আমি–মিম শোনো ডাক শুনে পেছনে তাকালো মিম।
মিম–আপনি ?এখনও দাড়িয়ে আছেন ?
আমি–কি করবো আমার উত্তরটা তো পেলাম না।
মিম–উত্তর ?কিসের উত্তর ?
আমি–আমার চিঠির
মিম–নাম্বারটা দিন ভেবে রাতে জানাবো।
মিয়াদ তো সেই খুশি। একটা লাফ দিতে ইচ্ছা করতেছে। হুম এই নাও ০১১০০ আচ্ছা ঠিক আছে এখন আমি আসি। (মিম) আচ্ছা। বিদায় নিয়ে চলে যায় মিম I মিয়াদ তো খুশিতে লাফালাফি করতেছে। হঠাৎ করে মাথায় একটা কথা ঘুরতে লাগলো। কোনো মেয়ে কিভাবে এত সহজে একটা ছেলের নাম্বার নিয়ে যায়। আচ্ছা ও ফোন দিবে তো? নাকি ফাজলামো করতেছে। আচ্ছা যাই হোক অপেক্ষা করে দেখি কি হয়। রাত প্রায় ১ টা। এখনও ঘুমাচ্চে না মিয়াদ। ফোনটা হাতে নিয়ে এখও পায়চারি করছে। ক্রিং ক্রিং মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো। হ্যালো (মিয়াদ) কোনো শব্দ নেই।
আমি–মিম কথা বলো
মিম–আপনি আমায় চিনলেন কিভাবে ?আমিতো কোনো কথাই বলিনি আর বল্লেও তো চেনার কথা না কারন আগে আপনি কখনও ফোনে আমার কন্ঠ শোনেন নি। আমার নাম্বারও তো আপনার কাছে নেই। তাহলে কিভাবে বুঝলেন এটা আমি ?
আমি–আমার মন বল্লো এটা তুমিই হবা
মিম– ও তা আপনার মন আর কি বলে ?
আমি–অনেক কিছু।
মিম–ওহহ তাই ?
আমি–হুম ।আমার উত্তরটা ?
মিম–উত্তরের কি খুবই প্রয়োজন ?
আমি–হুম
মিম–আমি আপনার সাথে সম্পর্ক করতে পারি তবে একটা শর্ত আছে।
আমি–কি শর্ত ?আমি তোমার যে কোনো শর্ত মানতে প্রস্তুত
মিম–একটাই শর্ত ।আপনাকে বদলাতে হবে। সব গুন্ডামি ,রংবাজি ,আড্ডা ,সব ছেড়ে দিতে হবে।
আমি–দেবো তোমার জন্য সব ছেড়ে দিতে পারবো। শুধু বলো তুমি রাজি ?
মিম–আচ্ছা আগে ছাড়ুন তারপর দেখা যাবে। কিন্তু সময় মাত্র এক সপ্তাহ।
আমি–মাত্র এক সপ্তাহ ?আচ্ছা ঠিক আছে। টুট টুট টুট ফোনটা কেটে দেয় মিম মিয়াদ ভাবছে কি করে মাত্র এক সপ্তাহে সব ছেড়ে দিবে সে। কিন্তু তাকে তো পারতেই হবে। পরের দিন সকাল বেলা এলাকার সব ছেলেপুলেকে ডাকলো মিয়াদ।
আমি–শোন আজকের পর থেকে তোরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করবি। আমার আর এসব ভাল্লাগেনা। ভাই আপনে চলে গেলে আমগো কি হবে ?আমগো কে দেখবে ?(পাশ থেকে একটা ছেলে )
আমি–শোন বেশি পেচাল পারিস না তোরা এখনও শিশু না। (মিয়াদ) যেহেতু আমি বড় ভাই তাই মুখের ওপর কথা বলার সাহস কারো নাই। তাদের সাথে কথা বলে চলে এলো মিয়াদ। দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ শেষ। মিয়াদ এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। রাস্তা দিয়ে হাটলে সবাই তাকিয়ে থাকে। এদিকে বর্ধিত সময় শেষ হওয়ায় মিয়াদকে ফোন দেয় মিম।
আমি–হ্যালো মিম
মিম–চিনতে পারছেন তাইলে
আমি–তোমাকে চিনবো না তা আবার হয় নাকি
মিম–হুমম। তা আপনার সময় তো শেষ হলো। নিজেকে বদলাতে পেরেছেন?
আমি–সেটা তুমি এসে নিজের চোখেই দেখো
মিম–আচ্ছা কালকে বিকেলে কলেজের সামনে দাড়াবেন।
আমি–আচ্ছা ফোন কাটার পর মিমেরও খুব ভাল লাগছিল কারন এই এক সপ্তাহ মিয়াদকে ফলো করেছিল সে। মিমের এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে যে একটা ছেলের জিবন বদলে দেয়ার পেছনে তার অবদান রয়েছে। তার জন্য আজ একটা ছেলে অন্ধকার থেকে আলোর পথে। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে মিম। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে কলেজে যায়। আজ কেমন জেনো একটা ভালো লাগা কাজ করতেছে। কলেজ ছুটি হলে কলেজের ক্যাম্পাসে দাড়ায় মিম পেছন থেকে ডাক দেয় রাফছান।
আমি–অবন্তি এদিকে আসো।(মিয়াদ) মিয়াদের কন্ঠ শুনে পেছনে তাকায় মিম। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে। এই কি সেই মিয়াদ যে কিনা সারাদিন জঙ্লিদের মতো থাকতো। আজ সে কতো পরিপাটি। যাই হোক তার সামনে গেলো
মিম–কি মিষ্টার আয়নায় নিজের মুখটা দেখছেন একবারো ?
আমি–হুমমম দেখছি একটা জঙ্লি ভূত
মিম–মোটেও না এখন একদম ভদ্র ছেলের মতো লাগতেছে যেমনটা আমি চেয়েছিলাম।
আমি–তার মানে তুমি রাজি ?
মিম–কি মনে হয় ?
আমি–মন তো অনেক কিছুই বলে।
মিম–কি বলে মন ?
আমি–মন বলে তুমি আমার
মিম–তাই বুঝি
আমি–হুমমমম
মিম–আচ্ছা আমার হাত ধরো
আমি–কেন ?
মিম–আরে ধরই না অনেক কষ্টে মিমের হাতটা ধরলো মিয়াদ। এই প্রথম কোনো মেয়ের হাত ধরলো সে। এভাবেই ভালোই কাটছিল তাদের সম্পর্ক। একদিন ভোরবেলা মিম ফোন দেয় মিয়াদকে
মিম–হ্যালো মিয়াদ
আমি–হ্যা
মিম–কি করো ?
আমি–ঘুমাইতেছি। এত সকাল সকাল কি আর করবো।
মিম–কি তুমি এখনও ঘুমাইতেছো ?
আমি–হুমমম তো কি করবো ?
মিম–কি করবা মানে ফজরের নামাজ কে পরবে ?
আমি–এই জন্যই ফোন দিছো ?
মিম–হুমমম নামাজ পড়বা না উঠো।
আমি–এখন উঠবো না একটু ঘুমাই
মিম–তুমি নামাজ পরবা না ?
আমি–না মানে ইয়ে মানে
মিম–হইছে তোমার আর মানে মানে করতে হবে না।
তুমি ঘুমাও ভাবছিলাম তুমি ভালো হয়ে গেছো কিন্তু না তুমি বদলাও নি। আজকের পর থেকে আর তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে চাই না। ভালো থেকো। কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ফোনটা কেটে দিল দিল মিম রাফছান আবার কল ব্যাক করে কিন্তু ফোন বন্ধ।
আমি–সকাল সকাল মেয়েটার আবার কি হলো (মিয়াদ) নাহ আর ঘুম হলো না।
উঠে বেরিয়ে পড়লো। মিমদের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে অনেকক্ষন হলো কিন্তু ,মিমের কোনো দেখাই মিলল না। বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে খাওয়া শেষ করে আবার ফোন দিল কিন্তু না ফোন বন্ধ। মিমের কলেজের সামনে গিয়ে দাড়িয়েও ছিলো অনেকক্ষন কিন্তু মিমের কোনো দেখাই নেই বান্ধবিদের কাছ থেকে জানতে পারলো সে আজ কলেজে আসেনি। এভাবে প্রায় ৮ দিন কেটে গেলেও মিমের কোনো যোগাযোগ করেনি মিয়াদের সাথে। এদিকে মিয়াদ প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেও মিমের সাথে দেখা করতে পারেনি। একদিন দুপুর বেলা কেউ একজন ফোন দিয়ে হ্যালো মিয়াদ ভাই আপু তো কলেজে আসছে।
আমি–কি বলছ সত্যি ?
মেয়েটা–জ্বি ভাই একদম সত্যি ।আপনার সাথে কি আর মিছা কথা কমু বলেন। খবর শুনে মিয়াদ দৌড়ে গেল কলেজে। কলেজ ছুটি হইছে। হঠাৎ মিমকে দেখেই দৌড় দেয় মিয়াদ। মিম শুনেও না শোনার ভান করে চলে যাচ্ছে সে। দৌড়ে সামনে গিয়ে দাড়ায় মিয়াদ।
আমি–মিম আমার কথাটা একটু বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমার সব কথা শুনবো।
মিম–সত্যি তো ?
আমি–হুমমম
মিম–আচ্ছা চলো আমার সাথে মিম জানতো যদিও এভাবে জোর করে কাউকে নামাজে আনা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ কিন্তু সে এটাও জানতো যে প্রথম প্রথম তার কথায় নামাজ পড়লেও একসময় মিয়াদের নামাজের প্রতি মায়া জমে যাবে। ঠিক তাই এখন মিয়াদকে আর নামাজের জন্য ডাকতে হয়না বরং মিয়াদই এখন নামাজ পড়ার জন্য মিমকে ঘুম থেকে জাগায়।
মিম তার ভালোবাসা দিয়ে বদলে দিয়েছে মিয়াদের পুরোটা জিবন। একটা অমানুষকে মানুষ করেছে। আজকালকার সম্পর্কে দেখা যায় শুধুই সময় ব্যয় আর আনন্দ ফুর্তি করা। এগুলোই কি ভালোবাসা? নাকি মিম আর মিয়াদের সম্পর্কটা? বেচে থাক তাদের এই পবিত্র ভালোবাসা।