শুকনো পাতা

শুকনো পাতা

প্রায় এক মাস থেকে আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ড মারিয়াকে খুন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি কোন কিছুতেই সফল হতে পারছিনা। অবশ্য কেনো খুন করতে চাচ্ছি সেটার পিছনেও একটা কারণ আছে। অনেকদিন আগের কথা….একদিন মারিয়া এসে বলল….

-রুবেল তোমাকে বাবা যেতে বলেছে।

–মানে?

-আমি বাবাকে আমাদের রিলেশনের কথা জানিয়েছি।

–উনি কি বলল?

-আগামীকাল সকাল জাস্ট ১০ টায় আমাদের বাসায় যেতে বলছে।

–আচ্ছা ঠিক আছে যাবো।

-আর হ্যা, ১০ টার এক মিনিটও যেনো কম বেশি নাহয়।

–মানে, কেনো?

-বাবা সময়কে খুব মূল্যায়ন করে । উনি অনিয়ম একদম পছন্দ করেননা।

–এত আজাইরা ক্যান তোমার বাপে?

-হোয়াট…

–আমি ঠিক ১০ টায় যাব।

-কথাটা মনে থাকে যেনো।

এই বলে মারিয়া চলে গেলো। তারপরের দিন আমি গভীর ঘুমে আছন্ন। ঠিক তখনি মোবাইলেরর রিংটোনে বেজে ওঠে। ফোন রিসিভ করে বললাম….

–হ্যালো হারামজাদা স্পিকিং….

-কুত্তা…

–কেডায় আফা, বকা দেন ক্যারে….?

-তুই খবিশ, তর চৌদ্দ গুষ্টি ইঁন্দুর।

ভালো করে লক্ষ করে দেখলাম এটা মারিয়ার নাম্বার। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১১ টা বাজে। খাইছেরে আমারে। মারিয়াতো ১০ টায় ওদের বাসায় যাইতে বলছিলো। তড়িঘড়ি করে এক দৌড়ে মারিয়াদের বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি মারিয়া সোফায় বসে আছে। তারপাশে ওর বাবা। কিন্তু শ্বশুর ফাদারের হাতে পাখি মারা বন্দুক। মারিয়া চট করেই বলে উঠলো….

–বাবা ও রুবেল। ওকে গুলি করো…

মারিয়ার বাবা একটুও দেরি করলো না। দৌঁড়ে আমার কাছে চলে আসলো। বন্দুক দিয়ে ব্যাক সাইডে দিলো একবারি। আচমকা বারি খেয়ে আমি সামনে উপুত হয়ে সোফায় পরলাম। তারপর বন্দুক সরাসরি আমার কপালে ঠেকালো। কোন কিছু চিন্তা না করে শ্বশুরের নাকে ঘুষি মেরে একদৌঁড় দিলাম। আমার পিছে শ্বশুরো দৌঁড়। সেদিন তিনি পাক্কা দু’ঘণ্টা আমাকে বন্দুক নিয়ে দৌঁড়ানি দিয়েছিলেন। যার কথা আমার মনে হলে এখন বুকটা ধুক করে উঠে। আর এই হলো কাহিনী।

অবশ্য মারিয়া বলেছিলো এটা নাকি ওদের প্লান করা ছিলো। আমাকে একটু ভয় দেখানো আরকি। আমিও কমনা। সরাসরি খুন করে ফেলব। এর প্রতিশোধ আমাকে নিতেই হবে। যেভাবেই হোক মারিয়াকে কষ্ট দিতেই হবে। মনে মনে ভাবলাম খুন না করে ব্রেকাপ করে কষ্ট দেই। যেই ভাবা সেই কাজ। মারিয়াকে ফোন দিলাম….

–হ্যালো মারিয়া….

-ওলে আমাল গুলুগুলু ইন্দুলটা, কি কও গো প্রানের চামচিকা।

–থাবড়া খাবি।

-রাগ করছো….

–আমি আর রিলেশন রাখতে চাইনা।

-মানে, কি বলছো এসব তুমি?

–হ্যা আমি ঠিকি বলছি।

-আমার অপরাধ কি রুবেল? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

–এসব বলে লাভ নাই।

-রুবেল তুমি এসব বলতে পারোনা…প্লিজ।

অনেক্ষণ জোরাজুরি করলাম। মারিয়া ছারার পাত্র না। ওর কোন দোষ নাই। ভাবলাম ওকে এমন পরীক্ষায় ফেলবো যাতে ব্রেকাপ করেত বাধ্য হয়। বললাম….

-তুমি আর আমাকে ভালোবাসো না। শুধু মুখে মুখে বলো।

–তাহলে আমার ভালোবাসার পরীক্ষা করতে চাইছো?

-হুমমমম।

–আচ্ছা বলো তুমি কি প্রমান চাও?

-…….(ভাবতেছি কি বলা যায়। শীতকালীন পরীক্ষা নিব)

–কি হলো বলো?

-আচ্ছা তুমি যদি কালকে সকাল ৫.৩০ টায় তোমাদের বাড়ির সামনের পুকুরে ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে পারো তাহলে ভাববো তুমি আমায় ভালোবাসো?

–হোয়াট…? কি বলছো এসব?

-আমি ঠিকই বলছি।

–দেখো রুবেল এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু।

-তাহলে ব্রেকাপ।

–আচ্ছা ঠিক আছে আগামীকাল সকাল সারে পাঁচটায় আমি পুকুরের ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করব।

বলেই মারিয়া ফোন কেঁটে দিলো। আমার বিশ্বাস এত সকালে মারিয়া গোসল করার সাহস পাবেনা। আর সেই সুযোগে আমি মারিয়াকে টুপ করে ছ্যাঁকা দিব। মারিয়া দেবদাসী হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে। কাগজ কুরাবে। একদিন হুট করে রাস্তায়য় আমার সাথে দেখা হলে আমি দুইই টাকার ললিপপ কিনে দিব। আহা! ভাবতেই দিলনে টুমুর টুমুর বাঁজায়া।

সকালে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছি। তখন মারিয়ার নাম্বার থেকে ফোন আসলো। এইতো ব্রেকাপের খবর পামু। খুশি মনে ফোন রিসিভ করলাম। মারিয়া বলল….

-কোথায় তুমি?
–ঘুমোচ্ছি।
-আমাদের বাসার এখানে আসো?
–কেনো?
-আমি গোসল করব।
–পারবে? এর চেয়ে বরং ব্রেকাপ করো।
-তুমি আসো, আজকে তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা দিব।

বলেই টুটটুট করে ফোন কেটে দিলো। মুহূর্তেই মুখটা ফ্যাঁকাসে হয়ে গেলো। আহারে কত সুন্দর করে প্লান করছিলাম মারিয়াকে ছ্যাঁকা দিব তা আর হলোনা। কি আর করার আরামের ঘুম বিসর্জন দিয়ে মারিয়াদের বাসার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি মারিয়া পাক্কা পানিতে সাঁতার কাঁটছে। মনডায় চায় পানিতে চুবিয়ে ধরি। মারিয়া বলল….

–আরো পরীক্ষা আছে তোমার।

আমি হেসে বললাম….

–এ পরীক্ষাতো সবাই পারে।

-আমি তোমায় ভালোবাসি এখন বিশ্বাস হয়?

–না।

-কেনো?

–কারণ আসল পরীক্ষা এখনও বাকি আছে।

-কি পরীক্ষা?

–রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলন্ত অবস্থায় তোমাকে এপার থেকে রাস্তারর ওপারে যেতে হবে।

-তোমার মাথা ঠিক আছে….সারাদিনি তো গাড়ি চলাচল করে।

–তাই আমারকি? তোমাকে ঠিক বিকেল তিনটায় এই পরীক্ষা দিতে হবে। (কারণ বিকেলে গাড়ী বেশি চলাচল করে। ওপারে যাওয়া অসম্ভব।)

মারিয়া কি যেন ভাবছে। ওর মুখটা কাচুমুচু হয়ে গেছে। তারমানে এবার প্লান কামে খাটছে। ব্রেকাপ হবেই নিশ্চিত। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়েয়ে মারিয়া বলল….

-আমি রাজি, তুমি বিকেলে রাস্তায় থেকো।

মারিয়া চলে গেলো। আমি মনে মনে বললাম….” যতই বাহাদুরি খাডাও, রাস্তার ওপারে যেতে পারবেনা সোনা। ” তারপর নাচতে নাচতে বাসায় চলে আসলাম। বিকেলে ঠিক তিনটায় রাস্তায় গেলাম। দেখি মারিয়া আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বলল….

–রুবেল এটা না করলে হয়না?

-ওকে ব্রেকাপ।

–আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

মারিয়া রাস্তার একটু কাছে গিয়েই থমকে দাঁড়ালো। মনে হয় যাবেনা। ব্রেকাপ নিশ্চিত। কিন্তু অদ্ভুত, মারিয়া রাস্তা দিয়ে দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে। এখনও মাঝখানে যায়নি। মারিয়া চোখ বুঝে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ একটি ট্রাক্টর আসা শুরু করলো। মারিয়া কাছে এসেই ব্রেক কসলো। তারপর ড্রাইভার রাগে গাড়ি থেকে নেমে মারিয়াকে ঝাড়ি দেওয়া শুরু করলো। মারিয়া ড্রাইভারকে কি বলল বুঝলাম না। কথা বলা শেষ হলে ড্রাইভার আমার দিকে রাগে তাকালো। আমি কিচ্ছু বুঝলাম না। ড্রাইভার আমার কাছে এসে শার্টের কলার ধরে ঠাসসসসস করে থাপ্পড় দিয়ে বলল….

-হারামজাদা ভালোবাসার পরীক্ষা মারাও। পরীক্ষা করবি কর…রাস্তায় কি? যা ভাগ…

গালে হাত দিয়ে বসে আছি। শালার যেখানে থাপ্পড় মারিয়ার খাওয়ার কথা সেখানে আমি খেলাম। অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পরতে হয়। তার প্রমাণ হাতে নাতে পেলাম। কি আর করার মারিয়া ওপারে ঠিকই গেলো। কিন্তু আমার মনের আগুন নিভছেনা। প্রতিশোধযে আমাকে নিতেই হবে।

শীতকালে যে এতটা বৃষ্টি হয় ভাবতে পারিনি। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছি। ভাবছি কি করা যায়। হঠাৎ মাথায় চট করে বুদ্ধি হলো। মারিয়া মেঘের গর্জন ভয় করে। আর আজকে প্রচণ্ড মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। এটাই ব্রেকাপের হাতিয়ার। মারিয়াকে ফোন দিয়ে বললাম…..

–তোমা সাথে কথা আছে, একটু কলেজ মাঠে আসো।

-কিন্তু এখনতো বৃষ্টি? মেঘ গর্জন করছে।

–তাতে কি?

-তুমি জানোনা..আমার মেঘের গর্জনে ভয় হয়।

–দেখো আমি এতকিছু বুঝিনা। আসো নইলে কিন্তু ব্রেকা…..

-আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়…

মারিয়া ফোন কেঁটে দিলো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস মারিয়া আসবেনা। কারণ সে মেঘের গর্জন এতটাই ভয় পায় যে বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় লেপের তলে শুয়ে থাকে। টুং করে মোবাইলে শব্দ হলো। মারিয়ার মেসেজ…”তুমি মাঠে দাড়াও আমি আসছি।” আমি হতবাক হয়ে গেলাম। মেয়ে বলে কি! যে মেয়ে ভয় কে জয় করে আমার সাথে দেখা করতে আসছে সে মেয়ে আমাকে অনেক ভালোবাসে। নিজেকে কন্ট্রোল করলাম। আবেগী হলাম না। ছাতা নিয়ে কলেজে মাঠে গেলাম। কলেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। দেখি অপর পাশে মারিয়া আসছে। অনেক দুরে সে..বৃষ্টিরর কারণে আবছায়া দেখাচ্ছে। হঠাৎ মেঘ গর্জে উঠলো। মারিয়ার হাত থেকে ছাতা উড়ে গেলো। আমি বললাম….

–আল্লাহ প্লিজ ঠাডা ফালাও। আল্লাহ খোদা প্লিজ প্লিজ একটা ঠাডা ফালাও।

নাহহহ কোন শব্দ হচ্ছেনা। শালার ঠাডা পরেনা ক্যান।মারিয়া আস্তে আস্তে চলে আসছে। আমি জোরে জোরে লাফিয়ে বলা শুরু করলাম….

–হে আল্লাহ, প্লিজ একটা ঠাডা ফালাও…মারিয়ার উপরে ফালাও। প্লিজ আল্লাহ খোদা মাত্র একটা ঠাডা…মারিয়ার উপরে ফালাও। প্লিজ একটা ঠাডা ফালাও…..

হঠাৎ মেঘ আস্তে করে গর্জে উঠলো। তারপর গুরুম গরুম টুটুরুউ ঠাসসসসসসসসসস করে একটা শব্দ হলো। আমি আস্তে করে বারান্দায় পরে গেলাম। তারপর আর কিচ্ছু মনে নেই।

জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। মারিয়া আমার পাশে বসে কান্না করছে। চোখে ফুলে গেছে। গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে। আমার চোখ খোলা দেখে মারিয়া আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বলল….

-তোমার কিচ্ছু হবেনা রুবেল। আমি আছি তোমার পাশে। তোমাকে কোথাও হারাতে দেবনা।
বলেই হু হু করে কেঁদে দিলো। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। অনেক বেশি অন্যায় করে ফেলছি। আর না…এবার একটু ভালোবাসা দরকার।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত