সরল বিশ্বাস

সরল বিশ্বাস

আপনি যে নম্বরে ফোন করেছেন তা এই মুহূর্তে ওয়েটিংয়ে আছে!
.
আর কল দিবে না বলে তবুও কল দিতে থাকে ছেলেটি
.
আধা ঘন্টা পর ও একই শব্দ ভেসে উঠে,
.
আপনি যে নম্বরে ফোন করেছেন তা এই মুহূর্তে ওয়েটিংয়ে আছে
.
এভাবে ইদানিং প্রতিদিন গভীর রাতে ওয়েটিংয়ে থাকে মেয়েটি!

সকালে কে ফোন করেছে জিজ্ঞেস করলে বলে মামা বাহির থেকে ফোন করে! ঐ দেশে দিন কিন্তু আমাদের দেশে গভীর রাত!
.
ঘন্টার পর ঘন্টা মামার সাথে কিসের কথা জিজ্ঞেস করলেই মেয়েটি রেগে গিয়ে বলতো, তুমি আমাকে অবিশ্বাস করো?

ওকে ঠিক আছে! তুমি তোমার সন্দেহ নিয়ে থাকো! আমাকে আর ফোন দিবা না!
.
সম্পর্কে বিশ্বাসই মূল কথা!
.
অতঃপর বিশ্বাসের উপর মেয়েটি বিশ মার্কসের রচনা লিখে ম্যাসেঞ্জারে সেন্ড করলো!

ছেলেটি রচনাটি পড়ে ডাবল জিরো দিয়ে রিপ্লাই করলো!
.
ওহ্ নো! কিচ্ছু ভালো লাগছে না! এই মুহূর্তে রোদেলাকে ফোন করতে হবে!

রোদেলা সেই মেয়ে যার সাথে কথা বললে মেয়েটি তিনদিন কথা বলা বন্ধ করে দিতো!

ইভান অনেক করে বুঝিয়েছে রোদেলা তার জাস্ট ফ্রেন্ড!
.
জাস্ট ফ্রেন্ড হলেও তো রোদেলা তোমাকে লাভ করে তাই না সুতরাং তার সাথে কথা বললে আমার সাথে না! বলে দিলাম!
.
অনেক দিন হয়ে গেলো ইভান রোদেলার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি!
.
হঠাৎ ইভানের ফোন পেয়ে রোদেলা জিজ্ঞেস করে বসলো, প্রেমিকার সাথে ঝামেলা চলছে নাকি! মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!
.
এভাবে রোদেলার সাথে কথা বলে রোজ মেয়েটিকে ভুলে থাকার চেষ্টা করতে থাকে ইভান!

এক পর্যায়ে সে উপলব্ধি করে রোদেলার মতো কেউ তাকে ভালবাসবে না! কিন্তু একটাই সমস্যা রোদেলা অনেকটা সাদামাঠা!

দেখে ক্রাশ খাওয়ার মতো লুকিং নেই! হাসলে প্রেমিকার মতো টোল পড়ে না!

রাস্তায় একসাথে হাঁটলে কেউ ওয়াও মেয়েটি কিন্তু সেই বলে কমেন্ট করে না!
.
তবুও রোদেলার মাঝে যেনো কিছু একটা আছে! অদ্ভুত কিছু একটা! একটু একটু করে টানে!
.
ইদানিং সকাল বিকাল সন্ধ্যা রাতে রোদেলার সাথে কথা বলে কখনো দেখা করে তার সময় কাটে!

এরমাঝে রোদেলার বিয়ে ঠিক হয় কিন্তু ইভান আকারে ইঙ্গিতে বুঝায় রোদেলা ছাড়া তার চলবে ই না!

রোদেলা ইভানের চোখের ভাষা বুঝে সম্পর্কটি না করে দেয়!
.
অনেকদিন পর একটি ভালো সম্পর্ক আসছিলো রোদেলার জন্য! তার বাবা শেষ বারের মতো বললো, দেখ মা!

তোর জীবন তোর সিন্ধান্ত তবে এমন সম্পর্ক পাওয়া যায় না!
.
রোদেলার কাছে এখন পৃথিবীর সব সম্পর্কই তুচ্ছ!
.
রোদেলা একদিন ইভানকে জিজ্ঞেস করলো তোর প্রেমিকার সাথে কি যোগাযোগ হয়?

ইভান বললো, না! সে ও ফোন দেয় না! আমিও না!
.
রোদেলা ইয়ার্কির সুরে বললো, আমাকে নিয়ে কিছু ভাবছো? জানি আমাকে বিয়ে করলে তোমার গায়েও কালো লাগবে!

ইভান বললো, সেই কালি দিয়ে কপালে টিপ দিয়ে দিয়ো তাহলে তুমি ছাড়া কারো নজরে পড়বো না!
.
হঠাৎ একদিন ইভানের এক্স গার্লফ্রেন্ড ফোন করলো! বললো, তার খুব মন খারাপ!

কান্না কান্না স্বরে বললো, আসলে আমি তোমার সাথে মিথ্যে বলেছি! ওটা আমার মামা ছিলো না!

আমাদের আগের বাসার মালিকের ছেলে! যাকে দেখে প্রথম ক্রাশ খেয়েছিলাম!
.
আর কিছু বুঝতে বাকী রইলো না ইভানের!

মেয়েটি দুই ফোঁটা চোখের জল ফেলে বললো, আমি জানতাম না ঐ ছেলে আমার বান্ধবীর সাথেও রিলেশন কন্টিনিউ করছে….!
.
আমি আবার তোমার লাইফে ফিরতে চাই বলে….. লাইন কেটে দিলো!
.
কিছুদিন পর ইভান ঐ মেয়েটিকে বিয়ে করে! তার অনেক কারণও আছে! সবচেয়ে বড় কারণ মেয়েটি তার প্রথম ক্রাশ!
.
রোদেলা সেটি বুঝতে পারলো! তাদের রিলেশনে ফিরে আসাকে নিজ থেকে কনগ্রেটজ করলো!

একদিন তাদের ট্রিটও দিলো জমানো টাকা দিয়ে! বেশ হাসিখুশি ছিলো ওরা তিনজন!
.
ইভান ট্রিট শেষ রোদেলাকে উদ্দেশ্য করে বললো……….,

তুমি যখন ছিলে না তখন রোদেলা আমাকে মানসিকভাবে স্ট্রং থাকার জন্য অনেক সাহায্য সহযোগিতা করছে!
.
হাসতে হাসতে রোদেলা বেরিয়ে গিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো!

আসার সময় ছোট বোনের জন্য রং পেন্সিল কিনে নিলো!
.
বাসায় ফিরে ছোট ভাইয়ের স্কুল টিউটোরিয়াল তৈরী করে দিলো!
.
এর মাঝে তার টিউশনির ছাত্রী বাসায় আসলো! আধা ঘন্টা পড়িয়ে বললো আজ ভালো লাগছে না কাল সকাল সকাল পড়তে চলে এসো!
.
কিছুদিন যাবত রোদেলার মা অসুস্থ! চুলোয় ভাত দিলো! ফ্রিজ থেকে রান্না করা মাছ গরম করে ভাই বোনদের খাওয়ায়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো!
.
তারপর মুখে একটু ফেয়ার এন্ড লাভলী মেখে ঘুমিয়ে গেলো! আজ তার জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেলো কিন্তু কেউ টের পায়নি!

কাউকে কিংবা নিজেকেও তা বুঝতে দেয়নি! মধ্যবিত্ত ফ্যামেলির বড় মেয়ে বলে কথা!
.
আগামীকালের সূর্য তাদের জন্য উঠে! তাই সকালটা এতো সুন্দর……!

বিশ্বাসের উপর তারা বিশ লাইনের একটি রচনা লিখে কাউকে পাঠায় না! সরল বিশ্বাস!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত