“আজকের চা টা তুমি ই বানাও”।
বলে পাশ ফিরে শুলো সীমা। মাথার ব্যাথাটা আবার বেড়েছে।
রিয়াদ রান্নাঘরে ঢুকে চায়ের পানি বসালো।
পেছন থেকে ওর মা গলা উঁচু করে বলে বসলো,
” আবার তুই রান্নাঘরে ঢুকেছিস? তোকে না কত দিন বারণ করলাম এসব মেয়ে মানুষের কাজ কর্ম করে নিজের মান সম্মান নষ্ট করবি না? কি কপাল করে আমি বউ এনেছি। বউ পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আর আমার ছেলেটাকে পাঠিয়ে দিয়েছে রান্নাঘরে।”
রিয়াদ মায়ের মুখে একটা নোনতা বিস্কিট পুরে দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
” আস্তে কথা বলো মা। সীমার মাথাটা খুব ধরেছে। তুমি তোমার রুমে যাও। আমি তোমার চা পৌছে দিয়ে আসবো।”
” বউয়ের হয়ে আর চামচামি করতে হবে না। ”
রাগে গজ গজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো সায়েরা বানু। মনে মনে একশ একটা অভিশাপ দিচ্ছেন ছেলের বউ কে।
গতকাল ও একই কাজ করেছে এই মেয়ে। তার ছেলেকে দিয়ে ভাত রান্না করিয়েছে, ডিম ভাজি করিয়েছে। সেই এক মাথা ব্যাথার দোহাই।
যেই ছেলেকে তিনি মাথায় করে বড় করেছেন। কোনোদিন এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতে দেন নি। সেই ছেলে কিনা বউ এর কথায় উঠছে বসছে।
ঘর গোছাচ্ছে, কাপড় ধুচ্ছে, রান্না ও করছে।
কাল ইচ্ছেমতন বউ কে কথা শুনিয়ে মনের ঝাল মিটিয়েছেন তিনি।
” দেখো বউ সংসার আমরা ও করেছি কোনো দিন তোমার শ্বশুর আব্বা কে কিছু চাওয়ার জন্য ও রান্নাঘরে ঢুকতে হয় নি। আর তুমি কিনা আমার খোকা কে দিয়ে..! ছিঃ লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। মানুষ কে মুখ দেখানোর জো নেই আমার।”
আজ ও কিছু শোনাতে পারলে ভালো লাগতো কিন্তু ছেলে ঘরে তাই শোনাতে পারছেন না।
খুব বড় ভুল করে ফেলেছেন তিনি এই মেয়ে কে বিয়ে করিয়ে তার ছোট বোন আগে ই নিষেধ করে বলেছিলো,
” আফা চাকরিআলা মেয়ে বিয়ে করাস না। এরা হয় বদের হাড্ডি। সংসার বাদ দিয়ে সারা দিন বেহায়াপনা করে বেড়ায়।”
ঠিকই বলেছিলো রেহালা। ওর কথা শুনলে আর এই দিন দেখতে হত না।
চা নিয়ে রুমে ঢুকলো রিয়াদ।
” বউ উঠো তোমার জন্য চা নিয়ে এসেছি। চা খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও তো।”
” ওষুধ খেয়ে কাজ হবে না। মায়ের কথা শুনে আমার মাথা দ্বিগুণ ব্যাথা করছে।”
” লক্ষী বউ আমার মা সেকেলে মানুষ। ওনার এসব কথা বলা স্বাভাবিক। তুমি একালের মানুষ হয়ে যদি মায়ের কথায় দোষ ধরো তাহলে তো সমস্যা। দেখো মা সারা জীবন যা দেখে আসছে তা ই তার শিক্ষা। এর ব্যতিক্রম তার চোখে লাগবে এটা খুব স্বাভাবিক। মায়ের বয়স হয়েছে। এখন তাকে এসব বোঝাতে গেলে হিতে বিপরীত হবে। তুমি বরং একটু ধৈর্য ধরো।”
সীমা রিয়াদের হাত টা মুঠোয় পুরে বলে,
” তুমি না হয় সংসারে আমাকে এভাবে সাহায্য করা বাদ দাও। আমি যেভাবে হোক অফিস বাসা দুটোই সামলে নিবো।”
রিয়াদ চোখ গরমের ভান করে সীমার দিকে তাকিয়ে বলে,
” বারে আমি আমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবো? বিয়ের রাতে আমি তোমাকে কি বলেছিলাম? তুমি আমার অর্ধাঙ্গি। এই সংসার তোমার আমার দুজনের ই। তুমি আর আমি দুজনেই চাকরি করি। তাহলে সংসার টা ও দুজনের ই দেখা উচিৎ। তাহলে কারো উপরে ই চাপ বেশি পড়ে না। সে প্রতিজ্ঞা আমি আজ ও পালন করছি। ভবিষ্যৎ এ ও করবো। দেখো আমাদের সন্তানদের জন্য আমরা একটা বিরাট শিক্ষা রেখে যাবো। তারা ও ঠিক আমাদের মতন ই নিজেদের সংসারের অংশীদার হবে।”
সীমা মুগ্ধ হয়ে স্বামীর কথা শুনে। তারপর হেসে বলে,
“গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। বাচ্চা কাচ্চা এখনো হয় ই নি। আর সে বাচ্চা কাচ্চা কে এখনি শিক্ষিত করতে নেমেছে।”
ঠিক তখনি পাশের রুম থেকে সায়েরা বেগমের ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর শোনা গেলো,
” মাথা ব্যাথার দোহাই দিয়ে যে শুয়ে আছে শুনি রাতের খাবার টা বানাবে কে? খোকা কে যদি আজ রান্না ঘরে দেখি তো আমি কুরুক্ষেত্র বানিয়ে দিব কিন্তু।”
রিয়াদ আর সীমা দুজনে ই হেসে ফেলে
” আজকের খাবার টা না হয় বাহিরে থেকে ই অর্ডার করবো কি বলো বউ?”
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রিয়াদ বলে উঠে।