পড়তে পড়তে সহসা মস্তিষ্কে জেগে উঠল অনিকের নাম।
অনেক দিন ওকে দেখিনা।প্রায় ৫-৬ মাস হয়ে গেল।কেমন যেন কলিজার মধ্য হাহাকার আর অদেখা চরম ব্যাথা।
জানালার পাশে টেবিল চেয়ারে বসে পড়ছি।খুব মনযোগ সহাকারে।হঠাৎ বিশাল আকাশের সাদা মেঘের পাহাড়ের বিশালতায় চোখ আটকে গেল।
দুই তলায় রুমের জানালার পাশে বিশাল কাঁঠাল গাছের ডাল পালার ফাঁকেফাঁকে বিশাল আকাশের সাদা মেঘগুলি আমার সাথে মনে হয় লুকোচুরি খেলছে।
কখনো সাদা মেঘ আবার কখনো অন্ধকার দেখা যাচ্ছে।কাঁঠাল গাছের মাথার উপর দিয়েও দেখা যাচ্ছে সেই মেঘের ভেলা।
ভাবছি এই মেঘ গুলা ক্ষনস্থায়ী নয়।একবার এপাশ ওপাশ হচ্ছে।ওরা বুঝি শান্তিতে এক স্থানে থাকার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। বিশাল আকাশে।
কিছু মানুষ ও আছে এইরকম শুধু জায়গা পাল্টায়।কারণ যে বেশি কিছু পায় তখন সেইগুলাও তার কাছে অল্প তুচ্ছ কিছু মনে হয়।
মনে করে এটার থেকে অন্য কিছু বা অন্য কেউ পারফেক্ট হবে।এইসব মানুষ সাধারণত স্বার্থপর আর লোভি টাইপের হয়।
এরা কোথাও গিয়ে সুখ পায় না।মেঘের ও আজ একই অবস্থা হয়েছে। বিশাল আকাশ ও যেন তাদের জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না।
.
মেঘের লুকোচুরির মধ্য অনিক কে খুঁজে বেড়াচ্ছি।হয়ত ও ওদের দলেই আছে।আর নয়তবা নেই।
তবুও এটা ভেবে শান্তনা পাই ও আকাশে মেঘের ভেলায় না থাকুক একই আকাশের নিচেই আছে।
দুজনে একই সাথে একই ছাদের নিচে না থাকতে পারলেও একই আকাশের নিচে আছি। আছি তো
এই নীল আকাশের বিশালতার মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।মিটমিটে চোখে আকাশের পানে বার বার তাকাচ্ছি …..
.
পিছন থেকে ঠাণ্ডাএক হাত এসে পড়ল কাঁধে। আর এক হাত দিয়ে চোখ টিপে ধরল। চমকে উঠলাম না।জানি এ আমার মিঃ কৃপাচার্য।
আমার স্বামী রিহান। যখন বাঁচবো না বলে সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম তখন এই মিঃ কৃপাচার্য এসে বিয়ে করে আমাকে বাঁচিয়েছে।
৬ মাস ২১ দিন হল বিয়ে হয়েছে।অনেক ভালবাসে রিহান আমাকে।এই ছয় মাসে বুঝেছি একজন স্বামী তার স্ত্রী কে কতটুকু ভালবাসতে পারে।
সারাদিন অফিস করে এসে প্রায় দিন রান্না করে খাওয়া থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ ই করে।
.
আমি রিহান কে কোন দিন খাওয়া বা পরিচর্যার কথা বলিনি।এমন কি ঠিক মত রান্নাও করিনা।
শুধু সারাদিন টিভি সিরিয়াল আর একটু পড়ার সাথে মুখ গোমড়া করে অনিকের কথা ভাবাই আমার কাজ।
যখন যেটা মনে চায় সেটাই করি।কারণ আমি আমার ইচ্ছেই বিয়ে করিনি। আমার অমতে বিয়ে হয়েছে এখানে।
.
আমি আমার মত।কোন কোন দিন দেখবো রুমে এসে অগোছালো বই খাতা থেকে শুরু করে সব জিনিসপত্র গোচাচ্ছে।
ঘুমের মধ্য মাঝে মাঝে বুঝতে পারি রিহান আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।কখনো বা বিড়বিড় করে বলে পাগলি একটা।
কখনো বা কপালে চুমো এঁকে দেয়। আবার কখনো বা পাশে বসে হাত ধরে থাকতে দেখেছি। আমি ওর কোন খোঁজ নেই না।
তবুও কখনো রেগে আমাকে বকাঝকা করতে দেখিনি।
শুধু বলে দেখ অরণী মানুষের জিবনে ওইসব অতিত বা পিছুটান থাকেই তুমি ভুলে যাও ওইগুলা। আমাকে একটু ভালবাসো।
আমি কখনো তোমার অতিতের মত তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো না।কারণ আমি তোমার স্বামী।
.
যখন এইসব কথা বলে তখন আমার খুব অসহ্য লাগে।ওর পাশে থেকে সরে যাই।আমি অরণী।অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।
একটা বখাটে ছেলের সাথে আমার অতিত জড়িয়ে। দীর্ঘ চার বছর সম্পর্ক থাকার পর আমাকে ছেড়ে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক করত।
অনেকবার বুঝিয়েছিলাম।তবুও অন্য মেয়ের হাত ধরে আমার চোখের সামনে আমাকে অপমান করে চলে গেছে।
ওইসব মেনে নিতে না পেরে অনেকবার জীবন দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাবা- মায়ের জন্য পারিনি।
রিহানের গলায় জোর করে ঝুলিয়ে দিয়েছে।ছেলেটা আমার অতিত জানে।তবুও প্রচণ্ড ভালবাসে আমাকে।আমার অতিত জেনেই বিয়ে করেছে।
কখনো রাত্রিবেলা অফিস থেকে আমার চুলে চিরুনি করে দেবে।আবার কখনো তেল দিয়ে দেবে।
আমি যদি না খেয়ে ঘুমিয়ে যাই আমাকে ভয় দেখিয়ে খাইয়ে দেবে।
.
মাঝে মাঝে আমার মুখ গোমড়া দেখলে একাই গান গেয়ে চলবে বা বলবে অরণী গল্প শুনবা।
রিহানের একটাই বিশ্বাস ছিল বিয়ের পর আমি ঠিক হয়ে যাবো।মাঝে মাঝে হেসেই ফেলি রিহানের কাণ্ড দেখে।অনেক লম্বা।
সাদা ধবধবে চোখ।আর শ্যামলা গায়ের রং।চুলগুলা কোঁকড়ানো সব কিছু মিলিয়ে মায়াবি।
কিন্তু রিহানের সবচেয়ে বড় বদ অভ্যাস সিগারেট খাওয়া।রিহান যখন বাসায় থাকে দেখবো ঘন্টায় ৬ টা সিগারেট শেষ।
মাঝে মাঝে বলি আপনি সিগারেট যদি না ছাড়েন আমি আপনাকে ছাড়বো।
.
বাইরে প্রচুর ব্ৃষ্টি হচ্ছে।রুমে অন্ধকার।আকাশে মেঘ ও ডাকছে।মেঘের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল।পাশে হাত দিয়ে দেখি ফাঁকা।
উঠে বেলকুনিতে উঁুকি দিতেই দেখি সিগারেট হাতে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
=> কি করছেন এখানে এত রাতে..???আপনাকে না বলছি সিগারেট খাবেন না।
কোন কথা বলছে না।কি হল..? হাত দিয়ে ধাক্কা দিলাম পিঠে..!!
=>অরণী তোমাকে আমার অনেক কথা বলার আছে।আমার পাশে একটু বসবা…?
রিহানের কথায় কেমন যেন আজ তেমন তেজ নেই।মনে হচ্ছে হাজার বিষাদ ওর মনে জমা আছে।
ওর সেই বিষাদ গুলিই যেন ব্ৃষ্টি হয়ে ঝড়ছে।অসহায়ের মত কথা ফেলতে পারলাম না।
.
মনে হচ্ছে আজ এই বৃষ্টি মুখরিত রাতে বসি না ওর পাশে।
ধরিনা ওর হাত।যে বেঈমান চলে গেছে তার কথা ভেবে কেন নিজেকে কষ্ট দেই।রিহান তো আমার স্বামী।
বেলকুনিতে ব্রেঞ্চ এর উপর বসে পড়লাম ওর পাশে।
…
=>হুম বলুন এত রাতে আবার কিছু বলার আছে।আমার ঘুম পাইছে।বলেন।
=>অরণী তুমি জানো না তোমার জীবনে যেমন কোন বেঈমান ছিল তেমনি আমার জীবনেও বেঈমান ছিলো।
রিহানের কথাটা শুনে চট করে কলিজায় ঘা লেগে গেল।
=>কি বললেন..?আপনার জীবনেও ছিল মানে..?
এই আপনি কি আগে মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করে বেড়াতেন।আগে অন্য মেয়ের পাশে এইভাবে বসেছেন..?
.
‘সরেন, সরেন আমার পাশ থেকে’…বলে উঠে যাচ্ছি।
.
আমার হাত ধরে আবার ও ওর পাশে বসিয়ে দিলো।
‘হুম ছিলো।অনেক ভালবাসতাম।যা চাইতো তাই দিতাম।
কিন্তু আমি একবার কাজের জন্য ঢাকার বাইরে যাই।আর অন্য একটা ছেলের টাকা দেখে বিয়ে করে নিয়েছি।
পরে জানতে পারি।আমার সম্পর্ক থাকা অবস্থায় ওই ছেলের সাথেও সে যুক্ত ছিল ‘….
.
ভীষণ কষ্ট পেতাম।কখনো ভাবি নি আমার সাথে এইরকম করবে।সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
কারো সাথে কথা বলতাম না।সারাদিন রুমে কাটিয়ে দিতাম।আর তখন থেকেই সিগারেট আমার জীবন সঙ্গী।
.
তোমার সব কিছু জেনে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি।
ভেবেছিলাম যে মেয়ে ভালবাসার জন্য এত কিছু করতে পারে।তবে আর কিছু করতে না পারলেও স্বামী কে অনেক ভালবাসবে।
নিজেকে গুছিয়ে নেবে আর সাথে আমাকেও গুছিয়ে দিবে।কিন্তু ভাগ্যে খারাপ।উঠে চলে গেল বলা শেষ না হতেই।
.
অতশত আমি ভাবছিনা।শুধু ভাবছি ইনি অন্য কোন মেয়ের পাশে এইভাবে বসেছেন।
.
‘ ইশ মেজাজ গরম হচ্ছিল..’রুমে গিয়ে বলে দিলাম …
=>শোনেন থাকবো না আমি আপনার সাথে।কাল ই বাড়িতে যাবো হুম।কথাটা বলে চুপ করে আছি যে এসে নিষেধ করবে কিন্তু না।
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে গেছে।
কিন্তু আমার ঘুম আসছিল না।ওর আবার আগে সম্পর্ক ছিল।শোনার পর এত এত কষ্ট লাগছিল ।কিন্তু আমার তো কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল না।
.
সকালে সব কিছু গুছিয়ে ওকে না বলেই বাড়িতে চলে এলাম।….
.
আসার পর ই রিহান অনেক বার ফোন দিচ্ছে।
রিসিভ করলাম..
=>অরণী তুমি বাড়ি চলে গেলে কার থেকে অনুমতি নিয়ে শুনি।
=>এহ অনুমতি..!! (মুখ ভেংচাইয়া) রাখেন আপনার অনুমতি।
অন্য মেয়েদের পাশে বসার সময় অনুমতি নিয়েছিলেন।
=>আরে পাগলি তখন তো তুমি ছিলে না যে অনুমতি নিতে যাবো।আর তুমি ও তো বসেছিলে কারো পাশে তাই না…!!!
=>না বসি নি।আর কোন দিন কথা বলতে আসবেন না।বাই।
=>অরণী আমি তোমাকেই ভালবাসি।
=>বিশ্বাস করি না।বলে কেটে দিলাম।
আমি বুঝতে পারছি না।আমার তো মন খারাপ বা এত বাড়াবাড়ি আসার কথা নয়।
শুধু এইটুকুই বুঝতে পারছি যে ও যেন আমার অবহেলা আর সব কিছু শুনে বিয়ে করেছে মনে মনে যেমন আমার সব কাজে কষ্ট পায় তেমনি আমিও পাচ্ছি।
.
প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে।আমি রিহান কে কখনো ফোন দেই নি।কিন্তু রিহানে ক্ষণে ক্ষণেই ফোন দিয়ে গেছে। অনেক বার নিতে এসেছে।যাই নি।
.
এই তিন মাসে রিহানের সাথে আমার কথা না হওয়ায় মায়া কমে গেছে।যেটুকু মায়া জন্ম নিয়েছিল তা আর নেই।
তেমন কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়। ও তো আর কেউ নয়।আমার স্বামী। মনে হয়
.
” দেখ অরণী আমি তোমার অতিত নই যে তোমায় ছেড়ে চলে যাবো।আমি তোমার স্বামী।
আমাকে একটু ভালবাসো।কোন দিন ছেড়ে তো যাবোই না। এতটুকু কষ্ট ও দেব না।
.
কিন্তু বেশ কয়েক দিন চলে গেল।আর ফোন দেয় না।
ভাবলাম চোখের আড়াল মানে মনের আড়াল।হয়ত সিগারেট খোর আমাকে ভুলেই গেছে।
.
এই তিনমাসে অনিকের সাথে আমার যোগাযোগ হয়।ও আমাকে ফিরিয়ে নেবে।আর আমিও যাবো।
কিন্তু সারা সকাল ভাবছি এটা কি ভাবে সম্ভব।
এই কাজ একমাত্র রিহান ই করিয়ে দিতে পারে।ফোন দিলাম রিহান কে ।
বিকেল তিন টা… বেশ কয়েক বার রিং দেওয়ার পর ফোন তুলছে না।ভাবছি সিগারেট খোর কি ভাব ধরছে….একটা মেসেজ লিখলাম..
.
‘এই সিগারেট খোর ,,,এই মাথা মোটা ফোন তোলেন’…
.
মেসেজের প্রায় দুই ঘন্টা পর ফোন আসল।ততক্ষণে আমি রিহানের বাসায় গিয়ে পৌঁছেছি।
=>অরণী আমি অফিসের কাজে অনেক ব্যস্ত ছি…….(বলতে না বলতেই)
=>চুপ করেন।কি কাজে ব্যস্ত ছিলেন জানি আমি।কোন অরণীকে পাইছেন একমাত্র ওই উপর ওয়ালাই জানে।
যাইহোক আমি এখন কোথায় বলেন তো।
=>বলতে পারবো না।তুমি বলো।
=>আপনার বাসায়।
আপনার বাসায় বলে কেটে দিলাম।ফোন রাখার ১৫
মিনিটের মাথায় কলিং বেইল বেজে চলেছে…
দরজা খুলতেই দেখি রিহান..
ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এই তিনমাসে ঠিকমত খায় নি।মনে হচ্ছে এই তিনমাসে মাত্র তিনবার গোসল করেছে।
চোখ দিয়ে পানি চলে আসছে ওকে দেখে…মাথার চুল গুলো কাকের বাসার মত হয়ে গেছে।
চোখের নিচে কালি পড়েছে।ঠোঁট জোড়া শুষ্ক।
=>এই এইগুলা কি অবস্থা করছেন শরীরে।ঠিকমত কোন কাজ টা করেছেন শুনি।শুধু তো সিগারেট গিলেছেন তাই না..?
=>প্রিয়জন না থাকলে যেমন টি হয়।
=>কে প্রিয়জন..?
=>তুমি।
=>কোন দিন ছিলাম না আর হব ও না।
কথাটা শুনে শুষ্ক ঠোঁটে একগাল হেসে দিলো।
=>পাগলি তুই একটা।আর কখনো ছেড়ে যাবা না তো অরণী আমাকে..?
ওর কথাটা শুনে যা বলবো তা সব ভুলে গেলাম।
তখন আর বলা হল না।
.
রাত্রিতে আমি বেডে আর রিহান ফ্লোরে।
=>এই সিগারেট খোর শুনেন।আমি যে জন্য আসছি।তা শুনেন।
=>হুম।
=>অনিক আমাকে ফিরিয়ে নিতে চায় আর আমিও যেতে চাই।আর আমাদের এক করতে পারেন আপনি ই ।তাই এখানে আসা।কিছুক্ষণ কেঁদে চললাম।
আর ভাবতেছিলাম রিহান যেন আটকায়।
.
দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে বলে দিলো ঠিক আছে।দিন তারিখ বলে দিয়ো আমি রেখে আসবো।
কথাটা বলে চুপ হয়ে গেল।ভাবছিলাম যে হয়ত আমাকে আটকাবে জোড় করবে কিন্তু না।
(মনে মনে মুখ ভাংচাইয়া)ঠিক আছে দিন তারিখ বইলো। রেখে আসবো।
এই সিগারেট খোর নিজের বউকে অন্যর হাতে দিয়ে আসবি কষ্ট পাবি না..?লজ্জা লাগলো না।
ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ..
=>অরণী একটা কথা রাখবা..?
=>উৎফুল্ল হয়ে হুম বলেন।আমাকে যেতে দি….বলতেই
=>কিছুনা অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও।
ভেবেছিলাম বলবে তোমাকে যেতে দিবো না।কিন্তু কথাটা শুনে চোখের কোনে দুফোটা জল জমে গেল।
.
‘চলেই যাবো থাকবো না’
.
সারাদিন সব কিছু গুছিয়ে রেখেছি যা যা প্রয়োজন আর নিতে হবে সব…অফিস থেকে আসতে বললাম ৪ টায়।
আমাকে ৪ টায় রেখে আসতে হবে।
অনিকের পছন্দের নীল শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে বসে আছি।
রিহান চলে এলো। আমার মুখের দিকে করুন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দরজায়…
কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।হয়ত অনেক কেঁদেছে।
ওর চাহনি হয়ত আমাকে বোঝাতে চাচ্ছে “অরণী আমাকে ছেড়ে যেও না।তোমার স্বামী কে ছেড়ে অতিতে চলে যেও না”
আমার বুকের বাম পাশটায় কেমন যেন লাগতেছিল।
রিহানের প্রতি সেই পুরোনো মায়া আবার ভিষণ রুপে কাজ করতেছিল।
অতশত না ভেবে ওর বাইকের পিছনে বসে পড়লাম।ওকে আমি ধরে আছি পড়ে যাবার ভয়ে…
=>অরণী আমাকে ছেড়ে অনিক কে নিয়ে ভাল থেকো।
=>বলতে হবে না আপনার।হুহ।
আর কোন কথা নেই।চুপ হয়ে আছে।
…
সন্ধ্যা ৬ টা।দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি অনিক দাঁড়িয়ে আছে সেই চিরচেনা ঝিলের পাশে।যেখানে বার বার ই দেখা করতাম।
আকাশে ভীষণ মেঘ।যেকোন সময় বৃষ্টি এসে যেতে পারে।সাথে বাতাস ও বইছে।গিয়ে নামলাম। অনিক এগিয়ে এসে আমার হাত টা ধরল।
.
=>অরণী ..!!
=>হুম রিহান।
=>তোমাদের দুজন কে খুব মানিয়েছে।
আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।
চোখ টা বন্ধ করে রিহান আমার থেকে একটু পিছিয়ে গেল।
দুচোখ খুলতেই ওর দুচোখের দুফোটা জল আমার শাড়ির উপর এসে পড়ল টপ করে।
মনে হল ওর ওই দুফোটা চোখের পানি আমার কলিজার উপর পড়ল।আমার ও চোখ দিয়ে পানি চলে আসবে ভেবে চোখ টা বন্ধ করে নিলাম।
শুধু ভাবছি রিহান কেন আমাকে আটকাচ্ছে না।এই সিগারেট খোর ও বেঈমান আটকাবে না।
.
কেন জানি।ভিতর টা কষ্টে নাড়া দিয়ে উঠছিল।চলে যাচ্ছে রিহান..আমি পিছন থেকে..
=>রিহান শোন..!!
ঘুরে দাঁড়ালো। হুম বল অরণী।
=>কথা দিয়ে যাও কখনো সিগারেট খাবে না..?
চুপ কোন উত্তর নেই।
=>কি হল বলেন খাবেন না।শরীরের যত্ন নেবেন।
=>আচ্ছা বলে বাইক নিয়ে চলে গেল।
.
বসে পড়লাম অনিকের পাশে।প্রায় ১৫ মিনিট বসে থাকার পর।দম বন্ধ হয়ে আসছিল।
বার বার রিহানের কথা, চেহারা ওর ভালবাসা,আমি না থাকাই ওর কষ্ট পাওয়া সব ই যেন আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল।
ওর পাশে যখন ছিলাম ।ওর হাত ছেড়ে যখন অনিকের হাত ধরলাম তখন তো কষ্ট হচ্ছিল না।এখন কেন কষ্ট হচ্ছে।
হিসেব কষে বুঝে নিলাম এই কয়েক মাসে ওকে ভালবেসে ফেলেছি।
=>অনিক..!
=> হুম
=>আমি চলে গেলাম
=>আরে কোথায়।ওর কথার উত্তর না দিয়ে রওনা হলাম রিহানের বাসার দিকে।
.
পৌঁছাতে প্রায় বিশ মিনিট লেগেছে।প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে।
চারটা রুমের মধ্য রিহান কোন রুমেই নেই দৌড়ালাম ছাদে।গিয়ে দেখি ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
=>এই যে এই বৃষ্টিতে এই ভাবে সন্ধ্যায় ভিজতে কে অনুমতি দিছে শুনি।
=>অরণী তুমি এখানে ..?চমকে উঠে।
=>তুমি এখানে।আটকাইছিলেন আমায়(কাঁদতে কাদতে)
=>না।
=>কেন..?
=>তুমি চাও না তাই।
=>আমি চাইবো কেন।আমি আপনার জীবন সঙ্গী না।আমি না চাইলেও আটকানোর অধিকার আপনার আছে।
আমি চলে গেলে কাকে রান্না করে খাওয়াতেন কাকে চুলে চিরুনী করে দিতেন, কাকে তেল দিয়ে দিতেন,
ঘুমিয়ে গেলে কার হাত ধরতেন ,পাগলিটা কাকে বলতেন শুনীতো।আবার কাকে জীবন সঙ্গী করার প্লান করেছেন শুনি।
=>পাগলি।তোর স্মৃতি নিয়েই বাঁচতাম আমি।
=>সত্যি…?
=>হুম অরণী চল না দুজনে নতুন করে বাঁচি,সব বেঈমান দের সব অতিত দের মুছে ফেলে।
=>ওহ হো সিগারেট খোর আজ এই কথা..!!বলে নিচের দিকে তাকাতেই দেখি অনেক গুলা সিগারেট ইতিমধ্যে রিহান কাবার করে দিছে।
আপনি আবার সিগারেট খেয়েছেন..??
=>কান ধরেছি আর হবে না।
=>একটা শর্ত আছে।যদি মানেন তাহলে থাকবো।
=>ওকে
=>সিগারেট ছাড়তে হবে।আপনি জানেন ধুমপান শরীর মন দুইটার জন্যই ক্ষতিকর।
এটা পান করলে শুধু আপনি ই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। ধোঁয়া যার লাগবে সেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমার ক্ষতি হবে।আমার হলে আপনার বাচ্চার হবে।
আপনি কি চান আমার আর আমাদের যে বাচ্চা হবে তার ক্ষতি হোক আমরা মারা যাই..??
=>নাহ রে পাগলি আর খাবো না।তুই শুধু মরণ অব্ধি আমার পাশে থাকিস।আর এখন আয় আমার পাশে বস।
.
আমি ওর পাশে বসে পরম শান্তিতে ওর কাঁধে মাথা রাখলাম।
.
মনে মনে বলতে লাগলাম ওর হাত শক্ত করে ধরে .
.
.’ বাঁচবো..হ্যাঁ বাঁচবো বেঈমানদের ছেড়েই বাঁচবো ..’
.
তখনো ঝির ঝির বৃষ্টি ঝরেই যাচ্ছিল।