সে বলল প্রায় ৬ বছর, ও তার হাসবেন্ড কোথায়??
নার্স:- কি বলেন আপনি ম্যাডাম তো বিয়ে করেন নি কেনো তার যে বিয়ে ঠিক হয়েছিল হ্যাঁ, যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল সে আমেরিকা থাকত বাংলাদেশে আসার পথে দূর্ঘটনায় মারা যায়। বিদায়ের দিন আজ আবিরের চলে যেতে হবে, সে রুমার জন্য অপেক্ষা করছে, তার থেকে বিদায় নিয়ে যাবে বলে,, কিন্তু রুমি আসছে না,, কিছুখন পর নার্স এসে আবিরের হাতে একটা চিঠি দিয়ে বলল, রুমা ম্যাডাম দিয়েছে চিঠি,,,,,কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?? তোমাকে কত খুঁজেছি জানো?? কোথাও তোমাকে খুঁজে পায় নি, এত অভিমান কেনো তোমার??
শুনো আজ কিছু সত্যি কথা বলি, আমি মা-বাবার কাছে তোমার কথা বলছিলাম তারা রাজি হচ্ছিল না, আমার বাড়ি সেজন্য তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতে বারণ করছিলাম, আমি তোমাকে ভালবাসতাম কিন্তু তখন মা- বাবাকে অপেক্ষা করে তোমাকে চাই নি, জানো তুমি বলছিলে না? তোমার হৃদয়ে আমার নাম লেখা, হ্যাঁ আমি তোমার হৃদয় খুলে দেখেছি তাতে শুধু আমার নামটিই লিখা, ভালবাসি তোমাকে আগেরি মত, আমি অপেক্ষা করেছি তুমি নি আসলে আরো অপেক্ষা করতাম, বিশ্বাস ছিল একদিন তুমি আসবেই। আমার সাথে দেখা করবা? চলে আসো যে পথটিতে আমার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে, সাবধানে এসো,, আমি আসি যাব না, তুমি না আসা পর্যন্ত। আবির, চিঠিটা বুকে জড়িয়ে কয়েক ফোটা চোখের জল ফেলে, ছুঁটে যেতে লাগল রুমার দিকে।
সমাপ্ত