ডাক্তার বউ

ডাক্তার বউ

রিমু ইচ্ছে করেই একটি বালিশ লুকিয়ে রাখছে।রাতে এসে দেখি একটি বালিশ নাই। রিমু ঘুমাইছো নাকি?(ইভু) কোন রেসপন্স না পেয়ে বারান্দায় চলে গেলাম।একটি সিগারেট টেনে সাবান দিয়ে রুমে এসে দেখি রিমু বসে আছে। কি ব্যাপার বাথরুমে কেন গিয়েছিলে? বাথরুমে কি করে মানুষ? তা হাত মুখ ভেজা কেন? ঘুম কাটানোর জন্য ধুয়ে আসলাম।আর বালিশ আরেকটি কই? জানি না।হারাইছে মনেহয়।আপনি ঘুমান। রিমু বালিশটা এগিয়ে দিয়ে কথাটি বলে।ইভু ছোট বালিশটার এক পাশে মাথা রেখে বলে,”রিমু তুমিও বালিশের ঐপাশে মাথা রাখো।”রিমু কিছু না বলে বালিশের ঐ পাশে মাথা রেখে ইভুর দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে।রিমু শ্বাসটা কাঁধে শুরশুরি দিচ্ছে।রিমুর শ্বাসটা বেশ গরম।

ইভু:- রিমু আমার বুকের উপর দিয়ে হাত রাখো।

রিমু:- হুমম।

ইভু:- নূর যখন ছোট ছিল তখন আমার বুকের উপর দিয়ে হাত রেখে ঘুমাইতো।

রিমু:- আমি কি নূরের মতো ছোট?আপনার হাত আমার বুকের উপর রাখেন।

ইভু:- হি হি হি ঠিক আছে। একটু পর রিমু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আপনার এই ঠোঁটটা আল্লাহ্ কেন বানাইছে?”

ইভু:- খাবার খাওয়ার জন্য।

রিমু:- আর কিসের জন্য?

ইভু:- কথা বলার জন্য।

রিমু:- আর কিসের জন্য?

ইভু:- চিংগুরেট(সিগারেট) খাওয়ার জন্য।

রিমু:- চিংগুরেট কি?

ইভু:- এটাও এক ধরনের খাবার।

রিমু:- আরেকটি কাজের জন্য ঠোঁট বানানো হইছে?

ইভু:- কি সেটা?

রিমু:- চুমু দেওয়ার জন্য।

ইভু:- এখন ঘুমাও।তোমারও তো ঠোঁট আছে।

রিমু:- হুমম।।ওওওওওওওওওওমা—–।

ইভু:- মনেহল ছোট মশা কামড় দিলো।হি হি হি

রিমু:- তাহলে আপনি দেন।

ইভু:- পাওনা রইলে।ঘুমাইলাম। সকালে রিমুর ডাকাডাকিতে ঘুমটা ভাঙ্গে।গোসলটা করে খাবারটা খেয়ে দরজা পর্যন্ত এসেছি।

রিমু:- কোথায় যান?

ইভু:- ব্রীজে যাবো।ছোটকালের বন্ধু আইতেছে দেখা করতে হবে।

রিমু:- একটু দাঁড়ান।আমাকে হসপিটালে নামিয়ে দিয়ে যান।

ইভু:- ওকে।

ইভু ও রিমু রিক্সায়।

ইভু:- ১০০০ টাকা আছে তোমার কাছে?

রিমু:- দাঁড়ান চ্যাক দিয়ে দিচ্ছি।

ইভু:- এই চলন্ত রিক্সায় দাঁড়াবো কেমনে?

রিমু:- অপেক্ষা করতে বলছি।

ইভু:- ওহ্। রিমু হসপিটালের গেইটে নেমে যায়। দোকান থেকে একটি সিগারেট ননিয়ে আবার রিক্সায় উঠে।রিক্সা চালক চালক বললো,”মামা আপনার বউ নাকি?”

ইভু:- হুমম।

চালক:- কি করেন?

ইভু:- চিকিৎসক।

চালক:- আপনার বউ চিকিৎসক, কিন্তু আপনি সিগারেট টানেন কিছু বলে না?

ইভু:- হি হি হি জানলে তো বলবে।চুরি করে টানি।

চালক:- হা হা হা।

ইভু:- এখানে থামেন। ভাড়াটা দিয়ে ব্রীজের দিকে যাচ্ছে ইভু।ঐতো দাঁড়িয়ে আছে আমার বন্ধু রনক।

ইভু:- রনইক্কা ভাবী কেমন আছে?

রনক:- আগে আমার কথা না জিজ্ঞেস করে আমার বউয়ের কথা জিজ্ঞেস করলি?এটা তোদের বদ অভ্যাস।

ইভু:- আহা রাগিস কেন?তুই ভালো বলেই তো এসেছিস।

রনক:- আসলে তোরা মানুষ হইলি না।তুই একটা,আর মৃনাল একটা।আগে জিগাবে আমার বউয়ের কথা।

ইভু:- হা হা হা,ভাবীর সাথে দেবরের ভালোবাসা বেশি।

রনক:- চল স্টলে যাই।তোর ভাবী আবার এসে পড়লে সিগারেট টানতে পারমু না।

ইভু:- আহ্ এই সমস্যায় তুইও ভুক্তভোগী।

রনক:- হি হি হি,দোস্ত তুইও আমার মত।চল মনের সুখে সিগারেট টানি।

ইভু:- চল। ব্রীজের পাশে টং দোকানে চা সিগারেট চলছে।রনকের ফোনে কল আসে।বুঝলাম রনকের বউ এসেছে।দুজনে দুটো চকলেট মুখে দিয়ে গেলাম।রনকের বউ ব্যাংকার।নাম তুলি।

রনক:- তুলি আমার বন্ধু ইভু।

তুলি:- ভালো আছেন ভাইয়া।

ইভু:- হুম,আপনি?

তুলি:- ভালো।ভাবী কেমন আছে?

ইভু:- জ্বি ভালো।

তুলি:- ভাবী কি বাসায়?

ইভু:- না,হসপিটালে। তুলি নাকটা টান টান করে ভ্রু কুঁচকে রনক কে কি যেন বলে।মনেহয় সিগারেটের গন্ধ পেয়েছে।আজ বাসায় গিয়ে রনক কে হিসেব করা বুঝাবে।আহ্ আমার কোন চিন্তা নাই,রিমু জানবে না।

ইভু:- রনক ভাবীকে নিয়ে চল আমার এখানে।

তুলি:- না ভাই অন্যদিন যাবো নি।

ইভু:- পরেরটা পরে।আজকে চলেন।

তুলি:- ভাই অফিসে ঝামেলা আছে।

ইভু:- এহ্ আমরাও তো চাকরি করি।ঝামেলা আমাদের ও আছে।চলেন তো। খুব জোর করে রনক আর তুলি কে নিয়ে এলাম।বিকালে রিমু এসে ওদের দেখে খুব খুশি হয়।যাক আজ আপাতত রনক বেঁচে গেলো তুলির হাত থেকে।রাতে খাওয়ার পর বেশ আড্ডার পর এবার ঘুমাতে হবে।

ইভু:- রিমু আর তুলি ভাবী তোমরা দুই বইন একত্রে ঘুমাও।

রনক:- আর আমরা দুই ভাই একত্রে ঘুমাই।

তুলি:- শতান যদি কবজের বাহিরে থাকে তাহলে তো ঝামেলা হবে।

রিমু:- বুঝলাম না ঠিক তুলি।

তুলি:- সকালে জানতে পারবে। তুলি ও রিমু ঘুমাইছে মনেহয়।রনক বলে,”দোস্ত সিগারেট আছে?খুব নেশা জেগেছে।”

ইভু:- দরজাটা বন্ধ কর। দরজা বন্ধ করে মনের সুখে সিগারেট টানতেছি আমরা।সিগারেট শেষার্ধে তখনি দরজায় কড়া পড়ছে।

রনক:- দোস্ত আমি শেষ।আজ ধরা খেলাম হাতে নাতে।

ইভু:- নিচের ড্রয়ারে বডি স্প্রে আছে।দ্রুত ছেড়ে দে।প্রয়োজনে পুরোটা দে।

রনক:- তুই ফ্যান চালু করে দে।

জানলা খুলে দিলাম,রনক বডি স্প্রে ছড়াচ্ছে,উপরে ফ্যান চলতেছে। রনক রনক ইভু ভাইয়া দরজাটা খুলেন তো একটু?(তুলি) দোস্ত তোর বউ আইছে।তুই ঘুমের ভান ধরে শুয়ে পড়।আমি দেখ কি করি।(ইভু) আইচ্ছা।(রনক) ইভু ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে দরজা খুলে।ঘুম কন্ঠে ইভু বলে,”কে?” ভাইয়া আমি।আর রনক কি ঘুমিয়েছে?(তুলি) হুমম ঘুমিয়েছে।(ইভু) ভাইয়া বডি স্প্রে’র গন্ধ পাচ্ছি।এত রাতে কে বডি স্প্রে।(তুলি) রনক বললো বডি স্প্রে দিলে নাকি রুম ঠান্ডা থাকে, তাই দিলাম।(ইভু) আবার ফ্যান চলছে,তবুও গরম লাগছে আপনাদের।(তুলি) হুমম।গরম বেশি পড়েছে তো।(ইভু) তুলি দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ,ইভুও দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ।চুপচাপ অবস্থা বুঝে রনক এক লাফে উঠে বসে,”ইভুরে বউ নামক ভাইরাসটা চলে গেছে।আরেকটি সিগারেট দে দোস্ত।” ইভু একটু সরে দাঁড়ায়,এখন তুলিকে দেখতে পায় রনক।

রনক:- তুলি তুমি যাও নি।আসলে মশার কামড়ে ঘুমটা ভেঙ্গেছে। তুলি চোখ বড় বড় করে বলে,”ঘুমাও তুমি।সকালেই বাসায় যেতে হবে।” তুলি চলে যায়। রনক বড় হাক ছেড়ে বলে,”আহ্ গেলো।” মুচকি হাসিতে ইভু বলে,”তুই পরে উঠলেই হইতো।” রনক দাঁড়িয়ে বলে,”ভয় পাই নাকি?পরের ব্যাপার পরে হবে।তুই সিগারেট দে।” দুজনে রাতে আড্ডার ফাকে সেই ফেলে যাওয়া আবাসিক ছাত্রাবাসের কথা মনেহল।আর সিগারেট একের পর এক চলছে।ঘুমাতে হবে,কাল সকালে উঠতে হবে। সকালে দরজায় নক চলতেছে।এবার রনক দরজাটা খুলে।

রিমু:- ভাইয়া আপনারা উঠেন।

রনক:- আপনি যান,আমরা আসতেছি।

চোখ বড় বড় করে বলে:- একি ভাইয়া রাতে আপনারা সিগারেট টেনেছেন।কয়লার স্তুপ হয়ে আছে।

রনক:- না মানে।

তুলি:- আগেই বলেছিলাম দুই শয়তান একসাথে থাকতে দেওয়া যাবে না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত