অফিসে কাজের চাপটা বেশী তাই বাসায় ফিরতে একটু লেট হয়ে গেল আজ।
কলিংবেলে চাপ পড়া মাত্রই ইতি এসে দরাজাটা খুলে দিল। এত দ্রুত দরজা খোলা সম্ভব না, হয়তো সে দরজায় দাড়িয়ে আমার অপেক্ষায় ছিল!
এ আর নতুন কি! সপ্তাহের ছয়টা দিনই কাটে তার অফিস থেকে আমার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়।
ইতির চোঁখের আকার বদলে গেছে রাগে। কোন কথা না বলেই তড়িঘড়ি হাঁটা শুরু করে দিল। আমিও পেছন পেছন হাঁটা ধরলাম।
রুমের কোনের সোফাটায় মাথা নিচু করে বসে পড়ল।
আমি ওর এ রাগের কারন মিলাতে পারছি না কিছুতেই।
দুপুরে একবার কল দিয়ে বলেছিল আজ নাকি আমার ফেভরাইট সব রান্না হবে।
ব্যাস! এতটুকুই!
আমি চুপচাপ গিয়ে তার পাশে সোফায় বসে পড়লাম।
ইতি সেখান থেকেও উঠে তুড়তুড় করে চলা শুরু করল।
আমিও নাছোড় বান্দা, হাটছি তার পিছু পিছু।
ডাইনিং টেবিলে আমার সব প্রিয় খাবার সাজানো।
আহ! ঘ্রানেই যেন পেটের অর্ধেক ভাগ ভরে যাচ্ছে আমার।
মেয়েটার রান্নার হাত তার মতই সুন্দর। একবার খেলে তার রান্না মুখ থেকে যেন ছাড়তেই চায়না।
বউটা একটা প্লেট উল্টিয়ে পোলাও দিচ্ছে।
চোঁখ তার বর্ষণভারী, যে কোন সময় ও টলমল চোঁখ থেকে অশ্রু গাল বেয়ে পড়তে পারে অবিরত
তাই আর চুপ থাকতে পারলাম না
–কি হয়েছে ইতি?
–কিছুনা
–তাহলে কথা বলছ না যে
–………..(চুপ)
–তুমি খাবে না ইতি?
–না, আমি একটু আগে খেয়েছি। আপনি খান..
–আজ এই প্রথম আমাকে রেখেই খেয়েছ
–ক্ষুদা লাগছিল তাই খেয়েছি
–আবার কম করে আমার সাথে কিছু খাও
–বললাম না খাব না, আপনি খান..
বলেই রুমের দিকে চলে গেল ইতি।
আমাকে রেখে খাওয়া তো দূরের কথা, এরকম ভাবে চড়া গলায়ও কথা বলেনা ও। যখন রাগ বেশী হয় তখন শুধু আপনি আপনি বলা শুরু করে।
কিন্তু আজকের এ অতিমাত্রার রাগের কারনটা বুঝতে পারছি না।
থ হয়ে বসে আছি ডাইনিং টেবিলটাই।
বারবার ইতির ফোনে কল আসছে আর সে বারবার কেটে দিচ্ছে বুঝতে পারছি।
আমার ফোনটাতেও কল আসল।
হাত ঘড়িতে তাকালাম, ১১.৩৭ মিনিট।
এত রাতে কল দেওয়ার মত কেউ নেই তবুও কল আসল।
ব্যাপারটা উন্মোচন করতে পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখি ইতির ছোট ভাই কল দিয়েছে।
তাহলে হয়তো এটার সাথেই ইতির কোন ঝগড়া হয়েছে।
এজন্য বারবার ফোন দিচ্ছে আর ইতি রিসিভ করছে না
যার দরুন আমাকে ফোন দিয়েছে।
রিসিভ করলাম।
লম্বা একটা সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল কেমন সেলিব্রেট করছি? আপু কল রিসিভ করছে না কেন?
আমি মাঝ সাগরে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম।
ওর দু প্রশ্নের একটারও উত্তর জানি না।
মাথাশূন্য প্রশ্ন করলাম,
–কিসের সেলিব্রেট?
–আপুর বার্থডের
আমি টপ করে ফোনটা রেখে দিলাম।
এই তাহলে মহারানীর রাগের আসল কাহিনী!
তার বার্থডে আর আমার একটুও মনে নেই।
ভাগ্যিস আমারে ঝাড়ু পিটা করে নাই,
অন্য কোন বউ হলে হয়তো ঠিকই এতক্ষন মাইরের অভাব হত না।
হুড়মুড় করে দৌড় দিলাম আর চিল্লাতে চিল্লাতে বললাম, ইতি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে যাও।
এত রাতে রাস্তায়ও রিক্সায় পরিমানটা সল্প, পাচ্ছিনা বললেই চলে।
দৌড়ানো শুরু করলাম মার্কেটের দিকে।
ফুল পট্টী যেতেই দেখি সব দোকান বন্ধ।
একটা দোকানের দু পাট নামিয়ে ফেলেছে, শেষ পাট নামানোর সময়ই দোকানে পৌছে গেলাম।
দোকানওয়ালা সব গুছিয়ে ফেলেছে তাই আর ফুল বেঁচতে রাজি নন
তবুও অনেক বুঝিয়ে কোন মত রাজি করলাম।
তারপর ছুঁট দিলাম কসমিটিক্সের দিকে।
একটা ছোট্ট দোকান খোলা।
সেখান থেকে লাল একগুচ্ছ চুড়ি আর এক পাতা লাল টিপ নিয়ে নিলাম।
এখন কেকটা কই পাব!
সব বন্ধ করে ফেলেছে তাই ভারী মন নিয়েই ছুঁট দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে।
কপাল ভাল থাকায় ফেরার পথে রিক্সা পেয়ে গেলাম।
রিক্সায় বসতেই দেখি ফোনটা কাঁপছে।
ইতি কল করেছে,
–কোথায় আপনি? ফোন রিসিভ করেন না কেন?
–এই তো ২ মিনিট আসছি
বলেই ফোনটা রেখে দিলাম। ফোনের স্কিনে ২৭ মিসডকল লেখা উঠে আছে। সাইলেন্ট ফোন তারপর দৌড়াদৌড়িতে বুঝতে পারিনি।
বাসায় পৌছে কলিংবেল চাপতেই আগের ন্যায় সাথেসাথেই দরজা খুলে গেল।
ইতির চোঁখ লাল টকটকে হয়ে আছে।
কারন বুঝতে বাকী রইল না যে সে এ অল্প সময়ে অনেক কেঁদেছে।
হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম তার সামনে তারপর ফুলের তোড়াটা সামনে এগিয়ে বললাম,
–হ্যাপি বার্থডে বউটা, শেষ বারের মত মাফ করা যায়না আমাকে?
চোঁখ থেকে অশ্রু গড়ছে তার মুখে মুচকি হাসি।
হাত থেকে ফুলগুচ্ছ নিয়েছে সে সাথে একরাশ ভালবাসা বাসি।
লাল চুড়ি, টিপ তার হাতে দিতেই মহাখুশি।
তার প্রিয় জিনিস এগুলা।
এবার দুহাত ফাঁকা আমার তাই দুই কান চেপে সরি এর রেডিও চালিয়ে দিলাম।
মেয়েটা বসে আমার পায়ে সালাম করছে, আমি তাকে বুকে তুলে নিলাম।
তার স্থান যে শুধুই এ বুকে।
বউটা বড় একটা হাফ ছেড়ে আমাকেও কশে জড়িয়ে ধরল।
এভাবেই অল্পতেই চুকে গেল রাগের ইতি।