দশ বছরের প্রেম কিভাবে পূর্নতা পেলো তা নিয়ে ছোট কাহীনি। দশ বছরের সম্পর্কে কেউ ভুলেও কারো সামান্যতম কাছে যায়নি। ব্যাপারটা আজব হলেও সত্যি। আমাদের গল্পের নায়িকার নাম পরী। নামটা ওনার বাবা খুব শখ করে রেখেছিলো। হয়তো ছোট বেলায় দেখতে পরী পরীর মত সুন্দর ছিলো তাই। মধ্যবিত্ত পরিবারে মেয়ে। বাবা সামান্য একজন চাকরিজীবি। খুব কম বেতনে সংসার চলে তাদের। পরীরা দু বোন এক ভাই। পরী মেজো। ওর আগে একটা বড় বোন আছে। বাবার আয় খুবই নিম্ন। তারপরও পরী আর পরীর বোন টিউশনি করিয়ে লেখাপড়া করতো। একবার পরীর বাবার এক বড়লোক বন্ধু তাকে একটা ফোন গিফ্ট করে। বেশি দামি না।পরী তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। ফোনটা বেশির ভাগ টাইম পরীর কাছেই থাকে। একদিন ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। পরী রিসিভ করে খুব শান্ত গলায় বললো
পরীঃ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন? ওয়ালাইকুম আসসালাম। রিমা আমি সানভি।
পরীঃ আমি রিমা না। আপনি বোধয় ভুল নাম্বারে ফোন করছেন।
সানভিঃ এটা সিলেট না?
পরীঃ জ্বি না। এটা বরিশাল।
সানভিঃ ওহ আই এ্যাম সো স্যরি। আসলে আমি আমার কাজিনকে ফোন করতে গিয়ে ভুলে মনে হয় আপনাকে দিয়ে দিয়েছি। কিছু মনে কইরেন না প্লিজ।
পরীঃ ঠিক আছে। বাই। সানভি ফোনটা রেখে ভাবছে মেয়েটার গলার আওয়াজটা অসম্ভব সুন্দর। শান্ত , নির্মল, ভাষায় আলাদা একটা মাধুর্য্যতা আছে। ইশ মেয়েটার সাথে যদি আরো কিছুক্ষন কথা বলতে পারতাম? সিট। বরিশালের কোথায় সেটা যদি জেনে নিতাম। বা নামটা জেনে নিতাম। কিছু কিছু ভুল সত্যিই ভুল। ধ্যাত ভালো লাগে না। আচ্ছা মেয়েটাকে কি আরেকবার ফোন দিবো। থাক যদি খারাপ ভাবে? পরের দিন অনেক সাহস করে সানভি ফোন দিলো কিন্তু কপাল খারাপ ফোনটা পরীর বাবা ধরলো। পরীর বাবার গলার আওয়াজ পেয়েই সানভি ফোনটা কেটে দিলো। পরের দিন আবার দিলো বাট আজকেও পরী ধরলো না। পরের দিন আবার দিলো এবার পরী ফোনটা রিসিভ করলো এবং সালাম দিলো। পরীর আওয়াজ শুনতে পেয়ে সানভির যেনো প্রানে প্রান ফিরে পেলো। সানভি অনেকটা ধমক দিয়ে পরীকে জিগেস করলো
সানভিঃ এই মেয়ে এত দিন কোথায় ছিলেন? জানেন আপনাকে রোজ ফোন করি। কিন্তু অন্য একজন রিসিভ করে কে সে?
পরীঃ আজব তো! কে আপনি? (এত দিনে পরী সেদিনের ফোনের কথা ভুলেই গেছে) আর এভাবে ধমক দিয়ে কথা
বলছেন কেন?
সানভিঃ স্যরি। আসলে গত তিন চার দিন ধরে রোজ আপনাকে ফোন করি কিন্তু আপনি রিসিভ করছিলে না।
পরীঃ কে আপনি?
সানভিঃ আমি সানভি। আসলে চার দিন আগে ভুলে আপনার নাম্বারে কল দিয়ে ফেলেছিলাম। তখন আপনার কন্ঠটা আর কথা বলার ধরনটা খুব ভালো লেগেছিলো। তাই আরেকবার আরেকবার গলার আওয়াজ শুনতে ইচ্ছা করতে ছিলো তাই রোজ ফোন দিতাম।
পরীঃ আপনিতো খুব বাজে লোক! একটা মেয়ের গলা শুনলেন অমনি তাকে কল দিয়ে বসলেন। ফালতু লোক। আরো কিছু বাজে কথা বললো।
সানভিঃ জাস্ট সেটাপ। আপনার গলাটা ভালো লেগেছে বলে, আপনার আওয়াজে অসাধারন মাদকতা আছে বলে
কল দিলাম। কিন্তু আপনি তো আমায় ফালতু ভাবছেন। আপনাদের মেয়েদের এই এক দোষ। ছেলেরা সেধে কথা বলতে আসলেই ভাবেন আপনার প্রতি দূর্বল বা ছেলেটা খারাপ বা নিচু মানের। ম্যাডাম আমি যথেষ্ট ধার্মিক। আর তাছাড়া অনেক উচ্চ পরিবারের ছেলে। আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবো না। বাই। এই বলে রাগ করে সানভি ফোনটা রেখে দিলো।
ফোনটা রাখার পর পরীর কেমন যেনো খারাপ লাগছে। আসলেই ছেলেটা তো তার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করেনি। আমিই শুধু শুধু খারাপ ভাবলাম। নাহ ছেলেটাকে ফোন করে একবার স্যরি বলা উচিৎ। দেখি ছেলেটা আবার কল দেয় কিনা ? কল করলে ভাববো বাজে ছেলে। না করলে আমি কল করে স্যরি বলবো। সেদিন সারারাত পরীর কেমন যেনো খারাপ লাগতে ছিলো। নিজের ভিতর কেমন যেনো একটা অপরাধবোধ হতে থাকলো। সেদিন আর সানভি ফোন করলো না, পরের দিনও করলো না। এবার পরীর খুব খারাপ লাগছে। ও তার পরের দিন বিকালে অনেক সাহস সঞ্চয় করে সানভিকে ফোন করলো। সানভি ফোনটা রিসিভ করে
পরীঃ আসসালামু আলাইকুম।
সানভিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে?
পরীঃ আমি?
সানভিঃ আমি কে? (কিছুটা দুষ্টমি করে) ।
পরীঃ আমি স্যরি। আসলে সেদিন আপনার সাথে ওমন ব্যবহার করা আমার উচিৎ হয়নি।
সানভিঃ হাসি দিয়ে ইট’স ওকে।
পরীঃ ধন্যবাদ।
সানভিঃ ম্যাডাম আপনার নামটা বলা যাবে? যার আওয়াজ এত সুন্দর তার তার নামটা জানতে খুব ইচ্ছে করছে। বলা যাবে?
পরীঃ পরী। আপনি?
সানভিঃ ওহ মাই গড। আপনি পরী! আমাকে কি আপনার পরীলোকে নিয়ে যাওয়া যাবে?
পরীঃ হালকা শব্দ করে হাসি দিলো।
সানভিঃ বাই দ্যা ওয়ে আমি সানভি। নাইস টু মিট ইউ। ওপস স্যরি টক টু ইউ। কারন আমরা তো দেখা করিনি।
পরীঃ সেইম টু ইউ।
সানভিঃ কিসে পড়েন?
পরীঃ এবার ক্লাস নাইনে। আপনি।
সানভিঃ হেই সেইম ক্লাস। কোন স্কুল? এভাবে রোজ ওদের সাথে টুকিটাকি কথা হতে থাকে। ওরা একই শহরে থাকতো। কিন্তু ওদের এলাকার দূরত্ব অনেক। কথা হতে হতে একসময় বন্ধত্ব। আর বন্ধুত্ব থেকে এজ ইউজুয়াল যা হয় ভালোবাসা। কিন্তু তখন ওদের মাঝে দেখা হয়নি। দুজনার এস এস সি কমপ্লিট হলো নতুন কলেজে এডমিশন নিলো। দুজন একই কলেজে এডমিশন নিলো। এটা সানভি জানেলেও পরী জানতো না। কারন সানভি পরীকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো। তখনও দুজন কেবল ফোনে কথা বলতো। পরী যেদিন প্রথম দিন কলেজে গেলো। সেদিন সানভি ফোন করলো।
সানভিঃ পরী তুমি কোথায়?
পরীঃ কেবল কলেজে আসলাম। কেনো?
সানভিঃ আচ্ছা কলেজের কোন জায়গায় আছো ?
পরীঃ এই তো কলেজের সামনে যে একটা বাগান আছে না। সেখানে। কেনো?
সানভিঃ আচ্ছা আজকে কি রঙের ড্রেস পড়ে এসেছো?
পরীঃ কালো আর সাদা রঙের একটা থ্রিপিছ। কেনো? এই তুমি আবার দূর থেকে আমায় দেখছো নাতো।
সানভিঃ না না। আমিতো জাস্ট জিগেস করলাম। (বাপরে হাপ ছেড়ে বাঁচলাম একটু হলেই ধরা পরে যেতাম মনে মনে বলছে) সানভি ফোনটা রেখে পরীকে দেখছে বাগানের সামনে দাড়িয়ে আছে। সানভি গিয়ে পরীর পাশে দাড়ালো। সানভি পরীর দিকে তাকিয়ে ভাবছে নাহ ওর নাম যে পরী রাখছে সে খুব ভেবে চিন্তা করে রাখছে। সানভি এক মনে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো। সানভি ভাবছে ওকে একটু বাজিয়ে দেখা দরকার। মানে দেখি রিয়ালে কেমন ? সানভি কলেজে সবাইকে নিজের নাম হিসাবে আকাশ বলেছে। সানভি ক্লাসে প্রায় পরীকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো। মাঝে মাঝে পরীর সাথেও চোখাচোখি হতো। এভাবে রোজ পরীকে দেখতো পরীর খুব অসস্তি লাগতো। একদিন আকাশ মানে সানভি ক্লাসে সবার সামনে পরীকে প্রপোজ করে বসলো। পরী সাথে সাথে বললো স্যরি। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। এই বলে যেই যাওয়া ধরলো ওমনি আকাশ মানে সানভি পরীর হাতটা ধরলো। পরীর মেজাজ সপ্ত আসমানে উঠে গেলো ঠাস করে আকাশ মানে সানভিকে একটা চড় দিয়ে বসে। তারপর সেখান থেকে কলেজ কাম্পাসে গিয়ে একা বসে থাকে। তখন সানভি ফোন দেয়
পরীঃ হ্যা বলো?
সানভিঃ এত জোড়ে চড় না মারলেও পারতে?
পরীঃ মানে?
সানভিঃ তখন অত জোড়ে আকাশকে চড় মারলে কেন?
পরীঃ সেটা তুমি কিভাবে জানলে?
সানভিঃ পিছনে ঘুরলেই বুঝে যাবে। পরী পিছনে ঘুরে দেখে আকাশ মানে সানভি ফোনটা কানে দিয়ে আছে। আর বলছে
সানভিঃ হ্যালো আমি সানভি। আকাশ না। আর হ্যা পরঢর দিকে একটা ফুল এগিয়ে দিয়ে আই লাভ ইউ ম্যাডাম
পরীঃ তারমানে তুমিই?
সানভিঃ ইয়েস ম্যাডাম।
পরীঃ দাড়াও তোমার হচ্ছে। (রাগ করে) এভাবে চলতে থাকে দুজনার মিষ্টি প্রেম, খুনসুটিময় ভালোবাসা। কিন্তু সব কিছুই লিমিট মত হতো। কলেজ একসাথে শেষ করে ইউনির্ভারসিটিও একসাথে শেষ করলো। সারভি বাবার ব্যবসায় বসলো আর পরী একটা স্কুলে চাকরি পায়। এবার সানভি নিজের ভালোবাসার কথা বাসায় বললো কিন্তু সানভির পরিবার মানছিলো না। কারন সানভির পরিবার উচ্চ মানের আর পরীরা মধ্যবিত্ত। কিন্তু সানভির জেদের কাছে সবাইকে হার মানতে হলো। তারপর সানভির পরিবার যখন প্রস্তাব পাঠায় তখন পরীর বাবা না করে। কারন পরীর বড় বোন এখনো অবিবাহিত। সব শুনে এবং পরীর বড় বোনকে দেখে সানভির মা তার ভাইয়ের ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব রাখে । সবাই খুশি খুশি রাজি হয়ে যায়। যথা সময়ে দু বোনের বিয়ে একই দিনে হলো।
বিয়ের পর সানভি পরীকে ভিষন ভালোবাসতো। অনেক খেয়াল রাখতো। এমনকি পরীর পরিবারকেও খুব সাপোর্ট করতো সানভি। কিন্তু কথায় আছে না বেশি সুখ সবার কপালে সয় না। ওদের ক্ষেত্রেও তাই হলো। সানভির অফিসের একটা মেয়েকে নিয়ে পরী খুব সন্দেহ করে। ধীরে ধীরে সন্দেহ আর ভুল বোঝাবুঝি বাড়তে থাকে। এক সময় দুজন আলাদা থাকতে শুরু করে। কিন্তু তখন তাদের ডিভোর্স হয়নি। আর তখনও দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসতো। ওদের ডিভোর্সের ডেট ঠিক হয়। তারিখের ঠিক কিছুদিন আগে পরী সব সত্যি জানতে পারে যে ও সানভিকে ভুল বুঝেছে। পরী সানভির কাছে মাফ চাইতে চেষ্টা করে। কিন্তু ভাবে যদি সানভি ওকে মাফ না করে? তারপরও অনেক ভেবে মাফ চাইলো। কিন্তু মজার বিষয় হলো সানভি সাথে সাথে পরীকে মাফ করে দেয়। খুব শক্ত করে পরীকে জড়িয়ে ধরে বলে
সানভিঃ আমি কি আমার পরীর ওপর রাগ করে থাকতে পারি? আমি যে তাকে খু্ব ভালোবাসি। তুমি শুধু কথা দাও আর কখনো শুধু শুধু আমায় ভুল বুঝবে না। আর হ্যা আমার ভুলের জন্যও আমি অনুতপ্ত।
পরীঃ হ্যা আর কখনো তোমাকে অযথা ভুল বুঝবো না। অবশেষে দুজন খু্ব সুন্দর ভাবে ভালোবাসায় ঘিরে থাকতে লাগলো। তাদের ভালোবাসা দ্বিগুন করতে কয়েক মাস আগে একজন নতুন অতিথী এসেছে। ওদের ভালোবাসা আজ পরিপূর্ন। ওদের ভালোবাসা আজ পেয়েছে পূর্নতা। পূর্নতার ভরপুর ভালোবাসাময় সুখের ঘর ওদের।
সমাপ্ত