ভ্রান্তি

ভ্রান্তি

নীলক্ষেত মোরে দাঁড়িয়ে আছি।যাবো মিরপুরের দিকে।বৃষ্টি হচ্ছে অল্প অল্প।আমার সামনে কিছু দূরেই একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দেখতে পুরো সিনেমার নায়িকাদের মত।ছিপছিপে গড়ন।লম্বা চুল।পুরো শরীর ভিজে গেছে বৃষ্টির পানিতে।মডার্ন মেয়ে,তাই পড়নের ড্রেসটাও মডার্ন।টাইট জামা ভিজে গেলে যে কি একটা অবস্থা হয়! মানুষরূপী পুরুষ ছাগল গুলো মেয়েটাকে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করার চেষ্টা করছে।তার ভেজা শরীর দেখে পুরুষগুলোর যেই সেই অবস্থা।অনেকে তো আবার শিষও মারছে।মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব লজ্জা পাচ্ছে।ছাতাও নেই, থাকলে এতোক্ষনে হয়তো মেলে ধরতো। না মেয়েটাকে সাহায্য করা দরকার।

আস্তে আস্তে মেয়েটার সামনে গেলাম।এরপর যতটা সম্ভব বিনয়ী কন্ঠে বললাম,
— আপনি কোথায় যাবেন?
মেয়েটা আমার দিকে ঘুড়ে তাকালো।আমার মুখের চাপ দাড়ি এবং বড় চুলের দিকে একবার দৃষ্টি নিপাত করে বলল,
–কেন?
মেয়েরা বোধহয় সব কথারই এরকম সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয় অথবা আমি আজ পর্যন্ত যত জনের সাথে কথা বলেছি তারাই শুধু দেয়।
আমি একটু হেসে বললাম,
–না।জেনে কোন লাভ নেই।তবে আপনি চাইলে আমার ছাতাটা ব্যাবহার করতে পারেন।আরেকটা কথা, আমি কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসি নি।

মেয়েটা একটু হাসলো।তারপর বলল,
–আচ্ছা,দিন ছাতাটা।
–আসুন,ছাতার ভেতরে এসে পড়ুন।
মেয়েটা আমার এ কথায় কেন জানি অবাক হলো।অবাক হয়েই বলল,
–নাহ, এক ছাতার নীচে থাকতে পারবো না।
আমি আর কি করবো? যেহেতু বলেছি সাহায্য করবো তাই এখন করতেই হবে।তাই মেয়েটাকে ছাতাটা দিয়ে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম।

এই শীতে এরকম বৃষ্টি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। কিন্তু আমি একটু অন্যরকম।ঘড় থেকে বের হয়ার সময় হঠাৎ মনে হলো,আজ বৃষ্টি হবে।তাই ছাতাটাও নিয়ে আসলাম।
এখন বিকেল।কিন্তু চারিদিক প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে।বৃষ্টির বড় বড় ফোটাগুলো আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ মেয়েটা আমার দিকে একটু সরে এসে বলল,
–আপনি কোথায় যাবেন?
–মিরপুর।
–আরেহ, আমিও তো।
–ভালো।

মেয়েটা বলল,
–আচ্ছা,আপনি বাদে কেউ আজ ছাতা আনে নি।আপনি কি প্রতিদিন আবহাওয়া খবর দেখে ঘড় থেকে বের হন।
আমি চট করে উত্তর দিলাম,
–নাহ।
–তাহলে বুঝলেন কিভাবে?
–আমি বুঝতে পারি।আমিও এও বুঝতেছি আজ আপনি খুব খারাপ একটা কাজ করতে যাচ্ছেন।
–মানে?
মেয়েটা রেগে গেছে।সে আবার বলল,
–মানে কি?
–মানেটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন।আপনার বাবা একজন ইমানদার মানুষ।তার মেয়ে হয়ে আপনি ছিঃ ছিঃ।
–দেখেন আপনার ছাতা ব্যাবহার করছি দেখে আপনি এমন ব্যাবহার করতে পারেন না।
–আপনার আজকে আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে রূম ডেট না?
মেয়েটা এবার ভীষণ অবাক হলো।তার চোখে মুখে ভয়।সে হয়তো ভাবছে এ কথা আমি কিভাবে জানলাম?
মেয়েটা মাথা নীচে নামিয়ে বলল,
–আপনি কি নোমানকে চিনেন?
–নাহ, চিনি না। নোমান কি আপনার প্রেমিক?
–হুম।
মেয়েটা আমার কথায় একেবারে চুপ হয়ে গেছে।সে খুব লজ্জা পাচ্ছে।আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু কোন কারনে বলতে পারছে না।
আমিই তাকে বললাম,
–আমাকে কিছু বলতে চান?
–সে বলল,নোমানের সাথে যে আজ আমার ডেট কিভাবে বুঝলেন?
–বলতে পারি, তবে একটা শর্ত আছে।
–কি শর্ত?
–ডেট ক্যান্সেল করতে হবে।
মেয়েটা কিছুক্ষন ইতস্তত করে বলল,
–আচ্ছা।
–তাহলে চলুন হাটতে হাটতে ধানমন্ডি লেকের দিকে যাই।পেছন থেকে বাস আসলে আমরা উঠে পড়বো।

হাটতে হাটতে বললাম,
–দেখেন পৃথিবীতে সব কিছু হয়ার পেছনে একটা কারন থাকে।
–হুম।
–এখন এই সময় কি বৃষ্টি হয়ার কথা?
— নাহ তো।একটু আগেও অনেক রোদ ছিলো।
–কোন ভালো মানুষ বা তার পরিবার যদি কখনও পাপ কাজের দিকে হাত বাড়ায় তখন সমস্ত প্রকৃতি তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত হয়।ধরুন আপনি আজ রূম ডেটে যাচ্ছেন।এটা একটা পাপ কাজ। আপনার বাবা একজন খুব ইমানদার মানুষ।তাই বৃষ্টি দিয়ে প্রকৃতি আপনাকে বাধা দিচ্ছে।
–লেম।
–হয়তবা।
–আমার কথা বাদ দেন।বাকী মানুষরা যে যাচ্ছে,তাদের কেন সমস্যা হচ্ছে?
–আমার যুক্তি সার্বজনীন নয়।আপনার মন চাইলে বিশ্বাস করবেন নাহলে নাই।
.
মেয়েটার মোবাইলে কল এসেছে।সম্ভবত নোমান।মেয়েটা ফোন ধরে কথা বলছে। তার কথাগুলো এরকম,
–এইতো বাবু বাস নেই।
আসতেছি তাড়াতাড়ি।
রাগ করে না।

ফোন রাখার পর আমি তাকে বললাম,
–আপনাকে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে না?
–হুম।অনেক রাগ করেছে আমার জানটা।
–আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন যাবেন না আজ।
–আপনার যুক্তি গ্রহনযোগ্য না।তাই যাবো।
আমি বললাম,
–আমি আমার যুক্তির পক্ষে জোরালো প্রমান দিতে পারবো।
–কিভাবে?
–আমি যদি বলি আমিও প্রকৃতির অংশ।আমি আপনাকে বাধা দিচ্ছি। যাতে আপনি না যেতে পারেন।
–মানে?

আমি একটু হাসলাম। হেসে হেসে বললাম,
–আপনি আপনার প্রেমিককে এতো ভালোবাসেন।আপনার প্রেমিক তো করে না।ও আপনার দেহ চায়।দেহ পাওয়ার পর আপনাকে ছুড়ে ফেলে দিবে।
–ভাই, এই নেন আপনার ছাতা।আপনে আমার পেছন ছাড়েন প্লিজ।

আমি ছাতাটা হাতে নিয়েছি ঠিকিই কিন্তু তার মাথার উপরেই ধরে আছি।যে কেউ দেখলে আমাদের এখন প্রেমিক যুগল ভাববে।আমি তার পিছু যেতে যেতেই বললাম,
–আচ্ছা প্রমান দেই।
–ভাই,আমার প্রমান লাগবে না।
–প্লিজ একটা প্রমান নেন।
মেয়েটা বিরক্ত হয়ে থেমে গিয়ে বলল,
–কি প্রমান?
আমি একটু ভেবে বললাম,
–ছেলেটা এখন কই?
–নোমান শ্যামলিতে আছে।
–নোমানকে ফোন করে বলেন,একটা ছেলে আপনাকে ঢাক্কা মেরে লেকের পানিতে ফেলিয়ে দিয়েছিল।এই অবস্থায় আজ দেখা করা ইম্পসিবল। দেখুন ও কি বলে।তাহলেই প্রমান পেয়ে যাবেন।

মেয়েটা নোমানকে ফোন করলো,আমার বলা শেখানো কথাগুলো বলল।এরপর কিছুক্ষন চুপ করে রইলো।ও পাশ থেকে যে কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছি না।মেয়েটার চোখ বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে।একটু পর মেয়েটা ‘ওকে’ বলে ফোনটা রেখে দিলো।
আমি মুখে হাসি দিয়ে বললাম,
–কি অনেক রাগ করলো না?রাগ করারই কথা, ওর মনেত খায়েশ তো আজ পুরন হলো না।

মেয়েটা কিছু না বলে আমার গালে ঠাশ করে এক চড় মারলো।শীতের মাঝে চড়টা যুতসই হয়েছে।অনেকদিন ব্যাথা থাকবে মনে হয়।এক হাত গালে রেখে বললাম,
–কি ব্যাপার মারলেন কেন?

মেয়েটা ফোনটা হাতে নিয়ে আমার হাতে দিলো।সেখান কল রেকর্ড অন করে দিয়ে বলল,
–শুনুন।
ছেলেটা গম গম গলার শব্দে বলছে,
–বাবু তুমি ব্যাথা পাও নি তো।পাশের হসপিটালেই ভর্তি হও।আমি আসতাছি।আমার আব্বু -আম্মুকে নিয়ে আসতেছি।আমারই ভুল হইছে।এখন থেকে ঘুরতে যাওয়ার আগে তোমাকে বাসা থেকে নিয়ে যাবো আবার দিয়ে আসবো।আমাকে মাপ করে দাও।আমি আসতেছি।এরপর ছেলেটার কাদার শব্দ।

আমার লজ্জা পাওয়ার কথা কিন্তু পাই নি।নিলজ্জের মত মেয়েটার কাছ থেকে ছাতাটা চেয়ে সোজা হাটা দিলাম।মনে মনে ভাবলাম এরপর থেকে আরেকটু সাবধানে যুক্তি দিতে হবে।আর হ্যা সব ছেলেই প্রতারক না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত