—এইবার ছেলেটাকে কিছু করতে বলো। আমি আর পারবো না ওকে ঘরে বসাই বসাই খাওয়াতে(জাবেদ মিয়া)
—দেখো ও ত চাকরি খুজছে, কিন্তু (রত্না বেগম)
–কিন্তু কি? পাচ্ছে না তাই ত? (জাবেদ মিয়া)
–রত্না বেগম চুপ করে রইলেন।
–পাবেও না জীবনে চাকরি ও।(জাবেদ মিয়া)
–ক, কি বলো তুমি? এভাবে বলে নাগো। বাপ মায়ের দোয়া বদদোয়া সন্তানের লেগে যায় (ভয়ের ছাপ স্পষ্ট)
–হা হা হা, দোয়া বদদোয়া লাগলে, এতদিন যে দোয়া করছি তা লেগে যেতো বুঝলা… আল্লাহ তার বান্দাকে বসে থাকতে বলেনি তোমার ছেলের মতো। বলেছে বান্দাকে রিজিকের সন্ধান করতে আর রিজিক মিলায়ে দেউয়ার মালিক তিনি। বুঝলা,… (জাবেদ)
রত্না বেগম হ্যা সূচক মাথা নাড়লো।
শোনো, কাজ কখনো একা হেঁটে হেঁটে এসে বলে না যে দেখো আমি কাজ আমায় করো। কাজের সন্ধান করতে হই। তোমার সু-পুত্র ত বাংলাদেশ পাস করছে, তাই তিনি আমরা যেই কাজ করি উনি সেটা করবেন না।(জাবেদ মিয়া)
–আ, আস্তে বলো গো, ছেলেটা বাসায় আছে ত(রত্না বেগম)
—-ত, তাতে আমার কি??(জাবেদ মিয়া)
–ইয়ে না মানে তোমার ত কিছু না, মানে(রত্না বেগম)
–শোনো রত্না। আজ ২৩, ২৪ টা বছর কাজ করে খাওয়াচ্ছি। তোমার ছেলে ত শিক্ষিত, ওর লজ্যা করে না বাবার থেকে হাত পেতে টাকা নিতে??
—কি বলো এসব?? ও ত তোমারি সন্তান, আমাদের ত আর কোন সন্তান নেই গো।
–রত্না বুঝলা না বাহিরের জগৎ কতটা কঠিন। ১৭ বছরে যখন লেখাপড়া ছেড়ে বাবা মায়ের কথা উপেক্ষা করে পা বাড়ালাম এই জগতে, তখন ত কিছু মনে হই নি। পড়া আমার ভাল্লাগতো না, কাজ দেখে তাকায় থাকতাম আর করতে চাইতাম। বাবা বলতো, বাবা জাবেদ, তুমি পড়াশোনা করো, কাজ তোমাকে খুজতে হবে না, কাজ ই তোমাকে খুজবে।
আমি মনে করতাম, কাজ কি মানুষ নাকি যে আমায় খুজবে?? আমিই কাজকে খুজবো।
হ্যা, সেই খোজাটাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো।
রোড লঞ্চ ডুবিতে ত পন্মা, বাবা, মা ২ জনকেই ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। বয়স আমার তখন ২১।
অনেক আত্মীয়স্বজন ছিলো আমার, যারা অনেক ভালো পোষ্টে চাকরি করতো। সবার কাছে গিয়ে একটা চাকরি চাইতাম। কেউ দূর দূর করে তারাই দিতো, ত কেউ বলতো, দাড়োয়ানের চাকরি করবা??
আমি তখন তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
আমার কাকা ছিলো একটা কোম্পানির ম্যানেজার। তার কাছে গিয়ে বলেছিলাম, কাকু আমায় একটা চাকরি দাও। কিছু করতে চাই
কাকু বলেছিলো, দেখ জাবেদ, তুই ত পড়াশোনা করিস নি। তোকে আমি কেমনে চাকরি দেবো ক। আচ্ছা শোন আমার বাসায় বাজার সদায় করার লোক নাই, তুই করবি?? ৫০০ টাকা দেবো সপ্তাহে। খাওয়া ফ্রি….
জাবেদ সাহেবের চোখের পানি আঁচল দিয়ে মুছে দিলো রত্না বেগম।
—বয়স ত আর কম হলো নাগো, নিজে ত চলেই যাবো কাজ করতে করতেই। কিন্তু যেদিন চোখ টা আমার বুজবে, ওইদিন ও কি করবে বলো??(চোখের পানি গাল বেয়ে পড়ছে)
–চুপ করো গো, সব ঠিক হয়ে যাবে(রত্না বেগম)
রুম থেকে সবগুলো কথাই শোনে জয়। ভেতরটাতে কষ্ট হচ্ছে ওর। কিন্তু তার চেয়েও বেশি রাগ হচ্ছে ওর নিজের উপর। এতটা খারাপ মানুষ দুনিয়াতে এখনও আছে?? যে বাবা মায়ের চোখের জলের কারন হই। ফোনটা হাত থেকে বেডের উপর ফেলে দিলো। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে, ফাইলটা হাতে, আর ফোনটা পকেটে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
আসার সময় আম্মা অনেকবার নাস্তা করে আসতে বলেছে, কিন্তু জয় সেইদিকে কান দেয়া ত দূরের কথা, হনহন করে হেঁটে চলে এসেছে।
আজ একসাথে ২ই টা ইন্টারভিউ পড়েছে, একটা প্রাইভেট কোম্পানির প্রোডাক্ট ম্যানেজারের পদে আরেকটা
একটা কলেজের প্রভাষকের পদে।
১মে যাবে কলেজের প্রভাষকের ইন্টারভিউ টা দিতে,
সালাম দিয়ে প্রবেশ করলো রুমে, অনেকগুলো প্রশ্ন করলো যার সবগুলো উত্তর ও ঠিক ঠিক ভাবেই দিতে পারলো। মনে মনে খুশি লাগছে ওর, স্যারদের মন দেখে জয় ধরেই নিয়েছে ওর চাকরিটা হয়ে যাবে।
জয়, আমাদের ফি টা ৩০০০০০ লাখে আছে এখন তুমি কত দিতে পারবা?? কম হলে ৫০০০ কম দিলেও ক্ষতি নাই, তোমার মতো ব্রিলিয়ান্ট একটা টিচার পাবো আমরা এটাই ত অনেক কিছু(বোর্ড চেয়ারম্যান)
জয়ের মুখের হাসি মুখেতেই মিলে যায়। মুখ থেকে একটা শব্দ বেরোয় মানে??
কিছুসময় পরে রাগি অবস্থায় জয়কে বের হতে দেখা যায়। দূর থেকে নিরব(জয়ের সাথে পড়ে) জয়কে ওভাবে বেরোতে দেখে, তাড়াতাড়ি বাইক ঘোরায়।
বাইকটা জয়ের সামনে দাড় করে,
কিরে জয়, কি হয়েছে?? এভাবে কোথায় যাস??(নিরব)
জয় নিরবকে দেখে আরো জ্বলে যায়, কারন নিরব টাও ওদের মতোই।
নিরবকে পাশ করে যাচ্ছিলো জয়,
নিরব জয়ের হাত ধরে, এত দেমাক কিসের রে তোর??(নিরব)
জয় হাত ছাড়িয়ে, তোকে সেই উত্তর দিতে বাধ্য না আমি।
কথাটা বলেই জয় চলে আসলো।
নিরব রাগে ফুঁসতে থাকলো।
খিদার জালায় পেট জ্বলছে জয়ের। হাতে ফাইল, পেট ফাকা, মানিব্যাগে যেই কয়েকটা টাকা আছে সেটাও যত্নে রেখেছে ২ নাম্বার ইন্টারভিউ টা দিতে যেতে হবে জন্য।
কিন্তু খিদার জন্য ত চোখে ও আধার দেখছে। রাত্রে রাগ হইছিলো মিহির উপর যার জন্য না খেয়েই ঘুমাইছিলো,
সারাক্ষণ শুধু একি কথা, বিয়া কবে করবা?? আমায় বিয়ে করো।
শালার নিজের থাকার জায়গা নাই ওরে নিয়ে আসি আমি। এতটা পরিমানে রাগ হইছিলো যে বলে দিয়েছি, তুমি যেখানে ইচ্ছা যাকে ইচ্ছা বিয়ে করে নে ।
সকালেও নিজের উপর রাগ করে কিছু না খেয়েই বেরোয়ে আসছি।
জ্ঞানী মানুষ রা কয়, যা করতে চাও করো কিন্তু খাবারের উপর রাগ করো না। তাতে তোমারি লস।
কথাটা যে একদম খাটি, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে জয়।
ফোনটা বের করে ফোনবুক চেক করলো জয়, মিহির নাম্বারে টাচ করে কল দেউয়ার চেষ্টা করলো। মেয়েটাকে একটু বেশিই বলে ফেলেছি কাল। সরি বলতে হবে নইতো,
কল করার জন্য আপনার পর্যাপ্ত ব্যালেন্স নেই। ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নিতে….
ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স টুকুই ত ছিলো। আমাকে ত আর ২য় বার ব্যালেন্স ধার দেবে না যতক্ষণ না সেটা আগে পরিশোধ করবো।
ফোন টা পকেটে রেখে আবার হাটতে লাগলো,
রুমেতে অনেকে বসে আছে, সবগুলোর মুখের ভাবটাই রাগী টাইপের। জয় কেমন যেনো আনইজি ফিল করছিলো।
আপনার নাম??(প্রশ্নকর্তা)
–মোঃ জয় আহমেদ…
—আপনার বাবার নাম??
—মোঃ জাবেদ মিয়া
—কি করেন উনি??
অদ্ভুত প্রশ্ন, উনি কি করেন সেটা জানতে চাইবে কেন?? আমি কি করি সেটা জানতে চান। কথাটা মনে মনে বললো জয়, তারপর সম্মুখে বললো,
—কাজ করেন।(জয়)
–কি কাজ??
—স্যার, চাকরি ত আমি করবো, আমার বাবা কি করেন সেটা জেনে কি করবেন??(জয়)
—এখানে প্রশ্ন করার কাজ আমাদের, আপনার না, উত্তর দেয়াটা আপনার কাজ।
—আমার বাবা একজন জোকার। উনি জোকারের কাজ করেন।(জয়)
—সবার চোখের উপর ভ্রুযুগল কুচকালো।
ইন্টারভিউ রুম থেকে অনেক্ষণ আগেই বেরোইছে।
সার্টিফিকেট গুলো ছিড়তে ইচ্ছা করছে ওর। হাটার শক্তিটুকু নেই। রাস্তার পাশেই বসে পড়লো, মাথা নিচু করে আছে। চোখ থেকে আপনাআপনি জল পড়ছে।
বাইকের আওয়াজে, সামনে তাকালো জয়,
কিরে, এবারো হলো না??(নিরব বললো কথাটা)
জয়ের রাগে চোখ লাল হয়ে আছে, উঠে গিয়ে নিরবকে মারতে গিয়ে ও নিজেই পড়ে যায়।
জ্ঞান ফিরলে ও নিজেকে একটা রুমে আবিষ্কার করে। মাথাতে ব্যাথায় আহ বলে উঠলো। রুমটা অনেক বড়। পুরো রুমটা একবার চোখ বুলিয়ে, পাশেতে নিরবের ছবি দেখতে পেয়ে ওর রাগ হয়ে গেলো। তারমানে ও নিরবের ঘরে।
তাড়াতাড়ি করে উঠে, ফোন, ফাইল নিয়ে বেরোয়ে আসে।
ইউনিভার্সিটি লাইফটাকে আমার জাহান্নাম বানাইতে নিরবের ভূমিকা ছিলো সব থেকে বেশি। প্রতি পদে পদে হেনস্থা করতে থাকতো। বাজে কথা বলা যেনো প্রতিদিনের রুটিন ছিলো, প্রতিদিন আমাকে নিয়েই কথা বলতো কিন্তু যেদিন আমার বাবাকে নিয়ে হাসি তামাসা করেছিলো, ওইদিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি, ইউনিভার্সিটির প্রতিটা স্টুডেন্ট এর সামনে ওকে থাপ্পড় মেরে বলেছিলাম, আমার বাবা, আমারি। যেমন হোক না কেনো। তবুও আমার বাবা। আমাকে নিয়ে যা বলার বলবি কিন্তু আমার বাবাকে নিয়ে ভবিষ্যতে আর কিছু বললে, তোকে আমি খুন করে ফেলবো।
চোখ থেকে পানি ঝড়ছে জয়ের, অনেকটা রাত ই হয়ে গিছে। অমাবস্যায় পুরো পথ কালো অন্ধকারে ছেয়ে গিছে। অনেকটা দূরে দূরে ল্যামপোষ্টের আলো দেখা যায়।
জয় বসে পড়লো ফাকা একটা রাস্তার মাঝখানে। এই রাস্তাটা দিয়ে এখন রাতে আর ততটা গাড়ি আসে না।
উপরের দিকে তাকিয়ে, আমাকে আমার বাবার সম্মানটুকু বাঁচানোর জন্য একটু সাহায্য করো,
চাইলেই ত যেকোন কাজ আমি করতে পারি। হোক সেটা ইট জুগানোর, বা জোকারের। কিন্তু আমি চাই না আমার বাবার কষ্ট করা টাকায় পড়াশোনা টুকুকে এভাবে অপমানিত করতে। আমায় একটু সাহায্য করো মালিক।
রাত প্রায় ১০ টা ছুঁই ছুঁই, শীতের রাত তাই অল্পতেই বেশি ঘোর কুয়াশা থাকে পুরো শহর জুরে।
কাঁপতে কাঁপতে রুমে ঢুকে জয়।
আর ঘরে ঢুকেই দেখে মায়ের চোখেতে পানি।
আম্মা কাঁদছো কেনো??এই দেখো আমিতো আসছি,( জয় মনে করছে ওর দেরিতে ফেরার জন্য মা কান্না করছে)
বাবা জয় তোর বাবার শরীর টা ভালো নারে। কেমন যেনো করছে(রত্না বেগম)
–ক, কি বলো তুমি??
জয়, ছুটে রুমে যায়। গিয়ে দেখে জাবেদ মিয়া কাপছে।
বাবাকে জড়িয়ে ধরে,
ব, বাবা তোমার কি হইছে?? ও বাবা, বাবা
জয়ের চোখে পানি। এত রাতে কোথাই যাবে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না।
ফোন দিলো রিপন কে, ওর সব থেকে ভালো বন্ধু।
—হ্যালো রিপন,
—ঘুম ঘুম কন্ঠে, হ্যা বল
—দস্ত, একটু আসবি??? আমার বাবার শরীর টা ভালো নারে।
—দস্ত আমার পায়ে ত ব্যাথা পাইছি রে যার জন্য স্লিপিং পিল খেয়েছি। চোখ টা খুলতেও পারছি না।
–শালা তুই সারাজীবনের জন্য চোখ বন্ধ করে থাক।
রাগ করে কেটে দিলো জয়। কারন, রাস্তা দিয়ে আসার পথে, রিপন দের বাড়িটাই আগে পরে। আর রিপনের রুমটা একদম রাস্তার সাইডে। জয় আসার পথে দেখে, রিপন কার সাথে যেনো কথা বলছে আর হাসছে, জয়ের আসা ৫ মিনিটো হইনি আর রিপন এখন বলে যে ও নাকি স্লিপিং পিল খাইছে।
আরো কয়েকটা ফ্রেন্ড কে ফোন দিলো যাদের কেউ ই আসলো না।
কোন উপায়ান্তর না পেয়ে একাই কোনমতো টেনে বাবাকে কোলে উঠায়ে বাহিরে নিয়ে আসে।
বাসার পাশেই সিএনজি চালাই ছামাদ চাচাকে ডেকে রাত্রেই হাসপাতালে নিয়ে আসে।
বাবার মাথার সাইডে একটা টিইমার ছিলো। অনেকদিন বলেছিলাম অপারেশন করে নাও। বাবা বলতো করবো পরে। এই পরে পরে বলেই আজ এই অবস্থা। ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখলো যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন করতে হবে।
অপারেশন এর নাম শুনেই জয় ভয় পেয়ে যায়, কারন অপারেশন ত আর মাগনা কেউ করে দিবে না।
পরের সারাটাদিন ভেবে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে ও সেই সিদ্ধান্ত টাই নিলো যেটা ও কখনো করতে চাইনি।
সার্কাসে আজ অনেক মানুষের ভীড়। নিরব, তপন, আর সবুজ সেই কখন থেকে শুধু একজন কেই খুজছে, কিন্তু কই সেই রঙের মানুষ টা??
কই রে??(নিরব)
বুঝতে পারছি নারে। কিছু হলো নাতো??(তপন)
নিরব তপন কে থাপ্পড় দিতে গিয়েও আটকে গেলো যখন দেখলো জোকারের পোশাকে মানুষ টা এসেছে।
অনেক খেলা দেখালো জোকার টা। কিন্তু নিরবের একটা খেলা দেখেও ভালো লাগেনি। বরং বিরক্ত লেগেছে। এ, এটা উনি হতে পারে না। (নিরব)
মানে? (সবুজ)
মানে এটা জাবেদ আংকেল না(নিরব)
তপন আর সবুজ নিজেরাও বুঝছে, তাই কাছে গিয়ে জোকারের পোশাকে আবৃত মানুষ টাকে থামিয়ে,
এই কে আপনি? (তপন)
জোকার টি চুপ করে আছে।
আরো কিছুক্ষণ জিগানোর পরেও যখন উত্তর এলো না। তখন নিরব রেগে গিয়ে জোকারের পোশাক টা টেনে ছিড়ে ফেলে,
জ, জয়…. (সবুজ আর তপন একসাথে বলে উঠে)
নিরব পেছনে সড়ে আসে।
কি হলো?/ এটাই দেখতে চাইছিলি না?? দেখ। দেখ আমি জয়। আমার বাবার ছেলে আমি। তোরা এখানে এসেও আমার বাবাটাকে মজার বস্তুতে পরিনত করে দিতিস আমি ত জানতামি নারে। আচ্ছা নিরব একটা কথা বলবি?? জোকার রা মানুষ না?? বল, মানুষ না আমরা।
নিরব চুপ করে আছে, চোখ নিচু করে আছে।
জয় কোথাও গেলো দৌড়ে। তারপর আবার এসে, ১মে নিরবের হাতে ব্লেড বসালো তারপর নিজের হাতে বসালো।
মুহুর্তের মধ্যে ২ জনের রক্ত হাত বয়ে পড়লো ফ্লোরে।
নিরব চুপ করে আছে।
সবুজ আর তপন কিছুটা রেগে গিছে,
কি করলি এটা তুই??(সবুজ)
জয় নিরবের দিকে তাকিয়ে, দেখতো পার্থক্য খুজে পাস কিনা??
নিরবের কিছু বলার নেই।
আরে, আমরা সবাই ত একজনের সৃষ্টি, শুধু তুই বড় ঘরে আর আমি এই জোকারের ঘরেতে জন্ম নিয়েছি। এটা আমার দোষ?? বল
আমার বাবা আমায় অনেক কষ্ট করে মানুষ করছে রে। ওই মানুষ টাকে একটু সম্মান দিবো জন্য ভালো একটা চাকরি খুজে বেরাচ্ছি আজ ১ বছর। কিন্তু সেই সময়টা হইতো আমার আর হলো না। মানুষ টা আজ হাসপাতালে পড়ে আছে, টাকা নেই আমার কাছে। আমি এতটা খারাপ একটা ছেলে যার চাহিদা তার বাবা ২৪ টা বছর ধরে পুরন করেছে কিন্তু আজ আমি তার জন্য এটুকু করতে পারছি না।
জয় বসে পড়ে ফ্লোরে,
নিরব বেরোয়ে যায় ওখান থেকে।
তপন ও পেছনে যায় নিরবের।
সবুজ জয়ের কাধে হাত দিয়ে,
তুই নিরবকে কি বললি এগুলো?? (সবুজ)
জয় রাগি লুকে সবুজের দিকে তাকায়, ভুল বলেছি কিছু??(জয়)
সবুজ হাসতে থাকে, আরে নাহ। তুই ভুল বলবি কেন। ভুল ত আমরা করেছি,
যেই মানুষ টা আজ ২ বছর যাবত এখানে প্রতিটা দিন আসে একমাত্র তোর বাবাকে দেখার জন্য।
তাকে আজ তুই এগুলো বললি।
তুই যেদিন ওকে চড় দিয়েছিলি,, বাবার প্রতি তোর ভালোবাসা দেখে, ওইদিন থেকে তোর বাবাকে দেখতে আসতো।
তোর বাবা বেতন পেতো ৫০০০ টাকা আর তোর বাবার বেতন বাড়ায়ে ১৫০০০ করেছিলো এই নিরব।
নিজের বাবাকে সবথেকে ভালোবাসতো নিরব। এক্সিডেন্টে ওর বাবা মা ২ জনি মারা যায় যখন ওর বয়স ১০ বছর।(সবুজ)
তোর বাবাকে ও নিজের বাবার মতোই ভালোবাসে রে, আর তাকে আজ তুই এমনভাবে বলতে পারলি?? ছিহ…
জয় হতবম্বের মতো বসে রইলো। কি বললো সবুজ??
জোকারের পোশাকেই জয় হাসপাতালে এসেছে। অনেকে ওকে দেখে হাসছে, কেবিনের পাশে যেতেই দেখে, ওখানে নিরবের কাধে মাথা রেখে আছে আম্মা। ও-টি র লাইট অন।তারমানে বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জয় দৌড়ে, নিরবের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
ভাই আমায় ক্ষমা করে দে,(জয়)
নিরব সামান্য হেসে, কিসের ক্ষমা?? যা বলার ঠিকি ত বলেছিস
আমায় ক্ষমা করনা ভাই, প্লিজ(জয়)
নিরব জয়কে বুকে টেনে নেয়। একটা কারনে ক্ষমা করবো,
বলনা কি কারন?(জয়)
তোর বাবাকে বাবা বলার সুযোগ দিবি আমায়??(নিরব)
জয় নিরবের হাত শক্ত করে ধরে, মৃত্যু আগ পর্যন্ত সেই সুযোগ টা পেলি ভাই।(জয়)
তপন আর সবুজ আনন্দে কেঁদে দেয়।
১৫ বছর পরে আজ নিরবের মুখে হাসি ফুঁটেছে, হারানো কিছু ফিরে পাওয়ার আনন্দে।