কালো ছেলের মিষ্টি বউ

কালো ছেলের মিষ্টি বউ

আমি ফারাবি। আমি আর ৮-১০ছেলের মতো হয়তো এতোটা সুন্দর বা স্মার্ট নই। আমি দেখতে ঠিক কালির মতো। কালো ছেলে আমি একটা। তাই কখনো প্রেম ভালোবাসার দিকে হাত বাড়াই নি। একটা কালো ছেলেকে কে ভালোবাসবে,,,, এখন সবাইতো ভালোবাসে স্মার্ট ছেলে আর টাকাকে। তবে সবাই না অনেকে সুন্দর মনটাকে ভালোবাসে।

এতদিন রুমে বসে ফেসবুকিং করছিলাম,,, তখন একটা আইডি থেকে মেসেজ আসে,,,, মেসেজটা দেখে আমার ভিতরটা জানি কেমন করে উঠলো। আমার মনে হলো সে আমার খুব কাছের কেউ। সে জানালো তার নাম জয়া। ওর বাসা থেকে আমাদের বাসা ৪-৫কি:মি দুরে। এর কয়েকদিন পর জয়ার সাথে ফোনে কথা হতো ফোন মেসেজ করা হতো। জয়া আমার কাছ থেকে আমার ছবি নিয়ে দেখেছে কিন্তু আমি ওর ছবি নেই নি কারণ,,,, আমি জানি জয়া আমার থেকে হাজার হাজার গুণ বেশি সুন্দর আর দেখে যদি ওকে ভালোবেসে ফেলি তখন তো এই কালো ছেলেকে সে ঘৃণা করবে অপমান করবে। আমার ছবি দেখার পরও জয়া আমার সাথে কথা বলতো,, তাই আমি তখনই বুঝেছি সে দেখতে যেমনই হোক তার মনটা অনেক ভালো আর সুন্দর। এভাবে চলে যায় বেশকিছু দিন। নিয়মিত কথা চলতে থাকে আমাদের। বেশ কিছুদিন পর আমি বুঝতে পারছি আমি জয়ার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি।

একসময় বুঝতে পারলাম আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। যেদিন থেকে ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটা বুঝতে পেরেছি সেদিন থেকে আমি প্রতিদিন একা একা কাদতাম। কেন কাদতাম জানেন??? কারণ আমি একটা কালো ছেলে।  আমার হয়তো যোগ্যতা নেই ভালোবাসার। আর জয়াই বা কেন ভালোবাসবে আমাকে। অনেক কাদতাম প্রতিদিন,,,,ভাবতাম জয়াকে যদি আমার নিষ্পাপ ভালোবাসার কথা বলি,,,, তাহলে তো সে আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করবে। হয়তো আর কোনোদিন কথাই বলবে না আমার সাথে।  স্কুল জীবনেইতো কেউ আমার সাথে মিশতো না কালো আর গরীব ছিলাম বলে। স্কুল জীবনে একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম। অনেক বেশি ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সে কি করেছে জানেন?? আমাকে অপমান করেছে। যদি কোন মানুষকে ওই কথাটা বলে অপমান করা হয় কেবল সেই বুঝবে কতটা যন্ত্রনাদায়ক আর কষ্টের।  সেই মেয়েটা আমাকে বলেছিলো,,,,, আমি নাকি তার নখেরও যোগ্য না আর আমার পরিবার নাকি তার পরিবারের যোগ্য না। সেই স্কুল জীবনের সেই অপমানের কথা মনে পরলে জয়ার থেকে পিছিয়ে আসি।

পুনরায় অপমান হওয়ার ভয়টা কাজ করতো মনের ভিতর। তবে আমি এইটা বিশ্বাস করতাম যে জয়া ৮-১০  অহংকারী মেয়ের মতো না। ওর মনটা অনেক সু্ন্দর ছিলো। বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়া পর আমি বুঝতে পারলাম আমি সত্যিই জয়াকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। তারপর প্রতিদিন জয়াকে আমার ভালোবাসার কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু প্রত্যেকবার ফিরে এসেছি বলতে পাররি নি। মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করতো,,,, জয়া কি আমার মকো একটা সাধারণ আর কালো ছেলেকে ভালোবাসবে।অনেক কষ্ট হতো ওকে ভালোবাসার কথা বলতে না পারায়। পরে যখন মনে হলো জয়া তো অনৌতের মতো না হয়তো সে আমার বালোবাসাকে ফিরিয়ে দিবে না। এই বিশ্বাস নিয়ে জয়াকে আমার ভালোবাসার কথা জানালাম। জয়া আমার শুনে চলকে গেলো। তারপর একদিন পর সে আমাকে তার উওর জানায়। হ্যা আমার ভালোবাসা স্বার্থক হয়েছে। জয়া আমাকে ফিরিয়ে দেয় নি। শুরু হলো একটা কালো ছেলের আর মিষ্টি মেয়ের প্রেমকাহিনী। অনেক ভালোকাসতাম জয়াকে আর জয়াও আমাকে কম ভালোবাসতো না। একদিন জয়াকে বললাম,,,,,

আমি: আচ্ছা তুমি আমার কি দেখে আমার ভালোবাসা গ্রহণ করলে???

জয়া: দেখো ফারাবি মানুষের যোগ্যতা দিয়ে ভালোবাসা হয় না,,, ভালোবাসতে সুন্দর একটি মন লাগে।

আমি: হুম। কিন্তু আমি দেখতে তো অনেক কালো দেখতেও ভালো না।

জয়া: হ্যা,,,কিন্তু কালোরা কি মানুষ না?? তাতের ভিতরে কি সুন্তর একটা মন নেই বলো?? আর শুনো কালোর ভিতরেও কিন্তু ভালো লুকিয়ে থাকে যেমন অন্ধকারে প্রকৃত আলো খুজে পাওয়া যায় যেটা বেশি প্রতিফলিত হয়।

আমি: হুম। আমাকে অনেক ভালোবাসো জয়া??.

জয়া: হ্যা বাসি সেটা বলে বুঝাতে পারবো না। তারপর বেস ভালোই এগোতে থাকে আমাদের ভালোবাসা। একসময় আমরা বিয়ে করি। বিয়ের পে জয়া আমার এতোটা কেয়ার করতো আর ভালোবাসতো যে যেটা আমি কল্পনাও করি নি। বাসর রাতের পরে সকালে একটা সুন্দর সুর শুনে ঘুম ভাংলো আমার। যে সুরটা পৃথিবীর অন্য সকল সুরকে হার মানায়। আমি অন্যরুমে গিয়ে দেখলাম জয়া কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করছে। আমি অবাক হয়ে যাই,,,এ মেয়েটা এতো ভালো আল্লাহন কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া আদায় করি এমন একটা বউ পাওয়ার জন্য। এর পরেরদিন থেকে শুরু হলো শাসন,,,, পরেরদিন বাসায় আসতেই জয়া বলল,,,,,

জয়া: এই শুনো আজকে কয় ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছো??

আমি: না মানে এক ওয়াক্ত না

জয়া: আজকে নামাজ না পড়ার কারণে তোমার খাবার বন্ধ।

আমি: কি বলো,,,আমারতো অনেক ক্ষুদা লাগছে আর তোমার রান্না না খেলে আমার পেট ভরে না।

জয়া: যেদিন একওয়াক্ত নামাজ মিস হবে সেদিস অনেক শাস্তি পেতে হবে। এরপর না খেয়ে ঘুমাতে গেলাম।

জয়া: দাড়াও,,,যে নামাজ পরে না সে আমার সাথে ঘুমাতে পারবে না। যাও নিচে ঘুমাও। তারপর আর কিছু বলতে পারলাম না কারণ বলে লাভ নেই সে যা বলে তাই করে। তাই ফ্লোরে শুয়ে পরলাম,,,, একটু পর কান্নার শব্দ শুনতে পারলম দেখি জয়া কাদছে।

আমি: এই শোনা বউ কাতছো কেন???

জয়া: চুপ কথা বলবানা। আমি কাদলে তোমার কি???

আমি; আমার যে কষ্ট হয়

জয়া: তাহলে আমাকে কষ্ট দাও কেন?? জানো আমাও না খেয়ে আছি??

আমি: এই কেন??

জয়া: কারণ স্বামীকে না খাইয়ে রেখে বউ কি করে খাবে?? সব তোমার দোষ।

আমি: আমি কি করলাম??

জয়া: বোঝোনি কি করেছো,,,তুমি নামাজ পড়ো নি তাই না খাইয়ে রেখেছি আর ফ্লোরে ঘুমাতে দিয়েছি। তুমি জানো না তোমার বুকে না ঘুমালে আমার ঘুম আসে না।

আমি: হ্যা বুঝেছি।

জয়া: প্লীজ আর কখনো নামাজ মিস করবে না কারণ আমি মৃত্যুর পরও তোমাকে চাই। জয়ার কথা শুনে আমি কেদে দিলাম। এতো ভালোবাসে এই কালো ছেলেটাকে।

আমি: ঠিক আছে আর কখনো নামাজ মিস করবো না,,তোমাকে কষ্টও দিবো না।

এরপর একদিন,,,,,

আমি: আচ্ছা জয়া আল্লাহ আমাকে এতো কালো না বানিয়ে একটু সুন্তর বানাতে পারতো না??

জয়া: বাজে কথা বলবা না। আল্লাহর থেকে তুমি কি বেশি বুঝো??

আমি: ঠিক আছে কিন্তু……

জয়া: আচ্ছা আশে পাশে কতো মানুষতো দেখো কেউ অন্ধ,কেউ বোবা,কেউ কথা বলতে পারে না। অনেকের হাত পা নেই,,অনেকে আবার পাগল,, আরো অনেক কিছু। তাতের মধ্যে অনেকেই দেখতে সুন্দর। আচ্ছা আল্লাহ যদি তোমাকে সুন্তর চেহারা দিয়ে  তাদের মতো সেই সব বিকলঙ্গ পঙ্গু মানুষের মতো তৈরি করতো তখন কেমন হতো??

আমি: হ্যা,,আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।

জয়া: হ্যা তাইতো শুকরিয়া আদায় করো,,নামাজ আদায় করো কারণ আল্লাহ তোমাকে স্বাভাবিক মানুষ বানিয়েছে।
অনেক ভালোবাসি আমার এই মিষ্টি বউটাকে।

এখন অনেক ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছে আমাতের দিনগুলো,,, তাই আল্লাহ তা’আলা আমাদের যেভাবে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে তাই নিয়েই যেন আমরা সন্তুষ্টু থাকি এবং আল্লাহর দররবারে বেশি বেশি করে শুকরিয়া আদায় করি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত