প্রথম পর্ব :
রাতের আকাশে চাঁদের আপছা আলোতে তোমার ছায়া এখন আর আমার উঠানে ভাসেনা।
তোমরা ছেলেমানুষী হাজারো আবদার এখন আর আমাকে পোড়ায় না। তোমার এক হাতে আমার হাত অন্য হাতে নিকোটিনের আগুন।
ঘুম ঘুম চোখে তোমার চোখ পানে চেয়ে আমার রাত্রি যাপন। কখন যেন তোমার কাঁধে মাথাটা রেখে করতাম ঘুমের রাজ্যো ভ্রমণ।
আর তুমি পলকহীন চোখে আমারই মুখ পানে চেয়ে মুগ্ধ হয়ে কি যেন একটা খুঁজেই চলতে।
হয়তো রাত আসে পূর্ণিমা ভাসে তবু আমার উঠানে আলো ছড়ায় না। নিকোটিনের নেশা ধরানো গন্ধটা আমায় মাতাল করে না।
তুমি কি এখনো আমার সাদা কালো ছবি টা আঁকো তোমার নেশা ধরা চোখের ক্যানভাসে?
কল্পনার সাত রঙে সাজাও আমার প্রতিমূর্তিটাকে ?? তোমার নিকোটিনের ধুসর বর্ণ সাদা কালো ছবিটাকে কি পূর্ণতা দেয়???
খুব জানতে ইচ্ছে হয়,,,
যদি আবারও দেখা হয় কোন এক পূর্ণিমায় , তবে তুমি কি বসবে আমার পাশে ,
মাতাল করা নিকোটিনের গন্ধে ভরা হাত দুটো দিয়ে হাতটি আমার ধরে বলবে কি তুমি ঘুমাও আমি আছি???
এমনি একটা খোলা চিঠি সোহেলী লিখেছিলো পারভেজ এর কাছে।
পারভেজ প্রতি রাতে চিঠিটি পড়ে, গভীর রাতে যখন নগরবাসী ঘুমের রাজ্যে।
সে একাই জেগে চিঠিটি হাজারো বার পড়ে, আর নিকোটিনের আগুনে ফু দিয়ে বুকের পাঁজরে রাখা অনুভূতি গুলোকে ছাই করে উড়িয়ে দেয়।
চিঠিটা যতবারই সে পড়ে…….
তার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বুকের পাঁজর ভেঙে বিনা অনুমতিতেই অন্ধকার আকাশ পানে চেয়ে থাকা চোখ দুটো শ্রাবণ জলে ডুব দেয়।
প্রতি রাতেই সে চিঠিটা বুকে চেপে তার নেশা ধরা চোখ দুটো ভেজা ঝাপসা দৃষ্টিতে অন্ধকার আকাশের মাঝে কি একটা খুঁজে বেড়ায়।
অন্ধকারে নাকি তবুও কিছু দেখা যায়, নিকোটিনের ধুসর ধোঁয়ার মাঝে আপছা আপছা।
এভাবেই রাত ভোর হয়ে যায় তবু ঘোর কাটে না।
দ্বিতীয় পর্ব:
পারভেজ নিজের অনুভূতি গুলো কখনোই সোহেলীর কাছে প্রকাশ করেনি। কারণ সে জানতো পৃথিবীতে সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।
সে সবbসময় চাইতো তার ভেতরের আবেগ গুলোকে বুকের মাঝেই দাফন দিতে কিন্তু পারেনি।
তার না বলা আবেগ গুলো রাতের অন্ধকারে বিনা অনুমতিতেই বৃষ্টি হয়ে নিজের অজান্তেই ঝরে পড়ে।
রাত যত গভীর হয় কষ্ট গুলো ততোই পেয়ে বসে।
সে শুধু শেষ দেখার সেই নজর বন্দিকরা ছবিটাকে কল্পনায় আনতে চায় তার সাথে আবার ও সেই জোছনা স্নানে ডুব দিতে চায়,
যেন তার ভালোবাসা পূর্ণিমায় শুরু হয়ে পূর্ণিমায় শেষ।
হয়তো সে ভুলে গিয়েছে এই অনুভূতির শুরুটা আছে বটে শেষটা যে তার নিজের ও জানা নেই।
আর তাই সে না চাইতেও সোহেলীর চিঠিটার উওর লিখেaছিলো।
ভুলে যেতে চাইলেই কি আর ভুলে থাকা হয়।
_তোকে এখন আমার আর ভালোলাগে না,
জানিস তো _তোর কাজল পরা নেশা নেশা চোখ দুটো এখন আর আমার মাঝে উন্মাদনার সৃষ্টি করে না।
তোর বৃষ্টিতে ভেজা আঁকাবাঁকা মিষ্টি সুবাসিত চুল গুলোও না।
_তোর ঐ রং মাখা ঠোঁটের অট্টোহাসি আমার কানে আজ আর বাজে না। জানিস তো,
_তোর নুপুর পায়ে রিনিঝিনি , কাঁচের চুড়ির টুংটাং এসব কিছুই এখন আমার কাছে শুধুই কল্পনা মাত্র।
তোকে নিয়ে আর ভাবতে চাই না, কিন্তু তবুও তুই বারে বারে ফিরে আসিস আমার কল্পনায়, আমার গল্প কবিতায়।
শেষ কবে তোকে দেখেছিলাlম ঠিক মনে নেই, মনে নেই কি কথা হয়েছিল দুজনের, তুই চোখে কাজল পরেছিলি সেদিন?
কপালে টিপ? পায়ে নুপুর? কাঁচের চুড়ি?? পরেছিলিস এসব ? আমার মনে নেই না কিচ্ছু মনে নেই। আমি তা আর মনে করতেও চাই না।
যে স্মৃতি বুbকের পাঁজরে শুধু যন্ত্রনার জাল বুনে চলেছেন তাকে আর ফিরিয়ে আনতে চাইনা।
অনুভূতি গুলো অনুভব করা ছাড়া স্মৃতির কোনো অস্তিত্ব নেই।
হতে পারে সে কোনো এক কাক ডাকা ভোরের সুখের স্মৃতি বা আমাবর্ষার কালো চাদরে ঘেরা কোনো এক অন্ধকার রাতের হৃদয় পোড়ানো স্মৃতি।
আমার স্মৃতিটাতো হৃদয় পোড়ানো তাইনা, যে আগুনে পুড়ে পুড়ে আমি এখন ছাইপাশ।
কিন্তু তবু কেন যেন আমার হৃদয় মস্তিষ্ক জুড়ে শুধুই তুইরে পাগলি
বাতাসে ভেসে আসে তোর দুষ্টুমি মাখা হাসি, তোর কাঁচের চুড়ি নুপুর পায়ে রিনিঝিনি।
কতবার নিজেকে লুকিয়ে বাঁচতে চেয়েছি আর মনে মনে ভেবেছি, তোকে এখন আমার আর ভালোলাগে না।
তবুও তুই কেন যেন বুঝতে চাসনা,
আমার বুকের বাম দিকটাতে ক্ষতের চিহ্নটা যেন তোর খুব প্রিয় বারে বারে দেখতে চলে আসিস বিনা অনুমতিতেই।
আমি অন্ধকারের আপছা আলোতে ঝাপসা দৃষ্টিতে আকাশ পানে চেয়ে তবুও বলি, তোকে এখন আমার আর ভালোলাগে না।
তখন বুকের বাম দিকটাতে প্রচন্ড যন্ত্রনায় হৃত্স্পন্দন বন্ধ করে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে আমার।
আর হৃত্পিণ্ডটা চিৎকার করে বলতে থাকে অনেক ভালবাসি তোকে পাগলি , অনেক ভালবাসি……….,
লিখতে লিখতে রাত প্রায় শেষের দিকে এস্ট্রেটাও ভরে এসেছে। হটাৎ কি একটা ভেবে একটানে পুরো চিঠিটাই টুকরো টুকরো।
এভাবেই রাত ভোর হয়ে যায় তবু ঘোর কাটে না।
বেশ অনেক দিনের যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর পারভেজ scholarship নিয়ে ইউরোপ পাড়ি দেয়। বছর ঘুরে গেছে যোগাযোগ বন্ধ।
ওখানে বসে সে প্রতিটা রাতই তার পাগলীর কথা ভেবেছে , কল্পনার সাজিয়েছে প্রথম দেখা কি কথা বলবে সেও।
দেশে ফেরার পর তার প্রথম কাজ পাগলীটার সাথে দেখা করা সে বলতে চায় তার সব না বলা কথা গুলো যা সে বুকের খাঁচায় বন্দী করে রাখেছিল এতটা বছর।
এক একটা রাতের অনুভূতি গুলো, সব সে বলতে চায়।
আসলে হারিয়ে না গেলে পাওয়ার অনুভূতি টা যে অনুভূত হয় না তা সে এই কয়টা বছরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। অবশেষে দেশে ফেরার পালা ।
যেই কথা সেই কাজ দেশে ফিরেই সে সহেলীর খবর নিতে গিয়ে খুব কাছের এক বন্ধুর কাছথেকে জানতে পারলো পাগলিটা এখন অন্য কারো বিবাহিতা।
সে পাগলটার জন্য শেষ একটা চিঠি রেখে গিয়েছিল।
ভালো আছ নিশ্চই , কিন্তু আমি ভালো নেই । আমি জানি কনো একদিন তুমি হয়তো এই চিঠিটা পড়বে ,
***************************
আমার অনেক কিছু বলার ছিল তোমার কাছে যখন তোমাকে খুব প্রয়োজন ছিল। আমার প্রতিটা নির্ঘুম রাতের কথা গুলো তোমাকে বলতে চেয়েছি।
কিন্তু এখন হয়তো সে সব মূল্যহীন। আমি ছিলাম নিরুপায় ।
তিন অক্ষরের কবুল শব্দটা মুখে উচ্চারণ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমার অপেক্ষা করেছি আমি কিন্তু, কিন্তু তুমি তো আসনাই।
**************************** শুধু একটা কথাই বলতে চাই আজ ও পূর্ণিমার রাতটা আমি আকাশ দেখি …..,
পার্থক্য এতটুকুই তখন পাশে ছিলে তুমি, তোমার অনুভূতি আর এখন আমি আর তোমার স্মৃতি।
অনুভূতি গুলো অনুভব করা ছাড়া স্মৃতির কোনো অস্তিত্ব নেই।
যদিও সে কেবলমাত্র স্মৃতি তবূও তার কাছে মানুষ বড় অসহায় তাই বোধহয় আজ আমি নিজেও।
ভালো থেকো অনেক শুভকামনা রইল তোমার জন্য।
_____তোমার পাগলী
চিঠি টা পাবার কিছু দিন পর পারভেজ আবার ও চলে যায় দেশ ছেড়ে। এবার আর ছেড়ে নয় পালিয়ে যায় সে।
এর পর আর সে ফিরে আসেনি তার কনো খবর ও কেউ আর জানেনা , বেঁচে আছে কি মারা গেছে।
কিন্তু সহেলীর বিশ্বাস সে বেঁচে আছে ।
শুধু কেমন আছে এই খবরটা নেওয়ার জন্য সে প্রায়ই আসে পারভেজের সেই বন্ধুটির কাছে,
কিন্তু প্রতিবারই সে নিরাশ হয়ে ফিরে যায় এবং পরবর্তী বার আবার ও ফিরে আসে…….,
কারণ তার শেষ চিঠিটার উওরটা যে এখনো আসেনি,