“ শীতকালে শীত থেকে বাঁচার জন্য আমি ছোটবেলা থেকেই প্রয়োগ করতাম আমার কিছু ট্রিকস।“ এই শীতেও তা বাদ যায়নি। শীত আসতেই শুরু হলো আমার ট্রিকসগুলো।
গোসল করতাম সপ্তাহে একবার শুক্রবারে। সেইদিন গোসল করার আগে সকালে ঘুম থেকে উঠেই গোসল করার আগ পর্যন্ত বিরতিহীন দৌড় লাগাতাম। পুরো শরীর যখন গরম হয়ে পানি খুঁজে তখনই পুকুরে একটা ডুব দিয়ে উঠে যেতাম।
“আর ৬দিন গোসল না করলে লোকে কি বলতো?“ হেহ! আমি এতোটা পাগল নাকি? বাকি ৬দিন বাথরুমে ঢুকে পানির ট্যাব ছেড়ে ১ঘন্টা বসে থাকতাম তারপর মাথার চুলগুলো হালকা ভিজিয়ে তোয়ালে গায়ে দিয়ে বেরিয়ে আসতাম। রুমে গিয়ে কাপড় পরে পুরো শরীর বডি স্প্রে মেরে সুগন্ধ করে ফেলতাম, তারপর রাস্তায় বের হলে কেউ বুঝতেই পারতোনা যে “আমি গোসল করিনি!“
শীতকালে পানি অতিরিক্ত ঠান্ডা তাই টয়লেট পেপারের দোকান নিয়ে আসতাম টয়লেট শেষে ক্লিনের জন্য ।
এই শীতে অর্ধেক শীত যেতে না যেতেই ঘরে চলছে আমার বিয়ের কথা। আমিতো খুব খুশি ফেসবুকে সবাই স্ট্যাটাস দেয় শীতকালে বিয়ে করা নাকি শ্রেয়! তার মানে বিয়ে করার পর কোন একটা ম্যাজিক নিশ্চয় আছে।
দেখতে,দেখতে আমার বিয়েটা হয়ে গেলো। বিয়ের দিন রাতে আমি রুমে ঢুকতেই দেখি বউ আমার খাটে বসে আছে। আমিতো মনে,মনে খুবই খুশি কারণ এতোদিন কম্বল একটা নিয়ে একা থাকার পরেও ঠান্ডা লাগতো কিন্তু এখন আর তা লাগবেনা। শীতকালে একসাথে যতো বেশিজন শুয় ততই ভালো উষ্ণতা পাওয়া যায়।
আমি তারাতারি খাটের উপরে গিয়ে কম্বলটা খুলে বউকে বলি “ এসো বউ এসো কম্বলের ভেতর এসো! বাইরে অনেক ঠান্ডা।“ বউ আমার কথা মতো কম্বলের ভেতর এসে শুয়ে পড়ে। আমি কম্বলটা নাকেমুখে দিয়ে উষ্ণতা ফিল করতে চাইলাম! কিন্তু এ কী? বউয়ের পায়ের সাথে পা বাজতেই আমার পুরো শীতের সেরা ঠান্ডাটা ফিল করলাম। হাতের সাথে হাত বাজতেই যেনো মনে হলো একটা বরফের খন্ড।
“ তাইলে কি যারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতো শীতকালে বিয়ে করা শ্রেয় তাদের কথা কি ভুল?“
হ্যাঁ তাদের কথা ১০০% ভুল! তার প্রমাণ পেলাম আমি অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে। কিছুক্ষণ পর,পরই আমার বউটা টয়লেটে যায় আর একই লেপে থাকার কারণে লেপটা সরে গেলেই আমি অনুভব করতাম প্রচন্ড ঠান্ডা।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকেই উঠার পর থেকেই আমার মাথায় প্রচন্ড টেনশন! এই বউ নিয়ে কিভাবে পুরো শীত কাটাবো? আমার মাথায় আইডিয়ার অভাব ছিলোনা তাই এই প্রবলেমের সলোশন বের করতেও বেশি সময় লাগেনি।
সেইদিন রাতেই ঘুমানোর আগে আগুন ধরিয়ে বউয়ের পুরো শরীরে হালকা আগুনের ভাব দিয়ে বউটাকে গরম করে নিলাম। তারপর আমার পায়ের সাথে বউয়ের একটা পা রঁশি দিয়ে বেঁধে শুয়ে পড়লাম যাতে রাতে আর বারবার টয়লেটের জন্য উঠতে না পারে। বউ আমার কিছু না বলেই অবাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে রইলো। আমি লেপের ভিতর বউয়ের হাতের সাথে হাত আর পায়ের সাথে পা বাজিয়ে রাখলাম। উফ! কি ভালোইযে লাগছিলো তা বলে বুঝানো যাবেনা। মাথায় ভালো আইডিয়া থাকলে সুখ যেকোন ভাবেই খুঁজে নেওয়া যায়, যার জলন্ত উদাহরণ আমি।
এইভাবে প্রায়ই কয়েকদিন চলে যায়। আমি আমার ট্রিকসগুলো এপ্লাই করে এই ঘন শীতেও বউয়ের সাথে খুবই হ্যাপি আছি। একসাথে থাকার সুবাদে বউ আমার গোসল না করার রহস্য ও শীত থেকে বাঁচার সব ট্রিকস জেনে গিয়েছিল। কিন্তু তাতেও আমার তেমন কিছু যায় আসেনা, বউ আমার খুবই চাপা স্বভাবের ছিলো তাই কাউকে কিছুই বলতোনা।
আব্বু, আম্মু বউকে নিয়ে কয়েকদিন তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বললো। তাই পরদিন সকালেই বউকে নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলাম।
আমার চাপা স্বভাবের বউ এইখানে এসে দেখি খুবই চঞ্চল। সবার সাথে কথাবার্তাই খুবই এক্সপার্ট। দেখতে, দেখতে রাত হয়ে গেলো! বউ আমার কিছুক্ষণ পর তার ভাইয়ের পিচ্চি একটা ছেলে নিয়ে থাকার রুমে এলো।
আজ দেখি বউ নিজে থেকেই আগুন জালাচ্ছে। ইশ! আমার বউটা কতো কিউট…এই কয়েকদিনের মধ্যেই আমার চাহিদা বুঝে গেছে। একি বউ দেখি একটা কাগজে আগুন ধরিয়ে আমার পুরো শরীরে আগুনের ভাব দিচ্ছে আর বলছে “ পিচ্চিটা তোমার পাশে থাকবেতো তাই তোমার ঠান্ডা হাত,পা বাজলে ওর ঠান্ডা লেগে যাবে।“ এরপর একটা রঁশি এনে আমার পায়ের সাথে পিচ্চিটার পা বাঁধছে আর বলছে “ বারবার টয়লেট করতে উঠলে ওর ঘুম ভেঙে যাবে আর তা কিছুতেই হতে দেওয়া যায়না।“ এই বলে পিচ্চিটাকে আমার পাশে শুইয়ে বউ আমার সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
এ কি হচ্ছে আমার সাথে? আমি তখনও বুঝে উঠতে পারিনি।
মধ্যরাতে পিচ্চিটা ঘুম থেকে উঠে আমার বউকে ফুফি,ফুফি বলে ডাকছে আমার বউ কি জানতে চাইলে পিচ্চি বলে “ ফুফি আমার হিসু ধরেছে “ আমার বউ প্রতিউত্তরে বলে “ বিছানায় করে দাও সোনা, কোন সমস্যা নাই।“ আমি এইবার চিৎকার করে বলি “ না… এ কিছুতেই হতে পারনা।“ বউ আমার মুখ চেপে ধরে বলে “ দেখি এইবার কাল থেকে কিভাবে গোসল না করে থাকো।“ পাশ থেকে তখন গরম,গরম ভাব আর শনশন আওয়াজ অনুভূত করলাম। পিচ্চি এইবার বলে “ ফুফি কাজ শেষ!“
“ কেউ বাঁচাও!! আমাকে এই দজ্জাল বউয়ের হাত থেকে কেউ বাঁচাও!!“