অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেল।যদিও প্রিয়তি এই বিয়েতে খুশি হতে পারেনি।
প্রিয়তি ভালবাসতো সাত্যকিকে। যদিও সাত্যকি তাকে ধোকা দিয়েছিলো।সে তার সাথে ভালবাসার অভিনয় করেছিলো তারপরও প্রিয়তির মনে একটা বিশ্বাস ছিলো হয়ত বিয়ের দিন সাত্যকি এসে কোনভাবে বিয়ে আটকে দিয়ে তাকে নিয়ে যাবে।সে একটা ব্যাগও গুছিয়ে রেখেছিলো। কিন্তু না সাত্যকি এখন অন্য কাউকে ভালবাসে।
তাই প্রিয়তি আজ অভ্রের বউ।নিয়তি!
বাসর ঘরে বসে আছে প্রিয়তি ভাবছে অভ্র আসলেই সে সত্যিটা জানিয়ে দেবে অভ্রকে যে তার পক্ষে অভ্রকে ভালবাসা সম্ভব নয়।
সবাইকে বিদায় দিয়ে অভ্র যখন আসলো তখন প্রিয়তিই আগে মুখ খুললো…
-একটু শুনুন…
-জ্বী…
-আমার পক্ষে…
-হ্যা,বুঝতে পারছি আর বলতে হবেনা।
অবাক হয়ে যায় প্রিয়তি।প্রিয়তিকে আরো অবাক করে দিয়ে অভ্র একটা সিগারেট ধরায়।
এবারে নীরবতা ভাঙে অভ্র…
-আপনি শুয়ে পড়ুন।আমি নিচে শুয়ে পড়বো…
অবাক হয়ে যায় প্রিয়তি।তাহলে অভ্রও কি এই বিয়ের বিরুদ্ধে ছিলো?
একটার পর একটা সিগারেট চলছে…
অভ্র ভাবছে,এটাই কি তার নিয়তি?সে তো বিয়ে করতে চায়নি।তার ভালবাসা মরে গেছে।তারপরও কেন বিয়ে করতে হলো?সে ভালবাসতো অংকিতা কে।বিয়েও ঠিক ছিলো কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই অংকিতার ক্যান্সার ধরা পড়ে।সবার ভালবাসার বাঁধন ছিড়ে একদিন চিরভালোবাসামুক্ত হয়ে যায় অংকিতা।সেদিনই ভেবেছিলো অভ্র, এ জীবনে আর কাউকে জড়াবে না।কিন্তু মায়ের অভিমানের কাছে হেরে তাকেও বিয়ে করতেই হলো! আজকে প্রিয়তি না হয়ে অংকিতা হলে কতোইনা ভালো হতো! এই সময়ও ঝগড়া লেগে যেতো তাদের।ভালবাসা থাকতো সেই ঝগড়ায়।
অভ্রের চিন্তা ফুরালো না কিন্তু সিগারেটের প্যাকেট ফুরিয়ে গেলো।
কিছুদিন যেতেই প্রিয়তি খেয়াল করলো অভ্র এক অন্য মানুষ।একদিনও সে বিছানায় ঘুমায়নি,নিচে ঘুমায়।অনেক ধূমপান করে।কথা বলে কম।প্রতিদিন ভোরে উঠেই সে কফি বানিয়ে খায় তারপর তার সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করেই অফিসে বেরিয়ে যায়।অফিস থেকে ফিরে।সেই একই একঘেয়েমি রুটিন।এর কারণ কি?
প্রিয়তি একদিন জিজ্ঞাসা করেই ফেললো অভ্রের বোন অনন্যা কে।
-তোমার ভাইয়া এমন কেনো…?
-কেমন…?
-মনমরা,একঘেয়েমি রুটিন,স্বল্পভাষী…
-ও আসলে ভাইয়ার বিয়ে ঠিক ছিলো অংকিতা আপুর সাথে…
থমকে যায় অনন্যা।আবার কথা বলে প্রিয়তি…
-বিয়েটা হয়নি।অন্য কোথাও বিয়ে করে নিয়েছে অংকিতা…!
-আসলে না অংকিতা আপু মারা গেছে।ক্যান্সার হয়েছিলো।অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি।তারপর থেকেই ভাইয়া এমন হয়ে গেছে…!
বলতে থাকে অনন্যা…
আনমনা হয়ে পড়ে প্রিয়তি।হঠাৎ অনন্যার ধাক্কাতে সম্বিত ফিরে পায়।
-একটা জিনিস দেখবা, ভাবী?
-হুম…!
অনন্যা,প্রিয়তিকে একটা আলমারি খুলে অভ্রকে দেয়া অংকিতার সব জিনিস দেখায়।গীটার,ঘড়ি কতকি…!বড় একটা অংকিতার ছবি।
আবার কথা বলে অনন্যা
-এগুলা ভাইয়ার রুমেই ছিলো।কিন্তু তোমাদের বিয়ের আগে আম্মু সরিয়ে ফেলেছে।
আজ একটু অন্যরকমই লাগে প্রিয়তির।এত ভালবাসা ছিলো!
আজকাল অভ্রর সাথে টুকটাক কথা বলে প্রিয়তি।কেন জানি সাত্যকিকেও ভুলিয়ে দিচ্ছে অভ্র।দুজন একসাথে।কিন্তু তারপরও একটা অজানা দেয়াল।অভ্র যেভাবে কেয়ার করে প্রিয়তিকে… প্রিয়তি মুগ্ধ হয়।অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অভ্রের দিকে।কিন্তু অভ্র…!সেও কি তাকায়? কে জানে…
আজকাল অভ্র যখন প্রিয়তির দিকে তাকায় তখন প্রিয়তির খুব ভালবাসতে ইচ্ছে করে অভ্রকে! অভ্রও কি প্রিয়তিকে ভালবাসার কথা ভাবে?কে জানে…
ওদিকে অভ্রের মনে জমে থাকা ভালবাসার বরফও গলতে শুরু করেছে।প্রিয়তি মেয়েটাকেও ভালোই লাগে তার এখন।কয়েকমাস একসাথে তারা।এরমধ্যে তার কোন কথায় প্রিয়তি দ্বিতীয়বার প্রশ্ন তুলেনি,সবসময় তার যত্ন নেয়,তার বাবা মার খেয়াল রাখে আর ইদানীং তাকে সিগারেটও ছেড়ে দিতে বলছে।তবে কি সে আবার প্রিয়তির প্রেমে পড়ে গেলো?ক্ষানিক পরেই আবার ভাবে অভ্র,এটা হতে পারেনা,সে শুধু অংকিতাকেই ভালবাসে আর কাউকে ভালবাসতে পারেনা অভ্র,শুধু অংকিতা।
আজকে অভ্রদের বাসায় কেউ নেই শুধু অভ্র আর প্রিয়তি।সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে আজ। সকাল সকালই বেরিয়ে গেছে অভ্র।বাসায় একা প্রিয়তি।প্রিয়তির আজকে মনে হচ্ছে অভ্রকে ভালবাসি না বলটা তার ভুল হচ্ছে।অঝোর ধারায় কাঁদছে সে।আকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে কাঁদছে সে।সাত্যকিকে ভুল ভালবাসাও তাকে পোড়াচ্ছে।
দুপুরের পরপরই জ্বর চলে আসে প্রিয়তির।
অভ্র অফিস থেকে এসে দেখে প্রিয়তি শুয়ে আছে।এইসময় তো শুয়ে থাকে না প্রিয়তি।তাহলে কি ওর কিছু হলো?কপালে হাত দিয়েই বুঝতে পারলো অভ্র।কোনভাবে প্রিয়তিকে একটু খাবার খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো অভ্র।আজকে তারও মনে হচ্ছে তার প্রিয়তিকে ভালবাসি বলে দেয়া উচিত।কারন প্রিয়তির একটু অসুস্থতাই তাকে বিচলিত করে দিয়েছে।কিন্তু কি এক অদ্ভুত দেয়াল।বলতেও পারছে না।তার এই না বলা ভালবাসায় আকাশের তারাগুলোও যেন অভিমানী হয়ে গেছে!
আরও সাতপাঁচ ভাবতে থাকে অভ্র।ভাবনায় ছেদ পড়ে প্রিয়তির ডাকে।দৌড়ে রুমে চলে যায় অভ্র
-অভ্র…
-হ্যা…
-আমার হাতটা একটু ধরবা?
কোন কথা না বলেই হাতটা ধরে বসে আছে অভ্র।প্রাণী দুইটি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়তির গালে বেয়ে জলধারা ছুটে চলছে।কিছু বলতে চেয়েও বলতে না পেরে অভ্র অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।এ এক অদ্ভুত অনুভূতির দেয়াল বইকি!
তখনি অভ্রের খেয়াল হলো পাশের ফ্ল্যাটে শাহানা বাজপেয়ীর গান বাজছে।তার কানে ভেসে এলো
“তোর আমার একটাই পরিচয়
দুজনেরই কাঁচা অভিনয়
দুজনেরই শব্দের অপচয়!