কাঁচা মরিচের মতো ভালোবাসা

কাঁচা মরিচের মতো ভালোবাসা

এক দেশে ছিলেন এক রাজা। তাঁর ছিল চার কন্যা। রাজা তাঁর চার মেয়েকেই ভীষণ ভালোবাসতেন। একদিন রাজা ভাবলেন, তাঁর চার কন্যা তাঁকে কেমন ভালোবাসে পরীক্ষা করা যাক। কন্যাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা আমাকে কে কেমন ভালোবাসো?’

বড় মেয়ে বলল, ‘ড্যাড, আমি তোমাকে আমার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারের মতো ভালোবাসি।’

রাজা শুনে খুব খুশি হয়ে বললেন, ‘দ্যাটস কুল!’

মেজ মেয়ে বলল, ‘বাপি, আমি তোমাকে আইফোন টেনের মতো লাভ করি।’

রাজা শুনে আবারও খুশি হলেন। বললেন, ‘এটাই তো রিয়েল লাভ!’

পাশের দেশের রানির প্রোফাইল পিকচারে লাভ রিঅ্যাক্ট দিয়ে রাজা তাঁর সেজ মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি আমাকে কেমন ভালোবাসো?’ সেজ মেয়ে বলল, ‘আব্বু, আমি তোমাকে পাওয়ার ব্যাংকের মতো ভালোবাসি।’

স্মার্টফোনের এই যুগে রাজা নিজেই পাওয়ার ব্যাংক ছাড়া চলতে পারেন না। তিনি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। আবেগে কান্নাকাটি শুরু করলেন! মেয়েরা যে তাঁকে ‘এত্তগুলা’ লাভ করে!

রাজা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন ছোট মেয়েকে। এবার ছোট মেয়েকে অতি উৎসাহের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মা, তুমি আমাকে কেমন ভালোবাসো?’

‘কাঁচা মরিচের মতো’, ছোট মেয়ে বলল।

রাজার মাথার চান্দি গরম হয়ে গেল। রাগে গজরাতে গজরাতে বললেন, ‘এ কেমন বিচার…সরি, এ কেমন ভালোবাসা!’

ওদিকে আবার পাশের দেশের রানি তাঁর প্রোফাইল পিকচারে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়েছে। এদিকে ছোট মেয়ের কাঁচা মরিচের মতো ভালোবাসা। রাজা তাঁর সব রাগ ঝাড়তে শুরু করলেন ছোট মেয়ের ওপর। বললেন, ‘তুই সবচেয়ে ছোট। তোকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। এই তার প্রতিদান? তোকে অনেক বুদ্ধিমতী মনে করতাম। এখন দেখি তুই একটা আস্ত গাধী! তোর জন্য কী করি নাই আমি? তোর জন্য নিজে পরীক্ষার দিন সকালে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেছি। গোল্ডেন এ-প্লাস পাইলি কার কল্যাণে? আর তোর ভালোবাসা এসে ঠেকল কিনা কাঁচা মরিচে? শেম অন ইউ! শেম!’

ছোট মেয়েকে ব্লক করে সৈন্যদের আদেশ করলেন, ‘এই মেয়েকে গহিন কোনো জঙ্গলে রেখে এসো।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘দেখবে, মেয়ে যেন কোনোভাবেই ইন্টারনেট-সুবিধা না পায়। দুই দিন ফেসবুক ব্যবহার করতে না পারলে মেয়ে এমনিতেই সিধা হয়ে যাবে!’

বনে একদিন ঘুরতে ঘুরতে রাজকন্যা দেখা পেল এক তরুণের। ওই তরুণ ছিল ফেসবুক সেলিব্রিটি। স্ক্রিনশট কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাওয়ার পর ফলোয়াররা তাকে বয়কট করে বনবাসে পাঠিয়েছে। তো সেই তরুণের সঙ্গে কয়েক মিনিটের মধ্যে ভাব হয়ে গেল রাজকন্যার। চোখে চোখে বিনিময় হলো লাভ রিঅ্যাকশনের।

কদিনের মধ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও করল দুজন মিলে। বনের এক পাশে বাঁধল ছোট্ট একটা ঘর। শুরু করল কাঁচা মরিচের চাষ। ওদিকে রাজার যায় যায় অবস্থা। প্রাণ নয়, সম্পদ! সেদিন রাজার সৈন্যরা বাজার করতে গিয়েছিল। কাঁচা মরিচের দাম শুনে তারা কয়েক ঘণ্টা অজ্ঞান ছিল। হুঁশ ফিরে আসার পর দোকানিকে বলতে শুনল, ‘সৈন্য বাবাজিরা, এক কেজি কাঁচা মরিচ কেনার দিনের কথা ভুলে যান। ওসব এখন রূপকথা।’

সৈন্যদের কাছে দশটি স্বর্ণমুদ্রার ব্যাগ ছিল। দোকানিকে দিয়ে বলল, ‘এর বিনিময়ে যতটুকু মরিচ দেওয়া যায়, দেন।’

দোকানি একটা কাঁচা মরিচ দিল। সৈন্যরা তো অবাক। আরও অবাক করে দিয়ে দোকানি বলল, ‘শুনুন, এটা কিন্তু একেবারে বিক্রি না। তরকারিতে জাস্ট মরিচটা একবার চুবিয়ে তুলে রাখবেন। এভাবে একটা মরিচ পরপর এক সপ্তাহ ব্যবহার করবেন। এরপর আবার ফেরত দিতে হবে!’

রাজা কাঁচা মরিচের কাহিনি শুনে ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট করে ঝিম মেরে বসে থাকলেন। তাঁর মনে পড়ে গেল, ছোট কন্যাকে কতটা ভুল বুঝেছিলেন তিনি! বুঝতে পারলেন, ছোট কন্যা আসলেই বুদ্ধিমতী ছিল এবং সে-ই তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসত।

নিজের ভুল বুঝতে পেরে রাজা কন্যাকে বন থেকে ফেরত আনলেন। মেয়ে এক বস্তা কাঁচা মরিচ নিয়ে এসেছে। সেই কাঁচা মরিচ আর ছোট কন্যা-জামাতার সঙ্গে একটা সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করলেন রাজা। ক্যাপশনে লিখলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে কাঁচা মরিচের মতো ভালোবাসি।’

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত