কয়েকশো বার ম্যাসেজ পাঠানোর পরও যে কোনদিন ম্যাসেজের রিপ্লাই দেয় না, সেই হঠাৎ করে নিজে থেকে ম্যাসেজ দিলো ব্যাপারটা কি বুঝতে পারার আগেই- রিপ্লাই করলাম।
—হ্যালো, কেমন আছেন?
—ভাল, কি করছেন?
—এইতো বসে আছি, আর আপনার সাথে চ্যাটিং করছি। আপনি কি করছেন?
কিছুক্ষণ ম্যাসেজ সিন হলো না, নটিফিকেশনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সে গণহারে আমার ছবিতে লাভ রিএক্ট দিতে শুরু করেছে। মিনিট পাঁচেক গণহারে ছবিতে রিএক্ট দেয়ার পর ম্যাসেজে লিখল, না তেমন কিছু না আপনার ছবি দেখছিলাম।
—তাতো দেখতেই পাচ্ছি, কিন্তু এত্তো লাভ রিএক্ট দিচ্ছেন যে?
—বারে! ভাল লাগলে দিতে পারি না? দেয়া কি অপরাধ নাকি?
—নাহ, তা বলিনি। কিন্তু আপনিতো কখনো ম্যাসেজ পাঠালে রিপ্লাই দেন না, আজ হঠাৎ নিজে থেকেই ম্যাসেজ দিচ্ছেন?
—আসলে পড়াশোনার চাপে কারও সাথেই তেমন একটা কথা বলা হয় না। আচ্ছা একটা কথা বলি যদি কিছু না মনে করেন?
—অবশ্যই বলুন।
—আপনি কি সিঙ্গেল?
—হ্যাঁ।
—সত্যি সিঙ্গেল?
—হ্যাঁ।
—বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনার মত হ্যান্ডসাম ছেলের গার্লফ্রেন্ড নেই।
—আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?
—নাহ।
—মিথ্যা বলছেন?
—মিথ্যা কেন বলব?
—সত্যি নেই?
—নাহ বাবা নেই।
শশীর ম্যাসেজ দেখে আমার হৃদক্রিয়া ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছে। বুকের ভেতরের ধুকবুক ধুকবুক শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি৷ একের পর এক ম্যাসেজ দেখে একদিকে খুব উত্তেজিত হচ্ছি অপরদিকে চিন্তাও হচ্ছে- এটা শশীই তো? নাকি অন্যকেউ শশীর আইডি থেকে আমাকে বলদ বানানোর চেষ্টা করছে? চিন্তার মাঝে ডুব দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে যেতেই টুইং করে ম্যাসেজের শব্দ হলো, শশী ম্যাসেজ পাঠিয়েছে- আপনিকি বিরক্ত হচ্ছেন?
—নাহ, বিরক্ত হবো কেন?
—তাহলে ম্যাসেজ সিন করে রিপ্লে দিচ্ছেন না কেন?
—স্যরি, মা ডেকেছিলো।
—ও আচ্ছা। আপনিকি জিগাতলাতেই থাকেন?
—হ্যাঁ।
—গুড। আপনার প্রিয় রং কি?
—সাদা, কালো।
—আমারও। প্রিয় খাবার?
—আলুভাজি, আলুভর্তা, ডাল, চিংড়ি মাছ, ইলিশমাছ, এইসবই।
—ওমা, আমারও।
কিছুক্ষণ পর শশীর আইডি থেকে ভিডিও কল এলো, সাথে সাথেই রিসিভ করলাম, কিন্তু মোবাইলের স্ক্রীন পুরো কালো হয়ে আছে, ঘরের বাতি নিভিয়ে কল করেছে শশী।
—হ্যালো, হ্যালো, কি ব্যাপার অন্ধকার কেন? হ্যালো, শুনতে পাচ্ছেন?
মিনিটখানেক পর লাইন কেটে দিয়ে শশী ম্যাসেজ পাঠালো-
—স্যরি, আমি কথা বলতে পারব না, ঘরে আম্মু আছে।
—আচ্ছা সমস্যা নেই।
—আপনার ভয়েসটা আপনার মতই মিষ্টি।
—থ্যাং ইউ।
—একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না করেন?
—হ্যাঁ বলুন।
—আমরা কি দেখা করতে পারি?
—সত্যি দেখা করবেন?
—তাহলে কি মিথ্যা বলছি?
—কোথায়, কবে দেখা করবেন?
—আগামীকাল বিকেল চারটার দিকে ধানমন্ডী লেকের ‘ব্যাচেলর পয়েন্টে’।
—ঠিক আছে। কিন্তু …
—কিন্তু কি?
—আপনার ফোন নম্বরই তো নেই আমার কাছে।
—ও হ্যাঁ তাই তো, আপনার নম্বরটা দিন।
নম্বর দেয়ার সাথে সাথেই একটা ম্যাসেজ এলো, “আমি শশী, কাল তাহলে দেখা হচ্ছে”।
রাতে শশীকে নিয়ে সুদর সুন্দর স্বপ্ন দেখলাম। আমরা বসে আছি ব্যাচেলর পয়েন্টে, আমাদের পাশে কয়েকজন মিষ্টি সুরে গিটার বাজাচ্ছে, শশী আমাকে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে। ব্যাচেলর পয়েন্ট থেকে উঠে আমরা রবীন্দ্র সরোবরের দিকে যাবার সময় শশী আমার হাতে একটা হাত রেখে কাঁধে মাথা রাখল, আমরা হাটছি, পথে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। যুগের পর যুগ কেটে যাচ্ছে, আমরা ঠিক একই যায়গায় হাটছি, একটু পর পর উপর থেকে একটা করে গাছের মরা পাতা পরছে, এরপরই মোবাইলের এলার্মে ঘুমটা ভেঙে গেল।
ঘুম থেকে উঠেই দ্রুত রেডি হয়ে সাড়ে তিনটার মধ্যে চলে এলাম ব্যাচেলর পয়েন্টে।
পৌনে চারটার দিকে শশীকে কল করলাম, কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ পর শশী ম্যাসেজ পাঠালো,
—আপনি এসে পরেছেন? আমি আসতেছি, রাস্তায় আছি।
ম্যাসেজে লিখলাম, হ্যাঁ আমি চলে আসছি আপনি আসুন।
সাড়ে চারটা বেঁজে গেল, শশীর আসার কোন খবর নাই। কল করলাম, ফোনটা কেউ ধরল না। পাঁচটা বেঁজে গেল, শশী এলো না। বেশ কয়েকবার কল করার পরেও কেউ ফোন ধরল না, সাড়ে পাঁচটা বেঁজে গেল তবুও শশী এলো না। কল দিতে দিতে একসময় ফোন বন্ধ পেলাম। একদিকে মনে হচ্ছে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে অপর দিকে মনে হচ্ছে ইচ্ছা করেই এমন করছে।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একবুক দুঃখ নিয়ে রবীন্দ্র সরোবরের দিকে হাটতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর পর উপর থেকে একটা করে গাছের মরা পাতা পরছে। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে, ইচ্ছে করছে লেকের পানিতে ঝাঁপিয়ে পরি, কিন্তু প্রচন্ড শীত তাই আর ঝাঁপ দেয়ার সাহস হলো না।
হাটতে হাটতে রবীন্দ্র সরোবরের কাছে চলে এসেছি ওমন সময় কি যেন একটা আমার মাথায় পরলো। মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম, উপর থেকে পাখি টয়লেট করে দিয়েছে।
বাসায় এসে শশীকে মনের দুঃখে কয়েকটা ম্যাসেজ পাঠালাম। কিন্তু ম্যাসেজের কোন রিপ্লাই এলো না।
সপ্তাহখানেক চলে গেল শশী তখনো ম্যাসেজ সিন করেনি, একদিন হুট করেই শশীর প্রোফাইলে গিয়ে দেখলাম, সর্বশেষ পোস্টে লিখেছে-
“আমার আইডিটা এক সপ্তাহ থেকে হ্যাকড ছিলো, এই কয়েকদিনে কারও কাছে এই আইডি থেকে কোন ম্যাসেজ গিয়ে থাকলে দুঃখিত”।