ছেলেটা বখাটে। রোজ কাউকে নাহহ কাউকে মেরে মনের জ্বালা মিটায়। ওর জীবন ইতিহাস বাকি সব সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক আলাদা। ছেলেটার নাম মারুফ। এলাকায় চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি, গলাবাজি মাঝে মাঝে চাপাবাজিও করে বেড়ায়। কিন্তু এর সবটা সে সবার সাথে করে নাহ। কিছু নির্দিষ্ট লেভেলের মানুষদের সাথে করে।
বখাটেপনা করতে করতে ওর মন পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে গেছে। মারুফের ডিকশনারিতে ৩টা শব্দ নেই। দয়া, মায়া আর বিনয়। সে সবার সাথে একভাষায় কথা বলে। এককথায় বলতে গেলে অনেকটা পাষান। রোজকার মতো সে কোন এক পথের মোড়ে বসে তার সঙ্গীদের সাথে কঠিন নেশায় বিমগ্ন। এমন সময় তার নেশা কাটে একটা মেয়ের এলোমেলো খোলা চুলের ঝাপটার স্নিগ্ধ সুবাসে। তার নেশার আসক্তি তখনকার মতো উবে যায়। অপলক দৃষ্টিতে সে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে। নীল কালার ড্রেস পড়া, হাত ভরা নীল কালারের চুরিতে, সিল্কি এলোমেলো খোলা চুল উড়ছে বাতাসে, ঠোঁটে গোলাপি লিপিস্টিক, কপালে কালো টিপ। যেনো সে মারুফের হৃদয় চিরে মনটাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলো তার সৌন্দর্যের জোড়ে।
খানিক সময় সেখানে বসে থাকল। তাকে দেখেই মারুফ যেনো কল্পনার রাজত্বে রাজ করতে শুরু করল। কখন যে মেয়েটি তার চোখের সীমানা পেরিয়ে অন্য এক অজানা সীমানায় চলে গেছে সে বিষয়ে তার কোন হুশঁই নেই। যখনই তার হুঁশ হয় সাথে সাথে সে আশেপাশে তাকে অনেক খোঁজে। কিন্তু পায় নাহ। সে সেখানেই বসে থাকল তার অপেক্ষায়। সকাল গড়িয়ে বিকেল আসল। সারাদিনে বখাটে ছেলেটি মারুফের খাবারদাবারের কোন খবরই নেই। সে শেষ পথটিতে একাকী বসে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তোহহ আছেই। অন্য কোন দিকে তার আর হুঁশ নেই। আজ তার এলাকায় চাঁদা উঠানো সাময়িকভাবে বন্ধ ছিলো। ওর সঙ্গীরা মারুফকে অনেল অনুরোধ করা সত্ত্বেও রাজি করাতে পারে নি। অন্যদিনগুলোতে ওকে একবার বললেই হয়ে যায়। কিন্তু আজ আর হচ্ছে নাহ।
বসে আছে তোহহ আছেই। কোন কিছুর খবর নেই তার। আজ বখাটের অগ্নিমাখা পাথর জমায় চোখে শুধু মায়াবী ঐ মেয়েটির সেই মুহুর্তের কল্পনা এলোমেলো হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার দৃষ্টির সবটাই এখন মেয়েটার কল্পনার সাগরে হাবু ডুবু খাচ্ছে। সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত ফুরনোর পথে। পিছের একটা দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে সে রাত সেখানেই পাড় করে। তার মনে একটাই ভয়, তার কিছু মুহুর্ত ভুলের জন্য যদি সে মেয়েটাকে হারায়?? সকাল হয়ে এলো। আশেপাশের মানুষজন মারুফকে দেখছে আর অবেক হচ্ছে। যেই ছেলে সারাদিন এখানে সেখানে চাঁদাবাজি করে বেড়ায় সে আজ এর নিশ্চুপ! সকাল প্রায় ৯টা কি ৯.৩০মিনিট হবে। সে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করল। তার হাতেই ছিলো লাইটার। লাইটার দিয়ে নিকোটিন আগুন জ্বালিয়ে দিলো। সে অনেকটা হতাশ হয়ে সিগারেটে নিকোটিন পুড়োচ্ছে। নিকোটিন প্রায় পুড়তে পুড়তে মাঝ বরাবর।
সিগারেট হাতে আবার অন্যমনা হয়ে মারুফ। কোথায় যেনো তার দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে। চোখের পাতা জমে অনেকটা বরফের মতো স্থির। তার মন আবার কোথায় যেনো উদাসী হয়ে আছে। তার মাঝে আবার অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করতে আ শুরু করল। সে কিসের নেশায় যেনো বিভোর হয়ে গেলো। কিছুক্ষন পর মেয়েটা তার কাছে এসে এই যে মিস্টার, এভাবে কি দেখছেন?? মেয়েটার কথায় মারুফের হুঁশ ফিরল। সাথে সাথে হাত থেকে সিগারেট মাটিতে পড়ে গেল। পা দিয়ে পিষে দাড়িঁয়ে,,,,, জ্বী মানেএএএএএ (মারুফ) আপনার ডান হাতটা দেখি?? কী দেখবেন? (হাতটা সামনে এগয়ে দিয়ে। হাতে কী যেনো একটা ছিলো) মেয়েটা মারুফের হাত থেকে অনেকটা থাবা দিয়ে কী যেনো একটা কেড়ে নিলো। আমার নূপুর কোথায় পেয়েছেন আপনি?( খানিকটা উৎফুল্ল হয়ে) জ্বী মানেএ গতকাল আমি এখানে পেয়েছিলাম।
(গতকাল মেয়েটার পায়ের হিল পড়া জুতো হোচট খেয়ে পা থেকে আলগা হয়ে থাকা নূপুরটা খুলে পড়ে যায়। আর সেটা কোন এক সময় মারুফ কুড়িয়ে পায়) থ্যাংকস, থ্যাংকস, থ্যাংকস, থ্যাংকস আপনাকে অনেক থ্যাংকস (চিৎকার করে) আচ্ছা নামটা কি? আমার নাম মারুফ(অনেকটা আচমকা ভয়ে ভয়ে) (মেয়েটা তার হাতটা মারুফের সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে) আমি নিশিতা। সবাই আমাকে নিশি বলে ডাকে। চাইলে আপনিও বলতে পারেন। পরে মারুফ নিশিতার সাথে হাত মিলিয়েই কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে গেলো। হাতের নরম ছোঁয়ায় গলে গেলো মারুফের মন। পাথরের মাঝে বুঝি ভালোবাসার নরম ফুল ফুটল। মারুফ নিশিতার হাত ধরে আছে তোহ ধরেই আছে। ছাড়ার কোন খবর নেই। অনেকটা কল্পনায় বিভোর।
মারুফ এই মারুফ (চোখের সামনে হাতে ইশারা করে) মারুফের হুঁশ ফিরে। মুহুর্তেই লজ্জায় ডুবে যায় সে। হাতটা ছেড়ে দেয় সে সাথে সাথে। কী ব্যাপার, অনেকক্ষণ ধরে ডাকছিলাম, শুনতে পাও নি নাকি?? (খানিকটা মুচকি হেসে) নাহহ মানেএ থাক আর মানে মানে করতে হবে নাহ.. বুঝেছি আমি। আর বলা লাগবে নাহহ। বাই দা ওয়ে, তোমার নাম্বারটা দাও। নাও…. 017461509 হুম আচ্ছা এখন তাহলে আসি। রাতে ফোনে কথা হবে। মারুফ আর কোন কথা বলল নাহহ। নিশিতা চলে গেলো। মারুফ দাড়িঁয়ে ওদের চলে যাওয়া দেখলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায়। হাতে মোবাইল নিয়ে গভীর অপেক্ষায় বসে মারুফ। কখন সে ফোন দিবে, কখন কথা হবে? অপেক্ষার প্রহর বিকেল ফুড়িয়ে সন্ধ্যা। কোন ফোন এলো না। গভীর অপেক্ষায় বখাটে। রাত প্রায় ৯টা। একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসল। তরিজরি করে সে ফোন রিসিভ করে অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসা কথাগুলো শুনে অঝোর ঝর্ণার ধারায় মারুফের চোখ বেয়ে বৃষ্টি বয়ে যায়।
কথাগুলো শুনেই কেমন যেনো ভেঙে পড়ে মারুফ। ওর সঙ্গীরা অনেক চেষ্টার পরও পারে নি রহস্যময় কারন উদঘাটন করতে। মুহুর্তের মাঝে সে নিজের পরনে থাকা ময়লা ড্রেসগুলো চেঞ্জ করে সাথে ২জন ফ্রেন্ডকে নিয়ে কোথায় যেনো পাগলের মতো ছুয়ে গেলো। মারুফের বন্ধুরাও জানে না যে তাদের উদ্দেশ্য স্থল কোন সীমানায়। একটা বাইক নিয়ে এলোপাথাড়ি ভাবে চালাতে শুরু করল। এতো জোড়ে সে আগে কখনো বাইক চালায় নি। সবাই চমকে গেলো। তবুও কেউ ভয়ে মুখ ফুটে কিছুই বলল নাহ। কিছুদূর যাবার পর সে বাইক এক্সিডেন্ট করল একটা ট্রাকের সাথে। ভাগ্যক্রমে ওর বন্ধুরা বেচেঁ গেলো দুর্ঘটনার হাত থেকে।
এই দুর্ঘটনার বিষয়ে খানিকটা বোধ হয় বুঝতে পেরেছিলো মারুফ। তাই বাইক হালকা স্লো করে ওদেরকে বাইক থেকে লাফ দিয়ে নেমে যেতে বলল। এবং তারা দুজনই নেমে গেলো। কিছুদূর সামনে গিয়েই এক্সিডেন্টে মারাত্নক ভাবে আহত হলো মারুফ। ওর বন্ধুরা দৌড়ে গিয়ে ওকে যতটা দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে গেলো। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মারুফকে। মারুফকে বেডে ভর্তি করেই ওর বন্ধুরা চমকে গেলো। অবাক হয়ে পাশের বেডের দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকল। কয়েকঘন্টা কেটে গেলো। জ্ঞান ফিরে আসলো মারুফের। মারুফ পাশে তাকিয়েই আবেগী কষ্টের তাড়নায় নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। অনেক কষ্টে ওর বন্ধুরা বিষয়টা সামাল দিল। ডাক্তার এসে মারুফকে একটা ঘুমেই ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
সবচেয়ে অবাককর বিষয় ছিলো ওর পাশে বেডে যে শুয়ে ছিলো নীরব হয়ে হুশঁহীন ভাবে, সে আর কেউ নয়। সেই নিশিতা নামের মেয়েটিই। সবটাই খুব অল্প সময়ে ঘটে গেলো। হয়তোবা এই খবরই মারুফকে দেয়া হয়েছিলো। যার কারনে তার মাঝে হাজারো উদাসীনতা কাজ করেছিলো। অনেকটা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলো। মাঝরাতে হুশঁ ফিরলো নিশিতার। সে পাশের বেডের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না। নীরবে অঝর ধারায় নিশিতার চোখে বৃষ্টি ঝরছে। মেয়েটি কথা বলতে অনেক চেষ্টা করল, পারল না। তাই নীরবে চোখের বৃষ্টিতে নদীর গভীরতা বাড়িয়েই চলল। চোখের আকাশ এখন তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। বৃষ্টি আর থামছে নাহ।
কিছুক্ষন পর মারুফের বন্ধুরা বাহির থেকে আসল। মারুফের জন্য ঔষধ আনতে গিয়েছিলো তারা। এসে তারাও সম্পূর্ণ ইমোশনাল হয়ে গেলো। তারা নিজের চোখে দেখে কিছুই বিশ্বাস করতে পারল না। একদিনের পরিচয়ে একটা বখাটে ছেলের এই করুন অবস্থায় দেখে অসম্ভব এক সুন্দরীর চোখে বৃষ্টি! তারা নিজেরাই নিজেকে বিশ্বাস করতে পারল না। তারা নতুন করে আর কিছুই বলতে পারল না। নীরব হয়েই রইল। মেয়েটা ঝরনার ফুয়ারার মতো চোখের জল ফেলতে ফেলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল তা কেউই বুঝতে পারল না। সারা রাত ওর বন্ধুরা জেগে রইল ঠিকই কিন্তু কিন্তু শেষ প্রহরে এসে ঘুমিয়ে পড়ল। কষ্টের রাত ফুরিয়ে নতুন ভোরের সূর্য উঠল। মারুফের হুঁশ ফিরল। সে তাকিয়ে দেখল তার পাশের বেডের মেয়েটি শান্ত হয়ে স্থির চোখে ঘুমুচ্ছে। তাই সে আর ডাকল না।
কিছুক্ষন পর মেয়েটার পরিবারের অনেক লোকজন আসল ওকে দেখতে। ডাক্তারের সাথে পরামর্শের পর জানা গেলো যে, মেয়েটাকে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থতার জন্য আরো বেশ কিছুদিন নিশিতাকে এখানেই থাকতে হবে। অন্যদিকে মারুফের মারাত্নক আঘাতের জন্য ওকে সপ্তাহ দুই এক এখানেই থাকার নির্দেশনা দেন ডাক্তার। দুইদিন শুধু চোখে চোখ রেখে কিছু না বলেই কাটিয়ে দিলো। এই দুইদিনেই একে অপরের প্রতি অনেক বেশী দূর্বল হয়ে গেলো। নিশিতার প্রতিটি কাজেই অনেক বেশী ভালো লাগা শুরু করল মারুফের। অবশেষে মাহেন্দ্রক্ষণ ফুরিয়ে এলো। শেষ দিন উপস্থিত হলো নিশিতার। আজকেই নিশিতাকে রিলিজ করে দেয়া হবে হাসপাতাল থেকে। কিন্তু মারুফকে আরো প্রায় ৩-৪ দিন থাকতে হবে সুস্থতার জন্য।
নিরুপায় হয়ে একনজরে চেয়ে রইল নিশিতার দিকে। নিশিতার যাবার সময় ঘনিয়ে এসেছে। সাথে ওর এক খালাত বোন আর এক বান্ধুবী এসেছে ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে। হাসপাতালের সব ঝোড়-ঝামেলা মিটিয়ে নিশিতা মারুফের বেডের ডান পাশে এসে মারুফের কাছে বসল। তখন মারুফ সামান্য ঘুমিয়ে পড়েছিলো। নিশিতা পাশে বসে আলতো করে মারুফের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। নরম হাতের পরশের অনুভূতিতে আর সিল্কি চুলের স্নিগ্ধ সুবাসে জেগে উঠে মারুফ। চোখ খুলেই দেখলো নিশিতা তার পাশে বসে ওর মাথায় আলতো করে হাত বুনিয়ে দিচ্ছে। সে চোখ খোলার পর নিশিতা মারুফের হাতটি কোমলতায় স্পর্শ করে মধুর স্বরে বলল,-ঠিকমতো নিজের যত্ন নিও, সময়মত মেডিসিন গুলো খেয়ে নিও। আমি রোজ একবার করে তোমাকে দেখতে আসব।
এই বলে মারুফের কপালে ঠোঁটের নরম স্পর্শ আলতো ছুঁয়ে দিয়ে বিদায় নিলো নিশিতা। নিশিতার ঠোঁটের নরম স্পর্শ যেনো মারুফের মনে গভীর অনুভূতির জন্ম দিলো। এর পর থেকে মারুফকে রোজ একবার করে দেখতে আসে নিশিতা। রোজ একবার নিশিতার ভালোবাসার নরম কোমল স্পর্শ মারুফের কপালকে ছুঁয়ে যেত। এটা যেনো তাদের দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসার বন্ধনের হাতিয়ার।সপ্তাহ দুই কেটে গেলো। সুস্থ হয়ে উঠল মারুফ। দিনে দিনে মারুফের প্রতি ভালোবাসার টান বাড়তে থাকল। মারুফও নিশিতার প্রতি দিনে দিনে অনেক বেশী দূর্বল হতে লাগল। রোজ তাদের দীর্ঘ সময় ধরে ফোনে কথা হতো। হাজারো রোমান্টিকতা জুড়ে থাকত তাদের ফোনালাপে।
কয়েকমাস এভাবে কেটে যায়। মারুফ বখাটে থেকে ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যেতে শুরু করল। সব ছেড়ে দিতে থাকল। একটা সময় সে নিশতার জন্য সব ছেড়ে দিলো। শুধু ছাড়তে পারলো নাহ তার জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা নিকোটিনের কালো ধোঁয়াকে। তাও আগের মতো না। এখন অনেক কম। কারন নিশিতা তাকে সব ছেড়ে দেবার জন্য তাদের ভালোবাসার কসম দিয়েছিল। নিশিতা-মারুফের ভালো বাসা দিন দিন জমে উঠতে থাকল। একটা সময় বিষয়টি নিশিতার ফ্যামিলি বুঝতে পারে। তাই নিশিতার উপর ফ্যামিলির দিক থেকে একটা মানসিক চাপ আসতে থাকে তাদের এই রিলেশন ভাঙার। কিন্তু প্রত্যেকবার তাদের ভালোবাসার সামনে ব্যর্থ হয় সকল বাধাঁ।
একটা সময় তার পরিবার আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে বখাটে মারুফের বিরুদ্ধে। তারা তোহহ আর জানে নাহহ যে আজকের মারুফ সেই আগের মারুফ নেই। অনেক বদলে গেছে। আইনও মারুফকে নানান দিক থেকে শাশাতে থাকে। বেশ কয়েকবার ওকে হাজত বন্দিও করে। কিন্তু কোনোটাই তাদের ভালোবাসার মাঝে ফাটল ধরাতে পারে নাহ। মারুফের বিরুদ্ধে অনেক দিক থেকেই পদক্ষেপ নিতে থাকে নিশিতার ফ্যামিলি। অনেক চাপ মোকাবেলা করে মারুফ। কিন্তু সবই হয় নিশিতার অগোচরে। মারুফও নিশিতাকে কিছুই বুঝতে দেয় নি, ‘যদি সে শুনে কষ্ট পায়’ এই ভেবে। একটাসময় নিশিতা কিছুটা বুঝতে পারে এসব। তখন সে নানান দিক থেকে তার পরিবারকে ভয় দেখাতে থাকে নিজের জীবন নিয়ে। কখনো বলে ফাঁসি দেবে, কখনো বলে ছাদ থেকে লাফ দেবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এভাবে কিছুদিন যাবার পর কিছুতেই কিছু না হওয়ায় নিশিতার পরিবার ওর জন্য ভালো সম্বন্ধ দেখে ওর বিয়ে ঠিক করে। ছেলের বাবা ঢাকায় বিত্তশালী একজন ব্যবসায়ী। সেখানে তার মেয়েকে বিয়ে দিলে সুখীই হবে, এই ভাবনা ছিলো নিশিতার পরিবারের। কিন্তু ওর পরিবার কি আদৌ জানতো, কিংবা বুঝতে কি পেরেছিলো কখনো যে, “তার মেয়ে নিশিতা পাগলের মতো ভালোবাসে সেই বখাটে মারুফকে। তার মাঝে নিশিতার সব সুখ জড়িয়ে আছে। বখাটের মাঝেই আছে নিশিতাকে ভালো রাখার মহাময়ী ভালোবাসার স্নিক্ত আলো।” সেটা কখনোই তার পরিবারের কেউ বুঝতে চায় নি।
অবশেষে কঠোর পারিবারিক নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে নিশিতার বিয়ের দিন হাজির। নিশিতা কোনোভাবেই বখাটে ছেলেটার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে নাহ। ওর মোবাইল নিয়ে গিয়ে ওকে ঘর বন্দি করে রেখেছে। নিশিতাকে পাত্রী হিসেবে তৈরী করা হলো। বরপক্ষ চলে এলে বিয়ের নিমন্ত্রনে। খুব ধুম ধাম ও জাকজমক পূর্ণ ভাবে নিশিতার বিয়ের সব আয়োজন করা হয়েছিলো। কোনো একভাবে খবর পেলো মারূফ। কোন এক বিশেষ কাজে সে ঢাকার বাহিরে ছিলো খবরটা শুনেই সে পাগলের মতো ছুটে আসতে লাগল।
আর এদিকে নিশিতার বিয়ে প্রায় শেষের দ্বার প্রান্তে। ছেলেপক্ষের কবুল বলা শেষ। নিশিতার বিশ্বাস ছিলো ওর বখাটে এসে তাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে যাবে। আর ওই একবার আসলে কারো কোন ক্ষমতা থাকবে না ওদের ভালোবাসাকে রুখে দাঁড়াবার। কিন্তু আসতে পারলো নাহ কোন এক কারনে। সে কি আর জানে মারুফ এখন কোথায়?? কাজী নিশিতার সামনে উপস্থিত। কবুল বলার জন্য নির্দেশনা এলো। কিন্তু নিশিতা তার বাবার পছন্দ করা ছেলেকে কবুল বলার আগেই যে মৃত্যু ওকে কবুল করে নিয়েছে তা কি আর কাজী জানত??
তখন নিশিতার কোন সাড়া না পেয়ে সকলে হতভম্ব হয়ে রইল। ডাক্তার আনা হলো। ডাক্তারের পরীক্ষা শেষে সে নিশিতাকে মৃত ঘোষণা করল। সবাই তখন ভেঙে পড়ল। নিশিতার মৃত্যুর কারন হিসেবে ডাক্তার বিষকে চিহ্নিত করল।
আজ নিশিতাকে বিদায় দেয়া হবে ঠিকই তবে এটাই হবে শেষ বিদায়। তার পরিবারের ইচ্ছা পূর্ণ হলো। কোন বখাটে ছেলের হাতে তাদের একমাত্র মেয়েকে তুলে দিতে হলো না। বরং তাকে বিদায় করার জন্য শেষ বিদায়ের খাটিয়া প্রস্তুত করা হলো। এমন সময় আসলো নিশিতার ভালোবাসার প্রেমিক বখাটে ছেলেটা। এসেই সে নিজের চোখে কিছুই বিশ্বাস করতে পারছিলো না। সবটাই যেনো তার কাছে কোন এক দুঃস্বপ্ন মনে হতে লাগল। দুঃস্বপ্ন হলেও সত্যি। তার ভালোবাসা আর নেই। সে শেষ বিদায় নিয়ে নিয়েছে অনেক আগেই তার পাগল বখাটেটাকে না জানিয়েই।
বখাটে চোখে আজ কোন পানি নেই, মুখে কোন সাড়াশব্দ নেই, পায়ে চলার শক্তি নেই। একদম নিঃস্ব প্রায়। সে শেষ বারের মতো নিশিতার কাছে গিয়ে নিশিতার মায়াবী চেহারাটা একবার দেখেই দৌড়ে নিশিতার বাড়ির ভিতর চলে গেল। সবাই চমকে গেলো। অনেকটা আতঙ্কিতও ছিলো। অতঃপর মারুফকে ওদের ছাদেঁ দেখা গেলো। সে নিশিতাদের ছাদেঁর শেষ দেয়ালের উপর দাড়িঁয়ে। কিছুক্ষন পর ঠপাস। শেষ হয়ে গেলো একসাথে দুটি প্রাণ। সবার চেয়ে থাকা ছাড়া তখন আআর কিছুই করার ছিলো নাহহ। বখাটের এই নীরব ভালোবাসা মরে গিয়েও সবার মাঝে অমর হয়ে রইল।
কিছুদিন পর নিশিতারদের বাড়ির প্রধান ফটকে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরী করা হলো। যেখানে নিশিতা ও বখাটের ভাস্কর্য গাঁথিয়ে দেয়া হলো। যার নাম নির্ধারণ করা হলো “বখাটের ভালোবাসার স্মৃতিস্তম্ভ।” যেখানে সংক্ষেপে সূচিত হলো তাদের ভালোবাসার কাহিনীর অমর ইতিহাস। আজ রোজ হাজারো মানুষ ভিড় করে সেখানে শুধুমাত্র তাদের ভালোবাসার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য। আজ মরে গিয়েও অমরত্ব লাভ করে লাখো মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে বখাটের ভালোবাসা।।