এই শুনছো, না শুনছি না, তাহলে জবাব দিচ্ছ কিভাবে? উফ বিরক্ত করো না, এই,আমার ক্ষুধা পাইছে? এত রাত্রে, হুম, যাও,কিচেনে গিয়ে খাও কিছু পারিনা, তাহলে না খেয়ে থাকো, আমি কি আমার জন্য খাবার আনতে বলি, আমাদের বাবুর ও তো খিদে লাগছে। আচ্ছা, আনছি,, নূপুর জানে ও বাবুর কথা বললে আমি আর শুয়ে থাকবনা।ওর কাজ করে দেব, তাই যেকোন কাজের বেলায় ও বাবুর কথা বলবে।কাল বিকেলে অফিস থেকে এসে একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম তখনি ও এসে আমার দিকে একটা বই বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই গল্পের বইটা পড়ে শোনাও, এটাতো তুমি ও পড়তে পারো, পারিনা,বাবু ওর বাবার মুখ থেকেই শুনতে চায়।ও কি বলেছে? হুম,জিজ্ঞেস করছিলাম।কিক মারছে? কিক দিছে? হুম,কিক মারা মানে হ্যাঁ।
আমি আর কথা বাড়ালাম না,বইটা নিয়ে পড়তে আরম্ভ করলাম।নূপুর আমার কাঁধে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। গোটা বই শেষ করে দেখি ও ঘুমিয়ে পড়েছে। এরকম টা করছে যবে থেকে ও প্রেগন্যান্ট হল। প্রথম প্রথম আমি এসব করে দিতাম। কিন্তু ইদানিং ইচ্ছা করেই করছে নূপুর এসব। আমাজে বিরক্ত করে কি পায় কে জানে? প্রেগনেন্সির সময় সবাই মায়ের বাসায় থাকে, আমিও নূপুর কে বললাম, যাও আম্মাদের কাছে? ও বলে দিয়েছে যাবেনা,আমাকে ছাড়া থাকবেনা। মাঝে মাঝে আমারো ভয় হয়,কখন কি হয়ে যায়। আমি দুপুর টাইম টায় বাসার বাইরে থাকি।ওর সাথে সারাক্ষন কারো থাকা দরকার।ওর মায়ের বাসায় ওর ছোট বোন আছে,ওর মা আছে। দুজনের একজন তো থাকবেই সবসময় ওর সাথে। টেনশন ও থাকবেনা।কিন্তু কে শোনে কার কথা? তবে এখন মনে হচ্ছে ওর মাকে বলতে হবে যেন ওকে জোর করে নিয়ে যায়।প্রথম প্রথম ভাল লাগলেও এখন ঝামেলা মনে হচ্ছে।খাবার নিয়েও টেনশনে পরতে হচ্ছে।
তাই আজ ওর মাকে ফোন করে বললাম, যেন জোর করে হলেও নিয়ে যায় ওকে।খুব টেনশনে থাকতে হয় ও একা বাসায় থাকলে। নূপুরের মাও রাজী হয়ে গেল।তাই এক প্রকার নিশ্চিন্ত হয়ে অফিস শেষে সারা সন্ধ্যা বাহিরে কাঁটালাম।অনেক দিন পরেই এমন একটা সন্ধ্যা পেলাম তাই আর বাসায় আসতে ইচ্ছে হয়নি। নূপুর অবশ্য একবার ফোন করেছিল,ফোন ধরতেই বলল, একবার আসবে এখানে ,বাবু দেখতে চায় ওর বাবাকে, আজ না,কাল যাব, প্লিজ আসোনা একটু,, না,বলছি তো যাব না।” নূপুর একটু মন খারাপ গলায় বলল, আচ্ছা, এরপর আর কোন ফোন করেনি ও।হয়ত মন খারাপ করেছে,এ নিয়ে তেমন ভাবলাম না,কাল গিয়ে দেখা করে এলে হবে। বাসায় ফিরলাম রাত সাড়ে এগার টার দিকে, গেট খুলে দেখি পুরো বাসা অন্ধকার,লাইট জালালাম। কি অদ্ভুত ব্যাপার পুরো বাসা খালি খালি লাগছিল, একজন মানুষ এত টা শূণ্যতা দান করতে পারে জানা ছিল না।
কেন জানি মন খারাপ হয়ে গেল।খেয়ে এসেছিলাম তাই খাওয়ার টেনশন ছিল না,সোজা বিছানায় চলে গেলাম।ঘন্টা খানেক এপাশ ওপাশ করেও যখন ঘুম এলনা তখন বুঝলাম নূপুর আমার জন্য কতটা গুরুত্ত পূর্ণ। বিয়ের আড়াই বছরে ও মনে হয় দুদিন এর বেশি আমায় ছাড়া থাকেনি।আর আজ আমি ইচ্ছা করেই ওকে পাঠিয়ে দিলাম,নিজের প্রতি মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।না একা থাকতে পারব না,নূপুর কে দরকার। ওকে জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসবেনা। ফোন দিলাম নূপুর কে,রিসিভ করল ওর ছোট বোন মিহিন, হ্যালো দুলাভাই, আপু কই তোমার? পাশে, ফোন দাও, কথা বলবেনা, ও,রেগে আছে? অনেক, আচ্ছা আমি আসছি, আপনাক আসতেও মানা করছে, বলছে কথা বলবেনা, ও, ওকে বল আমি ওর কাছে যাচ্ছিনা আমার বাবুর কাছে যাচ্ছি, আচ্ছা। ঘড়ি দেখলাম এগার টা বাজে,আমার এখান থেকে বাইকে নূপুরের মায়ের বাসা যেতে আধাঘন্টা লাগবে। রাস্তায় পুলিশ না আটকালেই হয়।আর ভাবলাম না,বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে।
নূপুরের বাসার সামনে এসে দেখি, নূপুরের রুমে লাইট জলছে।তার মানে ও ঘুমায় নি।বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আবার ফোন দিলাম,এবার নূপুরই ধরল।ফোন ধরেই কঠিন গলায় বলল, কি হইছে, ঘুম আসেনা,, আমি কি করব,গান শোনাবো জড়িয়ে ধরবা, যখন পাঠাই দিছ, তোমার ভালর জন্যই তো, থাক এখন বাইরে, মিহিন কে বল,গেট খুলতে, না কেউ গেট খুলবে না, আমি কি দাঁড়ায়া থাকব, হুম,, এই বলে ফোন কেঁটে দিল।আমি দাঁড়িয়ে রইলাম বাড়ির সামনে। মিনিট পাঁচেক যেতেই গেট খুলে গেল।আমি ভেবেছিলাম মিহিন হবে হয়তো কিন্তু দেখলাম এটা নূপুরের মা।আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম। এই মহিলার সাথে সব সময় আমার নিরব স্নায়ু যুদ্ধ চলে কিন্তু আজ এনাকেও ভাল লাগল। আমি ভিতরে ঢুকলাম,উনি শুধু বলল, থাকতে পারবানা একা তো ভেজাল করে কি লাভ? ও এখনো খায়নাই,একসাথে বসে খাও।আর ওর ডেলিভারি পর্যন্ত এখানেই থেকে যাও, আচ্ছা আম্মা।
আমি মনে মনে নূপুরের মাকে ধন্যবাদ দিয়ে নূপুরের ঘরের দিকে যেতে লাগলাম। আমি নূপুরের এর ঘরে ঢুকতেইই নূপুর রাগ হয়ে বলল, গেট কে খুলে দিছে, কেউ না, কিভাবে ঢুকছ, দেয়াল দিয়ে, কি বল,লাগেনি তো,, না,, আমাকে বললেই তো গেট খুলে দিতাম, বলছিলাম তো, নূপুর আমার কথার আর জবাব দিল না।আমি জিজ্ঞেস করলাম, বাবু কেমন আছে? ভাল না, কেন? খায় নাই কিছু, কেন? বাবার উপর রাগ করছে, বাবা আসছে,চল খাই, না, দেখ, খুব ক্ষুধা লাগছে, না খেয়ে আছি, খাওনাই কেন? এমনি, নিহিন আর কিছু বলল না,আমার সাথে ডাইনিং এ এল।আমি ওকে ভাত বেড়ে দিতে লাগলাম, ওর মুখে এখন খুব সুন্দর হাসি,এই হাসি টার জন্যই তো এত আয়োজন।