আমার এক ফুপাতো বোন শত চেস্টা করেও শরীরের ওজন ১০০ কেজি বানাতে পারছে না।।অনেক দিন থেকে ৯৭-৯৮ কেজিতে আটকে আছে।। বড়লোকে বাবার একমাত্র কন্যা বলে, তার এত ওজন ব্যাপারটা সেরকম না। ব্যাপারটা হলো, সে জীবনে তরকারী হিসেবে শুধু গরুর মাংস খায়। মাছ, ডিম, ডাল, সবজী, মুরগী, আলু, বেগুন, পটল বাকী সবকিছুই তার দুই চোক্ষের বিষ। তিনবেলা গরু, গরু আর গরু। তাও হাড্ডি না, চাকা চাকা সলিট মাংস।।ফুপাতো বোন দেখতে বেশ বড়সর হলেও তার নাম খুব ছোট, টুনি।। আমার ফুপাজি চালাক লোক, দুইটা বিশাল ডিপ ফ্রিজ বাসায়। কুরবানির সময় বড় সাইজের দুই তিনটা গরু জবাই করে, ফ্রিজ দুটো ভরে মাংস রাখে।। কুরবানির মাংস নিয়ম মত তিনভাগ করার বালাই নাই, তার মতে- ঢাকার মত এমন কঠিন শহরে থাকা লোকদের, এত ধর্ম-কর্ম না মানলেও চলে।
শীতের প্রকোপ ঢাকা শহরে তেমন পড়ে না।
দু ‘একদিন যাও শীত থাকে, আমি ফুপির বাসায় গিয়া তার মেয়েটাকে দেখি, আমার শীতের বদলে গরম লাগে।। গরম কালেও যাই, গিয়া টুনির কাছে ঘেঁষি কম- এসিতে বসে আরাম করি।। যখন শীত-গরম স্বাভাবিক থাকে তখনও যাই, দুইবেলা গরুর মাংস দিয়া ভাত খাওয়ার জন্যে।
ইনি আমার আপন ফুপু না, আব্বুর দূরের কেমন যেনো চাচাতো বোন হয়। ফুপুর এই একটা মেয়েই।। ফুপুর ধানমন্ডিতে পাঁচতলা বাসা দুইটা, গাড়িও আছে দুইখান। ফুপাজির বিশাল কাপড়ের ব্যবসায়।
ফুপু আমাকে অনেক আদর করে, নিজের ছেলের মত দেখে। আমিও পোষা বিড়ালের মত আদর নেই।বড়লোকের বড় আদর, এইগুলো ভাগ্যের ব্যাপার।
অই বাসায় গেলে ফুপু ভালো ভালো রান্নার উপর আরো ভালো ভালো রান্নার আয়োজন করে, আমি চেটে পুটে খাই।। মনে মনে ভাবি যতই আমাকে ভালো ভালো খাওয়ান ফুপুজান, নিজের এই বিশাল মেয়ে আমার ঘাড়ে গছিয়ে দিতে পারবেন না।
বছর তিনেক আগে আব্বু আমাকে নিয়ে এই ফুপুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।। প্রথম যেদিন ফুপুর এই বড়সড় মেয়ের নাম টুনি শুনছিলাম, আমি ফিক করে হেসে দেই।। ফুপু আমাকে জোরে ধমক দিয়া বলে- অই গ্যারাইম্মা ভূত হাসিস কেন? এটা আমার মেয়ের আদরের ডাকনাম।
টুনি কিন্তু মাশাল্লাহ বেশ আল্লাদী, নিজের কাজকর্ম একটাও নিজে করে না। পানি খাওয়ার দরকার হলে, কাজের মেয়েরা এনে হাতে পানির গ্লাস দেয়। সেই পানির গ্লাসের নিচে আবার পিরিচও থাকে। টুনির স্পেশাল কাজের মানুষ তিনজন। টুনি বাথরুমে গেলে বাথরুমের দরজা লাগায় না, অই বাথরুমের আধা খোলা দরজার আড়ালে একজন দাঁড়াইয়া থাকে।। রুমের ভিতর একজন বসে থাকে আর রুমের মেইন দরজার বাইরে একজন দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়।
পড়াশোনা শেষ করে বেকার জীবন কাটাচ্ছি। বহু ঘুরেও ভালো কোন চাকরীর ব্যবস্থা করতে পারছি না। সাতপাঁচ ভেবে, মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, টুনিকে বিয়ে করে ফেলি, জীবনে আর কিছুই করা লাগবে না। ঘর জামাই থাকবো আর বাইরে সুন্দরী দেখে দুই চারটা লাইন মারলেও সমস্যা নাই। টুনি যেই লেভেলের বোকা প্রকৃতির, আমাকে কোনদিন সন্দেহ করবে না। আবার একমনে ভাবলাম, টুনিকে দেখি স্বাস্থ্য কমানের ব্যবস্থা করা যায় কিনা!!
এই ভাবনা থেকে আমার এক বন্ধুর সাথে পরামর্শ করলাম, ও খিঁলগাও তালতলা ইবিএল জিমের ট্রেইনার।। বন্ধু বললো- চল আগে তোর ফুপাতো বোনকে দেখে আসি, পরে বলা যাবে কিভাবে ট্রেইন আপ করলে ওজন কমবে।।
আমি আর আমার ট্রেইনার বন্ধু আরমান শুক্রবার করে ফুপির বাসায় গেলাম।। জম্পেস একটা খানা-দানার পর, টুনি পাখি আমাদের সামনে গল্প করতে আসলো, ফুপুও বসা ড্রয়িং রুমে।।
বেশ কিছু আলাপের পর, আরমান টুনির দিকে তাকিয়ে বললো- টুনি আপু শুনেন, আমি তালতলা ই বি এল জিমের ইনস্ট্রাক্টর, আপনার ওজন কমাতে আপনাকে আমি সাহায্য করতে পা…
এইটুকু বলা শেষ মাত্র, ফুপি আমার হুংকার ছেড়ে বলে- অই ছেলে, তোর কত বড় সাহস, তুই আমার ভাতিজার বন্ধু হয়ে আমার মেয়ের ফিগারের দিকে তাকাস।। আমার মেয়ে কি তোর খেয়ে এই শরীর বানাইছে।। কত বড় অসভ্য ছেলে তুই- তোর চোখ এদিকে গেলো কেনো?
আজ প্রায় ২ বছর হয়ে গেলো, ফুপির বাসায় যাই না।। আর যাওয়া হবে না হয়তো, সেদিনের অপমান গায়ে লেগে আছে।। আরমানের সাথেও আমার তেমন যোগাযোগ নেই বছর দেড়েক।। আরমানও হয়তো চাপা রাগ করে আছে আমার উপর, ফুপি ওকে সেদিন খুব অপমান করেছিলো- সব আমার দোষ।। মাঝে মাঝে আবার আফসোস হয়, টুনিকে বিয়ে করা যেতেই পারতো।। মোটা চিকন নিয়ে না ভেবে, আগে বিয়েটা করলে এই গরমে শ্বশুর বাড়িতে বসে আরামছে এসির বাতাস খাওয়া যেতো।।
হঠাৎ একদিন “এক্স হাতি (টুনি)” নামে একটা আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো ফেসবুকে।। আমি অতোটা আগ্রহ নিয়ে প্রোফাইল দেখি নাই।। পরে ইনবক্সে দেখি ম্যাসেজও দিছে- হাই শোভন ভাইয়া, আমি টুনি।।
ভাবলাম এত দিন পর টুনি আবার যোগাযোগ করলো।।কৌতুহলি হয়ে প্রোফাইলে ঢুকলাম- কিছুক্ষণ প্রোফাইল ঘেঁটে আমি স্তব্দ হয়ে গেছি, এটা কি সত্যিই আমার সেই ফুপাতো বোনের আইডি!! টুনি এখন সম্ভবত কারিনার চেয়েও চিকন হয়ে গেছে।। ইদানিংয়ের আপলোড করা ছবিগুলোতে, টুনিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।। আসলে, সুন্দর চেহারা আগেও ছিলো এখন মনে হচ্ছে হিন্দি সিনেমার নায়িকা।। মাথা অনবরত ঘুরছে আমার, আমি এগুলো কি দেখছি।। মোটা টুনি আমাকে খুব পছন্দ করতো, কিন্তু এই নায়িকা টুনি কি আমাকে পাত্তা দিবে।। আমার আনন্দ মিশ্রিত চিন্তা হচ্ছে।
নিজেকে নিয়ে দৌড়ে আয়নার সামনে গেলাম, বেশি না আমার ওজন এখন ৯৭-৯৮ তে আটকে আছে।। ১০০ কেজি হচ্ছে না কিছুতেই।। এই দেড় বছরে বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে আমার ওজন বেড়ে গেছে কয়েক গুণ, দোকানে বসে বসে ক্যাশিয়ারের চাকরি আর আইরে বাইরে খাওয়ার কুফল।।
ইনবক্সে একগাদা অবাকের ইমো দিয়ে টুনিকে বললাম- কিভাবে টুনি, কিভাবে? এত স্বাস্থ্য কমালে কিভাবে??
টুনি লিখলো- ভাইয়া, সব বলবো।। আগে বাসায় আসেন, আপনার ফুপি আপনাকে খুব মিস করে।।
আমি খুশি হয়ে গেলাম, ইস আবার যাওয়ার সুযোগ পাবো, তবু কথা বাড়াতে লিখলাম- টুনি তোমার এত পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব?
টুনি জবাব দেয়- উপসসসস, শোভন ভাইয়া আগে বাসায় আসেন তো! কত কি ঘটে গেছে, সব বলবো আপনাকে।।আপনি হয়তো জানেনে না, আমিও আপনাকে অনেক মিস করি।
এই কথা শুনে, আমার অনেক খুশি হবার কথা ছিলো। কিন্তু, নিজের কেলানো ভূড়ির দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ, আমাকে দেখলে এখন ফুপি আর টুনি উল্টা উপহাস করতে পারে।। একসময় আমি মোটাদের নিয়ে উপহাস করতাম, এখন আমি নিজেই তাদের দলে।
সিদ্ধান্ত নিলাম, ওজন না কমিয়ে ফুপির বাসায় যাবো না। নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম এই বলে- ফুপি আমাকে আর আমার বন্ধুকে অপমান করেছিলো, তাই আমি এখন আপাতত ফুপির বাসায় যাচ্ছি না। অপমানের জ্বালা এখনো যায় নাই।
আঙুর ফল টক থিউরি আর কি-
আমার করনীয় এখন একটাই, যেভাবেই হোক ওজন কমাতে হবে। আবার হিরো সেজে টুনি ওরফে কারিনার সামনে দাঁড়াতে হবে।
সোজা কল দিলাম ট্রেইনার বন্ধু আরমানকে। প্রায় বছর খানেক পর আরমানের সাথে কথা হচ্ছে।
হ্যালো দোস্ত, আচ্ছা শোন সব থেকে দ্রুত চিকন হবার উপায় বল তো?
আরমান বললো- দোস্ত কার জন্যে? কার ওজন কমাতে চাস এতদিন পর?
আমি হতাশ গলায় বললাম- আর বলিস না দোস্ত, আমি নিজেই এখন ৯৮ কেজি। আর একটা মজার ব্যাপার কি জানিস, টুনির কথা মনে আছে না- অই যে এক ফুপির বাসায় গেছিলাম।। আমাদের সাথে বাজে ব্যবহার করলো, মনে আছে কি?
আরমান মৃদ্যু হেসে বলে- হ্যাঁ মনে আছে বল। কি হইছে টুনির?
আমি আরমানকে অবাক করে দিতে বললাম- আরে ও তো শুকিয়ে এখন কারিনা কাপুর হয়ে গেছে।। তুই দেখলে তাজ্জব হয়ে যাবি।
আরমান গম্ভীর গলায় বলে- তাই নাকি? তাজ্জব হবো, আচ্ছা যা তাজ্জব হলাম।। এইবার শুন তোকে উল্টা একটু তাজ্জব করি। টুনির এই ওয়েট লুজের পুরোটাই আমার হাত ধরে হয়েছে।।
আমি বিষম খেয়ে বললাম- মানে কি দোস্ত, বুঝলাম না?
আরমান বিজয়ের হাসি হেসে বলে- তোর ফুপির বাসা থেকে আসার পর, হঠাৎ একদিন তোর ফুপি আমার সাথে যোগাযোগ করে, নেট থেকে নাম্বার নিয়ে।। দ্যান, আমি শুধু তোর ফুপির কথায় তালতলা থেকে ধানমন্ডি ইবিএল শাখায় মুভ করি। টুনি প্রায় দেড় বছর ধরে আমার স্পেশাল কেয়ারিংয়ে আছে। তোকে তোর ফুপিই জানাতে না করেছে, চমক দেবার জন্যে।
আমি অবাক বিষ্ময় নিয়ে ফোন কানে চেপে ধরে আছি, আধো গলায় আরমানকে বললাম- দোস্ত, আমাকে দ্রুত চিকন বানা ভাই। আমি টুনিকে বিয়ে করতে চাই, ফুপিও মে বি আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে পছন্দ করে।। তুই কইলে রাত দিন জিমে পইড়া থাকমু।
আরমান খানিক চুপ করে থেকে, তিরস্কারের হাসি হেসে বললো- টুনির সাথে আমার আগামী মাসে বিয়ে, আমাদের প্রায় এক বছর হলো প্রেম চলছে।
আমি মূহূর্তেই বিধ্বস্ত হয়ে গেলাম, কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম- দোস্ত, তুই এইগুলা কি বলিস!
আরমান আমার কথার জবাব না দিয়ে বলে চলছে- তবে তোর ফুপি অনেক বড়লোক রে। টুনি একমাত্র মেয়ে তো, তাই বাধ্য হয়ে সব গাড়ি বাড়ি ধন-সম্পদ আমারি দেখাশুনা করা লাগবে। কি এক মুসিবত বল তো-
আমি আরমানের কথার মাঝেই কল কেটে দিলাম, ওর কথা আর সহ্য হচ্ছিলো না।। বুকে বিষাক্ত তীরের মত বিঁধে যাচ্ছিলো।
ফ্রিজ থেকে বেশ কয়েকটা চকলেট বের করে চিবুচ্ছি আর ভাবছি- আমার ভূড়ি আরো বাড়ুক, আমি মোটা মেয়েই বিয়া করবো। ডিসিশান ফাইনাল।