গ্রাম থেকে চাকরির উদ্দেশ্যে আসছি শহরে। এখন রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। একা একা দাঁড়িয়ে আছি টঙ্গী রেল-ষ্টেশনে।
আমার গন্তব্য স্হান ছিল পাগার হাজ্বী মার্কেট। এর আগে কখনো শহরে আসি নি। এই প্রথম শহরে আসলাম তাই রাস্তাঘাট ও ছিল অপরিচিত।
তারপর হেটে হেটে চলে আসলাম ষ্টেশন রোড ওভার ব্রিজের নিচে। এখানে গাড়ীর জন্য দাড়িয়ে আছি। তবে কোন গাড়ি দেখছি না।
সবকিছু কেমন জানি নিরব লাগছে। এদিকে ফোনেও চার্জ নেই। তাই কাউকে ফোনও দিতে পারছি না।
.
কি করব কোনদিকে যাব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তারপর দেখলাম একটা লোক আমার দিকে এগিয়ে আসছে। ওনি আমার কাছে এসে বললেন-
-কোথায় থেকে আসছো বাবা, আর কোথায় যাবে?
-জ্বী আংকেল আমি ময়মনসিংহ থেকে আসছি, পাগাড় হাজ্বী মার্কেট যাবো।
তাহলে এখানে দাড়িয়ে আছ কেন? না মানে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছি। আর এই প্রথম টঙ্গীতে আসলাম তো তাই রাস্তাঘাট চিনি না।
আর এখানে আমার এক কাক্কা থাকে। ওনার বাসায় যাবো।
তাহলে তুমি এক কাজ করো এত রাত্রে কোন গাড়ী বা রিক্সা পাবে না, এর চেয়ে তুমি আমার বাসায় থেকে যাও, সকালে চলে যাবে।
ওই রেল ক্রসিং এর সাথেই আমার বাসা। আমি ওনার কথা শুনে একটু ভয় পেয়ে গেলাম।
না না থাকা যাবে না আজকে রাতের মধ্যেই আমাকে কাক্কার বাসায় যেতে হবে।
কারণ আগামীকাল সকালে আমার চাকরির জন্য একটা পরিক্ষা আছে।
তার চেয়ে বরং আপনি আমাকে রাস্তাটা দেখিয়ে দেন আমি হেটে হেটে চলে যাবো। আরে বোকা হাজ্বী মার্কেট তো অনেক দুর।
এতো রাস্তা তুমি হেটে যেতে পারবে না। আংকেল সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো। শুধু আমাকে রাস্তাটা দেখিয়ে দিন।
ওনি আমাকে হাতে ঈশারা দিয়ে বললেন ওই দেখছো সামনের রাস্তাটা,
ওইটার ডানে একটা রাস্তা গেছে ওই রাস্তা দিয়ে সোজা ৪০/৫০ মিনিট হাটবা তাহলে সামনে একটা বাজার পাবে, ওই বাজারটাই হাজ্বী মার্কেট।
ওকে আংকেল ধন্যবাদ।
.
এবার আমি একা একা হাটতে শুরু করলাম। রাস্তাঘাটে কোন মানুষ দেখছি না। ভয় ভয় নিয়ে হাটছি। আমার কাঁধে ইয়ে বড় এক বেগ।
বেগটা নিয়ে হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কি আর করব বেগ রেখে তো আর যেতে পারব না।
কিছুক্ষণ হাটার পর আমি লক্ষ্য করছি আমার পিছনে কে যেন আমার সাথেই হাটছে। তারপর পিছনে মাথাটা ঘুরিয়ে দেখি একটা মেয়ে।
আমার মত তার কাঁধেও একটি বেগ। তবে রাতের অন্ধকারের জন্য তার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
তো আমি আর কিছু বললাম না। আমি আবার হাটা শুরু করলাম।
.
মেয়েটিও আমার সাথে হাটছে। আমি দাড়ালে মেয়েটিও আমার সাথে দাড়িয়ে পরে, আর হাটলে মেয়েটিও আমার সাথে হাটে।
আমি আশ্চর্য হলাম। কি ব্যপার মেয়েটি আমাকে ফলো করে হাটছে কেন। আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম।
তারপর একটা দোকানের বারান্দায় গিয়ে বসলাম এবং ভাবলাম দেখি এবার মেয়েটি কি করে। মেয়েটিও দেখি দাড়িয়ে গেছে।
অপর পাশ থেকে একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে আসছে। মেয়েটি কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে আমার একটু কাছাকাছি আসল।
তবে কোন কথা বলল না। এবার ওর চেহেরাটা আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি। আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
কিন্তু আমিও কোন কথা বলছি না। কি মায়াবী তার দু’চোখ, কি সুন্দর তার চেহেরা। যেন বিধাতা আমার জন্য ওকে পাটিয়েছে।
দুর আমি এসব কি ভাবছি। আমি নিজেকে বললাম অনন্ত এসব কিন্তু ঠিক না। প্রথম দেখাতেই এতো আবেগ ভাল না।
নিজেকে একটু কন্টোল কর। এবার আমি কুকুরটাকে বললাম কিরে মামা এখানে কি চাস।
আজ খুব জার্নি করে আসছি আমাদের একটু বসতে দে। তুই তোর মত চলে যা। দেখ আমাদের কাছে খাওয়ার কিছু নেই।
তারপর কুকুরটা চলে গেল।
.
এবার মেয়েটি বলে উঠল আপনি তো খুব অদ্ভুদ একটা লোক, আপনি কুকুরকে চলে যাওয়ার কথা বললেন কুকুরটিও চলে গেল।
.
মেয়ে- আচ্ছা আপনি কোথায় যাবেন?
আমি- এই তো আমি হাজ্বী মার্কেট যাবো। আর আপনি?
মেয়ে- তাই নাকি? আমিও হাজ্বী মার্কেট যাবো।
আমি- তাহলে চলুন দুজন এক সাথে যাই।
মেয়ে- হুম চলুন।
তারপর দুজন একসাথে হাটা শুরু করলাম। মেয়েটা এবার আমাকে জিজ্ঞাস করল হ্যালো আপনার নামটা কি আমি জানতে পারি।
হুম অবশ্চুই আমার নাম অনন্ত। কিন্তু আপনার নামটা? জ্বী আমার নাম ঈশিতা, ঈশিতা চৌধুরী।
মেয়েটি আমাকে বলল এইতো হাজ্বী মার্কেট চলে আসলাম।
তাহলে আমি এখন আসি। ওই দিকে আমার মামা দাড়িয়ে আছে। ওকে যান! জানিনা আর কখনো দেখা হবে কি না।
এই কথা বলে মেয়েটি চলে গেল।
.
কি রে ঈশিতা আজ আসতে এত রাত হলো কেন। মামা আজ গাড়ীতে অনেক জ্যাম হয়েছিল তাই আসতে দেরি হয়েছে।
তোমার রাস্তায় কোন অসুবিধা হয় নি তো। না মামা তেমন কোন সমস্যা হয়নি। আচ্ছা তাহলে এখন বাসায় চল। হুম চল মামা।
এদিকে আমার কাক্কাও দেখি একটা দোকানে বসা। কাক্কাও আমাকে একি প্রশ্ন করে কিরে অনন্ত এত রাত হলো কেন?
ফোনটাও বন্ধ করে রাখলে। কাক্কা ফোনে চার্জ ছিল না, তাই ফোন বন্ধ ছিল। তারপর কাকার সাথে বাসায় চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়লাম।
.
রাত তিনটে বেজে গেছে শুয়ে আছি কিন্তু চোখে যে কোন ঘুম নেই। বার বার ওই মেয়েটির কথা মনে পরছে।
সত্যি ঈশিতা তোমার সাথে কি আর দেখা হবে না, আর কখনো কি তোমার মায়াবী চেহারাটা দেখতে পারব না?
ঈশিতার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কোম্পানির চাকরির পরিক্ষার জন্য রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলাম।
পরিক্ষায় আমি এলাউ হলাম। তারপর ঐ কোম্পানিতে আমাকে নিয়োগ করা হল।
কিন্তু বিধাতার কি লিখন আর আমার ভাগ্যের কি পরিহাস ওই কোম্পানিতে ঈশিতার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল।
ঈশিতার ও ওই কোম্পানিতে চাকরি হয়।
তারপর থেকে প্রতিদিন ওর সাথে আমার কথা হয়। এভাবে কথা বলতে বলতে একসময় আমরা দুজনের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক হয়ে যায়।
দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসি অনেক বিশ্বাস করি। ও আমাকে কখনো কষ্ট কি জিনিস বুঝতে দেয় না। এভাবে চলে যায় আমাদের দু বছর।
.
দুই বছর পর-
আমরা দুজনের সম্পর্ক দুজনের পরিবার মেনে নেয়। পরিবারের সিদ্বান্ত অনুযায়ী আজ আমি ঈশিতাকে বিয়ে করি।
আজ আমাদের দুজনের বাসর রাত। ঈশিতা ঘুমটা পরে বসে আছে।
আমি ওর কাছে যেতেই ও বিছানা থেকে নেমে প্রথমে আমার পায়ে সালাম করে। আমি ওর দুহাত ধরে উঠিয়ে দাড়া করালাম।
তারপর ওর মুখের ঘুমটা টা একটু সরিয়ে দিলাম। এবং অবাক দৃষ্টিতে ঈশিতার মুখের দিখে তাকিয়ে থাকলাম।
কি ব্যপার অমন করে কি দেখছো। তোমাকে দেখছি। আমাকে বুঝি আর দেখনি। দেখছি কিন্তু আজ যে তোমাকে সবচেয়ে সুন্দরী লাগছে।
তোমাকে যে আজ রাজ রাণীর মত লাগছে। আমি যে তোমার রাজ রাণী হতে চাই না।
আমি শুধু তোমার বান্দী হিসাবে তোমার পদতলে একটু জায়গা চাই।
আমি চাই তুমি সারা জীবন আমাকে তোমার ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে। ঈশিতা কথা বলছে আর কাঁদছে।
কান্না দেখে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। প্লীজ তুমি এমন কথা আর কখনো বল না।
আমি তোমাকে বান্দী হিসাবে রাখতে চাইনা, আমি তোমাকে রাজ রাণীর মত আমার পাশে চাই।
আমি তোমাকে আমার পদতলে রাখতে চাই না, আমি তোমাকে আমার বুঁকের মধ্যে তোমাকে আকড়ে ধরে রাখতে চাই।