“আপনার সাথে দেখা করার জন্য একজন লোক নীচে অপেক্ষা করছে।”
আনিকার কথা শুনে সোফা থেকে উঠতে হলো। এত সকালে কে এলো দেখা করতে?
বাইরে বেরিয়ে আমি রীতিমত চমকে গেলাম। সিয়াম বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সিয়ামকে দেখে আমার যে কি পরিমান খুশি লাগলো তা বলে বোঝাতে পারবো না।
” আরে সিয়াম তুই? বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয়।”
” নারে দোস্ত। অফিসে যাচ্ছিলাম ভাবলাম তোর সাথে দেখা করে যাই।”
” তোর অফিস কি এদিকে নাকি? ”
” হ্যা তিনদিন আগে অফিস সিফট হয়েছে এদিকে।”
” তাহলে তো তোর জন্য একটু সমস্যা হয়ে গেল আশা যাওয়ায়।
” তা একটু তো হয়েছেই।”
” তো ভেতরে এসে এককাপ কফি তো খেতে পারিস।”
” নাহ বন্ধু, এখন না। বিকেলে তোর সাথে দেখা করে যাবো। তোর সাথে একটা জরুরি কথা বলার ছিল। অফিস থেকে ফিরে কফি খেতে খেতে কথা বলা যাবে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে বিকালে আসবি কিন্তু।”
সিয়াম ইদানিং কেমন যেন বদলে গেছে। আজ প্রায় ছয়মাস পর ও আমার সাথে দেখা করতে এলো। কিন্তু কোনপ্রকার উৎসাহ দেখালো না। সিয়াম কিন্তু এমন ছিল না।
যথারীতি সিয়াম বিকেলে চলে এলো আমার কাছে।
” সিয়াম তা কি খবর তোর? ”
” এইতো ভাল।”
সিয়াম যদিও মুখে বললো সে ভাল আছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছি সিয়াম ভাল নেই।
” সিয়াম কি হয়েছে তোর? ”
” কই কিছু হয়নি তো আমার।”
” সিয়াম তুই ভাল করেই জানিস তুই আমার থেকে কিছুই লুকাতে পারবি না। কি হয়েছে তোর খুলে বল।”
সিয়াম একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর আমাকে যা বললো তা শোনার জন্য আমি মোটেও তৈরী ছিলাম না।
” আবির আমরা যে বাড়িটায় থাকি ওই বাড়িটায় সমস্যা আছে।”
” সমস্যা বলতে? ”
” বাড়িটায় খুব খারাপ কিছু একটা আছে।”
সিয়ামের মুখে এই কথা শুনে অবাক হলাম। এই কি সেই সিয়াম যে ভূতের নাম শুনলেই হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খেত? যে আমাদের সাথে বাজি ধরে পুরো একরাত শ্মশানে কাটিয়েছিল?
” সিয়াম কি বলছিস এসব? ”
” হ্যা দোস্ত। রাতে ঘুমাতে পারি না। অদ্ভুত অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখি, ভয়ংকর শব্দ শুনি।”
” তাহলে বাসা ছেড়ে দে।”
” ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু যেদিন বাড়িটা পাল্টাবো সেদিনই রোজার পা মচকে গেল। সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে আমার মাথা ফেটে গেল। যতবারই বাড়ি পাল্টানোর চিন্তা করেছি ততবারই আমার বা রোজার কোন না কোন সমস্যা হয়েছে। তাই এখন আর চেষ্টা করি না বাড়ি ছাড়ার। দাঁত মুখ চেপে পড়ে আছি সেখানেই।”
সিয়াম আবারো দ্বীর্ঘশ্বাস ফেললো। সত্যিই বেচারা খুব ঝামেলায় আছে।
” সিয়াম আমি তোদের বাসায় দুইদিন থাকতা চাই। কোন অসুবিধা আছে? ”
” কি বলিস তুই? তুই থাকবি আর আমার অসুবিধা হবে? কিভাবে ভাবলি এইটা? ”
” ঠিক আছে তাহলে কালকে সকালেই তোদের বাসায় যাচ্ছি।”
অনেকদিন আগে বান্দরবানে গিয়েছিলাম আমি আর আনিকা। সেখানে যেই কটেজে উঠেছিলাম সেখানে কাকতালীয় ভাবে আমার স্কুলজীবনের বন্ধু আব্দুল্লাহর সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল। ইয়া বড় দাঁড়ি, মাথায় পাগড়ি চোখে সুরমা। একেবারে হুজুর হয়ে গিয়েছিল আব্দুল্লাহ।
ওর সাথে কয়েকদিন ঘোরাফেরার পর কিছু জিনিস শিখেছিলাম। দেখি সিয়ামের বাড়িতে গিয়ে সেই জিনিসগুলো প্রয়োগ করে যদি কোন উপায় হয়।
পরদিন শুক্রবারে খুব ভোরেই সিয়াম গাড়ি নিয়ে চলে এলো আমার কাছে। তারপর অানিকার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উঠে পড়লাম গাড়িতে।
দেড়ঘন্টার মধ্যেই পৌছে গেলাম সিয়ামদের বাড়িতে। বাড়ির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখি রোজা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।
রোজাকে দেখেই বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো। কারন একসময় এই রোজা নামের মেয়েটাকে পাগলের মত ভালবাসতাম।
কিন্তু কখনো রোজাকে বলা হয়ে উঠেনে। হঠাৎ একদিন শুনি সিয়ামের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছে রোজা। আমার ভালবাসাটাও চিরদিনের জন্য আমার বুকের খাঁচায়ই বন্দি থেকে গেল।
” রোজা কেমন আছিস? ”
” ভাল আছি আবির। তুই কেমন আছিস? ”
” এইতো ভাল। চলে এলাম তোদের সাথে দুইদিন ছুটি কাটাতে। কতদিন হলো সিয়াম, তুই আর আমি আড্ডা দেই না।”
” সত্যিই রে অনেক মিস করি সেই দিনগুলো।”
সিয়াম বোধহয় আমার এখানে আসার কারণটা বলেনি রোজাকে। যাক বলেনি ভালই হয়েছে।
সারাদিন চলে গেল ওদের সাথে অাড্ডা দিয়ে। সত্যিই কলেজ জীবনের দিনগুলোকে অনেক মিস করেছিলাম এতদিন। আজ আবার আমরা তিনজন একসাথে আড্ডা দিয়ে অনেক ভাল লাগলো।
স্কুল কলেজ এবং ইউনিতে এভাবেই আমরা তিনজন একসাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিতাম।
সারাদিন আমাকে কোন একটা ব্যাপার খুবই অস্বস্তির মধ্যে রেখেছে। ব্যাপারটা ধরতে পারিনি। কখনো মনে হয়েছে জানালার পর্দার ওপারে কেউ একজন আমাকে দেখছে। আবার কখনো মনে হচ্ছিল আমার পেছন দিয়ে হুটহাট করেই কেউ দ্রুততর গতিতে চলে যাচ্ছে।
কথা বলার ফাঁকে ফাঁকেই আমি পেছন ফিরে তাকাচ্ছি দেখেই রোজা প্রশ্ন করে বসলো,
” কিরে একটু পরপর পেছন ফিরে কি দেখিস? ”
” নাহ কিছুনা।”
রোজা আর সিয়াম মূহুর্তের মধ্যেই নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করে নিল। আমি যে কিছু একটা অস্বাভাবিক জিনিস টের পেয়েছি তা হয়তো ওরা দুজনেই বুঝতে পেরেছে।
যাক রাতের বেলা খাওয়া শেষে আমি কিছুক্ষন বাইরে হাঁটাহাঁটি করি। এটা আমার অনেকদিনের অভ্যাস। তাই আমি একটু বাইরে বের হলাম। সিয়ামদের বাড়ির সামনে আবার একটা মাঠ আছে। তো আমি চলে গেলাম সেই মাঠেই হাঁটাহাঁটি করতে।
সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে ফোন দিলাম অানিকাকে। সারাদিনে একবারও কথা হয়নি অানিকার সাথে।
” হ্যালো আনিকা।”
” এতক্ষনে ফোন দেওয়ার সময় হলো আপনার? ”
” হা হা আসলে রোজা আর সিয়ামের সাথে কথা বলতে বলতে!”
দোতলার একটা ঘর আমার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই দুইদিন এই ঘরেই রাতে ঘুমাবো। আমি বাইরে আসার সময় বাতি নিবিয়ে জানালার পর্দা টেনে দিয়ে এসেছিলাম। অানিকার সাথে কথা বলতে বলতে যখন দোতলার ঘরের দিকে তাকালাম তখন আমার মুখের কথা বন্ধ হয়ে এলো।
ঘরের বাতি জ্বলছে। জানালার পর্দা ভেদ করে বাতির আলো বাইরে চলে এসেছে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি জানালার গ্রীল ধরে কোন এক নারী ছায়া দাঁড়িয়ে আছে।
” আনিকা তোমাকে পরে ফোন দিচ্ছি।”
ফোনটা কেটে দিয়ে দৌড় দিলাম আমার শোবার ঘরের দিকে। সিড়ি বেয়ে তরতর করে উপরে উঠে গেলাম। দরজার হাতল ধরে জোরে ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। সাথে সাথেই ঘরের বাতি নিভে গেল।
অতি অল্পক্ষনের জন্য একটা মেয়েকে দেখেছিলাম। তারপর সবই অন্ধকার। একটা গা হীম করা বাতাস বয়ে গেল শরীরের উপর দিয়ে।
পরমূহুর্তেই একটা বিকট পোড়াগন্ধ এসে নাকে সুড়সুড়ি দিতে শুরু করলো। অনেকটা মাংস পোড়া গন্ধ। গন্ধতা এতটাই বিদঘুটে যে পেটটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
” কিরে আবির এভাবে দৌড় মারলি কেন? ”
সিয়ামের হঠাৎ বলে উঠা কথায় আমি রীতিমত আঁতকে উঠলাম। পেছনে ফিরে সিয়ামকে দেখে অাস্বস্ত হলাম।
” সিয়াম রোজা কোথায়? ”
” ও তো শুয়ে আছে। তুই যেভাবে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলি আমরা তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।”
” ওহ সরি দোস্ত আসলে মোবাইলটা ঘরে রেখে গিয়েছিলাম। অানিকাকে ফোন দিতে হবে তাই এলাম মোবাইল নিতে।”
” ও আচ্ছা। ঠিক আছে ঘুমিয়ে পড়। রাতে কোন প্রবলেম হলে ডাক দিবি কিন্তু। আর রাতে ভয় পাবি না। তোকে তো আগেই বলেছি সব।”
সিয়াম চলে গেল। সিয়ামকে আসল কারণটা বললাম না। এমনিতেই বেচারা সমস্যার মধ্যেই আছে। আমি আবার নতুন ঘটনা বলে সমস্যা বাড়াতে চাই না। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা আমাকে করতে হবে।
ওহ সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম। এখন কনুই থেকে রক্ত বের হচ্ছে। যদিও চোট গুরুতর নয়।
আর কিছুক্ষন ঘরে পায়চারি করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আচ্ছা ওই পোড়া গন্ধটা কি সিয়াম পায়নি?
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি। হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। কেন ভাঙ্গলো সেটা জাগার পর বুঝতে পারলাম।
ঘরের ভেতর আবার সেই পোড়া গন্ধ। দম বন্ধ হয়ে আসছে। বালিশের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে আলো জ্বালাতেই দেখি আমার পুরো ঘরে ধোঁয়া। ঘন সাদা ধোঁয়া। মাংস পোড়া গন্ধটা অনেকটাই তীব্র রুপ ধারন করেছে।
মোবাইলের টর্চের আলোতে পুরো ঘরটাকেই প্রেতপুরী বলে মনে হচ্ছে। বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম।
কিন্তু দরজাটা কোনদিকে তাই ঠাহর করতে পারলাম না। হঠাৎ আমার মোবাইলের আলো চলে গেল জানালার দিকে। ধোঁয়ার আড়ালের মাঝেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি কেউ একজন জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এবং সম্ভবত একজন মহিলা, সাদা গাউন পরে আছে।
সমস্ত শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেছে।
” কে? কে দাঁড়িয়ে আছে? ”
কোন সাড়া নেই। কেন যেন মনে হচ্ছে রোজা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু রোজা আমার ঘরে কিভাবে আসবে? দরজার ছিটকিনি তো আটকেই ঘুমাতে গিয়েছিলাম।
” রোজা তুই কি ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস? ”
নাহ এবারো কোন সাড়া নেই। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম রোজার দিকে। তারপর হাত রাখলাম রোজার কাঁধে।
রোজা ফিরে তাকালো। তবে ফিরে না তাকালেই বোধহয় ভাল হতো। এমন বিভৎস দৃশ্য দেখতে হতো না আমায়।
হ্যা রোজাই দাঁড়িয়ে আছে জানালার পাশে। তবে এই রোজা সেই রোজা নয়। মুখের একপাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আরেকপাশ আধপোড়া, মনে হচ্ছে মোমের মূর্তিতে আগুনের তাপ দেওয়ার ফলে গলে গিয়েছে।
রোজার এই চেহারা দেখে পিছিয়ে গেলাম। এসব কি দেখছি আমি? দম বন্ধ হয়ে আসছে মাংস পোড়া গন্ধে। চোখ জ্বলছে ধোঁয়ায়।
ক্যাচ করে একটা শব্দ হলো। অনেকটা দরজা খোলার মত শব্দ। মোবাইলের আলে ঘোরালাম শব্দ অনুসরন করে। কিছুই দেখা যাচ্ছে। এতটুকু একটা ঘরে এভাবে ধোঁয়ার সাগরে হারিয়ে যাওয়ার কথা না।
আব্দুল্লাহর শিখিয়ে দেওয়া দোয়াটা পড়লাম মনে মনে। দোয়ার গুনেই হোক আর বিশ্বাসের জোরেই হোক ঘরের দরজা খুঁজে পেলাম। দরজা খোলা ছিল। দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম ঘর থেকে।
একটা বাতির সুইচ খুঁজে পাচ্ছি। সব সুইচ কি গায়েব হয়ে গেল? নীচতলায় নেমে দেখি সেখানেও একই অবস্থা। ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে পুরো নীচতলা।
” সিয়াম দরজা খোল। সিয়াম আরে এই সিয়াম।”
সিয়াম দরজা খুলছে না। অনেকক্ষন ধাক্কাধাক্কি করলাম। কোন কাজ হচ্ছে না। সিয়াম আর রোজার কোন বিপদ হলো নাকি? দরজা কি তাহলে ভাঙ্গতে হবে?
দরজা থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি নিয়ে দরজায় ধাক্কা লাগালাম। এক ধাক্কায় দরজা খুলে গেল। শুধু খুলেই গেল না, আমি হুমড়ি খেয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে গেলাম দরজাসহ। নিজের শক্তি দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম।
আবারো নাকে এলো সেই মাংস পোড়া বিদঘুটে গন্ধ। সারাঘরে যথারীতি ধোঁয়া।
” সিয়াম কই তুই? সিয়াম রোজা কোথায়? ”
কারো কোন সাড়াশব্দ নেই। হঠাৎ হাতে থাকা মোবাইলটা বিকট শব্দে বেজে উঠলো। হঠাৎ এমন শব্দে চমকে উঠে মোবাইল হাত থেকে ছেড়ে দিলাম। মেঝেতে পড়ে মোবাইলটা বন্ধ হয়ে গেল। সাথে সাথে আলোর সর্বশেষ উৎসটাও। অনেক চেষ্টার পরেও মোবাইলটা আর চালু হলো না।
এবার আমি ধোয়া আর অন্ধকারের সাগরে হারিয়ে যাওয়া একজন। আমি একটা বিষয় নিয়ে যথেষ্ট অবাক হচ্ছি। এতসব কান্ড হচ্ছে কিন্তু তারপরেও আমার খুব একটা ভয় লাগছে না।
নীলচে একটা আলো ঘরময় খেলা করছে। এই নীল আলোর উৎস খুঁজে পেলাম না। নীলচে আলোয় পুরো পরিবেশটা আরো রহস্যময় হয়ে উঠেছে।
ঠুপ ঠুপ ঠুপ শব্দ ভেসে আসছে ঘরের পূর্বকোণ থেকে। অনেকটা কাঠের উপর হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মারলে যেমন শব্দ হয় তেমন। এগিয়ে গেলাম পূর্বকোন বরাবর। তিন পা এগুতেই খুব নরম আর ঠান্ডা কিছুর সাথে হোঁচট খেলাম।
হাতের মোবাইলের পাওয়ার বাটন চেপে ধরলাম। আর মনে মনে দোয়া করতে লাগলাম যাতে মোবাইল অন হয়। এবং সত্যি সত্যি মোবাইল অন হয়ে গেল।
মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে মেঝের দিকে আলো মারতেই হড়হড় করে বমি করে দিলাম।
সিয়াম ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। পুরো শরীরে একটুকরো সুতা নেই। মুরগী যেভাবে গ্রীল করা হয় ঠিক সেভাবেই পুড়ে গেছে সিয়ামের পুরো শরীর।
শরীরের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে গলগল করে পুঁজ বের হচ্ছে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লাম। অজ্ঞান হওয়ার আগে দুইটা দৃশ্য দেখলাম।
প্রথম রোজা দাঁড়িয়ে আছে ঠিক আমার মাথার কাছে। ওর অর্ধেক পোড়া মুখ এখনো দেখতে পাচ্ছি।
দ্বিতীয় সিয়াম দাঁড়িয়ে আছে রোজার পাশে। ওর চোয়ালের মাংস বেয়ে বেয়ে পড়ছে আমার মুখের উপর। আর নাকে আসছে বিদঘুটে সেই মাংস পোড়া গন্ধ।
” এই কি হয়েছে আপনার? আপনি এমন করছেন কেন? ”
অানিকার ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। পুরো শরীর ঘামে ভিজে উঠেছে। তারমানে আমি এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলাম। ওহ বাঁচলাম।
” এই আপনি ঠিক আছেন তো? ”
” হ্যা আমি ঠিক আছি। একগ্লাস পানি আনো।”
পানি খেয়ে অানিকাকে আমার শুইয়ে দিলাম। আর চারমাস পর আমাদের ঘর আলো করে একটা মেয়ে আসতে চলেছে। এই সময় আনিকার পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। আমি দুঃস্বপ্ন দেখেছি, আনিকা দেখেনি। শুধু শুধু বেচারী কেন ঘুম নষ্ট করবে?
ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে। এমনই এক চাঁদনি রাতে সিয়াম আর রোজাকে ওদেরই বাড়িতে তালাবদ্ধ করে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিলাম।
আমি রোজাকে ভালবাসতাম। রোজা অন্য কারো ঘরনী হবে তা আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই সুযোগ বুঝে ওদের দুজনকেই শেষ করে দিলাম। ভালবাসার মানুষকে অাপন করে না পেলে মানুষ কতটা পশু হতে পারে আমি তার জ্বলন্ত উদাহরন। যেই রোজাকে আমি জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসতাম তাকে পুড়িয়ে মারতে আমার হাত কাঁপেনি।
” এই আপনার সাথে দেখা করার জন্য একজন লোক নীচে অপেক্ষা করছে।”
আনিকার কথায় সোফা থেকে উঠতে হলো। এত সকালে কে এলো দেখা করতে ?
সিয়াম বসে আছে সোফায়। নাকে আসছে সেই মাংস পোড়া গন্ধ। বিদঘুটে একটা হাসি লেগে আছে সিয়ামের ঠোঁটে।