আপুর বিয়ের পর থেকেই বড্ড একা হয়ে গেছে তনু একা থাকাটা যে কতোটা বোরিং সেটা আপু শশুর বাড়ি না গেলে হয়তো কখনোই বুঝতো না। এখন তার প্রতিদিনের বোরিং রুটিন হচ্ছে ভার্সিটি থেকে ফিরে হয় মুভি দেখে নাহয় ফেসবুকিং করে কোনো রকমে দিন কাটানো। আজ শুক্রবার বরাবরের মতো এখন আর এটাকে ছুটির দিন মনে হয়না তার ।কারন সপ্তাহের প্রতিটা দিন ই রুমে শুয়ে বসে কাটাতে হয় তনুর ।এই সুবাদে অনেক টা খিটখিটে মেজাজের ও হয়ে যাচ্ছে নিজের উপর ই নিজে বিরক্ত হচ্ছে তনু। দুপুর বেলা লাঞ্চ শেষ করে রুমে শুয়ে মুভি দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পরেছে কখন টেরই পাইনি। হঠাৎ কিছুর শব্দে ঘুম ভাঙে তনুর। এটা নুপুরের আওয়াজ তবে সে আওয়াজ ধীর গতিয় নয় সজরে বেজে চলেছে। তাও আবার তনুর রুম থেকেই কোনোরকমে চোখ মেলে চারদিকে তাকালো কেউই নেই। খাট থেকে নামতেই চমকে উঠলো তনু ! সে দেখলো , দু বছরের একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে। সবেই হাটতে শিখেছে হয়তো।
একটা লাল রঙের জরির ফ্রোক আর পায়ে মোটা জোড়া নুপুর পড়া। তনুর সারা রুম জুরে দৌড়াচ্ছে। সে এতোটাই কিউট যে কেও কোলে নেওয়ার লোভ সামলাতে পারবেনা। কিন্তু আপাদতো তনু শুধুই ভাবছি। এ বাচ্চা তার রুমে আসলো কিভাবে? তার কোনো আত্নীয়ের ও তো এতো ছোট বাচ্চা নেই। যেই তনু তার মাকে ডাকতে যাবো সেই বাচ্চাটি ছুটে এসে তনুকে জড়িয়ে আকড়ে ধরে। সচরাচর তনু বাচ্চাদের প্রতি তেমন একটা দুর্বল নই।কিন্তু তার বেলায় নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। কোলে নিতেই বাচ্চাটির মুখে সেকি আনন্দের হাসি। তাকে নিয়ে তনুর রুম থেকে বেরোতেই দেখে ঘরের মেইন জরজাটা খোলা। এখন বুঝতে পারলো এই কারনেই বাইরে থেকে বাচ্চাটা ভিতরে আসতে পেরেছে।হয়তো তার বাবা মা তাকে খুজে না পেয়ে অনেক চিন্তিত হচ্ছে। তাকে নিয়ে বাইরে বেরুতেই দেখে একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে কাওকে খুজছে। হয়তো সে বাচ্চাটার গার্ডিয়ান হতে পারে।
হয়তো বাচ্চাটাকেই খুজছে।এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো তনু আন্টি আপনি কি এই বাচ্চা টাকে খুজছেন?(তনু) ওহ হ্যা মা,আমার নাতনি হয়। ওরে তুমি কোথায় পেলে?আমার ছেলে তো মেয়েকে খুজে না পেয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে।(ক্লান্ত গলায় বলল) আসলে আন্টি আমাদের ফ্ল্যাটের দরজাটা খোলা ছিল তো।তাই হয়তো হাটতে হাটতে আমার রুমে চলে গেছিল। দেখেছো পাকা বুড়ি একটা। কিভাবে চোখ ফাকি দিয়ে চলে গেছে। আর এদিকে ছেলেটা ওকে খুজতে খুজতে কোথায় চলে গেছে কে জানে।বলেই তার ছেলেকে ডাকছিল। অভ্র এই অভ্র দেখ পরীকে খুজে পেয়েছি।(পরী সেই ছোট্ট বাচ্চাটার নাম) ডাকতে না ডাকতেই নিচ তলা থেকে একটা ইয়াং সুদর্শন ছেলে ছুটে আসে। তারপর তনুর কাছ থেকে বাচ্চাটাকে এক প্রকার ছিনিয়েই নিয়ে যায় বলা চলে। যেনো তনু কোনো বাচ্চা চোর।তাদের বাচ্চা তনু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলো। আজব, এভাবে ছিনিয়ে নেওয়ার কি আছে শুনি?(তনু) আমার মেয়ে আপনার কাছে গেলো কি করে? আর কারো বাচ্চাকে এভাবে না বলে নেওয়াটা কি ধরনের ভদ্রতা?
ভাবলেন না তার পরিবার তার জন্য কতোটা চিন্তিত থাকতে পারে।(একটানা বলেই যাচ্ছে) আরে থামুন।সামনের মানুষ টাকে বলার সুজোগ না দিয়েই তো বকবক করে যাচ্ছেন।অদ্ভুত!! আমি কেন আপনার মেয়েকে নিতে যাবো? সে নিজেই গেছে আমার রুমে। (চুপ করে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে তনুর দিকে) না জেনেই অন্যদের দোষারোপ করে যাচ্ছেন।যদি আমার ঘরে না এসে রাস্তায় চলে যেতো তখন কি হতো?? ছেলেটা আর কিছু না বলেই পাশের ফ্ল্যাটের ভিতরে চলে গেলো। ছেলেটার ব্যবহারে রাগ করোনা মা। আসলে আমরা কিছুক্ষন আগেই পাশের ফ্ল্যাটে এসে উঠেছি তো। নতুন বাসা কিছুই চিনিনা।পাশের ফ্ল্যাটে যে মেয়েটা যেতে পারে ভাবিনি। আমার ছেলের কথায় কিছু মনে করোনা(সেই আন্টিটা বলল) না আন্টি ঠিকাছে।অনেকটা সময় ধরে তো বাচ্চাটা আমার কাছে ছিল। আপনাদের চিন্তিত হওয়াটা সাভাবিক।(তনু) পরে তনু সেখান থেকে চলে আসে। এখন বসে বসে পরীর কথা ভাবছে বাচ্চাটা আসলেই অনেক কিউট।
কিন্তু পরীর মাকে তো দেখলোনা ।তার বাবা,দাদি তাকে খুজে অস্থির অথচ তার মা একবার ও আসলো না।আজব ব্যপার।(আজব হয়ে ভাবতো লাগলো তনু) তারপর প্রায় একসপ্তাহ চলে যায়।তনুদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকার সুবাদে এই এক সপ্তাহে পরীর সাথে তনুর দুবার দেখা হয়েছে। তাও দূর থেকেই দেখেছে। সে তার বাবার কোলে ছিল।তাই আর আগ বাড়িয়ে কাছে যাইনি,সেইদিন তার বাবার যেই আচরন ছিল হুহ। যাইহোক পরের দিন ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় পাশের ফ্ল্যাট থেকে সজোরে কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে কিছু না ভেবেই তাদের ঘরে ঢুকে যাই তনু। দেখে বাচ্চা পরীটা কান্না করছে। আর তার দাদি তার কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।তারপর কান্নার কারন জিজ্ঞেস করতেই আন্টি বলল সে খাট থেকে পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে। আন্টির কাছ থেকে তনু তাকে কোলে নিয়ে তার কান্না থামানোর চেষ্টা করতেই কিছুক্ষনের মধ্যেই সে চুপ হয়ে যায় আর তনুর কোলেই ঘুমিয়ে যায়।
কি করবো বলোতো মা।একা মানুষ এতো কিছু কি সামলানো যায়?(হতাশ হয়ে আন্টি বলল) একা মানে? পরির মা কই?তাকে তো দেখছিনা।সে কি বাসায় নেই?(অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তনু) পরির তো মা নেই। পরী তো আমার ছেলের এডপ্ট করা মেয়ে।এমনকি আমার ছেলে তো বিয়েই করেনি। কিভাবে কি আন্টি? আমি কিছু বুঝলাম না। বিয়ের আগেই বাচ্চা এডপ্ট কেনো??(অনেকটা বেশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তনু) আসলে কিছুদিন আগে অভ্র অফিস থেকে ফেরার সময় রাস্তায় পরীকে কুড়িয়ে পায়।পরী একাই রাস্তায় হাটতে হাটতে অভ্রের সামনে এসে পড়ে।অনেক খোজাখুজির পর তার গার্ডিয়ান কে না পেয়ে সে তাকে বাসায় নিয়ে আসে।এতো ছোট মেয়েকে তো আর একা ফেলে আসতে পারেনা। পুলিশেও খবর জানিয়ে এসেছে বাচ্চাটার সম্পর্কে।তারপর দুদিন পরী আমাদের সাথে ছিল। আর এই দুদিনেই আমাদের মনে বেশ জায়গা করে নিয়েছে পরী। বিশেষ করে আমার ছেলের।
কারন পরী পাপা ডাকতে পারে আর প্রথম দিন থেকে অভ্রকে পাপা বলে ডাকে। তুমি তো দেখেছো মেয়েটা কতোটা শান্ত।দুদিনে মনেই হয়নি সে বাইরের কেও। দুদিন পর পুলিশ এসে খবর দেয় যে একটা এতিমখানা থেকে পরী হারিয়ে গেছে। আর তারা তাকে নিতে এসেছে। কিন্তু পরী কিছুতেই অভ্রের কাছ থেকে যেতে চাচ্ছিল না। যতোবার তাকে নিতে যাবে আর সে কি কান্না। তারপর তাদের সাথে অভ্র চলে যায় পরীকে দিয়ে আসতে। সেদিন পরীকে দিয়ে এসে অভ্র সারারাত ঘুমোতে পারেনি। অভ্র পরীকে রেখে আসার পর থেকে নাকি পরীকে কান্না করা শুরু করেছে।কারো কাছে যেতেও চায়নি। এক প্রকার জোর করেই রেখেছে তারা। পরের দিন সকালেই ওভ্র পরীকে দেখতে যায়। তারপর জানতে পারে মেয়েটা সারারাত পাপা পাপা বলে কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অভ্র সেটা আর সয্য করতে পারেনি। সেদিন বাসায় এসে অভ্র আমাদের জানায় সে পরীকে এডপ্ট করবে। তাতে আমি আর তোমার আংকেল ও বাধা দেইনি।
কিন্তু আন্টি এতো ছোট বাচ্চা আপনারা মা ছাড়া কিভাবে রাখবেন? আপনার ছেলে বিয়ে কেনো করছেনা?(তনু) আসলে অভ্রর বিয়ে ঠিক ঠাক ই ছিল।কিন্তু পরীকে এডপ্ট করায় তারা বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে। তারা এমন ছেলের সাথে তাদের মেয়ে বিয়ে দেবেনা যে বিয়ের আগেই মেয়ে এডপ্ট করে রেখেছে। তাই অভ্র ও জ্বিদ ধরে বসে আছে এই মেয়ে নিয়েই থাকবে। আর বিয়েই করবেনা। সেদিনের পর থেকেই পরীর বাবার প্রতি তনুর ধারনা পুরোটাই পালটে গেছে। আর তাদের বাসায় যাতায়াত ও অনেক বেড়ে গেছে। এখন তনুর নতুন রুটিন ই হচ্ছে ভার্সিটি থেকে আসার পরের সময় টা সে পরীকে নিয়েই কাটাই। এর মধ্যে পরীর বাবার সাথে তনুর সম্পর্কটা পুরোপুরি ঝগড়ার পর্যায়ে। কারন সে চায় না পরী তাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে বেশি মিশুক।কেও তার মেয়ের ভালোবাসায় ভাগ বসাক। কিন্তু পরীকে নিয়ে তার সাথে ঝগড়া করতে তনুর তো সেই ভালো লাগে। এভাবে প্রায় একমাস চলে যায়।এতোদিনে পরীর সাথে তনুর সম্পর্কটাও তুলনা মুলক অনেক গভীর হয়ে গেছে। বলতে গেলে বাচ্চা পরীটাকে ভালোবেসে ফেলেছে তনু। ওকে ছাড়া তনু এখন কিছু ভাবতেই পারেনা।
তারপর একদিন পরীর জন্য কিছু কেনাকাটা করার জন্য পরীকে নিয়ে তার বাবার সাথে মার্কেটে গেলো যদিও অভ্র তনুকে সাথে নিতে চায়নি কিন্তু মেয়েটা তনুর কোল থেকে কিছুতেই তার বাবার কাছে যেতে চাইলোনা তাই অভ্রের মা”ই বলল যাতে তনুকে সাথে করে নিয়ে যায়। তারপর রিকশায় বসেই তনুকে ঝাড়ি দেওয়া শুরু করলো অভ্র। আপনাকে আগেই বলেছি আমার মেয়ের সাথে এতো মিশবেন না।এখন তো আপনাকে রেখে কোথাও যেতেও চায়না। তাছাড়া আগে খুব সহজেই ওকে ঘুম পারাতে পারতাম আর এখন রাতেও আপনাকে খুজে। আমি চাইনা অন্য কোনো মানুষ আমার মেয়ের অভ্যাসে পরিনত হোক।(অভ্র) আপনিতো আসলেই আজব মানুষ। একটা ছোট্ট বাচ্চা তাকেও কি বন্দি রাখবেন নাকি।ছোট বলে কি তার কোনো পছন্দ থাকতে পারে না। আমার সাথে থাকতে ও পছন্দ করে তাই আমার কাছে থাকতে চায় হয়তো।(তনু) কিন্তু আমি চাই না।আমার মেয়ের অন্য কোনো পছন্দের মানুষ থাকুক।
তাহলে একটা কাজ করুন আপনি বিয়ে করে ফেলুন।একটা মা পেয়ে গেলে হয়তো পরী অন্য কাওকে ভালো বাসতে যাবেনা।আর আপনারো কোনো সমস্যা থাকবেনা।(একটু হেসে বললো তনু ) সেটা আমার পারসোনাল ব্যপার।আপনার মাথা ব্যাথা নয়।(একটু রেগে বলল অভ্র) মাথা ব্যাথা তো আপনার বাড়বে কিছুদিনের মধ্যে যখন পরী আমায় তার মা হিসেবে ভেবে নেবে। এমনিতেও সে আমায় মা ডাকতে শিখে গেছে।(একটু দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বললো তনু) আশ্চর্য্য ভাবে অভ্র তনুর কথার উত্তরে আর কিছুই বলল না। সেদিন পরীর জামা কেনার সময় দোকানদার যখন বলছিল ভাবি এটা দেখেন ভাবি আপনার বাচ্চাকে এটাতে ভালো লাগবে।অভ্রের চেহারা তখন দেখার মতো ছিল। রাগি লুক নিয়ে তনুর দিকে বার বার তাকাচ্ছিল।আর তনু মাথা নিচু করে হাসছিল আর তনুর হাসি দেখে পরীও হাসছে বাসায় ফেরার সময় অবশ্য অভ্রের মুড ভালো ছিল। তাই তার কাছে ফুচকা খাওয়ার আবদার টা না করলেই নয়।
এই রিকসা থামুন তো।আমার মেয়ে ফুচকা খাবে।(তনু) মানে? কি বলছেন এসব? মেয়ে ফুচকা খাবে মানে।আমার এতোটুকু মেয়ে ফুচকার ফ ও বোঝেনা।(অভ্র) তোহ মেয়ের মা তো বোঝে। আমি খেলেই ওর খাওয়া হবে।অবশ্য পরী বলেছে চাইলে তার বাবাও খেতে পারে। লাগবেনা আপনি ই খান। আর একটু তারাতারি আসুন সন্ধ্যা হয়ে আসছে।আমাদের বাসায় যেতে হবে। তারপর ফুচকা খেয়ে বাসায় চলে গেলো ওরা। ইদানিং পরীর সাথে সাথে পরীর বাবাও তনুর মাথায় বাসা বেধে ফেলেছে মনেহয়। উঠতে বসছে তাদের কথাই শুধু ভাবছে। তনুর সারা কল্পনা জুরে বাবা মেয়ে মিলে দখল করে নিয়েছে। এই দিকে সেদিন শুনলো তনুর বাবা মা তনুর বিয়ে নিয়ে কথা বলছে। মেয়ে বড় হয়ে গেছে তাকে বিয়ে তো দিতে হবে এসব আরকি। মাঝখান দিয়ে দুটানায় ভুগছে তনু।পরীর বাবাকেও মনের কথা বলতেও পারছেনা। তাছাড়া পরীকে ছাড়া থাকাটা তো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবার এদিকে যদি বাবা বিয়ে টিয়ে ঠিক করে ফেলে? উফফ ভাবতেই অস্থির লাগছে তনুর। পরেরদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় দেখে পরীর বাবা পরীকে কোলে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তনুকে দেখেই পরী হাত বাড়িয়ে দিয়ে তার কাছে আসতে চাইছে। এতোক্ষনে তনু পরীর বাবার চোখে পড়ে। তারপর তারাহুরো করে রাস্তা পার হতে যেতেই কোনো কিছুর ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাই তনু। হঠাৎ প্রচন্ড মাথা ব্যথা করায় হাত মাথায় নিতেই মনে হলো কেউ মাথাটা বেধে রেখেছে। চোখ খুলতেই দেখে তনু হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।পাশে তনুর মা,বাবা আর পরীর বাবা বসে আছে। একটু দেখে চলতে পারিস না।জানিস আমাদের কতোটা চিন্তা হচ্ছিল? ১২ ঘন্টা তোর জ্ঞান ছিলনা।এতোটা সময় যে আমাদের কিভাবে কেটেছে তা শুধু আমারাই জানি। (তনুর মা কান্না করতে করতে বলল) জ্ঞান ফেরার পরই পরীর বাবা সেখান থেকে চলে যায়।
মাকে জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারে পরীর বাবা ই তনুকে হাসপাতাল নিয়ে আসে।আর কাল থেকেই সে এখানে আছে। কিন্তু তনুর সাথে কথা না বলেই চলে গেলো কেনো বুঝলো না তনু। তার দুদিন পর তনুকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।তখন তনু অনেকটাই সুস্থ তাই সবার আগেই পরীর কাছে যাই। গিয়ে দেখে পরী ঘুমোচ্ছে। তাই রুম থেকে যেই বেরুতে যাবো তনুর হাতে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে তাকাতেই দেখে পরীর বাবা তনুর হাত ধরে রেখেছে। নিজের শিশু সুলভ আচরন এখনো যায়নি সে আবার বাচ্চার মা হওয়ার দাবি দেখায়। কি দরকার ছিল অমন ভাবে দৌড়ে আসার? যদি আরো মারাত্বক কিছু হয়ে যেতো তখন?(অভ্র রেগে বলল) কি আর হতো।আপনি নিজেই খুশি হতেন।
পরীর ভালোবাসায় ভাগ বসানোর কেও থাকতো না।(তনু) আর আমার ভালোবাসার যেই ভাগটা তোমার জন্য রেখেছি তার কি হতো? মানে?(অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো তনু) আচ্ছা সেটা নাহয় বাদ ই দিলাম।আমার মেয়েটার কি হতো? তোমাকে ছাড়া যে তাকে সামলানো টা দিন দিন অসাধ্য হয়ে যাচ্ছে তার কি হবে?(অভ্র) তার কথায় কি বলবে বুঝতে পারছেনা তনু ।তবে হ্যা আজ তনু অনেক খুশি।হয়তো এবার সে তার পরীটাকে নিজের করে পেতে যাচ্ছে সাথে পরীর বাবাটাকেও। পরীর মা হিসেবে পরী আর পরীর বাবার তোমাকেই পছন্দ। তনু তুমি কি আমার পরীর মা হবে???(হাটু গেরে বসে বলল অভ্র ) এমন অবস্থায় কিছুটা মুড না নিলেই নয়।তাই কিছু না বলেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে তনু। মাকে দিয়ে তোমার বাবা মায়ের কাছেও বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তারা জানিয়েছে তুমি রাজি থাকলে তাদেরও কোনো অমত নেই।
এখন শুধু পরীর মায়ের হ্যা শোনার অপেক্ষায় আছি।(অভ্র) পরীর মা খুজতে জনাবের এতোদিন সময় লাগলো? কতোদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। এখন আর আমি রাজি নই হুহ।(মিছে রাগ দেখিয়ে বললো তনু) তাহলে আর কি? পরীর জন্য নতুন করে মা খুজতে হবে।(অনেকটা ভাব নিয়ে) একদম মেরে ফেলবো এই কথা মুখে আনলে।পরী আমার মেয়ে আর আমিই ওর মা। (রেগে গিয়ে বললো তনু ) তনুর কথা শুনেই পরীর বাবা (অভ্র) মুচকি হাসছে।
ততোক্ষনে পরীও ঘুম থেকে উঠে গেছে।তারপর তনু, পরীকে কোলে নিয়ে বললো আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি তবে শর্ত হচ্ছে বিয়ের আগ অবদি পরী আমার কাছেই থাকবে তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে পরীর বাবা হাসি মুখেই বলল কি আর করার পরীর আর পরীর মায়ের খুশির জন্য এই সেক্রিফাইজ টা তো আমায় করতেই হবে। হুম তোমার শর্তে আমি রাজি। অতঃপর চলতে শুরু করলো আরও একটা সুখী পরিবার।
সমাপ্ত।