মেলায় আসার শিক্ষা

মেলায় আসার শিক্ষা

-শীতল কোথায় যাচ্ছিস?

বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম এমন সময় তিন তলার নতুন বাসিন্দা আমাকে ডাক দিলো ।বাসিন্দার নাম নিবেদিতা ।এলাকায় নতুন এসেছে ।চেহারাতেও অনেক সুন্দর ।আমার থেকে বয়সে দুই বছরের বড় হওয়াতে আমাকে তুই করেই ডাকে ।বড় দিদি বলে কথা, তার কথাতে কি আর চুপ থাকা যায় ? আমিও প্রত্যুত্তর দিলাম,

-বাণিজ্য মেলাতে যাচ্ছি গো দিদি ।
-আমাকে নিবি?
-নিতে পারি তবে তোমার খরচ কিন্তু তোমাকেই মেটাতে হবে ।মেলাতে গিয়ে আমি কিন্তু তোমাকে কিছু খাওয়াতে পারব না।
-আমি তোকে খাওয়াবো।
-তাহলে নিয়ে যাব।
-ঠিক আছে তাহলে তুই একটু দাঁড়া আমি আসছি।

অতঃপর এই প্যারার সাথেই মেলায় যেতে হলো ।ভেবেছিলাম একা আসবো ,কত মজা করবো ।কিন্তু সে গুড়ে বালি। এই ক্ষ্যাত মার্কা বইপোকার সাথে মেলায় আসলে যে কি ধরনের বেজ্জতি হতে পারে তা আমার জানা ছিল না।

মেলা দিয়ে ঢুকতেই প্রথম দোকানে নিবেদিতা দিদা বইয়ের খোঁজ করতে লাগলো ।

-মামা আপনার এখানে কি হুমায়ন আহমেদের বই আছে ?(নিবেদিতা)
-আপু কি গ্রাম থেকে এসেছেন নাকি ?(দোকানি)
-নাতো ?
-আপু এটা বাণিজ্য মেলা এখানে বই পাওয়া যায় না ।
-আপনি যে এই ছোটদের গল্পের বই বিক্রি করছেন এগুলো ?
-আরে আপু এগুলো ছোটদের জন্য ।আপনার মতো বই পোকাদের জন্য না ।আপনি যান তো আমার দোকানের সামনে থেকে ।যত্তসব !

এরপর মেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরলাম । হঠাত্ দেখা হয়ে গেলো আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ।দীর্ঘ ছয় মাস পিছনে ঘুরে ওকে পটিয়েছি ।আজকে ওকে নিয়ে আমার মেলাতে আসার কথা ছিল কিন্তু এসেছি এই মহিলার সাথে ।বুঝতে পারিনী এই মহিলার জন্যই আমার প্রেমের অকাল মৃত্যু ঘটতে চলেছে ।

-একি তমা তুমি মেলাতে ! (আমি)
-অবাক হলে নাকি ?(তমা)
-না ।কিন্তু তোমাকে যে বলেছিলাম তোমাকে নিয়ে রাতে মেলায় আসবো ।তুমি এখনি চলে এসেছো ?
-এখন না এলে তো আমি জানতামই না তুমি এত বড় চিটার ।
-আরে বাবু তুমি যেটা ভাবছো সেটা না ।উনি আমার সিনিয়র ।আমার দিদি হয় ।
-আমাকে দেখে কি ছোট বাচ্ছা মনে হয় ?এ জন্যই তো বলি তুমি কেনো আমাকে আসতে নিষেধ করেছিলে ।
-তুমি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছো ।তুমি যেটা ভাবছো সেটা মোটেও সঠিক না ।
-ঠিক কি ভুল আমি সেটা জানি ।তুই আজকের পর থেকে আমাকে আর ফোন দিবি না ।আজকেই তোর সাথে আমার ব্রেক আপ ।

দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি চলে গেলেন দূর অজানায় ।

-কিরে শীতল দেখতে দেখতে কোথায় চলে গিয়েছিলি ?(নিবেদিতা)
-একটা বন্ধু এসেছিল তাকে বিদায় দিয়ে এলাম ।
-আচ্ছা বাদ দে ।চল ফুচকা খাই ।
-আমার কাছে কিন্তু টাকা নেই ।ফুচকার বিল কিন্তু তোমাকেই দিতে হবে ।
-তুই যে এতবড় ফইন্নি আগে জানতাম না ।ফুচকার অর্ডার দে আমিই বিল দিব ।

পরের টাকায় খাওয়ার মজাই আলাদা ।কিন্তু হারামি বন্ধুগুলোর জন্য এই মজাটাও মাটি হয়ে গেলো ।প্রথম ফুচকাতে কামড় দিতেই। কেত্থেকে যেন ইমন ,নিশীথ ,রেজা,বিবেক ,আবির এলো। ওরা আমার কাছে আসার আগেই আমিই ওদের কাছে গেলাম।

-কি মামা প্রেম তো ভালোই চলছে ।একসাথে দুই নৌকা চালাচ্ছো। (ইমন)
-ঐ ডা আমার বড় আপু লাগে।
-আমরা সব বুঝি কেডা কি লাগে। (রেজা)
-দোস্তরা ঝামেলা করিস না ।আপু শুনলে ঝামেলা হবে।
-একা একা ফুচকা খেতে সমস্যা হচ্ছে না আর আমরা বললেই সমস্যা ?
-দেখ ভাই তোরা যা ।
-যাব ।কিন্তু তার আগে আমাদের সবাইকে তোকে বিরিয়ানি খাওয়াতে হবে।
-এখন কি আমার কাছে এত টাকা আছে নাকি ।
-তাহলে আপুর থেকেই নিয়ে আসি।
-আরে থাম ।এই নে টাকা।
-থ্যাংস দোস্ত ।অনেক দিন পরে তোকে একটা বাঁশ দিতে পারলাম।

অতঃপর সবাই চলে গেলো আমিও দিদির ওখানে এলাম।

-কিরে শীতল তুই মাঝে মাঝে এমন হাওয়া হয়ে যাস কেনো?
-দিদি চলো এবার বাসায় যায় ।মেলা আর ভালো লাগছে না।
-যাবি !আচ্ছা চল।

অতঃপর মেলা থেকে বের হতেই দিদির বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গেল। আমি উনাকে চিনি কিন্তু উনি আমাকে চেনে না ।শুরু হয়ে গেলো তাদের প্রেমালাপ ।এই সুযোগ এবার প্রতিশোধ দিতে হবে। মেলায় এসে দিদি আমাকে অনেক বাঁশ দিয়েছে। এবার আসল সুদে সব ফিরিয়ে দিব ।

-একি নিবেদিতা কে এই ছেলে ?তোমার ফ্রেন্ড নাকি?(আমি)
-না ।ও আমার…
-ও বুঝেছি তোমার ক্লাসমেট ।আচ্ছা ওকেও বিয়েতে আসতে বলো।
-এসব আমি কি শুনছি নিবেদিতা ।ও তোমার হবু হাসব্যান্ড !আর তুমি আমার সাথে অভিনয় করেছো ।(ছেলেটি)
-আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি রিক্সা ডেকে আনছি।

রিক্সা ডাকার নাম করে দৌড়ে পালিয়ে এসেছি। এতক্ষনে নিশ্চয় দিদির প্রেমের বারো টা বেজে গেছে ।তবে সিনিওরকে নিয়ে মেলায় আসার শিক্ষাও পেয়ে গেছি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত