প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে দেখছি সিফাত কে মন খারাপ করে বসে থাকে।আর কারণ টা আমার জানাই আছে।আসলে সিফাতের সাথে ইসরাত এক মেয়ের সম্পর্ক ছিল।যা আর এখন নেই।প্রায় এক সপ্তাহ আগেই তাদের ব্রেকাপ হয়েছে।আর ব্রেকাপ টা হয়েছে মুলত সিফাতের কারণেই।সিফাত নিজেই তার সাথে ব্রেকাপ করেছে।
সিফাতের ব্রেকাপ করার কারণ হচ্ছে সিফাত লক্ষ করে যে সিফাতের প্রতি ইসরাতের অবহেলা।আস্তে আস্তে সিফাত কে খুব বেশি অবহেলা করলে লাগল।যার জন্য সিফাত খুব কষ্টে থাকত।এই বিষয় নিয়ে একদিন সিফাত ইসরাত কে বললে ইসরাত বলে ব্রেকাপ করে দিতে।আর সিফাত ও সায় দিয়ে ব্রেকাপ করে ফেলে।
কিন্তু সিফাত জানে ইসরাত তাকে খুব ভালবাসে, কারণ সে দেখেছে ইসরাতের ভালবাসায় কোন কমতি ছিল না।হঠাৎ করে এমন হয়ে গেল কি করে সে বুঝতে পারছে না।সিফাত জানে ইসরাত অবশ্যই তাকে আবারো ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।বা মোবাইলে ফোন মেসেজ দিয়ে ‘সরি’ বলে বলবে, ‘অনেক ভালবাসি তোমাকে তোমাকে ছাড়া আমি বাচঁতে পারব না।’
সেই কথা চিন্তা করে সে সবসময় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে, কখন আসবে সেই আকাঙ্ক্ষিত মেসেজ বা ফোন।আর চুপচাপ একটা রুমেই বসে থাকে।ঠিক মত খাওয়া দাওয়াও নাকি করে না।সিফাতের এই কাহিনী টা শুনে আমাদের সব বন্ধুদের ও মন খারাপ হয়ে।সেই ছেলেটা সব সময় চুপচাপ বসে থাকে, যে সবসময় আমাদের সাথে আড্ডাতে ও দুষ্টুমি মেতে থাকত।সত্যিই দুনিয়াটা বড় আজব একটা মানুষের কখন যে কি হয়ে যায় বুঝাই মুশকিল।
আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে ডিসিশন নিলাম।ইসরাতের সাথে কথা বলব।কিন্তু ইসরাতের কোন খোঁজ বের করতে না পেরে। ইসরাতের বান্ধবীদের সাথে কথা বলে যা জানতে পারলাম, আমরা রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম।ইসরাতের নাকি মরনব্যাধী ক্যান্সার ধরা পড়েছে আর হয়তো কিছুদিন বাচঁবে।অনেকদিন ধরে নাকি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। আর ইসরাত নাকি এজন্যই সিফাতের সাথে এভাবে খারাপ আচরন করেছে।যেন ইসরাতের যেন সিফাত নিজেই ইচ্ছা করে ব্রেকাপ করে।অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করে সুখে থাকে।
কথা গুলো শুনে আমাদের চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না।তারপর ইসরাতের বান্ধবীদের কাছ থেকে হাসপাতালের ঠিকানা টা নিয়ে।সিফাতকে এই ঘটনাটা জানিয়ে তাড়াতাড়ি ঐ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনাও হলাম।
সিফাতকে নিয়ে আমরা সবাই হাসপাতালে গেলাম।হাসপাতালে গিয়ে একজন নার্স কে জিজ্ঞাস করলাম।ক্যান্সার আক্রান্ত ইসরাত কোথায় আছেন।সেই নার্সটির কথা শুনে আমরা অবাক হয়ে গেলাম।তিনি জিজ্ঞাস করল আমাদের মধ্যে সিফাত কে।সিফাত উত্তর দিল যে সে সিফাত।
তারপর নার্সটি বলল যে, তিনি যখনি রোগির খোঁজ খবর নিতে যেতেন, তখনি ইসরাত জিজ্ঞাস করত সিফাত নামে কি কেউ এসেছিল তার খোঁজে? তখন সে বলত সিফাত নামে তো কেউ আসেনি।আর এই কথাটা শুনার সবসময় তার চোখে পানি দেখতে পেতাম।
নার্স এর কাছ থেকে রুম নং টা নিয়ে তাড়াতাড়ি সিফাত কে নিয়ে অই রুমে গেলাম।সিফাত কে দেখে ইসরাতকে মনে হচ্ছে সে আকাশের চাঁদ পেয়েছে এমন ভাবে খুশি হল।আর সিফাত ও ইসরাতের হাতে হাত রেখে কান্না করতে লাগলো।সিফাতের কান্না থামাতে ইসরাত বার বার মিথ্যে সান্ত্বনা দিতে লাগল।যে তার কিছু হয় নি কিছুদিনের মধ্যেই সে ভাল হয়ে যাবে।একদম সেই আগের মত হয়ে যাবে আর সিফাতকে ভালবেসে যাবে।
আর সিফাত ও তার কথায় সায় দেয়। কিন্তু সিফাত জানে ইসরাত আর ভাল হবে না।তাকে আর আগের মত ভালবাসতে পারবে না এই সবই মিথ্যে সান্ত্বনা।