তুমি কি আমার হাত টা ধরতে চাচ্ছ? আমি ইভার কথা শুনে চমকে উঠলাম।আমি এতটাই মগ্ন ছিলাম ওর প্রতি,যে লক্ষ্যই করিনি ও চোখ খুলেছে। আমি ওর কথা শুনে একটু অবাক হলাম,ও কিভাবে জানল আমার মনের কথা।প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে ইভার বিছানার পাশে বসে আছি,যখন থেকে এসেছি তখন থেকেই ইচ্ছা হচ্ছিল ওর হাতটা একটু ধরি। খুব সংকোচ কাজ করছিল ,নিজের বউ এর হাত ধরতেও এত সংকোচ কেন মাথায় আসছিল না? হয়ত এখনো ওকে ভালবাসতে পারিনি তাই।
ইভা আর আমার বিয়েটা হয়েছিল একটু অন্যরকম ভাবে,হুট করে।বাবা মেয়ে ঠিক করেছিল,আমি যেদিন দেখতে গেলাম সেদিনই বিয়ে দিয়ে দিল। আমার মত ছিল না বিয়েতে কিন্তু বাবার মতের বিরুদ্ধে যেতেও পারিনি,তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিয়ে করতে হয়।বিয়ের আগে ইভার সাথে আমার কখনো কথাও হয়নি। হঠাৎ একজনের সাথে, যাকে চিনিনা জানিনা তার সাথে কিভাবে থাকব ভেবে পেলাম না? যদিও কারো সাথে আমার প্রেম ছিলনা। বাট ইভাকে আমার খারাপ লাগত না ভাললাগত, তবুও তখনো ওর প্রতি ভালবাসা টা জন্মায় নি। আমি থাকতাম শহরে, ইভাদের বাসাও একই শহরে। মাত্রই জবে ঢুকেছি,তাই এখনো ভাল একটা বাসা নেওয়া হয়নি।অফিসের পাশেই একটা ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি।ইভা লেখাপড়া করে তাই ও ওর বাবার বাসাতেই থাকে।
আমাদের সম্পর্ক যে ঠিক ঠাক নয় এটা আমাদের দুজনের পরিবারের কেউ জানেনা। সবাই জানে, আমি ঠিকঠাক বাসা পাচ্ছিনা তাই ইভা কে নিয়ে একসাথে থাকছিনা।বাসা পেলেই নিয়ে যাব।তবে আমার তেমন কোন ইচ্ছা হচ্ছিল না,একটা ভাল বাসা ভাড়া করা আমার জন্য কোন ব্যাপার না।ইভাকে মোটেও আপন করে নিতে পারছিলাম না। ইভা অনেক বার চেষ্টা করেছিল আমার কাছে আসার কিন্তু আমার তরফ থেকে কোন সায় ছিলনা। একটা মেয়ে হিসেবে যথেষ্ট করেছিল ও। গত কালকের কথাই বলি।সকাল আটটা, ঘুম তখনো ভাঙেনি, শুক্রবার ছিল তাই অফিসও নেই। হঠাৎ কানের কাছে রাখা ফোন টা বেজে উঠল, একটু বিরক্ত হলাম।নাম্বার না দেখেই ফোন ধরলাম, হ্যালো, ওপাশে কোন আওয়াজ নেই।এ কাজ টা একমাত্র ইভাই করে।ও অনেকক্ষন পর কথা শুরু করে।
আমি আবার বললাম, কিছু বলবে, হুম, বলো -তোমার সময় হবে আজ দুপুরে, কেন? আজ আমার জন্মদিন, ওহ,শুভ জন্মদিন। সময় হবে? -না সময় হবেনা,সরি।নেক্সট টাইম। প্লিজ মনে কিছু করিও না। আচ্ছা,ব্যাপার না। সময় ছিল তবুও বলেছিলাম সময় নেই,কোন এক অদ্ভুত কারণে ইভাকে আমার বিরক্ত লাগত, তাই ওর কাছ থেকে দূরে থাকতাম।কাল সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে কাঁটিয়ে দিলাম। রাত্রে আবার ইভার ফোন এল।কল ধরতেই ও বলা শুরু করল, -খুব ব্যাস্ত ছিলে আজ তাই না? আমার মনে হচ্ছিল ও কাঁদছে , আমি কি বলব ভেবে পেলাম না।ও কি জেনে গেছে আমি সারাদিন বাসায় ছিলাম।ইভা আবার বলতে লাগল, বেশি কিছু কি চেয়েছিলাম, শুধু একটু সময়ই তো চেয়েছিলাম,,, এটুকুই বলেই কল টা কেঁটে গেল।আমি রিং ব্যাক দিলাম দেখি ওর নাম্বার বন্ধ।অদ্ভুত কোন কারণে ইভার জন্য আমার মন টাও খারাপ হয়ে গেল। সারারাত ওর কথাই শুধু মাথায় এল।
বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েরা যত তাড়াতাড়ি তাদের হ্যাজবেন্ড কে ভালবেসে ফেলে,অত তাড়াতাড়ি ছেলেরা পারেনা নিজেদের বউকে ভালবাসতে। আমিও পারিনি ইভাকে ভালবাসতে। বিয়ের রাতেও ওর সাথে আমার কথা হয়নি। সারারাত বিছানায় নির্ঘুম কাঁটিয়ে দিয়েছিলাম।ওই রাতের পর আমি ইভার সাথে কখনো থাকিনি। ইভাই মাঝে মাঝে আসত আমার এখানে। কিছুক্ষন থেকে চলে যেত।খুব একটা কথাও হত না।ঘর পরিষ্কার করে দিত, মাঝে মাঝে রান্নাও করত,তবুও কখনো ওকে ধন্যবাদ দেইনি। আজ সকালে অফিসেই ছিলাম, তখনি ইভার বাবা ফোন করল।এনাকে আমার ভালই লাগে, একমাত্র মেয়ের জামাই তাই আলাদা রকমের স্নেহ করেন। আমি ফোন ধরে বললাম, -আসসালামু আলাইকুম আব্বা। ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুমি কোথায়? অফিসে, কিছু হয়েছে? ইভার সাথে কিছু হয়েছে তোমার? না তো,কেন? -মেয়েটা কাল থেকে কিছুই খায়নি,সকালে মাথা ঘুরে পরে গেছে, ওহ,এখন কেমন আছে? ভাল,,তুমি কি আসবে একটু? -হুম,আমি আসছি
আমি ভাবতেই পারিনি ও অসুস্থ হয়ে যাবে। আর কিছু ভাবলাম না, সোজা অফিস থেকে বের হয়ে ওকে দেখতে আসলাম।ওকে দেখেই মনে শান্তি এল। মনে হল,ওর খারাপ কিছু হয়ে গেলে আমি ভাল থাকতাম না।ও আমার জন্যই অসুস্থ হয়েছে। ইভা আবার বলল, কি হল?ধরতে চাইলে ধরো, তুমি কিভাবে বুঝলে তোমার হাত টা ধরতে চাই? ইভা একটু হেসে বলল, তোমার নজর সেই তখন থেকে আমার হাত টার উপর ছিল, উম, লজ্জা পাচ্ছ, না লজ্জা পাব কেন? নিজের বউয়ের হাত ধরতে কিসের লজ্জা, আমি ইভার ডান হাত টা আমার দু হাতের মধ্য নিলাম।ইভার মুখে হাসি ফুটল,এই প্রথম ওকে নিজের স্ত্রী বলে সম্মোধোন করলাম।এই জন্যই হয়ত বেশী খুশি হয়েছে। ইভা আবার বলল, তুমি চাইলে আমাকে একটা চুমুও খেতে পারো,, সুস্থ হও, আমি সুস্থ,তুমি এসে গেছ আর কি অসুস্থ থাকা যায়।
আমি ইভার কথা শুনে অবাক হলাম,এ মেয়েটা এত অপমান সত্তেও আমাকে কত ভালবাসে। নিজের উপর অভিমান হল,কিভাবে পারলাম এই মেয়েটাকে কষ্ট দিতে।যেদিন ইভা আমার জন্য কষ্ট করে রান্না করল সেদিন না খেয়েই উঠে গিয়েছিলাম,চিন্তাও করিনি মেয়েটা কষ্ট পাবে কি না? রোজ রাত্রে ও ফোন করত,সেই ফোন গুলোও কেঁটে দিতাম। নিজেকে এখন খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। তুমি আবার লজ্জা পাচ্ছ, পাচ্ছিনা, তাহলে চুমু খাও, আমি ইভার কপালে একটা চুমু খেলাম। চুমু শেষেই ইভা হাসতে হাসতে বলল, তুমি আসলেই লজ্জা পাচ্ছ, কেন? চুমু তো খেলাম, কপালে কেন?ঠোঁটে খাও, -না, খাও,এই যে আমি চোখ বন্ধ করছি, ইভা চোখ বন্ধ করল। আমি ইভার ঠোঁট গুলোর দিকে তাকালাম ,গোলাপী ঠোঁট গুলো অল্পঅল্প নড়ছিল। যেই আমি আমার ঠোঁট গুলো নিচে নিয়ে যাব তখনি মনে হল কেউ ঘরের দিকে আসছে। আমি সাথে সাথে ঠিক হয়ে বসলাম। পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখি,ইভার মা।
উনি আমাকে ইশারা করে বললেন, খেতে আসো বাবা, আমি কিছু বলতে যাব, তার আগে ইভা বলে উঠল, না মা,ও যাবেনা কেন? ও অন্য কিছু খাবে -কি খাবে, তুমি বুঝবানা, তুমি যাও ইভার মা আর বেশী ঘাটলেন না,উনি চলে গেলেন। আমি ইভার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম।ইভা বলল, নাও,আমি চোখ বন্ধ করছি, বাসায় গিয়ে,কখন কে আসে এ ঘরে, আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাবে, ইভা একটু উচ্ছাসিত গলায় বলে উঠল। হুম,নিয়ে যাব।সুস্থ হও, আমি সুস্থ্, ইভা আর বিছানায় শুয়ে রইল না,ফ্রেশ হতে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে ওর ব্যাগ গোছানো শুরু করল।আমি একটু অবাক হলাম ওর উচ্ছাস দেখে। তবে একটা প্রবলেম ও আছে।আমি যেখানে থাকি সেটাকে মুরগীর ঘর বললে ঠিক ভুল হবেনা,একজনের থাকার ঘর।ইভা কিভাবে ওখানে থাকবে কে জানে?ওখানে বালিশ ও একটা। অবশ্য ইভা অনেক কবার আমার ওখানে গিয়েছিল,ও তো জানেই এসব,তবুও এত আগ্রহ। ইভার ব্যাগ গোছাতে গোছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ব্যাগ গোছানো শেষে ও সাজতে বসল।
এমনিতেই ও সুন্দর সাজার কি দরকার।আমি বললাম, -থাক,,এ মেকাপ কি রাত পর্যন্ত থাকবে? নাহ, এক কাজ করো,মেকাপ বক্স টা সাথে নিয়ে নাও। রাত্রে সাজিও,আমার ঘরে আয়না আছে, -গুড আইডিয়া,,, আমরা ইভাদের বাসা থেকে যখন বের হলাম তখন বাজে সাড়ে সাতটা।ইভার বাবা মা আমাদের খুশি মনেই বিদায় দিল। রিকশায় উঠে ইভা কোন কথা বলল না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, রাতে কি খাবে,কাল থেকে তো কিছুই খাওনি, চুমু খাব, শুধু চুমুতে কি পেট ভরবে? ভালবাসা থাকলে ঠিক ভরবে, হা হা,ভাল বলেছ, . রিকশায় বসা যে এত আনন্দ দায়ক হতে পারে তা জানা ছিলনা।
ইভার একটা হাত ধরে বসে ছিলাম সারা রাস্তায়। হালকা বাতাস বইছিল,মনে হচ্ছিল বৃষ্টি হবে। কোন ভাবে বৃষ্টি হওয়ার আগে বাসায় পৌছালেই হয়। ইভা বলল, -মনে হয় বৃষ্টি হবে? আকাশ তাই বলছে, আমাদের বিয়ের দিনেও খুব বৃষ্টি হচ্ছিল খুব,মনে আছে তোমার? -হুম,আছে। সেদিন ইচ্ছা হচ্ছিল,তোমার সাথে ভেজার। আজ বৃষ্টি হলে,তোমার সে আশা পূরণ করে দেব। ইভা কোন জবাব দিল না,আস্তে করে ওর মাথা টা আমার কাধে রাখল। আমাদের ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত নটা বেজে গেল। ঘরের অবস্থা দেখে ইভা হেসেই কুটি কুটি।আমি একটু লজ্জাই পেলাম।নিজের কিছু কাপড় এমন ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেটা উচিত নয়। ইভা বলল, লজ্জা পাচ্ছ কেন?আমি তোমার বউ তাই না? হুম তাই তো, দুজন মিলে খুব জলদিই পুরো ঘর গুছিয়ে ফেললাম।
ঘর গোছানো শেষ হতেই ইভা বলল, বিছানা টা কেমন খালি খালি লাগছে তাই না? হুম বালিশ একটা,, তার জন্য নয়, তাহলে, ফুল দিয়ে সাজাতে হত? -ফুল কেন? বারে আজ তো আমাদের বাসর,বাসরে বিছানা সাজাতে হয়, হুম,আমাদের বাসর ভুলে গিয়েছিলাম। -হুম,, বাদ দাও, কি আর করার? করার আছে,বাইরে গিয়ে ফুল নিয়ে আসো,আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, -এত রাত্রে যাব,হুম, এখনি,যাও নিয়ে আসো।, আচ্ছা,কি কি ফুল নিয়ে আসবো? গোলাপ,রজনী গন্ধা ,আর গাদা ফুলও নিয়ে আসো। আমি বাসা থেকে বের হয়ে ফুল কিনতে গেলাম। ফুল কেনার সাথে দু প্যাকেট বিরানিও কিনে নিয়ে আসলাম,চুমুতে মন ভরলেও পেট কখনোই ভরবে না। বাসায় ফিরেই খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। একটু বেশি ক্ষুধা লেগেছিল। ইভাদের বাড়িতে ইভাকে চুমু ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হয়নি। খাওয়া শেষে ইভা সাজতে বসল।আর আমি বিছানা সাজাতে বসলাম। বিছানা সাজায় কিভাবে জানিনা,প্রথম বার তো এত আয়োজন ছিলনা।
তবুও,ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে যা করা যায়,বাসর রাত বলে কথা।প্রথম বার যত নার্ভাস ছিলাম তার চেয়েও বেশি নার্ভাস হচ্ছিলাম, জানিনা একটু পর কি হবে? মাঝে মাঝে ইভার দিকে তাকাচ্ছিলাম, ও ঠিক ঠাক।লাল শাড়ি পড়ে হাসছে আর সাজছে। ইভা সাজগোজ শেষে যখন বিছানায় এসে বসল, আমি অনেকক্ষন অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।হালকা সাজে মেয়ে টাকে কত সুন্দর লাগছে।সব হালকা, খালি ঠোঁটে লিপস্টিক আর চোখে কাজল ঘন করে দেওয়া। আজ যে পেট খারাপ হবে এটা শিউর।কোন কোম্পানির লিপস্টিক কে জানে? এই সুন্দর মায়াবী মেয়েটাকে আমি কিভাবে এতদিন ইগ্নোর করে এসেছি মাথায় এলোনা।
কিছু বল? কি বলব? -কেমন লাগছে? তা, জানিনা।তবে তোমাকে ভালবাসি। খুব ভালবাসি। আমি স্পষ্ট দেখলাম ইভার চোখে পানি,পানি টা বেশি ক্ষন দেখা গেল না।খুব জোরে একটা শব্দ হল,মনে হল আশেপাশে কোথাও বাজ পরেছে। ফলে ইভা ভয় পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল,তার সাথে সাথে কারেন্ট ও চলে গেল।