আমি জানি এত দামি রেস্টুরেন্ট আমার জন্য নয়!
এত দামি খাবার আমার পেটে সইবেও না!
এত সুন্দর করে এসব খাবার খাওয়ার নিয়মকানুন আমার জানা নেই! তবুও ছোট ছোট পায়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলাম। হা হয়ে তাকিয়ে আছি! বাহির থেকে বুঝার উপায় নেই ভেতরটা কতটা মুগ্ধকর। রেস্টুরেন্ট নাকি সাজানো পৃথীবি তা আমার জানা নেই। নড়েচড়ে মেমসাহেবদের মত বুক উচু করে হেঁটে এক কোণায় চেয়ার টেনে বসলাম। চার-পাশ ভদ্রলোকে ভরপুর, আমি বড্ড বেমানান এই জায়গায়।
গত রাতে গার্মেন্টস থেকে বাড়ি ফেরার সময় হকারের কাছ থেকে ৬৫ টাকা দিয়ে একটা কালো জামা কিনেছিলাম, ৩৫ টাকা দিয়ে একটা প্লাজু এবং ৪৫ টাকা দিয়ে একটা ওড়না। কেউ দেখলে বুঝতে পারবে না এগুলো হকারের জিনিস। কালো রং আমার খুব প্রিয়। প্রায় সময় আমি আমার সমস্ত জিনিস কালো রঙের কিনে থাকি।
কালো রঙ প্রিয় হওয়ার মধ্যে একটা বিশেষত্ব আছে। ষোলো বৎসর বয়সে আমি প্রথম যার প্রেমে পড়েছিলাম তার গায়ের রং কালো ছিলো।
সম্পর্ক তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পর সে হঠাৎ শহরে চলে আসে! যোগাযোগ করার উপায় পেলাম না কারন সবাই তার খবর দিতে অপারগ ছিলো, তার মায়ের কাছে শুনেছিলাম শহরে কোন এক গার্মেন্টসে সে কাজ পেয়েছে তাই গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যাওয়া! শুধু শহরে কেন! চাইলে সে প্রবাসেও যেতে পারে কিন্তু সম্পর্ক ছিন্ন করার কোন অর্থ ছিলো না। দিন যায় তো যায় না, এভাবে কেটে গেলো আট মাস কিন্তু তার সন্ধান পেলাম না, এর মাঝে তাকে কখনো গ্রামে আসতে দেখিনি বা গ্রামে আসার কোন খবরও পাইনি।
অগ্র যৌবনের প্রথম প্রেম ভুলতে পারাটা বেঁদনা দায়ক! গ্রামে কানাগোসা চলতো “রহমত মনে হয় গার্মেন্টসের কোন মেয়েকে বিয়ে করে ঘরজামাই হয়ে গেছে, নয়তো কেউ এত দিন নিজ বাড়িতে না এসে থাকতে পারবো! অন্তত একবার অসুস্থ মায়ের খবর তো নিতো! সেটাও করলো না, কোন মেয়ের পাল্লায় পড়েছে কে জানে!”
সময়ের সঙ্গে এই কথাটা আমিও বিশ্বাস করে নিয়েছি ‘হয়তো সত্যিই তাই, রহমত অন্য কাউকে বিয়ে করে সংসার করছে’। সে সব সময় বলতো ‘হয়তো সে কালো মানুষ তাই কখনো কোন একদিন আমি তাকে ছেড়ে যাবো, আমি তার রূপকে নয় বরং মনকে ভালোবেসেছি তা বুঝানোর জন্য গেচ কালো রঙের সকল জিনিস ব্যবহার করার চেষ্টা করতাম, কেন জানি মনে হতো কালো কিছু মানেই সে! সেই অগ্র যৌবনের প্রথম প্রেমিক রহমত’।
সংসারের অবস্থা অবনতি।
বাবার ঋণের সুদ আমাদের স্থীর থাকতে দিলো না। জমিতে ফসল ভালো না হওয়ায় এবং ফসলের দাম সস্তা হওয়ায় বেশ অনর্থ হয়েছে পুঁজিতে, শেষ ভিটেবাড়ি বন্দক রেখে ঋণ শোধ করেছেন বাবা। বছর না ঘুরতেই জমিতে ফসল লাগানোর সময় এসেছে, নিজেরা ফসল না করলে জমি ছেড়ে দিতে হবে। অভাবগ্রস্ত বাবা জমি ছেড়ে দিলেন। বাবার শরীরটা বেশ খারাপ, অর্থ থাকলেও ফসল ফলানোর মত শক্তি নেই খেটে খাওয়া শরীরে। মা বাবার দেখবাল করার মাঝে রফিক চাচার বাড়িতে কাজ করার সময় পেতেন না। আমাদের গ্রামে একমাত্র পরিপূর্ণ অর্থ-সম্পদের মালিক রফিক চাচা। উনার বাড়িতে চার-পাঁচ জন মহিলা নিয়মিত কাজ করেন। তার মাঝে আমার মা একজন। কিন্তু বাবা ভ্রমাত্মক হয়ে পড়ায় মায়ের কাজে অনিয়ম হয়েছে। বাবা-মায়ের এক মাত্র সন্তান আমি। খুব ইচ্ছে করে তাদের পাশে ভরসা হয়ে দাড়াতে কিন্তু উপায় কী! উপায় বের করতে ছুটে গেলাম গোলাম ভাইয়ের কাছে। একমাত্র নিঃস্বার্থ ব্যক্তি গোলাম ভাই, উনি আমার রক্তের কেউ না হলেও তার চেয়ে কোন অংশে কম না। স্কুলে আমার চেয়ে দুই ক্লাস উপরে ছিলেন গোলাম ভাই। উনার পড়াশুনা বন্ধ হয়েছে পঞ্চম ক্লাসে আর আমার অষ্টমে। প্রিয় এক ব্যক্তির পাশাপাশি তিনি আমার প্রিয় বন্ধুও। গোলাম ভাই বাঁশের কঞ্চি কাঁটছেন, আমি গিয়ে ডাক দিলাম-
– গোলাম ভাই বাঁশ আবার কাকে দেবেন?
– আরে ফাতেমা বোন! নারে বোন বাঁশ কাউকে দেবো না,পিছনের ছালটা নেমে পড়েছে,সেখানে খুঁটি দিতে হবে।
– এবেলায় আপনার জিরান আছে?
– কেন? কিছু বলবি?
– আপনার কাছ থেকে একটা ব্যাপারে উপায় জানার ছিলো।
– ঠিক আছে, দুপুরে খেয়ে বটতলায় যাবো, তুই আসিস।
– ঠিক আছে গোলাম ভাই।
– এই শোন! লাল টকটুকে জামার সাথে কালো ওড়না পরেছিস কেন?
– ছাড়েন তো এসব! আমি যাচ্ছি,আমিও খেয়েদেয়ে বটতলায় যাবো!
গোলাম ভাইর বাড়ির আঙ্গিনা ছেড়ে আসলাম।
ছটজলদি গোসল সেরে খাবার খেয়ে বটতলায় চলে আসলাম, আমার আগেই গোলাম ভাই এসে বসে আছে। গোলাম ভাইকে সবটা বলার পর তিনি বললেন-
– আমার সাথে শহরে যাবি?
– শহরে! সেখানে কে আমায় কাজ দেবে?
– আমাদের মত নিম্ম মানুষদের জন্য গার্মেন্টসের দরজা সব সময়ের জন্য খোলা।
গ্রামে কাজ নেই,ছোট বোন বড় হচ্ছে, তার পড়াশুনা,বিয়ে সব পড়ে আছে! মা অসুস্থ। পরিবারকে দেখেশুনে রাখার জন্য হলেও টাকার দরকার। বোন তোরও একই অবস্থা। শহরে গিয়ে যদি তিন-চার হাজার টাকা কামাই করতে পারি তবে ক্ষতি কী?
গোলাম ভাইয়ের কথা শুনে বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো! আচ্ছা শহরে রকমতের দেখা পাবো তো? নেহাত এটা আমার কল্পনা কারণ রহমত যদি সত্যিই আমায় মনে রাখতো তবে একদিন এক সেকেন্ডের জন্য হলেও খবর নিতো।
বাবা-মা কে বলে গোলাম ভাইয়ের সঙ্গে বের হলাম শহরের উদ্দ্যেশে। দুই রুমের একটা বাসা নিয়ে গোলাম ভাই আর আমি গার্মেন্টসে কাজ করা শুরু করলাম। প্রায় মাস কেটে যায় কিন্তু রহমতের মুখখানা আমি দেখতে পাইনি, হয়তো ও এই গার্মেন্টসে কাজ করে না! প্রথম প্রেমের স্মৃতি ভুলা সত্যিই বেঁদনাদায়ক। মাস শেষে প্রথম উপার্জনের টাকা পেয়ে সত্যিই খুশিতে আটখানা হয়ে গেলাম! আগে কখনো এক সাথে সাড়ে তিন হাজার টাকা চোখে দেখিনি। বাসা ভাড়া দিয়ে খেয়েদেয়ে হাতে অতিরিক্ত টাকা থাকে না! বাবা-মা কে টাকা পাঠানো মুসকিল হয়ে দাড়ায়! তবুও পাঁচ-ছয়শ টাকা গ্রামে পাঠিয়ে দেই।
ব্যস্ত জীবনে টাকার অভাব আমাকে দিশেহারা করে দিচ্ছিলো! বারবার মনে হতো কোথায় গেলে অনেক অনেক টাকা পাবো! এই শহরে এত বাড়ি! এত গাড়ি! এরা এত টাকা কোথায় পায়! রাস্তায় বের হলে রঙ বেরঙের গাড়ি দেখে দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়! মাঝে মাঝে রাস্তা পার হতে গেলে এসব গাড়ির নিচে প্রায় চাপা পড়তে যাই!!
সন্ধ্যায় মুড়ি-চানাচুর নিয়ে বসলাম গোলাম ভাইয়ের সঙ্গে। গোলাম ভাই বিছানায় শুয়ে বলছেন-
– কী রে বোন কিছু বলবি?
– আচ্ছা গোলাম ভাই বড়লোক হওয়ার উপায় কী?
আমার কথা শুনে গোলাম ভাই দরপর করে উঠে বসলেন, মুখভরা আশ্চার্য্যের চাপ নিয়ে বললেন-
– এই বাড়ির নিচে গুপ্তধন আছে, সেগুলো কোন রকম ভাবে বের করতে পারলেই বড়লোক হওয়া যাবে।
– একদম মজা করবেন না ভাই।
গোলাম ভাই খটখট করে হেসে উঠে বললেন-
– পাগলী বোন রে বড়লোক হওয়া এত সোজা না!
– সোজা না! কিন্তু ব্যাঁকা তো!
– ব্যাঁকা পথ কত কঠিন জানিস?
– জানবো কী করে? আমি আগে কখনো বড়লোক হওয়ার চেষ্টা করেছি!
নিজে কথাটা বলে নিজেই হেসে দিলাম।
গোলাম ভাই ভ্রু কুচকে বললেন-
– আমরা ভাই-বোন মিলে ছোটখাটো কোন ব্যবসা করতে পারি!
– পকেটে কয় টাকা আছে?
– পঞ্চাশ টাকার মত, কেন বোন?
– পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কি ব্যবসা করবে? ব্যবসা করতে হলে পুঁজি লাগবে!
– হ্যা সেটা অবশ্য ঠিক বলেছিস!
– আমি এমন কোন ব্যবসা করবো সেখানে অন্য কেউ আমায় পুঁজি দিয়ে যাবে।
– কী বলিস! এমন ব্যবসা আছে নাকি?
– হুমমম আছে, দেহ ব্যবসা!
গোলাম ভাইয়ের মুখ শুকিয়ে গেলো।
গোলাম ভাই মুখ বেঁজার করে বললেন-
– এসব কথা মুখ দিয়েও আনিস না বোন!
– সহজ উপায় বড়লোক হওয়ার!
– এই পথ কখনোই ভালো না, মাথা থেকে মুচে ফেল এই চিন্তা!
– এই পথ সঠিক পথ! অল্প সময়ে বেশি টাকা উপার্জন করার জন্য যঠেষ্ট। দেখেন গোলাম ভাই সকাল সাত’টায় গার্মেন্টসে ঢুকে সন্ধ্যা ছয়’টায় বাড়ি ফিরি, সারা দিন এত পরিশ্রম করার পরও ৩০ দিনের মাথায় তিন বা চার হাজার টাকা পাই।
এই ব্যবসায় যদি অন্তত একদিন একজন কে পাই তবে ৩০ দিনের মাথায় ৩০ হাজার টাকা হবে, তবে আপনি বলেন বড়লোক হওয়া কি সহজ নয়?
– হ্যা জানি এই পথে ছটজলদি উপার্জন করা যায় কিন্তু এই পথ ভুল পথ! এই পথ সঠিক নয়।
যখন তোর বিয়ে হবে তখন তুই তোর স্বামীকে কী জবাব দিবি?
– আমি বিয়ে করবো তা আপনাকে বললো কে!
স্বামীর ঘরে আমি কী পাবো? মোটা কাপড় আর তিন বেলা খাবার? শশুড়- শ্বাশুড়ির মন জোগার করতে না পারলে নিয়ম করে তিন বেলা ঝাটার বাড়ি! নিয়ম করে স্বামীর সাথে আড়াআড়ি! স্বামী যখন চাইবে তখন তার কাছে শুতে হবে! তাকে খুশি করতে হবে! নিজের ইচ্ছের মূল্য পাবো? স্বামীর কাছেও যা করতে হবে এখানেও তা করতে হবে বিনিময় পাবো টাকা! জীবনে ভালো ভাবে চলতে গেলে যা খুবই প্রয়োজন।
আমার কথা শুনে গোলাম ভাই কিছু বললেন না।
চোখ বড়বড় করে চেয়ে রইলেন।
নিঃস্বার্থ এক মাত্র ব্যক্তি গোলাম ভাই।
যার কোন চাহিদা নেই, বিনা স্বার্থে সর্বদা আমার পাশে থাকেন। আমায় আর কিছু বুঝাতে আসলেন না, সেখান থেকে শুরু হয় আমার নতুন ব্যবসা, যার নাম ‘দেহ ব্যবসা’।
অল্প সময়ে বেশি টাকা পাওয়ার পথ কাজে লাগলো, পাঁচ দিনের মাথায় পাঁচ হাজার টাকা উপার্জন করা ঠিক কতটা সহজ!
গত সন্ধ্যায় অপরিচিত নাম্বার থেকে কল করে আমায় এই মস্ত বড় রেস্টুরেন্টে ডাকা হয়েছে।
বলেছিলো সে এখানেই আমার সাথে দেখা করবে। সেজন্য সেজেগুজে এখানে এসে বসে আছি। উচু,লম্বা, ফর্সা গোছের একটা ছেলে এসে জিজ্ঞেস করলো-
– ম্যাডাম কী দেবো?
আমি একটু চমকে উঠলাম!
আমি কাঁপা কণ্টে জিজ্ঞেস করলাম-
– কফি..
– আর কিছু?
– না…
– ওকে ম্যাডাম।
ছেলেটা চলে যায়, আমি বসে আছি আধ ঘন্টা হতে চললো কিন্তু যে ফোন করেছিলো তার কোন খবর নেই, ধৈর্য্য হারা হয়ে আমি কল করেছি।
সেই মানুষটা ফোন কেটে দিলো। ক্ষানিকক্ষণ বাদে অর্ধবয়স্ক একজন মুরব্বী আমার কাছে এসে বলসো, আমি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
– আপনি কল করেছিলেন?
– হ্যা!
লোকটার কণ্ঠ বেশ গম্ভির।
সাদা বড় দাড়ি আছে। জুব্বা পরে আছেন। মনে মনে ভাবলাম মানুষ কতটা খাদক! টাকা আছে দেখে টাকার বিনিময় এই বয়সে এসেছে ফুর্তি করতে! লোকটা আমায় জিজ্ঞেস করলো-
– নাম কি?
– ফাতেমা।
– নামটা এত সুন্দর আর তুমি মানুষটা! ছিঃ
আমি ঘাবড়ে গেলাম। মানুষটা কে! কিসের জন্য এসেছে! আমি ভীতু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম-
– আপনি কে?
– গত পাঁচ রাতে যাকে সময় দিয়েছো আমি তার বাবা!
আমি মাথা নিচু করলাম। কেন জানি লজা হচ্ছে।
উনি আবার বলে উঠলেন-
– নূর আমার একমাত্র ছেলে। বন্ধুদের ফাল্লায় পড়ে সেদিন তোমার কাছে গিয়েছিলো! পরের কয়েকবারও অজান্তে তোমার কাছে এসেছিলো।
নিজের কাছে নিজে এখন অপরাধী বোধ করছে, এখন ওর মনে হচ্ছে এসব করা ঠিক হয়নি।
– তার জন্য আমি কী করতে পারি আঙ্কেল?
– মাথা নিচু করে আছো কেন? মাথা তুলে কথা বলো।
– না না! এভাবেই ঠিক আছে।
– আমার ছেলে নূর তোমায় বিয়ে করে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে চায়, তুমি কী রাজি?
আমি পাথর হয়ে বসে রইলাম,কিছু বলার সাধ্য নেই কারন মুখ থেকে যে কথা বের হচ্ছে না। উনি আবারও বলে উঠলেন-
– তুমি কী করো! বা কী তোমার কাজ সেটা কাউকে বলতে হবে না, নূর এবং আমি জানি এটায় যঠেষ্ট, আর কাউকে জানতে হবে না।
এবার তুমি বলো তুমি কী রাজি?
যে ছেলেটার সঙ্গে পাঁচ দিন সময় দিয়েছি সে ছেলেটার চাহনি ভেসে উঠলো আমার চোখে!
ছেলেটা আমার সঙ্গে শারীরিক কিছু করেনি বরং অনেক বেশি গল্প করেছে, আমি কয়েকবার তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম “টাকা দিয়ে কেউ গল্প করতে আসে”। প্রতিবার সে উত্তর দিয়েছে “আমার অসময় গুলো তোমায় দিচ্ছি”
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম-
– ঠিক আছে আমি রাজি তবে একটা শর্ত আছে।
– কী শর্ত?
– আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে কুরআন শিক্ষা আপনার বেশ আছে! সেই শিক্ষা আমাকে একটু দিতে হবে।
গম্ভীর মানুষটা হেসে দিলেন।
উনার সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ সময় দিয়ে আমি ফিরে এলাম। গোলাম ভাইকে সবটা বলার পর বালিশের পাশ থেকে মিষ্টির প্যাকেট বের করে আমায় দিলেন, আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
– আপনি জানেন কীভাবে আজ সুখবর কিছু হতে পারে? মিষ্টি আগ থেকেই আনিয়ে রাখলেন যে?
গোলাম ভাই খটখট করে হেসে দিলেন।
তিনি বললেন-
– বোন বলে তোকে ডাকি! সেই বোনকে দেহ ব্যবসা কী করে করতে দেই বল? আমার বোন দেহ ব্যবসা করবে আর আমি চেয়ে দেখবো? সেদিন তোর কথা শুনে আমি চুপ হয়ে ছিলাম শুধু এই দিনটির জন্য, এখানে আসার পর বন্ধু বা ভাই দু’টো হিসেবে নূরকে পেয়েছি, নূর ভালো মনের মানুষ, তোকে পছন্দ করেছিলো, সেটা আমাকেই বলেছিলো, ওরা বড়লোক ঘরের মানুষ, আমাদের মত নিম্মতম মানুষদের নিজের ঘরে নেওয়ার কথা ভাববে কীকরে? তাইতো নূর ওর বাবার কাছে বলেছে “তোর সঙ্গে সময় পার করে ও ভুল করেছে! ভুলের মাসুল হিসেবে তোকে বিয়ে করে স্বীকৃতি দিতে চায়”। ননূরের বাবা ওর কথা বিশ্বাস করেই তোকে ডেকেছিলো পাগলী।
আমি হা হয়ে চেয়ে রইলাম, এত কিছু তবে গোলাম ভাই করেছেন? নিঃস্বার্থ এই ব্যক্তি সত্যিই অন্যরকম একজন!
গ্রাম থেকে বাবা-মা এসেছেন।
ঘরোয়া আয়োজনে নূরের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়।
বাবা-মা বেশ খুশি।
মা আমায় আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন-
– রহমত গ্রামে ফিরে এসেছে। তোর কথা জিজ্ঞেস করেছিলো, আমি বলেছি তুই এখন শহরে থাকিস।
– এতগুলো বছর কোথায় ছিলো জানতে চাননি?
– সাথে বউ আর তিন বাচ্চা নিয়ে গ্রামে এসেছে!
আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।
কালো হ্যান্ডব্যাগের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম। প্রথম প্রেম সর্বদা কিছুক্ষণের জন্য হলেও মন খারাপ করিয়ে দেয়।
আমি পিছনে ফিরে তাকালাম না।
নূর কে আপন করে করে বাঁচতে শুরু করলাম।