শুধু একটা কথা আছে

শুধু একটা কথা আছে

কোন একদিন বাড়ির পাশের স্কুলের রাস্তা দিয়ে হাটতেছি। সাথে আমার দু একজন বন্ধু ও ছিলো। কি জানি কি একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হাটতেছি স্কুল যাব বলে। ঠিক এমন সমায় আমার চোখ পড়লো একটা মায়াবী মুখের দিকে। আমি থমকে দারিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার বন্ধুরা বললো আসিফ দারিয়ে পড়লি কেন? আমি তাদের কিছু না বলেই তাদের সাথে আবার হাটতে শুরু করলাম।

আবার পিছনে তার দিকে ঘুরে দেখলাম সে টের পেয়েছিলো কি না তা জানিনা। তবে তখন আমার বুকের ভিতরটা এত আনন্দে ভরে গেছিলো তা আপনাদের বলে বোঝাতে পারব না। মনে হয়েছিলো সে যেন আমার স্বপ্নের রানী আর আমি তার রাজা। যখন তাকে দেখেছি তার মায়াবী মুখের দিক থেকে এক মূহুর্তের জন্যেও চোখ ফেরাতে পারিনি, বলতে পারেন প্রথম দেখায় যেন সে আমার হৃদয় ছুইয়ে নিছে।

তাকে দেখার পর হাটতে হাটতে স্কুল গেলাম।স্কুলে যেতে না যেতেই ক্লাসের ঘন্টা পড়ে গেলো একটু দেরি হয়ে গেছিলো। তরি ঘরি করে সবাই ক্লাসে গেলাম। ক্লাসে টিচার এসে রোল ডাকতেছে আর আমি ব্রেন্চে মাথা রেখে সেই রাস্তায় দেখা মেয়েটির কথা ভাবতেছি।রোল একে একে সবার ডাকলো কিন্তু আমার রোল কখন যে ডেকেছে আমি টের পাইনি কারন তখন যে আমি তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেছি।

আমার পাশে বসেছিলো পারভেজ সে আমায় বললো কি রে তোর তো রোজ ডেকেছে টের পাসনি স্যারকে বল রোল পেজেন্ট করে দিবে আলা। দারিয়ে স্যারকে বললাম আমার রোল পেজেন্ট হয়নি স্যার কাছে একটা মোটা ব্যাট নিয়ে এসে আমায় বললো কোন ধান্ধায় থাকো রোল ডাকলে টের পাওনা? আমি চুপ করে থাকলাম। স্যার বললো হাত দে ভিটামিন দিতে হবে হাত বাড়িয়ে দিতেই তিন টা মারলো হাত লাল টসটসে হয়ে গেছিলো। এমন লেগেছিলো যা বলে বোঝাতে পারব না।

স্কুল ছুটি হলো বাড়ি এসে বিকাল বেলা পারভেজকে ফোন দিলাম আর সকালে যাকে দেখেছি তার কথা বললাম সে মেয়েটিকে চিনতে পারেনি তখন তাকে বললাম কাল আমরা দুজনে সাইকেল নিয়ে যে রাস্তা দিয়ে এসেছে সেখানে যাব যদি তার দেখা পাই আবার তার বাড়ির ও খোজ পাই। সে বললো সকাল ৯ টায় আসবি আমি বললাম ঠিক অাছে বলে ফোন কেটে দিলাম।

তাকে আবার একনজর দেখার জন্য মনটা যেন ছটফট করতেছিলো কোন কাজেই মন বসতেছিলো না। রাতে পড়ার সমায় শুধু তার কথা মনে পড়তেছিলো তাই আর পড়া পরিনি। বই পড়া বাদ দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। বিছানায় শুয়ে তাকে নিয়ে হাজারো রকমের স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম, তাকে বিয়ে করব সংসার করব ইত্যাদি ইত্যাদি।

পরের দিন সকালে উঠে গোসল করে সাইকেল নিয়ে পারভেজের কাছে গেলাম তাকে নিয়ে সেই রাম্তায় দিয়ে ধিরে ধিরে এগোতে শুরু করলাম একটু যেতে না যেতেই একটা গ্রামে ডুগে পরলাম। সেই গ্রামে আগে কখনো যাইনি। চারদিকে ভালো করে দেখলাম কিন্তু সেই মেয়েটির দেখা পেলাম না। আর একটু এগিয়ে দেখতেছি সেই মেয়েটি তাদের খুলিতে পুতুল খেলতেছে আমি পারভেজকে বললাম ভাই এই দেখো মেয়েটি সে দেখে আমার দিকে চোখ বড় করে বললো সালা এই ছোট মেয়েটিকে দেখার জন্য এত পাগল হয়েছিস। আমি বললাম ভাই ওকে ভালো লেগেছে তাই এসেছি।

আসলে সেই মেয়েটি আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট। ছোট হলেও তার মায়াবী মুখ আমার হৃদয় ছুইয়ে নিছে।তার দিকে দারিয়ে দেখতে লাগলাম অনেক্ষন থাকার কারনে সে টের পেয়েছিলো আমি তাকে দেখতেছি। সে তার পুতুল খেলার সবকিছু নিয়েই বাড়ি চলে গেলো। তারপর আমি ওখানের একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই মেয়েটির নাম কি সে বললো তার নাম লতা এবং তার ব্যাপারে সবকিছুই খুলে বললো।

সব কথা শোনার পর আমার মনটা যেন ভেংগে গেলো কারন তার আর আমার মাঝে অনেক বড় একটা বাধা দারিয়ে আছে সেটা হলো আমাদের জাত। সে হিন্দু আর আমি মুসলিম যা কখনোই সম্ভব নয়। একটু খারাপ লেগেছিলো পরে ভাবলাম তাকে তো ভালোবেসে ফেলছি সে হিন্দু হলেও আমার স্বপ্নের রানী আর সে বয়সে ছোট হয়েছে তা কি হয়েছে তাকে নাহয় আমি দুর থেকেই ভালোবাসব।

সেদিন রাতে ঘুমানোর সমায় চোখ দিয়ে একটু জল পরেছিলো জানিনা কেন কেঁদেছি। এভাবে অনেক কয়েকদিন কেটে গেছিলো তার দেখা হয়নি অনেক খুজেছি দেখা পাইনি তার বাড়ির কাছেও গেছি তবু তার দেখা পাইনি কারন সে তার আত্নীয়ের বাড়িতে বেরাতে গেছিলো।

তারপরের দিন আমি বাজারে গিয়ে বসে আছি হঠাৎ একটা ভ্যানে চরে সেই মেয়েটি আসতেছে। আমি তাকে দেখতেছি ভ্যানটা দারিয়ে তাদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো তার সাথে তার বড় বোন ছিলো সে তার থেকে একটু বড়। সে আমার পাশ দিয়ে গেলো আমি একটু এগিয়ে তাকে ডাকলাম সে দারিয়ে পরলো। তাকে বললাম একটা কথা আছে সে হেসে বললো কি মাথা নিচু করে বললাম আমি তোমাকে ভালোবাসি
সে কথাটা শুনে হেসে হেসে দৌরে যাইতেছে আর আমার দিকে দেখতেছে কারন দেখারি কথা এত কম বয়সে সে প্রেমের অফার পেয়েছে। আমিও একটু সরম পেয়েছিলাম তবে ওর হাসি দেখে আমিও হাসতে শুরু করলাম। সে চলে গেলো আমিও বাড়ি চলে আসলাম।

বাড়ি এসে এত খুশি লাগতেছিলো তা বলে বোঝাতে পারব না। সেদিনটা খুব আনন্দে কাটিয়েছিলাম। পরে বেশ কয়েকদিন তার কোন দেখা পাইনি। হঠাৎ একদিন দেখতেছি সে স্কুল থেকে আসতেছে আমি ওর কাছে গেলাম ওকে বললাম লতা শুধু একটা কথা আছে সেটা শুনে বললো তুই কিছু বলবি না আমি শুনব না বলেই দৌর হাসতেছে আর দৌরাইতেছে তার দৌরানি দেখে আমিও হেসে ফেলছি।

এভাবে তার সাথে আজও দেখা হয় দেখা হলেই তাকে বলি শুধু একটা কথা আছে আর সে বলে আমি শুনব না তারপর দৌরে হেসে পালিয়ে যায়।

দেখতে দেখতে ১বছর পেরিয়ে গেলো তার মাঝে অনেকবার দেখা হয়েছে কিন্তু সে আমার কথাটা না শুনেই আমার কাছ থেকে পালিয়ে যায়। তার মায়াবী হাসিটা যেন আমার চোখের সামনে সবসমায় ভেসে আছে। জানি তাকে তো আমি কখনো পাবো না কিন্তু তাকে সারাজীবন ভালোবাসব।কারন সবাই বলে কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে ঠিক তাকে পাওয়া যায়।

সমাপ্ত….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত