স্যার, আপনাকে একটা ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি..? করো..! আপনার হাতের লেখা এত সুন্দর কেন..? আপনি কি প্রেম করেন..? হাতের লেখার সাথে প্রেমের সম্পর্ক কি..? শুনেছি যারা প্রেম করে, চিঠি লিখতে লিখতে তাদের হাতের লেখা নাকি সুন্দর হয়ে যায়। হা..! হা..! হা..! এটা কোনো কথা হলো…! প্রেম না করলেও হাতের লেখা সুন্দর হয়। তার মানে আপনি প্রেম করেননা..? নাহ্, প্রেম ট্রেম আমার ভাললাগেনা..! যাক বাচাঁ গেল..! প্রেম তো আপনাকে আমি ভাললাগাবো.. (মনে মনে বললো মেঘা) কথা বলছোনা কেন, কি ভাবছো..? না কিছুনা..! তাহলে পড়। জ্বী।
মেঘা ক্লাস সিক্সে পড়ে। সে আকাশের কাছে প্রাইভেট পড়ে। আকাশ অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। ঢাকাতে হোষ্টেলে থেকে পড়াশুনা করে। নিজের পকেট খরচ চালানোর জন্য দুই তিনটা টিউশনি করায়। তার মধ্যে মেঘা একজন। মেঘা আকাশের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। মেঘা ছোট হলেও সে খুব চঞ্চল। আকাশকে মেঘার খুব ভাললাগে।ভাললাগে বলতে ভালবাসে। কিন্তু এইটুকু মেয়ে কিকরে আকাশকে বলবে ভালবাসি? স্যার, আপনাকে ‘স্যার’ না বলে ভাইয়া বলে ডাকি? তোমার যেটা ইচ্ছা আচ্ছা এখন থেকে ‘আকাশ ভাইয়া’ বলে ডাকবো ওকে আচ্ছা ভাইয়া, আপনি কি কবিতা লিখতে পারেন? আমি কি কবি নাকি যে কবিতা লিখবো? কবিতা কি শুধু কবিরাই লিখে ওহ্! আপনি তো আবার প্রেম করেননি, করলে লিখতে পারতেন।
দেখো মেঘা, তুমি কিন্তু আগের থেকে অনেক দু্ষ্টু হয়ে গেছো, আর বেশি কথাবলা শিখে গেছো! পড়ার বাইরে খুব কম কথা বলবা! (একটু রাগী কন্ঠে বললো) দুষ্টু তো আমি তোমার জন্য হয়েছি! আর কথা তো আমি জানতামই না! তুমিই তো আমার মুখ ফুঁটিয়েছো! সব তোমারই অবদান! (মনে মনে বললো মেঘা) কি কথা বলছোনা কেন? আপনিইতো বললেন কথা কম বলতে! কার পাল্লায় পড়লামরে বাবা! এই মেয়ে তো দেখছি অল্প বয়সেই পেকে গেছে ! (মনে মনে বললো আকাশ) পরেরদিন আকাশ পড়াতে গেলে, মেঘা কোনো কথা বললোনা। মুখটা গোমড়া করে চুপচাপ বসে আছে। আকাশ বললোকি হয়েছে মেঘা? আজ এত চুপচাপ কেন? কোনো সমস্যা!! নাহ্, এখন থেকে কমকম কথা বলবো। পড়ার বাইরে কথা বললোনা। আপনার যেটা পছন্দ না, সেটা করবোনা..!একেবারে চুপ থাকতে বলছি নাকি..? একদম চুপ থাকলে তোমাকে মানায়না বুঝেছো? হুম শোনো, শোনো, আমি এক সপ্তাহের জন্য আগামীকাল বাড়ি যাচ্ছি। আগামী এক সপ্তাহ আমি আসবোনা।
শুনেই মেঘার মনটা খারাব হয়ে গেলো। আকাশ সপ্তাহে তিন দিন এক ঘন্টার জন্য পড়াতে আসে। সপ্তাহের এই তিনটিদিন মেঘার জন্য ঈদের খুশির মত। আকাশ যদি সপ্তাহে সাতদিনই পড়াতে আসতো, মেঘার আরও ভাল লাগতো। মেঘা মুখটা কালো করে বললোতাহলে এই সাতদিন আপনার ভালই কাটবে তাইনা হুম, তাতো কাটবেই। অনেক দিন পর বাড়ি যাচ্ছি আর আমার কি হবে? মানে! তোমার আবার কি হবে! জানিনা বলেই পড়ার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো মেঘা। আকাশ পিছন থেকে কতবার ডাকলো এই মেঘা, মেঘা! মেঘা ওর রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে ওর বিছানার নিচ থেকে একটা চিঠি বের করে নিজের কাছে রেখে দিলো।
মেঘার আম্মু এসে আকাশকে বললো কি হয়েছে আকাশ? মেঘার যেন আজ কি হয়েছে..! না পড়ে হঠাৎ চলে গেলো.! তুমি কিছু বলেছো ওকে? না তো..! আমি শুধু বললাম আগামীকাল সাতদিনের জন্য বাড়ি যাবো..! ও বুঝেছি। আচছা তুমি বসো আমি দেখছি। মেঘার আম্মু মেঘার রুমে গেলো। কিছুক্ষন পর মেঘাকে সাথে করে নিয়ে আসলো। আকাশ দেখলো মেঘা মুচকি হাসছে। মেঘা আবার পড়তে বসলো। পড়া শেষে মেঘার আম্মু মেঘাকে ডেকে টাকা দিলো আকাশকে দিতে। যেহেতু আকাশ বাড়ি যাচ্ছে..! তাই এ মাসের টাকাটা অগ্রিমই দিয়ে দিলো! মেঘা টাকাটা এনে আকাশের হাতে দিলো। আকাশ টাকাটা নিয়ে পকেটে রেখে দিলো। এবং বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
আকাশ যখন ওর রুমে গিয়ে পকেট থেকে টাকা বের করলো, দেখলো টাকার ভাজে একটা কাগজ ভাজ করা। কাগজটা দেখে আকাশ হতভম্ব হয়ে গেলো। কারন, কাগজটাতে বড় করে রক্তে লেখা “আকাশ+মেঘা” এবং তার নিচে কিছু কথা লেখা আকাশ পড়তে লাগলো আকাশ, আপনাকে ‘আপনি’ বলবো নাকি ‘তুমি’ বলবো বুঝতে পারছিনা। আচ্ছা ‘আপনি’ই থাক, যেহেতু আপনার কাছ থেকে ‘তুমি’ বলার অনুমতি পাইনি। সরাসরি বলার সাহস এখনো হয়নি বিদায়, চিঠির সাহায্য নিলাম। তবে খুব শিগ্রিই চোখে চোখ বলে ফেলবো আমি আপনাকে ভালবাসি। আপনি হয়তো চিঠিটা পড়ছেন আর অবাক হচ্ছেন। এইটুকু মেয়ে..! আমি আমার মনের সত্যি কথাটাই জানালাম। আই লাভ ইউ আকাশ। ইতি মেঘা। চিঠিটা পড়ে আকাশের সারা শরীর যেন ঠান্ডা হতে লাগলো! এমন অনুভুতি কখনও উপলব্ধি করেনি। আকাশ শুধু মেঘার কথাই ভাবছে! বাড়ি গিয়েও মেঘার কথা মাথা থেকে সরাতে পারছেনা।
এদিকে মেঘারও দিন কাটছেনা।
এক সপ্তাহ পর আকাশ ফিরে আসলো। মেঘাকে পড়াতে গেলো। আকাশ বসে আছে। মেঘা এখনও পড়ার টেবিলে আসেনি। আকাশ মনে মনে ভাবছে.. “কি বলবো মেঘাকে, যদি আমাকে প্রশ্ন করে যে, আমি ওকে ভালবাসি কিনা..!”
এমন সময় মেঘা আসলো। মেঘাকে দেখেই আকাশের চোখ কপালে উঠে গেলো.! মেঘা আজ শাড়ি পড়েছে। এত সুন্দর লাগছে যে, ভাষায় প্রকাশ করার মতোনা..! শাড়ি পড়াতে ওকে আজ আর পিচ্চি মেঘা লাগছেনা।
দুজনে মুখোমুখি বসে আছে। মেঘা মথা নিচু করে আকাশের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। কেউ কোনো কথা বলছেনা! কিছু একটা বলো আকাশ.! আমি শুধু তোমার জন্যই সেজেছি..! (মনে মনে বললো মেঘা) কেমন আছো মেঘা? ভাল ছিলামনা। এখন খুব ভাল। আপনি? আমিও আপনিও ভাল ছিলেননা, এখন ভাল, আমার মতো? এই মেয়ের সাথে কথা বলাও বিপদ! (মনে মনে বললো) কি ভাইয়া! কি ভাবছেন? আচ্ছা আমাকে কেমন লাগছে, এবার তাই বলেন? আচ্ছা তুমি কি পাগল? কেন? টাকার সাথে কি দিয়েছো? আকাশ ভাইয়া আমি সত্যিই আপনাকে ভালবাসি। আর আপনার ভালবাসা না পেলে আমি সত্যিই মরে যাবো!(সাহস করে কথাটা বলেই ফেললো মেঘা) আকাশ কি বলবে, ভেবে পাচ্ছেনা তুমি আসলেই একটা পাগল! জ্বী.. না..! আমি পাগলি। আপনি পাগল।
তোমাকে পড়ানো বাদ দিতে হবে, বুঝেছি! একথা শুনেই মেঘার দুচোখ বেয়ে টপটপ করে অশ্রু ঝরতে লাগলো। আকাশ বললোতুমি কাঁদছো কেন!! আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে আমি পড়াবো, সারাজীবন পড়াবো। তবু কেঁদোনা! একথা শুনে মেঘা কাঁন্নার মাঝে হেসে দিলো। আকাশ বললো তুমি আসলেই একটা পাগলি! হুম আকাশ মেঘাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলো “আসলে মেয়েটি আমাকে সত্যি ভালবাসে। কিন্তু এই ভালবাসার শেষ কোথায়। ওর বাবা মা জানলে কি ভাববে আমাকে নিয়ে!” একদিন আকাশ মেঘাকে বললো এক কথা বলতে চাই তোমাকে! বলেন তোমার মত একটা পিচ্চি মেয়ে আমার ঘুম হারাম করে দিবে, এটা আমি কোনোদিন ভাবিনি।
সত্যি! আমার জন্য আপনার ঘুম হয়না? তাহলে তো আপনি আমাকে ভালবাসেন? আচ্ছা তুমি এত পেকেছো কিকরে? আপনার জন্য পেকেছি। না পাকলে কি আর আপনার ভালবাসা পেতাম? ভেবেছিলাম জীবনে কোনোদিন প্রেম করবোনা। শেষ পর্যন্ত একটা পিচ্চি মেয়ের প্রেমে পড়তে বাধ্য হলাম! পিচ্চি হলেও ভালবাসাটা কিন্ত খাঁটি! একটা অনুরোধ করবো? কি? একবার বলবেন “আই লাভ ইউ মেঘা”? প্লিজ! আমি পারবোনা আমার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে, প্লিজ..!আকাশ এই কথা প্রথমবার কোনো মেয়েকে বলছে। তাও আবার একটা পিচ্চি মেয়েকে। তাই একটু লজ্জাই লাগার কথা। মাথাটা নিচু করে বললো আই লাভ ইউ মেঘা আই লাভ ইউ ঠু বলেই মেঘা দুচোখের জল ছেড়ে দিলো খুশিতে। আর কাঁন্না ভেঁজা কন্ঠে বললো “আজ আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন।