নিশাতের মনটা বেজায় খারাপ। অশান্তির ভ্রমরা সেই এক সপ্তাহ আগে যে হুল ফুঁটিয়েছে তার জ্বালা আজও সারেনি। অন্ধকার ছাদে সিগারেটের অদৃশ্য ধোঁয়া এই মুহুর্তে তার একমাত্র সঙ্গী। কত পরিশ্রম মেনে নিয়ে, মাথা খাটিয়ে গল্পের বইটা বের করেছে সে। অথচ ঘরের মানুষটি কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না! সেদিন সকালে তৃপ্তির হাসি ঠোঁটে নিয়ে বইয়ের চকচকে নতুন কপিটি সুমির হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল, গল্পগুলো কেমন হয়েছে একটু বলবে কি সুমি ?
পরদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে যখন দেখলো সুমি অন্য একটি গল্পের বই পড়ছে, তখন নিশাত খুব কষ্ট পেয়েছিল। ভীষণ কষ্ট। এভাবে পরপর কয়েকদিন একই দৃশ্য দেখে তাঁর অস্থির লাগে। তাহলে সিমু কি তাকে কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না। আচ্ছা, সে না হয় খারাপই লিখে কিন্তুু তারপরও কিছু কথা থেকে যায়। বিবেকতাড়িত হয়েও বইটির জন্য কিছু সময় বের করা যায়।
গত সাত দিন ধরে একই অবস্থা। অফিস থেকে বাসায় ফিরে সেই গল্পের বইটা সিমুর হাতে দেখে নিশাতের মনটা সত্যিই চুপসে যায়। বিক্ষুব্ধের গোমট বাতাস মনটাকে আকড়ে ধরে। আজ ছাদে গিয়ে সে মনেমনে একটা প্রতিজ্ঞা করে ফেলল। আর কখনো লিখবে না সে। কিচ্ছু লিখবে না। যেখানে ঘরের প্রিয় মানুষটা তার লেখাকে অবজ্ঞা করছে সেখানে অপরিচিত পাঠক কেন তাঁর বই পড়বে। তাই আজ থেকে লেখালেখির ইতি টানবে সে।
ছাদ থেকে নেমে বিছানায় অপাশ হয়ে শুয়ে আছে নিশাত। সিমু মন খারাপের হেতু কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে। রুমে ঢুকে সুইচটা অফ করে নিশাতকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, বইটির প্রথম গল্পের কাহিনীটা মোটামুটি হয়েছে। একশোর মধ্যে ছত্রিশ। তবে ‘সম্পর্ক’ গল্পটা দারুণ লিখেছো। এই গল্পের নায়িকার চরিত্রটা অসাধারণ লেগেছে। আর শেষ গল্পের কিছু ডায়লগ আমার জীবনের সাথে মিলে গেছে নিশাত। তুমি এসব কীভাবে লিখো বলো তো !
এবার পাশ ফিরে নিশাত। দুচোখ ভরা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে সিমুর দিকে। তারপর বলে, তুমি না অন্য একটি গল্পের বই পড়ছিলে!
আরে ,না রে বোকা, আমি তোমার বইটাই পড়ছিলাম। বইয়ের মলাটটা জাস্ট বদলানো ছিল।
নিশাত বোকার মতো ফ্যালফ্যালিয়ে সিমুর দিকে তাঁকায়। মুখ দিয়ে টু শব্দও বের হচ্ছে না। ক্ষাণিক পরে সিমুর চঞ্চল চোখের পানে তাকিয়ে শুধু বলে- তুমি, তুমি না আস্ত একটা পাজি !