অদৃশ্য ভালোবাসা

অদৃশ্য ভালোবাসা

মা জান্নাত কোথায়? চলে গেছে। চলে গেছে মানে! রাত্রি কই? রাত্রি কে নিয়েই জান্নাত ওর বাবার বাসায় চলে গেছে। তুমি ওদের আটকাবে না? অনেক চেষ্টা করেছিলাম বাবা। কিন্তু জান্নাত কিছুতেই থাকলো না।

জান্নাত আমার স্ত্রী। পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়েটা হয়। আমাদের বিয়ে হয়েছে আট বছর। আমাদের একমাত্র মেয়ে রাত্রির বয়স সাত বছর। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিলো। কিন্তু কিছুদিন ধরে আমাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছেনা। জান্নাতের ধারনা আমার নাকি অফিসের মেয়েদের সাথে সম্পর্ক আছে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমি বিশ্বাস করাতে পারিনি যে কারো সাথে আমার সম্পর্ক নেই। এইতো সেদিন জান্নাত আমাকে কল করে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলেছিলো। কিন্তু কাজের চাপের কারনে আমার আসতে দেরি হয়ে যায়। বাসায় আসার সাথেই জান্নাত বলে কিনা আমি নাকি আমার কলিগ লাবন্যর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম।

এই নিয়ে শুরু হলো বিশাল ঝগড়া। জান্নাত কে যতই বোঝানোর চেষ্টা করি যে আমি কাজের চাপে আসতে পারিনি। সেটা সে কোন ভাবেই মানতে নারাজ। পরে মা এসে সেদিনের মতো আমাদের ঝগড়া মিটমাট করে দেয়।
আজ আবার ঝগড়া হয়েছে ঐ এক কারন নিয়েই। আমি একটা ফাইল নিয়ে বসের রুমে গেছিলাম।আর ভুলে ফোনটা রেখেছিলাম ডেক্সের উপর। ঐ ভুলটাই আমার কাল হয়ে দাড়ালো। ঠিক ঐ সময় জান্নাত ফোন দিয়েছে । ফোনটা বাজতে দেখে আমার কলিগ তানহা রিসিভ করে। আমি এসে কল ব্যাক করলেই শুরু হলো ঝগড়া। আমি নাকি অফিস বাদ দিয়ে প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে গেছি। কল যে তানহা রিসিভ করেছে সেটা তাকে অনেকবার বলার পরে ও বিশ্বাস করেনি। আজকের ঝগড়ার ফল স্বরুপ জান্নাত রাত্রিকে নিয়ে চলে গেছে।

নাহ এভাবে আর চলেনা। এর একটা বিহিত করতেই হবে। এসব ভাবতে ভাবতে জান্নাত কে কল দিলাম। হ্যালো বাবা। রাত্রি! আম্মু তুমি ঘুমাওনি? না বাবা ঘুম আসছেনা। তোমার আম্মু কই? আম্মু আছে! কিন্তু তোমার সাথে কথা বলবেনা। কেন কথা বলবেনা? সেটা জানিনা বাবা। আচ্ছা বাবা তুমি এখন নানুর বাসায় আসো। এখন কিভাবে যাবো আম্মু? না! না! এখন আসতেই হবে। আচ্ছা আম্মু আসছি।

রাত্রির বায়নার শেষ নেই। কি আর করার এই রাতেই যেতে হবে। বাইকটা নিয়ে বের হলাম আমার বাসা থেকে জান্নাতদের বাসা বেশি দূরে না। অল্প সময়ের ভিতরেই চলে গেলাম। দরজায় নক করতেই জান্নাত দরজা খুলে দিলো। আমাকে দেখে যে জান্নাত খুশি হয়নি তা ওর গোমরা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রাত্রি দৌড়ে এসে বাবা বলে জড়িয়ে ধরলো। নানুভাই নানুভাই দেখো বাবা এসেছে বলেই রাত্রি আবার দৌড়ে ওর নানুর রুমের দিকে চলে গেল। জান্নাত কে দেখে কেন জানি খুব ভয় করছে। সব ভয়কে দূরে রেখে জিজ্ঞেস করলাম।

রাত্রিকে নিয়ে চলে আসলে কেন? আমাকে কোন প্রশ্ন করবেনা। আমি তোমার কাছ থেকে মুক্তি চাই। এসব কি বলছো? আর একটি কথা ও বলবেনা তুমি এক্ষুনি এই বাসা থেকে চলে যাও। আর খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবে। আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জান্নাত অন্য রুমে চলে গেল। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসলাম। আমি ভেবে পাচ্ছিনা জান্নাত কেন এইরকম করছে। জান্নাত যেহেতু আমার থেকে মুক্তি চায় তাই ওরে মুক্তিই দিয়ে দিবো।

গভীর রাত চারদিকে নীরব। আমি বাইক ফুল স্পিডে চালাচ্ছি। আমার কানে শুধু জান্নাতের শেষ কথা গুলো বাজছে। মেইন রোড ক্রস করতে গিয়ে হঠাৎ পাশ থেকে একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মারলো। তারপর আর কিছু মনে নেই আমার। পরদিন সকালে চোখ খুলে দেখি আমি হসপিটালে। আমার বেডের পাশে জান্নাত বসে বসে কাঁদছে। একটু পরেই রাত্রি বাবা বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি এখানে কেন? আর তুমি কখন এলে? জান্নাত আমার কথার উত্তর দেওয়ার আগে নার্স রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলছে।

ভাই! কাল রাতে আপনি এক্সিডেন্ট করার পরে কিছু লোক আপনাকে এখানে রেখে যায়। ভাবির নাম্বার আমার কাছে ছিলো। আমিই ভাবিকে ফোন করে আপনার কথা বলি। ভাবি এসেই পাগলের মতো কান্নাকাটি করতে শুরু করলো। কতবার বললাম ভাই ঠিক আছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? ভাবি সারারাত বসে বসে কান্না করছে। আমি অদ্ভুত ভাবে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছি। আচ্ছা মেয়েটা এত পাগলামো করে কেন? নার্স আবার বলতে শুরু করছে।

ভাই আপনার কি মনে আছে। ভাবির বাচ্চা হবার সময় আপনি ভয়ে কিভাবে কান্না করেছিলেন? আর শুধু ডক্টর কে বলছিলেন আমার জান্নাত বাঁচবে তো? আমরা আপনাকে কিছুতেই বোঝাতে পারিনি যে সিজার করতে গিয়ে কেউ মারা যায়না। আজ ঠিক আপনার মতোই ভাবি ও ঐরকম করছে। দুজন দুজন কে তো প্রচুর ভালোবাসেন দেখছি।

আমি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছি। জান্নাত ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রকাশ না করলে কি হবে।
আমরা যে দুজন দুজনকে বেধেছি এক অদৃশ্য ভালোবাসা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত