বাসাটা মোটমাট চার তলা। আমরা থাকি দোতলায়। আর বাড়িওয়ালী আপান্টি থাকে আমাদের ঠিক সামনের ফ্লাটে।
সেদিন শুক্রবার। শীতের দিন তাই
খুব বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছি। এগারোটার দিকে গোসল করে ছাদে রোদ পোহাতে চলে গেছি। বিশাল বড় বাড়ির বিশাল বড় ছাদ। ছাদের একপাশে বাড়িওয়ালী আপান্টি বিভিন্ন ধরনের গাছপালা লাগিয়ে বাগান করে ফেলেছে। আর অন্যপাশটা ভাড়াটিয়াদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মাঝখানে বাসের মাচা দিয়ে বেড়া দিয়ে রেখেছে। এজন্য আম পাবলিক আপান্টির বাগানে প্রবেশ করতে পারেনা। ছাদের এক কোণে একটা চৌকি ফেলে রাখা আছে। ওটার উপর বসেই রোদ পোহাচ্ছি আর ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টগুলো চেক করছি। এমন সময় কাধে মশারি আর কতোগুলো ভেজা কাপড়চোপড় নিয়ে একটা মেয়ে টুক টুক করে ছাদে উঠে এলো। বয়স আঠারো কি উনিশ হবে, গায়ে কালো টিশার্ট আর পরনে প্লাজো। বেশ ভালই সুন্দরী। এই মেয়েকে এর আগে কখনো দেখিনি। বাসায় হয়তো নতুন।
ছাদের দুইপাশে দুই পিলারের সাথে বেশ উচু করে একটা লম্বা রশি টাঙ্গানো হয়েছে। সেই রশিতে মেয়েটা ভেজা কাপড়চোপড়গুলো নাড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু রশিটা কোনো মতেই নাগাল পাচ্ছে না। কারন রশিটার তুলনায় মেয়েটা একটু খাটো। মেয়েটি আমার দিকে একবার আড়চোখে তাকালো। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। মেয়েটি ভেজা জামাকাপড় নিয়ে কয়েকবার লাফিয়ে রশিটা ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু বিফল হয়ে মুখ ছোট করে চলে যেতে লাগলো।
পেছন থেকে আমি ডাক দিলাম।
“এক্সকিউজ মি!”
মেয়েটি ঘুরে তাকালো।
“আমি কি একটু সাহায্য করবো?”
মেয়েটি ফিরে এলো। রশিটা একটু নিচু করে ধরলাম। ও এক এক করে সবগুলো জামাকাপড় নেড়ে চলে গেল।
আবার মনযোগ দিলাম ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টে। শারমিন আক্তার নামে একটা মেয়ের আইডি থেকে রিকুয়েস্ট এসেছে এক মাস আগে। এই সেই শারমিন আক্তার, যে একটু আগে ছাদে কাপড় নেড়ে চলে গেল।
নিজের অজান্তেই মনটা কেমন জানি মেতে উঠলো। সাথে সাথে রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম।
সকালে শারমিন আক্তার যেখানে কাপড় শুকাতে দিয়ে চলে গেছে, বিশ্বাস ছিলো বিকেলে সেগুলো নিতে আসবে। এজন্য সারা বিকেল ওর জন্য অপেক্ষা করলাম। কিন্ত বেলা শেষে শুধু ওর বাসার বুয়ার সাথে দেখা হল।
মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিছুক্ষন পর টুং করে একটা মেসেজ আসলো। শারমিন আক্তার লিখেছে “ধন্যবাদ”।
আমি লিখলাম “সরি।”
“সরি কেন?”
“রিকুয়েস্ট দেড়িতে এক্সেপ্ট করার জন্য”
“ইটস্ অল রাইট, রাতে কথা হবে। বাই”
” ওকে ভাল থাকবেন ”
রাত ১০ টার দিকে ডিনার সেরে সিগারেট নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। ফেসবুক অন করে শারমিনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম কিন্তু শারমিন নেই। সে অফ লাইন। একটু পর ছোট ভাই ছাদে এসে বলল, ভাইয়া লাইটার দে। আম্মু চুলা জ্বালাবে।
“লাইটার দিতে পারবোনা। দোকান থেকে ম্যাচ নিয়ে আয় যা।”
” পারবোনা দোকানে যেতে। তুই লাইটার দে।”
“না”
“আচ্ছা আমি তাহলে আম্মুকে ডাকছি”
“থাক বাদ দে, কাজ শেষ হলে আবার দিয়ে যাস ভাই”
ছোট ভাই লাইটার নিয়ে চলে যেতে যেতে বললো,
“* খাওয়া শেষ হলে জলদি জলদি নেমে আইসেন স্যার। আমি আপনার চাকর হইনি যে আপনাকে বার বার ডাকতে আসবো।”
ভাইয়ের কথা শুনে মেজাজটা বিগড়ে গেল। এই মেয়েটা অনলাইনে আসার কথা বলে আসছেনা কেন?
দেড় ঘন্টা ছাদে বসে রইলাম। এর মধ্যে ছোটভাই ৩ বার ডাকতে এসেছে। ঘার ধরে দোতলায় পাঠিয়ে দিয়েছি। সারে এগারোটা বাজে শারমিন মেসেজ দিলো। মেজেস পেয়ে যেন আমার মরুতে বৃষ্টি এলো। এমন কেন অনুভুতি হচ্ছে মেয়েটার জন্য। মনে হচ্ছে প্রথম দেখেই বোধহয় প্রেমে পরে গেছি। কিন্তু গল্প উপন্যাসের মতো ওর পরনে তো নীল শাড়ি কিংবা কালো টিপ ছিলো না। ছিলো টিশার্ট আর প্লাজো। তাও কেন প্রেমে পরলাম। বিষয়টা ঘোলাটে। জমিয়ে চ্যাটিং করলাম দুজন। চ্যাটিং করতে করতে দুজন দুজনের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি। কিন্তু আমি ঠিকমতো ডুবতে পারছিনা। ছোটভাই ফোন করে ডিস্টার্ব করছে। কিছুক্ষন পর মা ফোন করে নরম সুরে বলল,
“এক সেকেন্ডের মধ্যে বাসায় ঢুকবি”
সুপার ম্যানও সেটা পারবে কিনা জানিনা।
কিন্তু এবার মায়ের হুকুম এসেছে, চাইলেও ছাদে বসে থাকতে পারবো না।
চ্যাটিং করতে করতেই ছাদ থেকে নিচে নামতে লাগলাম।
বাসার দরজায় নক করেদাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চ্যাটিং করছি। এদিকে ২ মিনিট ধরে দরজা খট-খটাচ্ছি কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। রাগের মাথায় জোরে জোরে শব্দ করতে লাগলাম দরজায়। ভেতর থেকে ছোট ভাই দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলার সাথে সাথে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। ছোট ভাইয়ের উপর মেজাজ দারুন বিগড়ে আছে। অন্ধকারে ঠাস ঠাস করে চর বসিয়ে দিলাম ছোট ভাইয়ের গালে।
ওপাশ থেকে অপরিচিত পুরুষকন্ঠ বলছে, কে রে শারমিন দরজায়?
শারমিন হাউ মাউ করে চিৎকার করতে লাগলো। শারমিনের মা চার্জার লাইট জ্বালিয়ে আমার দিকে ধেয়ে আসতে লাগলো।
এতক্ষনে বুঝতে পারলাম আমি ভুল ফ্লোরে ঢুকে পরেছি।
চ্যাটিং করার তালে তালে ভুল করে দোতলায় জাগয়ায় তিন তলায় শারমিনের ফ্ল্যাটে ঢুকে পরেছি। কিন্তু কি কপাল আমার চরটা শারমিনের গালেই পরতে হলো? ফ্ল্যাটটা অন্য কারো হতে পারলো না।
এদিকে এতোক্ষনে বাসার মধ্যে লোক জড়ো হয়ে গেছে। প্রথমে গুন্ডা মস্তান ভেবে শারমিনের বাবা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। পরে যখন বুঝিয়ে বললাম, তখন কিছুটা ক্ষান্ত হলো। কিন্তু শারমিনের মা আমাকে পুলিশে দিতে চাইছিলো। পরে যখন বাড়িওয়ালী আপান্টিকে নিয়ে বিচার শালিস বসলো তখন আমি বেকুসুর খালাস পেলাম। আপান্টির একটা মেয়ে আছে নাম তিতলি। ভারী সুন্দরী দেখতে। তিতলির বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।