ভালোবাসার পরশ

ভালোবাসার পরশ

“গল্পের শুরুটা সাধারণ হলেও শেষটা বেশ কষ্টদায়ক ভাবেই শেষ হতে হবে।” সিনেমার পরিচালক এমনটাই আশা করেছিল নীলের কাছে। সেই থেকেই দিন রাত লিখালেখি করছে নীল। এবার তাকে জনপ্রিয় হতেই হবে। এমন বড় সুযোগ আর হয়তো কখনও আসবে না এ জীবনে। দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা গল্প লেখে ফেলল কিন্তু নিজের মন মত হচ্ছে না একটাও। কষ্টটা ঠিক আসছে না গল্পের শেষটাই। ঘুরে ফিরেই রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে।

নীলু বার বার ফোন দিচ্ছে সেই দিকে কোন লক্ষ নেই। কারণ নীল জানে নীলুর ফোনটা ধরলেই আবার নিজেকে রোমান্টিক মুডে ফিরে যেতে হবে আর সেটা নীল কখনই চায় না। নিজের ভিতর কষ্ট আনতে হবে, প্রচুর কষ্ট। নীল কফিটা শেষ করে আবার কলম হাতে নিলো । খাতার উপর প্রথম লাইনটা লিখতেই টুং করে একটা শব্দে মোবাইলের দিকে তাকালো নীল। বেশ বিরক্তি একটা ভাব নিয়ে মোবাইলের স্ক্রীনের আলোটা জ্বালাতেই দেখলো নীলুর নামটা ভেসে উঠেছে। একটা মেসেজ পাঠিয়েছে।

“নীল তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে, একটা বার এসো। ”

বেশ রাগই হলো মেয়েটার উপর। জানেই তো আমি কতটা ব্যস্ত। সবার নজর আমার দিকে আনতে হবে। আর সে আছে দেখা করা নিয়ে, দুই একদিন দেখা না করলে কী এমন হয়?

“দুই একদিন দেখা না করলে কী এমন হয় “কথাটা মুখ থেকে বের হতেই চমকে উঠলো নীল। দুই একদিন নয় শেষ দেখা হয়েছিলো ১২ ফেব্রুয়ারি মানে নীলুর জন্মদিনে, আজ কত তারিখ?

মনে মনে এমনটা বলতে বলতেই ক্যালেন্ডারের দিকে তাকলো নীল।

২৭ মার্চ! বুকের ভিতর ধক করে উঠলো নীলের। সাথে সাথে নীলুর নাম্বারে ফোন দিলো। কিন্তু ফোনটা সুইচ অফ বলছে। বুকের ভিতর চিনচিন ব্যথা অনুভব করলো। এমন সময় মাথায় দুই এক লাইন কষ্টের কথা ঘুর ঘুর করছে, সময় নষ্ট না করেই লিখে ফেললো ডাইরিতে।

নীলুর বাসার সামনে বেশ কিছু ক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছে নীল। বার বার নীলুর ঘরের জানালার দিকে তাকাচ্ছে। দুই তালা বিশিষ্ট বাসাটা সাদা রংয়ে রং করা। বেশ কিছুক্ষণ হলো জানালাটা বন্ধ একদিকে মোবাইলেও পাচ্ছে না। হঠাতই লক্ষ করলো জানালাটা খুলে গেছে। ওইপাশে একটা মেয়েকে দেখেই হাতের ইশারাতে বললো,,,

-নিচে এসো।
মেয়েটা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। দুর থেকে খুব একটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না ঠিকই তবে মেয়েটার চোখে যে পানি ছলছল করছে সেটা নীলের জানা।

জানালার পাশ থেকে মেয়েটা সরে গেল। নীল তখনও দাড়িয়ে। একটু পরই মেইন গেটের দিকে নজর পরতেই দেখলো জানালার ওইপাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটা নিচে নেমে আসছে। একটা সময় দৌড়ে চলে আসলো আর ঝাপটে ধরলো নীলকে। হু হু করে কাঁদছে মেয়েটা। কেন জানি আজ নীলেরও কাঁদতে ইচ্ছা করছে।

-কত দিন তোমায় দেখি না বলো?? জানো না আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারি না?কেন এমন করো বলতো??

বড় আর জনপ্রিয় হওয়ার জন্য যে মেয়েটার কাছ থেকে দূরে থেকেছে এতো দিন এই ভেবে যে, মেয়েটার কাছে আসলেই কষ্টটা আর থাকবে না। লেখার মাঝে রোমান্টিকতায় ভরে যাবে। আজ সেই মেয়েটাকে বুকে নিয়েই একটা শান্তি অনুভব করলো নীল। এ যেন সকল চাওয়া আর জনপ্রিয় হবার নেশার থেকেও প্রখর।আজ ইচ্ছা করছে একটু বেশিই রোমান্টিক হতে। নীলুর মুখের উপর তেড়ে আসা চুল গুলোর সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে বীর উপাধী দিতে, ইচ্ছা করছে নীলুর কাপা কাপা ঠোটের একটু খানি পরশ নিতে। ইচ্ছা করছে কোন এক পরন্ত বিকেলে পাশাপাশি হাটতে। ইচ্ছা করছে সারাটা জীবন এই ভাবে ঠিক এই ভাবে বুকের মাঝে আগলিয়ে রাখতে। ইচ্ছা করছে ভালোবাসার পরশে নিজেকে বিলিয়ে দিতে, ঠিক তেমনটা যেমনটা করার পর আর কেউ এর থেকে বেশি রোমান্টিক হতে পারবে না।

….. সমাপ্ত …..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত