আমি আজও যখন খাওয়া শেষে খারার টেবিলে কিছুক্ষন বসে রইলাম তখনি মিহিন এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললো,
-আজকেও?
মিহিনের কথায় আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই মেয়েটার মুচকি হাসিতে শব্দ ভেসে উঠলো।মুচকি হাসিতে কি শব্দ হয়?হয়তো হয় নয়তো না।আমি মিহিনকে কিছু বলার আগেই মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-ধরতে হবে?
-অবশ্যই।
আমার কথায় মেয়েটা এবার বেশ জোরেই হেসে উঠলো।মিহিনের হাসি দেখে আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না।এই মেয়েটা এত হাসে কেমনে।অবশ্য মিহিন হাসলে খারাপ লাগে না তবে আজকের হাসিটা আমার কাছে খুব একটা ভালও লাগছে না।
মিহিন আমার কাছে এসে আমাকে ধরতেই আমি ওর কাধে হাত রেখে উঠে দাঁড়ালাম।মেয়েটার মুখে এখনও সেই হাসি লেগেই আছে।তবে ওদিকে আমার খেয়াল রাখা চলবে না।
আমি একটু এগুতেই মেয়েটা বললো,
-বিছানায় শোবে নাকি বেলকুনিতে গিয়ে একটু বসবে?
মিহিনের কথায় আমি কিছু বললাম না।ও যে আমার সাথে মজা নিচ্ছে এইটা আমি বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছি।যদি বসেই থাকতে চাইতাম তাহলে অন্তত এখান থেকে উঠতাম না।আমি বিছানায় গিয়ে বসতেই মিহিন বললো,
-চা এনে দেই।
ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে একটা জোরে ধমক লাগিয়ে দেই।কিন্তু ওর মলিন মুখটা দেখার কোন ইচ্ছেই আমার নেই।আমি মিহিনকে লাগবে না বলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
মিহিনের সাথে আমার যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল সেদিন আমার সাথে আমার মা,বাবা,আর চাচারাও ছিলেন।মেয়ে দেখতে আসলে যে কেও বিরিয়ানি খেতে দেয় সেটা সেদিনই ছিল আমার প্রথম দেখা।অবশ্য আমার মেয়ে দেখার আগেই খেতে চাওয়াটায় চাচা বেশ রেগে গিয়েছিলেন।
আমি আর কিছু বলিনি।চুপচাপ মেয়ে দেখার পর যখন খেতে দিল তখন আমার আনন্দ দেখে কে।যার জন্যে এতক্ষন অপেক্ষা করছিলাম সেটাই এখন আমার সামনে।
চাচা কিছুক্ষন পর যখন আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,কেমন?আমি তখন বিরিয়ানির মাংস মুখে পুরে দিয়ে বললাম,
-বেশ ভাল।এত স্বাদের বিরিয়ানি কোনদিন খাইনি।
আমার কথায় চাচা রেগে গিয়ে বললো,
-আমি মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছি।
-ও আচ্ছা।ভাল বেশ ভাল।
তবে যখন শুনলাম বিরিয়ানি এই মেয়েটাই রান্না করেছে তখন আমি চাচার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,
-মেয়েটা শুধু ভাল না,বেশ বেশ বেশ ভাল।যে মেয়ে এত ভাল বিরিয়ানি রান্না করতে পারে সে মেয়েকে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করা যায়।
ভেবেছিলাম চাচা আমার কথায় রেগে যাবেন কিন্তু তিনি মুচকি হেসে মিহিনের বাবার সাথে কথায় মনোযোগ দিলেন।অবশ্য সেটা যে আমার জন্যে ভাল দিক বইয়ে আনবে এটা বেশ ভালভাবেই বুঝেছিলাম।
আমার যখনি ঘুম ঘুম ভাব প্রায় চলে এসেছে তখনি মিহিন এসে মুচকি হেসে বললো,
-আরও একটু গরম করে আনবো?
আমি মিহিনের কথায় ওর দিকে শান্ত চোখেই তাকালাম।মিহিনকে আমি যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।এই মেয়েটা যে এতটা মজা করতে পারে আমি ভাবতেও পারিনি।অবশ্য কেও যদি মজা করার সুযোগ টা তৈরি করে দেয় তাহলে সেটা অন্য কথা।যেমন আমি এখন সেই একই কাতারের একজন অসহায় ব্যাক্তি।
বিয়ের পর মিহিন যেদিন বিরিয়ানি রান্না করেছিল সেদিন আমি অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়িই ফিরেছিলাম শুধু মাত্র মিহিনের হাতে রান্না করা গরম গরম বিরিয়ানি খাওয়ার জন্যে।ফ্রেশ হয়ে যখন আমি খাবার টেবিলে বসলাম তখন মেয়েটা প্লেটে বিরিয়ানি বেড়ে দিতে দিতে আমাকে বেশ কিছু কথা জিজ্ঞেস করেছিল।কিন্তু আমার সেদিকে কোন নজর ছিল না।বিরিয়ানির ঘ্রানে যেন পেট ভরে যাচ্ছিলো।
অবশ্য বিপত্তিটা বাধলো খাওয়া শেষ হতেই।কেমন যেন চেয়ার থেকে উঠতে পারছিলাম না।আমার এ অবস্থা দেখে মিহিন প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরে যখন বুঝতে পারলো তখন ওর হাসি দেখে কে।মেয়েটার হাসতে হাসতে একদম গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।আমি মিহিনকে যখন কাছে আসতে বললাম তখনও মেয়েটার মুখে হাসি লেগেই আছে।আমি ওকে ধরে একটু দাঁড়িয়ে বললাম,
-কিভাবে রান্না করো,যেটা শুধু খেতেই ইচ্ছে করে।আজ তোমার জন্যে এই অবস্থা।
আমার কথায় মিহিন বললো,
-কিভাবে এত খেতে পারো,যে খাওয়ার পর উঠতে পারো না।টেনে তুলতে হয়।
সেদিন মিহিনের কথায় আমি কিছু বলতে পারিনি।মেয়েটা তো খারাপ কিছু বলেনি।সত্যি ই তো,এভাবে কেও খেতে পারে।
সেদিনের পর মিহিন আর বিরিয়ানি রান্না করেনি।কিন্তু আমার জোরাজোরিতে মেয়েটা আজ যখন আবার বিরিয়ানি রান্না করলো তখন আজও সেই দিনের মতই হয়ে গেলো।এতটাই বেশি খেয়ে ফেলেছি যে এখন দাড়াতেই কষ্ট হচ্ছে।
আমার চুপ থাকা দেখে মিহিন আবারও বললো,
-আনবো আর একটু গরম করে?
মিহিনের কথায় আমি এবার উঠে বসে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-এত করে যখন বলছো,তাহলে আনো আর একটু।
আমার কথায় মিহিনের মুখটা কেমন যেন হয়ে গেলো।ও হয়তো ভাবতেই পারেনি আমি ওর কথায় আবার খেতে চাইবো।অবশ্য আমি যে আরও একটু খেতে পারবো এটা হয়তো আমার নিজের ই বিশ্বাস হচ্ছে না।কিন্তু ওই একই কথাই,পেট ভরলেও মন বলে তুই পারবি,পারবি।
আমি এবার মিহিনের দিকে তাকিয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়তেই মেয়েটা দৌড়ে এসে আমাকে ধরে বললো,
-কি হয়েছে?
-পেট ব্যাথা।
আমার মুখে পেট ব্যথা শুনে মিহিনের মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেলো।মেয়েটা এখন কি করবে কি না করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।আমি শুধু দেখছি ওর অস্থিরতা।একবার এ রুমে তো আরেক বার অন্য রুমে।মেয়েটা কি খুজছে সেটাই বুঝতেছিনা।
আমি এবার মিহিনকে ডাক দিতেই মেয়েটা আমার কাছে এসে বসলো।ওর চোখটা কেমন যেন পানিতে ভরে গেছে।যে মেয়েটা মাত্রই আমার সাথে মজা করছিল সেই মেয়েটার আমার প্রতি ভালবাসাটা এবার স্পষ্টই ফুটে উঠেছে।
আমি এবার কিছু না বলে স্বাভাবিক ভাবে উঠে বসে মিহিনের গালে হাত রেখে বললাম,
-এই দেখো,আমার কিছুই হয়নি।তোমার মজা দেখে আমিও একটু মজা করছিলাম।
আমার কথায় মিহিন আমাকে কিছু না বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-এরকম মজা আর কোনদিনও করবে না।কোনদিনও না।
মিহিনের কথায় আমি কিছু বললাম না।মেয়েটা সত্যি ই বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।আমি আর কিছু না বলে মিহিনকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আর মনে মনে বললাম,
আর কোনদিনই এরকম ফালতু মজা করবো না।কোন ভাবেই না,কোন মতেই না।